ছাতক Common hedge blue | |
---|---|
![]() | |
ডানা বন্ধ অবস্থায় | |
![]() | |
ডানা খোলা অবস্থায় | |
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস | |
জগৎ: | Animalia |
পর্ব: | Arthropoda |
শ্রেণী: | Insecta |
বর্গ: | Lepidoptera |
পরিবার: | Lycaenidae |
গণ: | Acytolepis |
প্রজাতি: | A. puspa |
দ্বিপদী নাম | |
Acytolepis puspa (Horsfield, 1828) | |
প্রতিশব্দ | |
|
ছাতক(বৈজ্ঞানিক নাম: Acytolepis puspa (Horsfield)) 'লাইসেনিডি' (Lycaenidae) বা ব্লুজ (Blues) গোত্র ও 'পলিওমাটিনি' (Polyommatinae) উপ-গোত্রের অন্তর্ভুক্ত ক্ষুদ্রাকৃতি প্রজাতি।[১]
ছাতক এর প্রসারিত অবস্থায় ডানার আকার ২৮-৩৫ মিলিমিটার দৈর্ঘ্যের হয়।[২]
ছাতক এর প্রজাতি হলো:[৩]
ভারতের প্রায় সর্বত্র ( ভারতীয় উপদ্বীপ গুজরাত, মধ্য প্রদেশ, ঝাড়খণ্ড, পশ্চিমবঙ্গ পশ্চিম ও পূর্ব হিমালয় জুড়ে জম্মু ও কাশ্মীর থেকে অরুণাচল প্রদেশ ও উত্তর-পূর্ব ভারত পর্যন্ত[৪]) পাকিস্তান,আফগানিস্তান, বাংলাদেশ, মায়ানমার, শ্রীলঙ্কা, ফিলিপিন্স, নিউ গিনি[৫] এর বিভিন্ন অঞ্চলে এদের পাওয়া যায়।[২][৬]
প্রজাপতির দেহাংশের পরিচয় বিষদ জানার জন্য প্রজাপতির দেহ এবং ডানার অংশের নির্দেশিকা দেখুন:-
ডানার উপরিতল : পুরুষ প্রকারে ডানার উপরিতল ঝকমকে বা ঝলমলে (iridescent) বেগুনি-নীল ও কালচে খয়েরি প্রান্তীয় পটিযুক্ত। সামনের ডানায় কোস্টা সরুভাবে (১-২মি,মি,) এবং শীর্ষভাগ (apex) ও টার্মেন থেকে টরনাস চওড়াভাবে কালচে খয়েরি। ডিসকাল অংশে ডানার মধ্যভাগে বেগুনি-নীলের উপর সাদা ছোপ কিছু নমুনাতে থাকে, আবার কিছু নমুনাতে থাকে না। টার্মিনাল ও টরনাসের প্রান্তরেখা সাদা। পিছনের ডানা সামনের ডানার অনুরূপ, তবে টার্মেন অপেক্ষাকৃত কম চওড়াভাবে কালচে খয়েরি। টরনাস ও ডরসাম সাদা। পিছনের ডানা লেজহীন।
স্ত্রী প্রকারে ডানার উপরিতলে পুরুষের বেগুনি-নীল বর্ণ থাকে না। সামনের ডানাতে কোস্টা, এপেক্স, টার্মেন, টরনাস ও ডরসামের মধ্যভাগ পর্যন্ত খুব চওড়া পটিযুক্ত এবং বেসাল (ডানার গোড়া) অংশ উজ্জ্বল নীলাভ ও ডিসকাল অংশ সাদা। পিছনের ডানা সামনের ডানার অনুরূপ, তবে মধ্যভাগের সাদা অংশ পরিবেষ্টনকারী কালচে খয়েরি পটিটি তুলনায় কম চওড়া। পোস্ট-ডিসকাল সাদা বিন্দুর একটি সারি বর্তমান ও টার্মিনাল প্রান্তরেখা সাদা।পিছনের ডানা লেজহীন।
স্ত্রী-পুরুষ উভয় প্রকারেই শুষ্ক-ঋতুরূপে ডিসকাল সাদা অংশ অধিকতর বিস্তৃত।[৭]
ডানার নিম্নতল : স্ত্রী-পুরুষ উভয় প্রকারেই ডানার নিম্নতল অনুরূপ; সাদা-কালো দাগ-ছোপের নকশায় চিত্রিত।
সামনের ডানায় সেল-এর বহিঃপ্রান্তে একটি লম্বা দাগ বর্তমান।ডিসকাল ছোপের সারিটি অবিন্যস্ত; ছোপগুলি বিভিন্ন আকৃতির।১বি নং শিরামধ্যের (Interspace) ছোপটি সারির বাইরের দিকে অবস্থিত। ২ ও ৪ নং শিরামধ্যের ছোপদুটি তির্যক ও লম্বাটে। ২ নং শিরামধ্যের ছোপটি ডিম্বাকৃতি ও সেল প্রান্তের দাগটির অভিমুখী। ৪ নং শিরামধ্যের ছোপটি বাদাম আকৃতির। ৩ নং শিরামধ্যের ছোপটিও লম্বাটে এবং ৪ নং শিরামধ্যের ছোপটির মধ্যভাগ অভিমুখী। কালো পোস্ট-ডিসকাল রেখাটি বক্র ও খাঁজকাটা। পোস্ট-ডিসকাল রেখাটির বাইরের দিকে একটি ছোপের সারি ও তারপর সরু সাব-টার্মিনাল কালো রেখা। টারমেন সাদা; কালো রেখা দ্বারা ডোরাকাটা।
পিছনের ডানায় একদম গোড়ার (base) দিকে একটি ছোট বিন্দু যার একটু বাইরে সাব-বেসাল অংশে ১এ,৩ ও ৬ নং শিরামধ্যে বক্রভাবে সজ্জিত ৩ টি গোলাকার ছোপ বিদ্যমান (সবার উপরেরটি সর্ব-বৃহৎ)। ডিসকাল অংশে ডানার মধ্যভাগে (৩ ও ৪ নং শিরামধ্য জুড়ে) একটি ছোট সরু কৌনিক রেখা অবস্থিত যার ঠিক উপরেই (৬ ও ৭ নং শিরামধ্যে) পরপর দুটি গোলাকার ছোপ; ৭ নং-এর টি বৃহত্তর। সরু ডিসকাল রেখাটির নিচে অসংলগ্ন ৩ টি ছোপ এবং বাইরের পাশে খানিক দূরে ৩,৪ ও ৫ নং শিরামধ্যে সন্নিবদ্ধ ৩ টি ছোপ চোখে পরে যার মধ্যেরটি অনুলম্বিক। পোস্ট-ডিসকাল বক্র রেখাটি আঁকাবাঁকা ও প্রতিটি শিরায় সামনের ডানা অপেক্ষা অধিকতর খাঁজযুক্ত। পোস্ট-ডিসকাল ও সাব-টার্মিনাল রেখার মধ্যবর্তী বাঁকা ছোপসারির ছোপগুলি সামনের ডানার তুলনায় বড় এবং টার্মিনাল প্রান্তরেখা অনুরূপ।
উভয় ডানারই নিম্নতলে আঁকাবাঁকা পোস্ট-ডিসকাল রেখা, সাব-টার্মিনাল রেখা ও মধ্যবর্তী ছোপসারি একত্রে অর্ধ-চন্দ্রাকৃতি কল্কার নকশার মতো দেখায়।
শুঙ্গ সাদায়- কালোয় ডোরাকাটা; মাথা, বক্ষদেশ (thorax) ও উদর উপরিতলে কালচে বাদামি এবং নিম্নতলে ফ্যাকাশে সাদা।[৭] [৮][৯][১০][১১]
দ্রুত উড়ান বিশিষ্ট এই প্রজাতি ছোট ছোট ফুলে বসে মধুপান এবং পাতায় ও পক্ষীর বিষ্ঠায় বসে রসপান করতে ভীষণ পছন্দ করে।পুরুষ প্রকার প্রায়শঃই মাটির বা পাথরের ভিজে ছোপে অবস্থান করে। আর্দ্র বনভূমি এদের পছণ্দের বাসভূমি; জঙ্গলের ফাঁকা জায়গা (forest clearing) জঙ্গলের পথ ও নদী বা ঝর্ণার কিনার নিয়মিতভাবে এদের দেখতে পাওয়া যায়। মরা কীট-পতঙ্গ, কাঁকড়া ও পশুর বিষ্ঠাতেও এদের অবস্থান লক্ষ্য করা যায়।সমতলভূমির জঙ্গল ও হিমালয়ের পাদদেশ থেকে ৩০০০ মিটার উচ্চতা পর্যন্ত এই প্রজাতির দর্শন মেলে; যদিও পাহাড়ের উচ্চভূমির চাইতে পাদদেশেই এদের অধিক সংখ্যায় দেখা মেলে। জঙ্গলের ভিতর পথের পাশে গাছপালা ও জঙ্গলের প্রান্তে বড়-মাঝারি গাছপালার নিচের ঝোপঝাড় এদের বিচরণক্ষেত্র। এদের স্বভাব স্থানিক (territorial)-বেশি দূরে যায় না; একই জায়গায় ঘোরাফেরা করে।অধিকাংশ প্রাপ্তিস্থলেই প্রায় সারা বছর ধরেই এই প্রজাতির বিচরণ চোখে পরে।দক্ষিণ ভারতে ঝোপঝাড় যুক্ত হালকা জঙ্গলময় অঞ্চল এদের পছন্দের বাসভূমি; তবে ঘন জঙ্গলে ও সমতলভূমিতে এদের দেখা পাওয়া যায় না। সিমলাতে জুলাই থেকে অক্টোবর মাসে এদের দর্শন পাওয়া যায়; তার নিচের অঞ্চলে ও পূর্ব হিমালয়ে এদর বিচরণের সময় বসন্তকাল থেকে শরৎকাল।[২][৭][১১]
ডি নাইসভিলের মতে হ্যাম্পসন্স হেজ ব্লু (Hampson's Hedge Blue), কমন হেজ ব্লু-রই একটি বিশেষ প্রকার (form); যদিও ইভান্স ও বিঙ্গহাম এর বক্তব্য অনুসারে এই দুটি সম্পূর্ণ আলাদা প্রজাতি। কমন হেজ ব্লু-র দক্ষিণ ভারতে প্রাপ্ত নমুনাগুলি উত্তর ভারতে প্রাপ্ত নমুনা অপেক্ষা বেশ খানিকটা আলাদা।[২]
ডিম সবজে সাদা, চাকতির মতো আকৃতি বিশিষ্ট। এই প্রজাতি পাতা ও মুকুলের গোড়ায় অথবা ফুলের বৃত্তির খাঁজে ডিম পাড়ে।
শুককীট চ্যাপ্টা চিড়ের মতো, দুই-প্রান্ত গোলাকৃতি।দেহের বর্ণ সবুজ, পাশের দিকে হালকা গোলাপির ছোঁয়াযুক্ত। শরীরে, প্রধানত পিছন দিকে, হালকা রোয়া দেখা যায়। পিঁপড়েরা মাঝেমধ্যে এই শুককীটদের পরিচর্যা করে থাকে যার বিনিময়ে তারা পায় ১১ নং দেহখণ্ডে অবস্থিত দুটি গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত মিষ্টি রস। ১২ নং দেহখণ্ডে দুটি জায়গা আছে যেখান দিয়ে দুটো বুরুশের মতো প্রত্যঙ্গ বেরিয়ে আসে আত্মরক্ষা করার প্রয়োজন হলে। ওই প্রত্যঙ্গ কিছুক্ষন দ্রুত নাড়ানোর পরই শুককীট পুনরায় তা শরীরে ঢুকিয়ে নেয়।[১২]
মুককীট হালকা বা গাঢ় বাদামি; তার উপর গাঢ় রঙের ছিটাযুক্ত। বক্ষ থেকে উদরের মাঝামাঝি অবধি একটি বাদামি পটি কখনো-সখনো চোখে পড়ে।