ছাতু (হিন্দি: सत्तू) হল এক ধরনের ময়দা, যা প্রধানত নেপাল, তিব্বত, পাকিস্তান এবং ভারতে ব্যবহৃত হয়। এতে ভাজা ডাল এবং খাদ্যশস্যের মিশ্রণ থাকে। খাবারের প্রধান বা গৌণ উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত এই শুকনো ময়দা নানা উপায়ে প্রস্তুত করা হয়। ছাতু নিরামিষ খাবারে ব্যবহৃত হয়। এটি প্রোটিনের উৎস হতে পারে।
বিহারে ছাতু সাধারণত ভাজা ছোলা বা ভাজা ভুট্টা থেকে তৈরি করা হয়। মানুষের খাদ্যাভাস এবং স্বাদের বিভিন্ন আনতে বিভিন্ন ডালের ছাতু একত্রিত করা হয়।
পাঞ্জাবি, উর্দু, হিন্দি এবং বাংলা শব্দ ছাতু[১] সংস্কৃত শব্দ সক্তু [২] থেকে এসেছে যার অর্থ হল মোটা করে গুঁড়ো করা শুকনো বার্লিজাতীয় খাবার।[৩] চরক-সংহিতা, অষ্টাঙ্গহর্মদয়সংহিতা এবং সুশ্রুত-সংহিতা ইত্যাদি বিভিন্ন আয়ুর্বেদিক সাহিত্য জুড়ে ছাতুর (সক্তু) উল্লেখ পাওয়া যায়।[৪]
ছাতুর উৎপত্তিস্থল বিহারের মগধ অঞ্চল। ছাতু তৈরির প্রক্রিয়াটি একটি প্রাচীন প্রক্রিয়া[৫] এবং এটি উত্তর ও পূর্ব ভারতের বিস্তীর্ণ এলাকা বিশেষ করে বিহার এবং এর প্রতিবেশী রাজ্য উত্তর প্রদেশ, ঝাড়খণ্ড ও পূর্ববঙ্গ (বর্তমানে বাংলাদেশ) জুড়ে জনপ্রিয়। তেলেঙ্গানায় বতুকাম্মার জন্য প্রসাদম বা নিবেদম হিসেবেও ছাতু বিখ্যাত। মগধে "ছাতু ঘোল" নামে ছাতু থেকে তৈরি একটি পানীয় রয়েছে।
আঞ্চলিক বিভিন্ন রন্ধনপ্রণালীতে ছাতু নানাভাবে ব্যবহৃত হয়। বিহার, উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, পাঞ্জাব এবং দিল্লিতে বিভিন্ন খাবারে ছাতুর ব্যাপক ব্যবহার রয়েছে। বিহারে এটি সাধারণত গ্রীষ্মে তীব্র গরমের সময় একটি সুস্বাদু পানীয় হিসাবে বা একধরনের পোরিজ হিসাবে পরিবেশন করা হয়। টুকরো ফল, চিনি এবং দুধের সাথে ছাতু একত্রিত করে মিষ্টি খাবার তৈরি করা হয়। এটি পরোটার মধ্যে ব্যবহৃত একটি জনপ্রিয় পুর। বিহারে আগুনে সেঁকা বেসন অথবা সেঁকা বার্লি বা উভয়ের মিশ্রণ দিয়ে ছাতু প্রস্তুত করা হয়। ছাতুর সাথে সামান্য সরিষার তেল এবং কিছু মশলা মিশিয়ে ঐতিহ্যবাহী বিহারী খাবার লিট্টি এবং লিট্টি চোখা (থালা) তৈরি করা হয়।
পাঞ্জাবে তাপ এবং পানিশূণ্যতার প্রভাব প্রশমিত করতে একটি ঠান্ডা পানীয় হিসাবে এটি পান হয়। এটি পাকিস্তানের পাঞ্জাব অঞ্চলেও একটি জনপ্রিয় ঐতিহ্যবাহী গ্রীষ্মকালীন পানীয়। সাধারণত পানির সাথে গুড় (পাঞ্জাবি, উর্দু এবং হিন্দিতে শক্কর) মিশ্রিত করে এই পানীয় তৈরি করা হয়। এটি সাধারণত ঠাণ্ডা পরিবেশন করা হয়। পাঞ্জাবে প্রায়ই আগুনে সেঁকা ও পরে গুড়া করা বার্লির মিশ্রণ থেকে ছাতু তৈরি করা হয়।
ওড়িশায় এটি একটি জনপ্রিয় প্রাতঃরাশ এবং এটিকে ছাতুয়া বলা হয়। ছাতুয়া তৈরির বিভিন্ন উপায় রয়েছে। তবে এটি সাধারণত পাকা কলা, ছানা, দই বা দুধের সাথে মিশিয়ে তৈরি করা হয়।
গুড়া করা বার্লি থেকে তৈরি ছাতুতে লবণ ও হলুদ মিশিয়ে বল তৈরি করা যায়। বিকল্পভাবে এটি তৈরিতে বাজরা এবং ভুট্টা দানাও ব্যবহার করা হয়।[৫]
শুকনো ভাজা শস্য বা ছোলা, প্রায়শই বার্লি বা কালো ছোলা থেকে ছাতু তৈরি করা হয়। ওড়িশায় শুকনো ভাজা কাজু, বাদাম, বাজরা, বার্লি ও ছোলা পিষে ছাতু বা ছাতুয়া তৈরি করা হয়। ছাতু তৈরির প্রথাগত উপায়ে একটি লোহার পাত্র ব্যবহার করা হয় যাতে শস্যদানা বা ছোলাকে বালিতে ভাজা হয়। এরপর সেগুলি ছেঁকে নেওয়া হয় এবং তারপরে বেটে নেওয়া হয়।
পাকিস্তানের পাঞ্জাব এবং সিন্ধু প্রদেশে ছাতু বেশ জনপ্রিয়। বিহারের মগধ অঞ্চল, বিহার ও[৬] ঝাড়খণ্ড এবং ভারতের অন্যান্য কিছু অঞ্চলে ছাতু প্রচলিত আছে, যেমন মগধ থেকে উত্তর প্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ এবং দিল্লির পূর্বাঞ্চল অঞ্চলে এর জনপ্রিয়তা ছড়িয়ে পড়েছে।[৫]
<ref>
ট্যাগ বৈধ নয়; আলাদা বিষয়বস্তুর সঙ্গে "alop" নামটি একাধিক বার সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে