চূর্ণী গাঙ্গুলি | |
---|---|
জন্ম | চূর্ণী বন্দ্যোপাধ্যায় কার্শিয়াং, পশ্চিমবঙ্গ |
পেশা | অভিনেত্রী |
কর্মজীবন | ২০০৪ থেকে বর্তমানে |
দাম্পত্য সঙ্গী | কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় |
সন্তান | উজান গাঙ্গুলি(পুত্র) |
আত্মীয় | সুনীল গাঙ্গুলি (শ্বশুর) |
চূর্ণী গঙ্গোপাধ্যায় একজন বাংলা চলচ্চিত্রের এবং ভারতীয় টেলিভিশনের অভিনেত্রী। তিনি তার ছোটবেলা শৈলশহর কার্শিয়াংএ কাটানোর পরে কলকাতা চলে আসেন এবং যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। যাদবপুরে পড়াকালীন তিনি একটি নাট্য দলে অভিনেত্রী হিসাবে যোগ দেন। তারপর তিনি মুম্বাইতে চলে যান এবং বেশ কয়েকটি টেলিভিশন ধারাবাহিকে অভিনয় করেন। পরবর্তীকালে তিনি আবার কলকাতায় ফেরৎ আসেন এবং বাংলা চলচ্চিত্রে অভিনয় শুরু করেন। চূর্ণী ২০০৫ সালে ওয়ারিস চলচ্চিত্রের জন্য, সেরা অভিনেত্রী বিভাগে বাংলা চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি পুরস্কার পান,যেখানে তিনি একজন একক-মায়ের অভিনয় করেন। [১]
চূর্ণী গাঙ্গুলির ছোটবেলা কার্শিয়াংএ কাটে । তার পিতা,মাতা শিক্ষক ছিলেন। তিনি দাউহিল আবাসিক বিদ্যালয়ের ছাত্রী ছিলেন।আবাসিক বিদ্যালয়ের ছাত্রী হওয়া সত্বেও চূর্ণী এবং কয়েকজন ছাত্রীর তাদের বাবা,মায়ের সঙ্গে বাড়িতে থাকার অনুমতি ছিল।তার বাবা অসম্ভব যত্নশীল কিন্তু রাশভারী মানুষ ছিলেন, যিনি চূর্ণীকে সর্বাদাই খেলাধুলা এবং পড়াশুনায় উৎসাহ দিতেন কিন্তু চূর্ণীর খেলাধুলায় বিশেষ আগ্রহ ছিল না । যদিও চূর্ণী তার বিদ্যালয়ে ভাল ছাত্রী ছিলেন কিন্তু কখনোই পরীক্ষায় স্থানলাভের কথা ভাবেন নি। [২]
চূর্ণী পরে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী থাকাকালীন ,১৯৮৭ সালে সুমন মুখোপাধ্যায়ের ও হবু স্বামী কৌশিক গাঙ্গুলির সঙ্গে একটি নাটকের দল গঠন করেন। [৩] চূর্ণী চিত্র পরিচালক কৌশিক গাঙ্গুলিকে বিবাহ করেন এবং তাদের একটি পুত্র সন্তান আছে।পুত্রের নাম উজান গাঙ্গুলি।[৪]
প্রথমত চূর্ণী হিন্দি চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন শিল্পে সফল হবার চেষ্টা করেন। তিনি মুম্বাইতে চলে যান এবং জি টেলিভিশনের প্রথম দৈনিক ধারাবাহিক রাহত এ অভিনয় করেন এবং পরবর্তী দুবছর মুম্বাইতেই থাকেন। এই সময়ে তিনি যখন তার কুড়ির কোঠায় ছিলেন, তিনি ছোটি সি আশা তে এক ৩৫ বছরের মায়ের ভূমিকায় অভিনয় করেন যিনি ৬০ বছর বয়স্কার মতো হয়েছিলেন । [৫] পরে তিনি কলকাতায় ফিরে আসা মনস্থ করেন। [৬]
কলকাতায় ফিরে আসার পর চূর্ণী বাংলা চলচ্চিত্র শিল্পে যোগদান করতে মনস্থ করেন । [৬]
২০০৪ সালে চূর্ণী বাংলা ছায়াছবিতে প্রথম অভিনয় করেন ওয়ারিশ নামক ছবিতে । ছবিটি কৌশিক গাঙ্গুলির নির্দেশনায় তৈরী।এই ছবিতে তিনি একক-মায়ের ভূমিকায় অভিনয় করেন, চরিত্রটির নাম মেধা। মেধা শুভঙ্করের প্রাক্তন প্রেমিকা ছিলেন এবং অবাধ মেলামেশায় ,সন্তানসম্ভবা হবার পর,তিনি গর্ভপাত করতে অসম্মত হন,যদিও তিনি শুভঙ্করের সঙ্গে বিবাহসূত্রে আবদ্ধ ছিলেন না ।তিনি শিশু পুত্রটির জন্ম দেন, নাম দেন মেঘ।।বহু বছর পর যখন যখন তিনি জানতে পারেন ,তিনি কর্কট /ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত ,তিনি শুভঙ্করের সঙ্গে দেখা করেন,ততদিনে শুভঙ্কর অন্য এক নারীর সঙ্গে বিবাহ সূত্রে আবদ্ধ। মেধা শুভঙ্করকে মেঘের দায়িত্ব নিতে বলেন। যদিও ছবিটিতে চূর্ণীর অভিনয় ব্যাপকভাবে প্রশংসা করা হয় ,ছবিটি বাণিজ্যিক সাফল্য পায় নি ।[৭] ২০০৫ সালে , চূর্ণী কৌশিক গাঙ্গুলির নির্দেশনায় শূন্য এ বুকে নামক ছবিটিতে অভিনয় করেন । [৮]
২০০৭ সালে চূর্ণী অঞ্জন দাস পরিচালিত যারা বৃষ্টিতে ভিজেছিল নামক ছবিটিতে অভিনয় করেন। [৯] ছবিটি সমকামী সম্পর্ক ঘিরে।[১০]
২০০৮ সালে চূর্ণী অঞ্জন দত্ত পরিচালিত চলো লেট'স গো ছবিটিতে অভিনয় করেন।ছবিটির বিষয়বস্তু নয়টি যাত্রীর একটি ভ্রমণ নিয়ে। চূর্ণী 'মিস গাঙ্গুলির' চরিত্রে অভিনয় করেন,যাকে সহযাত্রীরা মিস গম্ভীর বলে ডাকতেন । [১১]
২০০৯ সালে চূর্ণী শুভময় চট্টোপাধ্যায় পরিচালিত সকালের রং নামক ছবিটিতে অভিনয় করেন। ছবিটির বাজেট ছিল ₹ ৯,০০,০০০ (ইউএস$ ১১,০০০.৯৭) [১২]
২০১০ সালে চূর্ণী কৌশিক গাঙ্গুলি পরিচালিত আর একটি প্রেমের গল্প নামক ছবিটিতে অভিনয় করেন। তিনি রানি/গোপা র চরিত্রে অভিনয় করেন।এই ছবিটিতে ঋতুপর্ণ ঘোষ এবং ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেন। এবং বইটি একটি সমকামী সম্পর্ক ঘিরে ।[১৩]
২০১১ সালে চূর্ণী, কৌশিক গাঙ্গুলির আর একটি পরিচালিত ছবি রং মিলান্তিতে অভিনয় করেন। এই ছবিটিতে তিনি কমলিনী নামক একজন সফল টেলিভিশন অভিনেত্রীর ভূমিকায় অভিনয় করেন.।[১৪] এই বছরেই চূর্ণী, ঋভু দাসগুপ্তর পরিচালনাসংক্রান্ত আত্মপ্রকাশ, মাইকেল নামক ছবিটিতে অভিনয় করেন ।এই ছবিটিতে তিনি নাসিরুদ্দিন শাহর স্ত্রী রিয়ার ভূমিকায় অভিনয় করেন। ছবিটির প্রযোজক ছিলেন অনুরাগ কাশ্যপ। [১৫]
২০১২ সালে চূর্ণী দুটি বাংলা চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন- ল্যাপটপ, কৌশিক গাঙ্গুলির আর একটি পরিচালিত ছবি এবং প্রেম মোদি পরিচালিত অর্জুন-কালিম্পঙে সীতাহরণ । ল্যাপটপ ছবিটিতে একটি ল্যাপটপের সঙ্গে জুড়ে থাকা কিছু বিভিন্ন ধরনের মানুষের কাহিনী বলা হয়েছে। অন্যদিকে অর্জুন-কালিম্পঙে সীতাহরণ ছবিটি লেখক সমরেশ মজুমদারের একটি গোয়েন্দা গল্পের চরিত্র অর্জুনের ওপর নির্মিত।[১৬]
২০১৩ সালে কৌশিক গাঙ্গুলি পরিচালিত শব্দ বহুলভাবে সমালোচকদের দ্বারা প্রশংসিত হয়।ছবিটি তারক নামে একটি চরিত্রকে ঘিরে যিনি বাংলা চলচ্চিত্র শিল্পে 'ফলি' (একটি ছবি শুটিং সমাপ্তির পরে, যিনি রেকর্ড করা শব্দ প্রভাব ছাড়াও আলাদা শব্দ সৃষ্টি করে যোগ করেন) শিল্পী হিসাবে কাজ করেন। চূর্ণী, ছবিটিতে এক মনোবিদের ভূমিকায় অভিনয় করেন। [১৭]
চূর্ণী কৌশিক গাঙ্গুলির কেয়ার অফ স্যারের জন্য চুক্তিবদ্ধ হন, কিন্তু পরে সময়াভাবে তার বদলে সুদীপ্তা চক্রবর্তী ঐ চরিত্রে অভিনয় করেন। [১৮]
তিনি প্রদীপ্ত ভট্টাচার্যের পরিচালিত বাকিটা ব্যক্তিগত ছবিতে অভিনয় করেন ।ছবির কাহিনীতে প্রমিত, একটি অপেশাদার তথ্যচিত্র নির্মাতা, যিনি বারবার মেয়েদের কাছ থেকে প্রত্যাখ্যাত হয়ে প্রেমের ওপর একটি তথ্যচিত্র বানাবার সিদ্ধান্ত নেন।[১৯]।একজন মানুষের সঙ্গী খোঁজার গল্প নিয়েই ছবি ‘বাকীটা ব্যক্তিগত’। প্রেমের জন্যে অপেক্ষার ইচ্ছে, হৃদয় দিয়ে দেখার আনন্দ, অবিরত পথ চলা-মনের এমন অনুভূতি ও জীবনের এমন কিছু মুহুর্তই ধরা দিয়েছে রূপালি পর্দায় । [২০]
অভিনেত্রী চূর্ণী গাঙ্গুলি প্রথমবার চালক হিসাবে নির্বাসিত নামক দ্বিভাষিক(বাংলা এবং ইংরাজী)ছবিতে আত্মপ্রকাশ করেন। ছবিটির শুটিং যথাক্রমে কলকাতা ও সুইডেনে হয়। বাস্তব বুদ্ধি দিয়ে বহু ছবি নির্মাতাদের চেষ্টার পর প্রথমবার তসলিমা নাসরিনের জীবনভিত্তিক ছবি অক্টোবর ২০১৪ তে মুম্বাই আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে মুক্তি পায়। [২১] ২০১৫ সালে এই চলচ্চিত্রটি শ্রেষ্ঠ বাংলা চলচ্চিত্র বিভাগে ৬২তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেছে। [২২]
বছর | ছায়াছবি | ভূমিকা / চরিত্র | পরিচালক | সহ-অভিনেতাগণ |
---|---|---|---|---|
২০০৪ | ওয়ারিশ | মেধা | কৌশিক গাঙ্গুলি | সব্যসাচি চক্রবর্ত্তি, দেবশ্রী রায় |
২০০৫ | শুন্য এ বুকে | শিল্পীর বৌ | কৌশিক গাঙ্গুলি | কৌশিক সেন, খরাজ মুখার্জী |
২০০৭ | যারা বৃষ্টিতে ভিজেছিল | অঞ্জন দাস | ইন্দ্রানী হালদার, সুদীপ মুখার্জী | |
২০০৮ | চলো লেট'স গো | মিস গম্ভীর | অঞ্জন দত্ত | রুদ্রনীল ঘোষ, শাশ্বত চ্যাটার্জী, পরমব্রত চ্যাটার্জী |
২০০৯ | সকালের রং | ভাবি | শুভময় চট্টোপাধ্যায় | তরঙ্গ সরকার,ছবি তালুকদার, পৌলমি দে ,মনু মুখোপাধ্যায় |
২০১০ | আর একটি প্রেমের গল্প | রানি / গোপা | কৌশিক গাঙ্গুলি | ঋতুপর্ণ ঘোষ, ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত, রাইমা সেন |
২০১১ | রং মিলান্তি | কমলিকার বড় দিদি | কৌশিক গাঙ্গুলি | শাশ্বত চ্যাটার্জী, ঋধিমা ঘোষ, তানাজী দাশগুপ্ত, গৌরব চট্টোপাধ্যায়, ইন্দ্রাশিস রায় |
মাইকেল | রিভু দাশগুপ্ত | নাসিরুদ্দিন শাহ, মাহি গিল, পুরভ ভান্ডারে | ||
২০১২ | ল্যাপটপ | শ্রীমতী দুর্বা মুখার্জী | কৌশিক গাঙ্গুলি | রাহুল বোস, শাশ্বত চ্যাটার্জী, অন্যন্যা চ্যাটার্জী, গৌরব চক্রবর্তী |
২০১৩ | অর্জুন - কালিম্পঙে সীতাহরণ[২৪] | নীলম, সীতার গৃহশিক্ষিকা | প্রেম মোদি | দীপঙ্কর দে, ওম (অভিনেতা) |
শব্দ[২৫] | কৌশিক গাঙ্গুলি | রাইমা সেন, ভিক্টর বানার্জী, ঋত্বিক চক্রবর্তী | ||
বাকিটা ব্যক্তিগত[১৯] | প্রদীপ্ত ভট্টাচার্য | ঋত্বিক চক্রবর্তী, অপরাজিতা ঘোষ দাস, মাধবী মুখার্জী, দেবাশীষ রায়চৌধুরী,সুপ্রিয় দত্ত , মনু মুখার্জী , সুদীপা বসু, অমিত সাহা এবং কৌশিক রায় | ||
২০১৪ | নির্বাসিত[২৬] | চূর্ণী গাঙ্গুলি | শাশ্বত চ্যাটার্জী, রাইমা সেন, লারস বেঠকে, লিয়া বয়সেন, মার্টিন ওয়ালস্টর্ম, জোকিম গ্রানবার্গ এবং অন্যান্য | |
২০২৩ | অর্ধাঙ্গিনী | শুভ্রা | কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় | কৌশিক সেন, জয়া আহসান |
|প্রকাশক=
এ বহিঃসংযোগ দেয়া (সাহায্য)