চাঁদের আলো বা চন্দ্রালোক হলো মূলত চাঁদের পৃষ্ঠে বাধা পেয়ে প্রতিফলিত সূর্যের আলো। চাঁদের আলোর অধিকাংশই সূর্যের প্রতিফলিত আলো এবং সামান্য অংশই পৃথিবী থেকে প্রতিফলিত আলো।[১]
চন্দ্রকলার আকারের ওপর চাঁদের আলোর তীব্রতা ব্যাপকভাবে নির্ভর করে। আবার পূর্ণ চন্দ্রও অবস্থাভেদে সাধারণত ০.০৫–০.১ লাক্স দীপন উজ্জ্বলতা প্রদর্শন করে।[২] পৃথিবী থেকে চাঁদের নিকটতম অবস্থানের কাছাকাছি (সুপারমুনের ক্ষেত্রে) সর্বোচ্চ অবস্থানের সময় পৃথিবীর ক্রান্তীয় অঞ্চলে চাঁদের আলোর দীপন ০.৩২ লাক্স পর্যন্ত হতে পারে।[২] পৃথিবী থেকে পূর্ণ চন্দ্রের আলোর আপাত মান সূর্যের আলোর মাত্র ১⁄৩৮০০০০।
পার্কিঞ্জি প্রভাবের কারণে চাঁদের আলো, বিশেষত পূর্ণিমার আলো অধিকাংশ কৃত্রিম আলোক উৎসের তুলনায় খালি চোখে কিছুটা নীল মনে হয়। তবে চাঁদের আলো ঠিক নীলাভ নয়। এমনকি এর আলোকে প্রায়শ "রূপালি" বলে বর্ণনা করা হলেও, চাঁদের আলোর কোনো রূপালি বৈশিষ্ট্য নেই।
চাঁদের প্রতিফলন অনুপাত হলো মাত্র ০.১৩৬।[৩] অর্থাৎ আপতিত সূর্যের আলোর মাত্র ১৩.৬% চন্দ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রতিফলিত হয়। পৃথিবী পৃষ্ঠে পৌঁছাতে চাঁদের আলোর প্রায় ১.২৬ সেকেন্ড সময় লাগে। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন কণিকায় চাঁদের আলো বিচ্ছুরিত হয়ে রাতের আকাশের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে। ফলে অনুজ্জ্বল তারা ও প্রেক্ষাপটের আকাশের মধ্যে দর্শন তুলনা হ্রাস পায়। এ কারণে জ্যোতির্বিদরা পূর্ণিমার সময়ে মহাকাশ পর্যবেক্ষণ করেন না।
লোকসাহিত্যে কখনো কখনো পূর্ণচন্দ্র বা পূর্ণিমার নেতিবাচক উপস্থাপন করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, কোনো কোনো লোককাহিনী অনুসারে বিশেষ পূর্ণিমার রাতে পূর্ণচন্দ্রের নিচে ঘুমানোর ফলে মানুষ নেকড়ে মানবে পরিণত হয়। লোকধারণা অনুযায়ী, চাঁদের আলো চন্দ্রগ্রস্ত ব্যক্তিদের মধ্যে খারাপ লক্ষণ প্রকাশ ঘটায় এবং চাঁদের আলোয় ঘুমানোর ফলে কোনো ব্যক্তি অন্ধ বা পাগল হয়ে যায়।[৪] ক্রান্তীয় অঞ্চলে এক সময় ধারণা করা হতো চাঁদের আলোয় ঘুমানোর ফলে রাতকানা (প্রকৃতপক্ষে ভিটামিন এ এর অভাবে হয়) রোগ হয়।
ঘোড়ার পৌনঃপুনিক উভিটিসকে অনেক সময় "চাঁদকানা" হিসেবে আখ্যা দেওয়া হতো। তবে বর্তমানে চাঁদের আলোকে আর এর জন্য দায়ী মনে করা হয় না।
১৬শ শতাব্দীতে চাঁদের কিরণের কারণে গুহায় চন্দ্রদুধ নামে খনিজ চুয়ায় বলে মনে করা হতো।[৫]
২০০৮ খ্রিষ্টাব্দে ক্যাটি প্যাটার্সন লাইট বাল্ব টু সিমুলেট মুনলাইট নামে একটি শিল্পকর্ম নির্মাণ করেন।[৬] পূর্ণিমার আলোর সমতুল্য বর্ণালি তৈরির জন্য তিনি ২৮৯টি বৈদ্যুতিক বাল্ব ব্যবহার করেন।[৬]