ঘুঙুর (ইংরেজি: Ghungroo) হল সুতোয় গাঁথা একপ্রকার পাতলা ও ছোট্ট ঝুমকার মালা। অনেক পাতলা ও হালকা ধাতবীয় ঝুমকা বা ঝুনঝুন দিয়ে ঘুঙুর তৈরি করা হয়। বাংলাদেশি, নেপালি ও ভারতীয় শাস্ত্ৰীয় নৃত্যের নৃত্যশিল্পীরা শরীরে বিশেষ করে পায়ের গোড়ালিতে ঘুঙুর পরে নৃত্য প্ৰদৰ্শন করে থাকে।[১] ঘুঙুর দ্বারা উৎপাদিত শব্দ ঝুমকার ধাতব গঠন ও আকারের উপরে নিৰ্ভর করে, যার ফলে পৃথক ঘুঙুরের শব্দও যথেষ্ট পৃথক হয়। ভারতীয় শাস্ত্ৰীয় নৃত্যের মধ্যে ভরতনাট্যম, কত্থক, কুচিপুড়ি, মোহিনীঅট্টম, ওড়িশি ও অন্যান্য নৃত্য যেমন লাবনিতে ঘুঙুর পরা হয়।
বাংলা ভাষায় ঘুঙুরকে ঘুঙ্গুর, ঘুঙ্গর ইত্যাদি নামেও ডাকা হয়। অসমীয়া ভাষায় এটিকে ঘুগুরা, টোরড়, ঘৰ্ঘরিকা, ঘাঘর, কিঙ্কিনী ইত্যাদি নামে ডাকা হয়। উত্তর ভারতে একে ঘুংগুরু বলা হয়। এটি তামিল ভাষায় চিলানগাই ও মালয়ালম ভাষায় চিলানকা বলে পরিচিত। নেপালের লোক-নৃত্যশিল্পীদের ব্যবহার করা ঘুঙুরকে চেপ বলা হয়।[২][৩] এতে ৯টি থেকে ২৭টি পাতলা ব্রোঞ্জের ঝুমকা থাকে যা প্ৰায় ২৩ সে.মি. লম্বা এবং ৭.৫ সে.মি. প্রস্থের কাপড়ে সেলাই করা থাকে।[২][৩] নেপালিরা গানের ধরন অনুসারে বিভিন্ন চেপ বাছাই করে থাকে।[৩] ঝুমকাগুলোকে তারা ঘুনগুরু (ঘুংগুরু) বলে থাকে।[২]
ঘনবাদ্যের অধীনে থাকা ঘুঙুর হচ্ছে পরম্পরাগত শাস্ত্ৰীয় নৃত্যের একটি অত্যাবশ্যকীয় উপাদান। এতে মূলত লয়বদ্ধতা ও বিশেষ মূর্চ্ছনার প্ৰয়োজন হয় না।[৪]
এটি ধ্ৰুপদী নৃত্যশিল্পীদের মুখ্য অলংকার হওয়ার পাশাপাশি নৃত্যে অলঙ্করণ ও পরিধান সভ্যতার সাথেও জড়িত ছিল। তবে সামাজিক সীমাবদ্ধতার কারণে সাধারণ মহিলাদের দ্বারা ঘুঙুর ব্যবহার কিছুটা বাধাগ্রস্ত হয়েছিল। সময়ের সাথে সাথে ঘুঙুর নৃত্যশিল্পীদের ব্যবহার করা অলংকার হিসাবে চিত্ৰিত কবিতা, সাহিত্য ও চলচ্চিত্রে জগতে আপন অস্তিত্ব অৰ্জন করে নিয়েছে।[৫]
ঘুঙুর বাদন হচ্ছে প্ৰখ্যাত একজন ভারতীয় শাস্ত্ৰীয় কত্থকনৃত্য প্ৰদৰ্শক ভি অনুরাধা সিং কর্তৃক বিকশিত একপ্রকার সংগীতশৈলী। তিনি ঝুমকাকে মুখ্য বাদ্যযন্ত্ৰ হিসাবে ব্যবহার করে শৈলীটি বিকশিত করেছিলেন ও বহু বিশুদ্ধ সংগীত উৎসবে তা প্ৰদৰ্শন করেছিলেন। ঘুঙুর বাদনে আনদ্ধ কলা হিসাবে কেবল পায়ের নড়াচড়া ও চলাচলের উপরে গুরুত্ব দেওয়া হয়।