চেনগুও মন্দির | |
---|---|
ধর্ম | |
অন্তর্ভুক্তি | বৌদ্ধ ধর্ম |
প্রদেশ | শানশি |
অবস্থান | |
অবস্থান | পিংইয়াও |
স্থাপত্য | |
সম্পূর্ণ হয় | ৯৬৩ উত্তরাঞ্চলীয় হান রাজবংশ |
চেনগুও মন্দির (সরলীকৃত চীনা: 镇国寺; প্রথাগত চীনা: 镇國寺; ফিনিন: Zhèn Gúo Sì) চীনের পিংইয়াও থেকে ১০ কি.মি. দূরে শানশি প্রদেশের হাদংসুন গ্রামে অবস্থিত একটি বৌদ্ধ মন্দির। ওয়াংফো হল নামে পরিচিত মন্দিরটির সবচেয়ে পুরাতন কক্ষটি ৯৬৩ সনে উত্তরাঞ্চলীয় হান রাজবংশের রাজত্বকালে নির্মাণ করা হয়। এটি কক্ষের বিমগুলোর জন্য প্রসিদ্ধ যা কক্ষের ছাদ ও এর ঝুলে থাকা প্রলম্বিত অংশকে ধরে রাখে। কক্ষের ভিতরের কারুকার্যগুলো চীনের ১০ম শতাব্দীর বৌদ্ধ কারুশিল্পের সীমিত নিদর্শনগুলোর মধ্যে অন্যতম।
৯৬৩ সালে ওয়াংফো হল নির্মাণের মধ্য দিয়ে মন্দিরটির ইতিহাসের সূচনা হয়। হলস্থিত একটি বিমের উপর নির্মাণের তারিখটি খোদাই করা রয়েছে। ১৯ শতকে লিখিত পিংইয়াও প্রদেশের একটি আঞ্চলিক কাহিনী থেকেও এই তারিখটি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। ১৮১৯ সালে লিখিত একটি প্রস্তরলিপি থেকে এর সত্যতা পাওয়া যায়।[১] চেনগুও মন্দিরের সবচেয়ে পুরাতন কুঠি হল এই ওয়াংফো হল। এটি ক্ষণস্থায়ী উত্তরাঞ্চলীয় হান রাজবংশের একমাত্র স্থাপনা যা এখনও টিকে আছে।[২] মন্দিরটির ইতিহাস সম্পর্কে খুব কমই জানা যায়। প্রস্তরলিপি অনুসারে, ১৫৪০ ও ১৮১৬ সালে এটি সংস্কার করা হয়েছিল।[৩] ১৯৯৭ সালে পার্শ্ববর্তী পিংইয়াও শহর এবং শুয়াংলিন মন্দিরের সাথে এই মন্দিরটিও 'পিংইয়াও-এর প্রাচীন শহর' নামে বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানসমূহে অন্তর্ভুক্ত হয়।[৪]
মন্দিরে মোট ৩টি ভবন, এদের মধ্যস্থিত ২টি চত্বর, ২টি হলঘর ও একটি প্রধান ফটক রয়েছে। সম্পূর্ণ প্রাঙ্গণটি দেয়ালবেষ্টিত। মন্দিরটি দক্ষিণে উন্মুক্ত। তিয়ানওয়াং হলটি মন্দিরের দরজা হিসেবে কাজ করে।[৫] পরবর্তী হলটি উত্তরে অবস্থিত যার নাম ওয়াংফো হল। শেষ হলঘরটির নাম সানফো হল যা কিং রাজবংশের সাক্ষী। উত্তরের চত্বরটিতে পূর্ব আর পশ্চিমে যথাক্রমে গুয়ানইন ও দিজাং নামে আরও ২টি ছোট হলঘর আছে যেগুলো মিং রাজবংশের সাক্ষ্য বহন করে।[৬] তিয়ানওয়াং হলের দুই দিকে ২টি বেল টাওয়ারও রয়েছে।[৫]
মন্দিরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলঘরটি হল ওয়াংফো হল (১০,০০০ বৌদ্ধের হল) যা চীনের সবচেয়ে পুরনো কাঠের ভবনগুলোর মধ্যে অন্যতম। এটি প্রায় বর্গাকার যার দৈর্ঘ্য ১১.৬ মি. এবং উচ্চতা ৮.৮ মি।[৭] আকারে ছোট এবং হলের মত আকৃতি (যেমন স্তম্ভগুলো পাথরের বেদীতে না বসিয়ে সরাসরি মেঝেতে গেঁথে দেয়া হয়েছে) হওয়া সত্ত্বেও এর গঠনশৈলী অত্যন্ত জটিল। হলঘরটির সামনে ও পিছনে দরজা রয়েছে। এছাড়া হলের সামনের দরজার দুই দিকে ২টি জানালা রয়েছে। সম্পূর্ণ কাঠামোটি ১২টি স্তম্ভের উপর দাঁড়িয়ে আছে।[৫] কোণ আর ছাদকে ধরে রাখা স্তম্ভশীর্ষস্থ বন্ধনীগুলো ৭ ডিগ্রি কোণ করে আছে যা উইংযাও ফাশির মতে সবথেকে জটিল আর বড়গুলোর মধ্যে অন্যতম। এই বন্ধনীগুলো প্রায় ২.৫ মি. উঁচু, স্তম্ভগুলোর উচ্চতার প্রায় ৭০ শতাংশ। পাশাপাশি ২টি স্তম্ভের মাঝে দাঁড়িয়ে থাকা স্তম্ভ-মধ্যস্থ বন্ধনীগুলো ৫ ডিগ্রি করে ঝুলে রয়েছে। হলঘরটির কোন ছাদ নেই এবং ঊর্ধ্বস্থ ও নিম্নস্থ বরগাগুলো উন্মুক্ত।[৮] ন্যান্সি স্টেইনহার্ডের মতে, ভবনের বন্ধনীগুলো উত্তরাঞ্চলের হান শাসকদের সীমিত সম্পদকে কাজে লাগিয়ে বিস্ময়কর গঠনশৈলী নির্মাণের প্রচেষ্টামাত্র।[৯]
হলঘরটিতে উত্তরাঞ্চলীয় হান শাসনামলের ১১টি ভাস্কর্য বিদ্যমান। 'মোগাও কু'-এর বাইরে চীনের একমাত্র ভাস্কর্য হল এগুলো যা এখনও টিকে আছে।[১] বোধিসত্ত্বের ভিত্তিস্বরূপ শাক্যমুনি তথা স্বর্গীয় রাজার একটি ভাস্কর্যেরও জায়গা হয়েছে এখানে।[১০]