চীনামাটি (ইংরেজি porcelain) একধরনের কুমোরের মাটি। কাওলিন নামক প্রাকৃতিক খনিজযুক্ত পদার্থের মিশ্রণকে বৃহৎ চুল্লী বা ভাঁটিতে ১২০০ ডিগ্রি থেকে ১৪০০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় পুড়িয়ে এই মাটি তৈরি করা হয়। উচ্চ তাপমাত্রায় পোড়ানোর ফলে চীনামাটির ভেতরে মালাইট নামক খনিজ গঠিত হয় এবং মাটিটির কাচীভবন ঘটে, ফলে মৃৎশিল্পে ব্যবহৃত অন্যান্য উপাদানের তুলনায় চীনামাটি অধিকতর শক্ত, ভারবহ এবং স্বচ্ছ হয়ে থাকে। চীনামাটির অন্য কিছু বৈশিষ্ট্য হল এটি অভেদ্য (প্রলেপ প্রয়োগের আগেই), পুরু অবস্থায় শ্বেতবর্ণ ও অনুরণনশীল হয়ে থাকে। [১] চীনামাটিকে তিনটি প্রধান শ্রেণীতে বিভক্ত করা যায়: শক্ত-লেইয়ের চীনামাটি, নরম-লেইয়ের চীনামাটি এবং অস্থিচূর্ণমিশ্রিত চীনামাটি।
চীনামাটি ঐতিহাসিক চীনদেশে বহু শতাব্দী ধরে ধীরে ধীরে বিকাশ লাভ করে এবং আজ থেকে ২০০০ বছর থেকে ১২০০ বছর আগে কোনও এক সময়ে এর বর্তমান রূপটি ধারণ করে। এরপর এটি ধীরে ধীরে অন্যান্য পূর্ব এশীয় দেশগুলিতে এবং শেষ পর্যন্ত বহির্বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। মৃৎসামগ্রী এবং প্রস্তরসামগ্রীর চেয়ে চীনামাটির সামগ্রী নির্মাণ অধিকতর কঠিন। এটিকে শ্বেতশুভ্র রঙ, কাঠিন্য ও ভঙ্গুরতার জন্য একে সাধারণত উচ্চমার্গের মৃৎশিল্প হিসেবে গণ্য করা হয়। এর উপরে চকচকে প্রলেপ ও রঙ প্রয়োগ করা সহজ এবং একে সহজেই বিভিন্ন আকৃতি প্রদান করা যায়, ফলে এটিকে টেবিলের বিভিন্ন সামগ্রী, পাত্র ও ক্ষুদ্রাকার মূর্তি-প্রতিমা নির্মাণে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয়। এছাড়া বিভিন্ন প্রযুক্তি ও পণ্যদ্রব্য উৎপাদনের শিল্পক্ষেত্রেও চীনামাটির ব্যবহার আছে।