চীনের বাঁশবনের তিতির | |
---|---|
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস | |
জগৎ: | Animalia |
পর্ব: | কর্ডাটা |
শ্রেণী: | পক্ষী |
বর্গ: | Galliformes |
পরিবার: | Phasianidae |
উপপরিবার: | Perdicinae |
গণ: | Bambusicola |
প্রজাতি: | B. thoracicus |
দ্বিপদী নাম | |
Bambusicola thoracicus (Temminck, 1815) | |
প্রতিশব্দ | |
Bambusicola thoracica, Perdix thoracica |
চীনের বাঁশবনের তিতির (Bambusicola thoracicus) (ইংরেজি: Chinese Bamboo Partridge) ফ্যাজিয়ানিডি (Phasianidae) গোত্র বা পরিবারের অন্তর্গত বাম্বুসিকোলা (Bambusicola) গণের এক প্রজাতির ছোট তিতির। বাম্বুসিকোলা গণ মাত্র দু'টি প্রজাতি নিয়ে গঠিত, এই গণের আরেকটি প্রজাতি বাঁশবনের তিতির। চীনের বাঁশবনের তিতির প্রধানত চীনের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল, তাইওয়ান ও জাপানের স্থানীয় পাখি। জাপানে ১৯১৯ সালে প্রথম অবমুক্ত করা হয় এবং পরবর্তীকালে প্রকল্পটি সফলতা পাওয়ায় এখন জাপানে এরা বেশ ভাল অবস্থানেই রয়েছে। হাওয়াইয়ে এদের অবমুক্তকরণ প্রচেষ্টা সফল হয়নি। হংকংয়ে, যেখান থেকে একসময় এরা বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল, সেখানে ১৯৬১ সালে এদের অবমুক্ত করার প্রচেষ্টা নেওয়া হয়েছিল। যদিও সেই প্রচেষ্টাটি পরে ব্যর্থ হয়।[১] পৃথিবীর ১৩ লক্ষ ২০ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে এরা বিস্তৃত রয়েছে।[২]আই. ইউ. সি. এন. এই প্রজাতিটিকে Least Concern বা আশঙ্কাহীন বলে ঘোষণা করেছে।[৩]
চীনের বাঁশবনের তিতিরের মোট দু'টি উপপ্রজাতি শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে।[৪] এরা হচ্ছে-
চীনের বাঁশবনের তিতিরের দেহ ছোট মুরগির আকারের। এরা অন্যসব তিতির প্রজাতির থেকে তুলনামূলক ছোট আকৃতির। লেজ লম্বাটে। মাথায় ধূসরাভ-বাদামী বর্ণের টুপি থাকে। চিবুক খয়েরি রঙের। মুখের বাকি অংশ, গলা, পিঠ ও ডানার পালকের রঙ ধূসর বর্ণের। ডানা ও পিঠে খয়েরি বা কালচে-খয়েরি ছোপ ছোপ থাকে।[১] সাদা বর্ণের ছোট ছোট ফোঁটাও দেখা যায়। পেটের পালক ময়লা সাদা বর্ণের, তাতে বাদামী রেখার সারি থাকে। বুকের দিক থেকে বাদামী রেখা নিচের দিকে ক্রমশ পাতলা ও ছাড়া ছাড়া হয়ে যায়। পা ধাতব ধূসর, ছোঁট সীসা বর্ণের ও চোখের আইরিস পাটকিলে বর্ণের। স্ত্রী ও পুরুষ তিতির দেখতে একই রকম, তবে পুরুষ তুলনামূলক একটু বড়।
চীনের বাঁশবনের তিতির বাঁশবনে চরে বেড়াতে পছন্দ করে, তবে এরা বাঁশবনের বাইরে যায় না তা নয়। এরা চিরসবুজ ও পত্রপতনশীল উভয় ধরনের বনে বিচরণ করে। অন্যসব তিতিরের মত এরাও উড়ে পালানোর চেয়ে ঝোপ ঝাড়ে লুকিয়ে পড়াকে বেশি প্রাধান্য দেয়। হঠাৎ খুব কাছে চলে গেলে তবে উড়াল দেয়। এদের ডাক অনেকটা কি-কো-কুয়াই এবং ক্রমাগত ডাকতে থাকে। ডাক ধীরে ধীরে স্তিমিত হয়ে যায়। ডাকে জোর আছে, অনেক দূর থেকেও স্পষ্ট শোনা যায়।[১] আবার পুরুষ তিতির ডাকলে তার সঙ্গী স্ত্রী তিতিরটি ডাকের উত্তর দেয়। এভাবে উত্তর-প্রতিউত্তরের মাধ্যমে এক জোড়া তিতির অনেক সময় ধরে ডেকে যায়।[৫]
সাধারণত দুই থেকে বিশ সদস্যের দলে ঘুরে বেড়ায়। এক একটি দলের নির্দিষ্ট অঞ্চল ঠিক করা থাকে এবং এক দল আরেক দলের এলাকায় প্রবেশ করে না।[৫]
এপ্রিল-মে মাস চীনের বাঁশবনের তিতিরের প্রধান প্রজনন ঋতু। বাসা বানানো শেষে স্ত্রী পাখি ৭ থেকে ৯টি ডিম দেয়। প্রায় ১৮ দিন পরে ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়। আবদ্ধ অবস্থায়ও এরা বংশবৃদ্ধি করে।[৬]
ব্যাপকহারে আবাসন ধ্বংস ও বনাঞ্চল কেটে চাষাবাদের ফলে বাঁশবনের তিতিরের অস্তিত্ব সর্বত্রই হুমকির মুখে পড়েছে। এছাড়া মাংসের জন্য শিকারও এদের অস্তিত্ব-ঝুঁকির অন্যতম কারণ।