চুঙ্গাপুড়া পিঠা

চুঙ্গাপুড়া পিঠা
চুঙ্গা পিঠার চাল
অন্যান্য নামচুঙ্গা পিঠা
প্রকারনাশতা এবং জল খাবার
উৎপত্তিস্থলসিলেট,  বাংলাদেশ
অঞ্চল বা রাজ্যসিলেট অঞ্চল
প্রধান উপকরণবিন্নি চাল, দুধ, চিনি, নারিকেল, ঢলুবাঁশ ও চালের গুঁড়া

চুঙ্গাপুড়া পিঠা বা চুঙ্গা পিঠা বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চলের একটি প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী পিঠা।[] চুঙ্গাপিঠা তৈরির প্রধান উপকরণ ঢলু বাঁশ ও বিন্নি ধানের চাল (বিরইন ধানের চাল) হলেও বিন্নি চাল, দুধ, চিনি, নারিকেল, ঢলুবাঁশ ও চালের গুঁড়া দিয়ে তৈরি এই খাবারটি সিলেটের একটি নিজস্ব এবং ঐতিহ্যবাহী খাবার হিসেবে সুপরিচিত।[]

ঐতিহ্য

[সম্পাদনা]
বাঁশ পুড়িয়ে চুঙ্গা পিঠা বানানো হচ্ছে

বাংলাদেশে এক সময় বাজারে মাছের মেলা বসতো। সেসব মেলা থেকে মাছ কিনে অথবা হাওর-নদী হতে বড় বড় মাছ (রুই, কাতলা, চিতল, বোয়াল, পাবদা, কই, মাগুর) ধরে নিয়ে এসে হাল্কা মসলা দিয়ে ভেজে (আঞ্চলিক ভাষায় মাছ বিরান) চুঙ্গাপুড়া পিঠা খাওয়া সিলেট অঞ্চলের একটি অন্যতম ঐতিহ্য ছিল।[] বাড়িতে মেহমান বা নতুন জামাইকে শেষ পাতে চুঙ্গাপুড়া পিঠা, মাছ বিরান আর নারিকেলের ও কুমড়ার মিঠা, বা রিসা পরিবেশন না করা যেন লজ্জার বিষয় ছিল।[]

এক সময় সিলেটের পাহাড়ি আদিবাসীরা বাঁশ কেটে চুঙ্গা বানিয়ে এর ভেতর ভেজা চাল ভরে তৈরি করত এক ধরনের খাবার। ধীরে ধীরে এ খাবার পাহাড়িদের কাছ থেকে সিলেটবাসীদের কাছে চলে আসে। সময়ের পরিক্রমায় চুঙ্গা দিয়ে তৈরি করা এই খাবার এখন চুঙ্গা পিঠা নামে বহুল পরিচিত।[]

রন্ধন প্রণালী

[সম্পাদনা]
থালাভরতি চুঙা পিঠা

চুঙ্গাপিঠা বানানোর জন্য ঢলুবাঁশ অবশ্যই প্রয়োজন। ঢলুবাঁশে এক প্রকার তৈলাক্ত রাসায়নিক পদার্থ থাকে যা আগুনে বাঁশের চুঙ্গাকে না পোড়াতে সাহায্য করে। ঢলুবাঁশের ভিতরে বিন্নি চাউল ধোয়ে কলাগাছের পাতা প্যাঁচালো ভাবে ঢুকিয়ে তার মধ্যে বিন্নি চাল ভর হয়।[] অতঃপর খড় (নেরা বা খের) দিয়ে আগুনে পুড়িয়ে এই চুঙাপুড়া পিঠা তৈরি করা হয়।[] ঢলুবাঁশে অত্যধিক রস থাকায় আগুনে না পুড়ে ভিতরের পিঠা আগুনের তাপে সিদ্ধ হয়।[] ঢলুবাঁশের চুঙ্গা দিয়ে ভিন্ন স্বাদের পিঠা তৈরি করা করা হয়ে থাকে। কোনো কোনো জায়গায় চুঙ্গার ভেতরে বিন্নি চাল, সাথে দুধ, চিনি, নারিকেল ও চালের গুঁড়া দিয়ে পিঠা তৈরি করা হয়।[]

পিঠা তৈরি হয়ে গেলে মোমবাতির মতো চুঙ্গা থেকে পিঠা আলাদা হয়ে যায়।[]

পরিবেশন

[সম্পাদনা]

গোলাকার আকৃতির ঐতিহ্যবাহী এই পিঠা দুধের মালাই, খেজুরের গুড় ও দুধের সর দিয়ে পরিবেশন করা হয়।[] বিভিন্ন ধরনের মাছ, যেমন- রুই-কাতলা, বোয়াল, চিতল, পাবদা, কই, মাগুর মাছ হালকা মসলায় ভেজে তৈরি মাছ বিরাণেও চুঙ্গা পিঠা খাওয়া হয়।[]

আরো দেখুন

[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. "সিলেটের ঐতিহ্যবাহী চুঙ্গাপুড়া পিঠার প্রধান উপকরণ ঢলুবাঁশ হারিয়ে যেতে চলেছে"পাতাকুঁড়ি.নেট অনলাইন। ১৬ জানুয়ারী ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ১৩ ডিসেম্বর ২০১৭ 
  2. "হারিয়ে যাচ্ছে সিলেটের চুঙ্গা পিঠার ঢলুবাঁশ"ভোরের ডাক অনলাইন। ২২ জানুয়ারী ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ১৩ ডিসেম্বর ২০১৭ 
  3. "ঐতিহ্যবাহী খাবার সিলেটের চুঙ্গা পিঠা"দৈনিক ইত্তেফাক। সংগ্রহের তারিখ ১৩ ডিসেম্বর ২০১৭ 
  4. "বিলুপ্ত প্রায় ঐতিহ্যবাহী চুঙ্গাপিঠা"KristiKatha। অক্টোবর ৯, ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ডিসেম্বর ২০, ২০১৭ 
  5. "বাঁশের ভেতর চুঙ্গাপিঠা"বাংলা নিউজ২৪। ৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৬। ২৬ জানুয়ারি ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ ডিসেম্বর ২০১৭