ক্রিকেটের আইন: ধারা-১৫
১৫.১ ঘোষণার সময়:
ব্যাটিং পার্শ্বের অধিনায়ক একটি ইনিংস সমাপ্ত ঘোষণা করতে পারে, যখন বলটি ডেড, ইনিংসের যে কোন সময়। ঘোষণাকৃত ইনিংসটিকে একটি সম্পূর্ণ ইনিংস হিসাবে গণ্য করা হবে।
১৫.২ একটি ইনিংস বাজেয়াপ্তকরণ:
একজন অধিনায়ক তার পার্শ্বের ইনিংসকে শুরু হওয়ার পূর্বেই বাজেয়াপ্ত করতে পারেন। একটি বাজেয়াপ্ত ইনিংসকে পূর্ণাঙ্গ ইনিংস হিসাবে গণ্য করা হয়।
১৫.৩ অবহিতকরণ
একজন অধিনায়ক অবশ্যই তার প্রতিপক্ষের অধিনায়ক বা আম্পায়ারকে ইনিংস ঘোষণাকরণ বা বাজেয়াপ্ত করণের ব্যাপারে অবহিত করবেন। একবার অবহিত করার পর কখনোই উক্ত সিদ্ধান্তকে পরিবর্তন করা যাবে না।
ক্রিকেট খেলায় ডিক্লিয়ারেশন বা ঘোষণাকরণ ঘটে থাকে যখন একজন অধিনায়ক মনে করেন তার দলের ইনিংস সমাপ্ত এবং বাজেয়াপ্তকরণ ঘটে যখন একজন অধিনায়ক মনে করেন যে, তিনি একটি ইনিংস বাজেয়াপ্ত করবেন। উক্ত ঘোষণাকরণ এবং বাজেয়াপ্তকরণ পদ্ধতিটি ক্রিকেটের আইনের ১৫নং ধারা অনুযায়ী পরিচালিত হয়। এই ধারাটি কেবলমাত্র তখনই প্রয়োগ করা হয়, যেখানে কোন খেলায় প্রতিটি দলের জন্য দুটি করে ইনিংসে ব্যাট করার জন্য নির্ধারিত থাকে; ধারা ১৫ বিশেষত সীমিত ওভারের ক্রিকেট খেলায় প্রয়োগ করা হয় না।
ব্যাটিং পার্শ্বের অধিনায়ক, খেলা চলাকালীন যে কোন সময় বা যদি বলটিকে ডেড মনে হয়, তখন একটি ইনিংসকে সমাপ্ত ঘোষণা করতে পারেন। [১] সাধারণ একজন অধিনায়ক এমনটি করে থাকেন যখন তিনি মনে করেন যে, তার দল জয়ের জন্য পর্যাপ্ত স্কোর তৈরী করেছেন এবং পরবর্তী ব্যাটিং করে অতিরিক্ত সময় ব্যয় করতে চান না। যা সাধারণ অনেক সময় প্রতিপক্ষের জন্য খেলাটিকে ড্র করার সুযোগ তৈরী করে দেয়। কৌশলগত ঘোষণা অনেক সময় অন্য সুবিধার্থে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
একজন অধিনায়ক অবশ্যই ঘোষণার পূর্বে তার ঘোষণার সঠিকতা যাচাই করেন, দ্রুত ঘোষণার ঝুঁকি (যেখানে প্রতিপক্ষ দলের জন্য খুবই ছোট লক্ষ্যমাত্রা থাকবে), বা বেশি দেরি করে ঘোষণা করা অথবা একদমই না করা (ফলস্বরূপ প্রতিপক্ষের জন্য ড্র এর পথকে সহজ করে দেয়া যাতে তারা বাকী খেলাটি শেষ করতে না পারে।) বিষয়ে সূক্ষ্ম বিচার করতে হয়।
১৮৯০ সালে সর্বপ্রথম ইনিংস ঘোষণাকারী অধিনায়ক ছিলেন চার্লস রাইট কেন্ট ক্লাবের বিপক্ষে খেলায়। রাইট নটিংহামশায়ারের ২য় ইনিংসকে ৫ উইকেটে ১৫৭ রানে ঘোষণা করেন এবং কেন্ট ক্লাবের জন্য ২৩১ রানের জয়ের টার্গেট দেয়। যদিও তার এ কৌশল কোন কাজে আসেনি, কারণ খেলাটি ড্র হয়। স্কোরবোর্ডে কেন্ট ক্লাব ৯ উইকেটে ৯৮ রান করে, কিন্তু নটিংহামশায়ারকে জয়ের জন্য আরো একটি উইকেট দরকার।[২]
ইনিংস ঘোষণার এই পদ্ধতিটি বৈধ হওয়ার পূর্বে, যদি কোন দলের ব্যাটসম্যান চাইত যে, প্রতিপক্ষ দলের ব্যাটসম্যানদেরকে পুনরায় ব্যাটিং করানোর জন্য, তখন তারা ইচ্ছাকৃতভাবে আউট হওয়ার চেষ্টা করত, অপরদিকে ফিল্ডিং পক্ষের খেলোয়াড়রা কোন চেষ্টাই করতো না ব্যাটসম্যানকে আউট করার জন্য, যদিও ব্যাটসম্যান চেষ্টা করছে আউট হয়ে যাওয়ার জন্য। [তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
বর্তমান ক্রিকেট আইনের আওতায়, একজন অধিনায়ক তার পক্ষের ইনিংসকে বাতিল করতে পারে।[১] বাতিলকৃত একটি ইনিংসকে অবশ্যই পূর্ণাঙ্গ ইনিংস হিসাবে গণ্য করা হবে। সাধারণ এটা ঘটে থাকে স্বল্প দীর্ঘ দুই-ইনিংসের খেলায়, যেখানে দলনেতাকে অবশ্যই দলীয় সদস্যের সাথে ঐকমত্যে আসতে হয় যে, কীভাবে ম্যাচটিকে সেট করলে একটি প্রত্যাশিত ফলাফল আসতে পারে।কোন খেলায় ড্র করার চেয়ে জয়ী হলেই বেশি পয়েন্ট পাওয়া যায়, তাই অধিনায়কগণ প্রায়শই প্রতিপক্ষকে ঝুঁকিমূলক জয়ের সুযোগ তৈরী করে দিতে চান, অপরদিকে খেলা যতক্ষণ পর্যন্ত নিজেদের অনুকূলে থাকলে ততক্ষণ নিজেদের দলকেই জয়ী করতে চেষ্টা করে থাকেন।
কেবল মাত্র একটি ইনিংসে সৌজন্যমূলকভাবে বাজেয়াপ্ত করা যেতে পারে টেস্ট ক্রিকেটে। এটা ঘটেছিল ১৮ জানুয়ারি ২০০০ সালে সেঞ্চুরিয়ান, দক্ষিণ আফ্রিকায়, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং ইংল্যান্ডের মধ্যকার ৫ম ও শেষ টেস্টে। পাঁচ ম্যাচ সিরিজের চার ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকা ২-০ তে এগিয়ে সিরিজ জিতেই নিয়েছে (যেখানে ২টি ম্যাচ ছিল ড্র)। ৫ম টেস্টের ১ম দিনে দক্ষিণ আফ্রিকা ৬ উইকেটে ১৫৫ রান করার পর বৃষ্টির কারণে খেলা বন্ধ হয়ে যায় এবং পরবর্তী ৩দিন পর্যন্ত কোন খেলা সম্ভব হয়নি। বাকী কেবল একদিন এবং ম্যাচটি ড্র এর সম্ভাবনার দিকে এগোচ্ছিল। অতপর দক্ষিণ আফ্রিকান অধিনায়ক হানসি ক্রনিয়ে এবং প্রতিপক্ষের অধিনায়ক নাসের হুসেন একটি সমঝোতায় আসার চেষ্টা করেন, যেখানে দক্ষিণ আফ্রিকা ২৫০ রানের লক্ষ্যমাত্রা তৈরীর পূর্ব পর্যন্ত ব্যাটিং চালিয়ে যাবে এবং এর পরেই ঘোষণা করবে। তখন ইংল্যান্ড এবং দক্ষিণ আফ্রিকা উভয়েই তাদের একটি করে ইনিংস বাজেয়াপ্ত করে এবং ইংল্যান্ডকে ২৫০ রানের জয়ের লক্ষ্যমাত্রা দেয় (যদিও মূল খেলায় লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৪৯)। ঐ সময়ই কেবল উক্ত আইনটি কোন দলের দ্বিতীয় ইনিংস বাজেয়াপ্ত করার অনুমতি দিয়েছিল।[৩] ধরে নেয়া হয়েছিল যে, ইংল্যান্ড তাদের প্রথম ইনিংসটি ০ বলে ০ উইকেটে ০ রানে ঘোষণা করেছে। পরে ব্যাট করতে গিয়ে ইংল্যান্ড ৮ উইকেটে ২৫১ রানে পৌছে যায় এবং ২ উইকেটে জয় লাভ করে।[৪] দক্ষিণ আফ্রিকা দলের অনেকেই তখন হানসি ক্রনিয়ের সমালোচনা করেছিল, কেন তিনি এত ছোট লক্ষ্যমাত্রা দেন।
পরবর্তীতে প্রকাশ পায় যে, ক্রনিয়েকে কোন ব্রোকার প্রলোভনের মাধ্যমে রাজি করিয়েছিলেন যে, খেলার ফলাফল যেন তাদের অনুকূলে থাকে।[৫] নাসের হুসেন ও তার দল কিছুই অবগত ছিল না, তারা দক্ষিণ আফ্রিকার এ লক্ষ্যমাত্রাকে চ্যালেঞ্জ হিসাবে নিয়েছিল।