অর্থনীতিতে চাহিদা হল কোনো পণ্য বা সেবা দ্রব্যের উপযোগের প্রয়োজনীয়তা। চাহিদাকারী হল একটি নির্দিষ্ট পরিমান পণ্য বা সেবা গ্রহণের উদ্যেশ্যে ব্যয় করার ইচ্ছা। একজন ক্রেতা বিভিন্ন দামে যে পরিমাণ দ্রব্য বা সেবা পেতে ইচ্ছুক তার পরিমাণের দ্বারা চাহিদা প্রকাশ করা হয়। কোনো নির্দিষ্ট দামে ভোক্তা যে পরিমাণ দ্রব্য ক্রয় করতে আগ্রহী হয় তার পরিমাণকে চাহিদার পরিমাণ বলে। দাম ও চাহিদার পরিমাণের মধ্যকার সম্পর্ককে চাহিদা বলা হয়। (আরও দেখুন: যোগান ও চাহিদা)
চাহিদার অন্যান্য নির্ধারকসমূহ অপরিবর্তিত থেকে স্বাভাবিক সময়ে কোনো দ্রব্যের দাম হ্রাস পেলে চাহিদা বৃদ্ধি পায়, দাম বৃদ্ধি পেলে চাহিদা হ্রাস পায়। দাম ও চাহিদার পরিমানের মধ্যে এরুপ বিপরীত সম্পর্ককে চাহিদা বিধি বলা হয়। চাহিদা বিধির ক্ষেত্রে অন্যান্য নির্ধারক হল : বিকল্প দ্রব্যের দাম, পরিপূরক দ্রব্যের দাম, ক্রেতার আয়, রুচি, অভ্যাস ও সংখ্যা ইত্যাদি।
অর্থনীতিতে চাহিদা বলতে আমরা ক্রয় ক্ষমতার দ্বারা সমর্থিত ইচ্ছাকেই বুঝি৷ চাহিদার পরিমাপ করা হয় একটি সময়ের ভিত্তিতে,তাছাড়া চাহিদা কোন দ্রব্যের জন্য বা চাহিদা কোন স্থানে সেটিও বলা প্রয়োজন৷ চাহিদা কোন ব্যক্তির হতে পারে আবার বাজারের চাহিদা হতে পারে৷ সমস্ত ব্যক্তির চাহিদাকে যোগ করলে বাজারের চাহিদা পাওয়া যায়৷ চাহিদা আবার বিভিন্ন দামে বিভিন্ন প্রকার হতে পারে বা ক্রেতাদের বিভিন্ন চাহিদা পরিমাণ বিভিন্ন হতে পারে৷ কাজেই কোন অবস্থায় চাহিদা কত সেটা বলা প্রয়োজন ৷
সাধারণ অর্থ চাহিদা বলতে আমরা কোন দ্রব্য পাওয়ার ইচ্ছা বা আকাঙ্খা কে বুঝে থাকি ,কিন্তু অর্থনৈতিক চাহিদা বলতে আমরা শুধুমাত্র ইচ্ছা বা আকাঙ্খা কি বুঝিনা। ওই ইচ্ছা আকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য ক্রয় ক্ষমতা ও থাকা চাই। কাজেই চাহিদা হল ক্রয় ক্ষমতার দ্বারা সমর্থিত ইচ্ছা।
অসংখ্য কারণে এবং পরিস্থিতিতে একজন ক্রেতার কোনো দ্রব্য ক্রয় করার ইচ্ছা প্রভাবিত হতে পারে। তারমধ্যে কিছু উল্লেখযোগ্য কারণ হল:
দ্রব্যের চাহিদা এর নির্ধারকসমূহের ওপর নির্ভরশীল, চাহিদা ও এর নির্ধারকসমূহের নির্ভরশীলতার সম্পর্কের গাণিতিক প্রকাশকে অপেক্ষক বলে।
যেমনঃ Qd=f(P, Ps, Pc, Y, T, Bu,.......)
এখানে,
Qd=চাহিদার পরিমাণ,
P=দ্রব্যের নিজস্ব দাম,
Ps=বিকল্প দ্রব্যের দাম,
Pc=পরিপূরক দ্রব্যের দাম,
Y=ক্রেতার আয়,
T=ক্রেতার রুচি, অভ্যাস,
Bu=ক্রেতার সংখ্যা
উদাহরণস্বরূপ, Qd = (১০-২P) একটি চাহিদা অপেক্ষক যেখানে Qd একটি দ্রব্যের চাহিদার পরিমাণ, P দ্রব্যের দাম। সমতা চিহ্নের ডানের রাশিকে স্বাধীন চলক ও বামের রাশিকে বলা হয় অধীন চলক। এখানে (-২P) এর মাধ্যমে বোঝা যাচ্ছে অধীন চলকের সাথে স্বাধীন চলকের বিপরীতমুখী সম্পর্ক বিদ্যমান। এর মাধ্যমে বোঝা যায় এই অপেক্ষক থেকে অঙ্কিত চাহিদা রেখার ঢাল হবে ডানদিকে নিম্নগামী।
অর্থনীতিতে চাহিদারেখা হল একটি লেখচিত্র যেখানে কোনো দ্রব্যের দাম ও ভোক্তাদের নির্দিষ্ট দামে উক্ত দ্রব্য ক্রয় করার ইচ্ছার মধ্যকার সম্পর্ক দেখানো হয়।
কোনো দ্রব্যের দামের পরিবর্তন এর ফলে চাহিদার যে পরিবর্তন সংঘটিত হয় তার মাত্রাকে চাহিদার দাম স্থিতিস্থাপকতা বলে। চাহিদার স্থিতিস্থাপকতার দ্বারা চাহিদার শতাংশিক পরিবর্তন ও দামের শতাংশিক পরিবর্তন-এর অনুপাতকে বোঝায়। চাহিদার দাম স্থিতিস্থাপকতার ক্ষেত্রে দাম ছাড়া চাহিদার অন্যান্য নির্ধারকসমূহ অপরিবর্তিত অবস্থায় থাকবে। চাহিদার দাম স্থিতিস্থাপকতার নির্ণয়ের ক্ষেত্রে যে সূত্র ব্যবহার করা হয় তা হলো: (ΔQ/ ΔP)×(P/Q)। এখানে Q হলো চাহিদার পরিমাণ এবং P হলো দ্রব্যের দাম।
চাহিদা ব্যবস্থাপনা, অর্থনীতি হল বিজ্ঞান ও কলার সংমিশ্রণ যার মাধ্যমে অর্থনৈতিক মন্দা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।