জংলাবিড়া Dingy bushbrown/Common bushbrown | |
---|---|
![]() | |
ডানা বন্ধ অবস্থায় | |
![]() | |
ডানা খোলা অবস্থায় | |
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস | |
জগৎ: | Animalia |
পর্ব: | Arthropoda |
শ্রেণী: | Insecta |
বর্গ: | Lepidoptera |
পরিবার: | Nymphalidae |
গণ: | Mycalesis |
প্রজাতি: | M. perseus |
দ্বিপদী নাম | |
Mycalesis perseus (Fabricius, 1775) |
জংলাবিড়া[১] এক প্রকার গাঢ় বাদামী বর্ণের প্রজাপতি যা দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সোঁদা বনে-বাদাড়ে ঝোপ-জঙ্গলে সচরাচর নজরে পড়ে। রঙের কারণে এদের বুশব্রাউন (ইং: Bushbrown) বলে অভিহিত করা হয়। এদের পায়ের নিম্নতলে দৃঢ় রোঁয়া থাকে। এ সব প্রজাপতি খুব ভাল উড়তে পারে না এবং সাধারণতঃ উজ্জ্বল আলোময় পরিবেশ এড়িয়ে চলে।
১৭৭৫ সালে প্রথম জংলাবিড়া জাতের প্রজাপতি শনাক্তকরতঃ বর্ণনা লিপিবদ্ধ করেন ডেনমার্কের পোকাবিশারদ জন ক্রিস্টিয়ান ফ্যাবরিসিয়াস। এ প্রজাপতির বৈজ্ঞানিক নাম মাইক্যালেসিস পারসিয়াস (ইং:Mycalesis perseus)। এই প্রজাতিটি নিমফ্যালিডি (Nymphalidae) গোত্রের স্যাটাইরিনি (Satyrinae) উপ-গোত্রের অন্তর্ভুক্ত।[২][৩][৪]
জংলাবিড়ারা প্রসারিত অবস্থায় ডানার আকার ৩৮-৫৫ মিলিমিটার দৈর্ঘ্যের হয়।[২]
ভারতে প্রাপ্ত জংলাবিড়ারা এর উপপ্রজাতি হল-[৫]
ভারত (ভারতীয় উপ-দ্বীপ গুজরাত পর্যন্ত, মধ্য ও পূর্ব ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চল, পশ্চিমবঙ্গ, হিমাচল প্রদেশ থেকে সিকিম হয়ে অরুণাচল প্রদেশ ও উত্তর-পূর্ব ভারত) শ্রীলঙ্কা, নেপাল, ভুটান, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, মায়ানমার, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এর বিভিন্ন অঞ্চলে এদের পাওয়া যায়।[২]
প্রজাপতির দেহাংশের পরিচয় বিষদ জানার জন্য প্রজাপতির দেহ এবং ডানার অংশের নির্দেশিকা দেখুন:-
বিভিন্ন বুশব্রাউন প্রজাতির সনাক্তকরণ ও পৃথকীকরণ বেশ ঝামেলার বিষয়। প্রথমত, শুষ্ক ঋতুরূপে এদের একটির থেকে অপরটিকে আলাদা করা খুবই দুষ্কর, কারণ এই সময় চক্ষুবিন্দুগুলির (Ocilleus) প্রায় কিছুই অবশিষ্ট থাকে না। চক্ষুবিন্দুগুলি অস্পষ্ট ফোঁটার আকার ধারণ করে; অনেকক্ষেত্রে আবার ফোঁটাগুলিও অদৃশ্য হয়ে যায়। দ্বিতীয়ত, আর্দ্র ঋতুরূপেও প্রায়শই একই প্রজাতির চক্ষুবিন্দুর সংখ্যা ও আকৃতির হেরফের ঘটে। বিভিন্ন বুশব্রাউন প্রজাতিকে সাধারণ দর্শনে ও চটজলদি চিনে ফেলার উপায়গুলো চক্ষুবিন্দুগুলির বিন্যাসের ভিত্তিতেই তৈরী।
জংলাবিড়া (Dingy bushbrown) প্রজাতির সাথে যে তিনটি বুশব্রাউন প্রজাতিকে গুলি ফেলার সম্ভবনা থেকে সেগুলি হল খয়রাবিড়া (Dark-branded bushbrown), তাঁতরাবিরা (Long-brand bushbrown) ও হোয়াইট-লাইন বুশব্রাউন (White-line Bushbrown)। আপাতদৃষ্টিতে চারটি প্রজাতিরই ডানার নিম্নতল প্রায় একইরকম দেখতে হলেও জংলাবিড়া বাদে বাকি তিনটির পিছনের ডানার চক্ষুবিন্দুর সারিতে শেষ (একেবারে নিচের) চারটি চক্ষুবিন্দু একই সরলরেখায় অবস্থান করে। কিন্তু জংলাবিড়াদের ক্ষেত্রে একই সরলরেখায় থাকে একদম নিচের তিনটি চোখ; চার নম্বর চোখটি একটু বাইরের দিক ঘেঁষে অবস্থিত।[৬][৭]
ডানার উপরিতল কালচে বা কালচে বাদামি বা বাদামি-খয়েরী। সামনের ডানায় ২ নং শিরামধ্যে (inter-space) একটি সাদা তারাবিন্দু যুক্ত (single-pupled) কালচে খয়েরী বা কালো চক্ষুবিন্দু (ocelli) বর্তমান যেটি হালকা হলদে-বাদামি (fulvous) বলয় দ্বারা আবৃত (তবে স্পষ্ট হলুদ বলয় দিয়ে ঘেরা নয়)। স্ত্রী-প্রকারে উক্ত চক্ষুবিন্দুটি সর্বদাই পুরুষ প্রকারের অপেক্ষা বৃহত্তর। কিছুকিছু নমুনাতে কদাচিৎ ৫ নং শিরামধ্যে অনুরূপ একটি ছোট চক্ষুবিন্দু লক্ষ্য করা যায়। উইন্টার ব্লাইথ লিখেছেন যে দক্ষিণ ভারত ও পশ্চিমবঙ্গে প্রাপ্ত জংলাবিড়া প্রজাতির ক্ষেত্রে আর্দ্র ঋতুরূপে সামনের ডানার মধ্যভাগের এই চক্ষুবিন্দুটি প্রায়শই দেখা যায় না।[৮] পিছনের গোলাকৃতি ডানা সাধারণত চক্ষুবিন্দু হীন, তবে মাঝেমধ্যে কোনো কোনো নমুনাতে ডানার মধ্যভাগের সামান্য বাইরের দিকে দু-তিনটি অস্পষ্ট চক্ষুবিন্দু চোখে পড়তে পারে। উভয় ডানাতেই শীর্ষভাগ (apex) থেকে টরনাস পর্যন্ত বিস্তৃত প্রায় সমান্তরাল ভাবে অবস্থিত সরু কালো টার্মিনাল ও সাব-টার্মিনাল রেখা বিদ্যমান। সিলিয়া বা প্রান্ত-রোঁয়া ফ্যাকাশে সাদা।
ডানার নিম্নতলের বর্ণ উপরিতলের অনুরূপ ও চক্ষুবিন্দুগুলি দর্শনীয়। সামনের ডানায় ২-৪টি ও পিছনের ডানায় সাধারণত ৭ টি (কখনো ৫ টি) ছোট-বড় চক্ষুবিন্দু বর্তমান। সমস্ত চক্ষুবিন্দুগুলি সাদা তারা-রন্ধ্র যুক্ত ও কালো এবং বাদামি-হলুদ বলয়াবৃত। নিম্নতলের চক্ষুবিন্দুগুলি উপরিতলের চক্ষুবিন্দুটির তুলনায় অধিকতর স্পষ্ট। উভয় ডানাতেই চক্ষুবিন্দুর সারি ভিতরদিকে ও বাইরেরদিকে ময়লাটে সাদা সরু একাধিক আঁকাবাঁকা রেখার বেষ্টনীতে আবদ্ধ। পিছনের ডানার চক্ষুবিন্দুর সারিতে শেষ ৪ টি (একেবারে নিচের) চক্ষুবিন্দুর মধ্যে একদম তলার ৩টি এক সরলরেখায় অবস্থান করে ও ৪ নং টি সামান্য বাইরের দিকে অবস্থিত। পিছনের ডানার বাকি চক্ষুবিন্দুগুলি ভিতরের দিকে বেশখানিকটা বাঁকানো। উভয় ডানাতেই কোস্টার নিচ থেকে টরনাসের উপর পর্যন্ত বিস্তৃত একটি সাদা সরু ডিসকাল রেখা বর্তমান। ডানা বন্ধ অবস্থায় বসে থাকার সময় সামনের ও পিছনের ডানার সাদা রেখা দুটি মিলে একটি টানা রেখা তৈরী হয় সামনের ডানার কোস্টার নিচ থেকে পিছনের ডানার টরনাসের উপর পর্যন্ত। টার্মিনাল ও সাব-টার্মিনাল রেখা দুটি উপরিতলেরই অনুরূপ।
স্ত্রী-পুরুষ প্রকার অনুরূপ। শুঙ্গ বাদামি, কালো ডোরাযুক্ত; শীর্ষভাগ কালো বা কালচে বাদামি ও তার নিচে খানিক হলুদের ছাপযুক্ত। মাথা, বক্ষদেশ ও উদর উভয়পৃষ্ঠেই বাদামি বা কালচে বাদামি।[৮]
শুষ্করূপে ডানার উপরিতল আর্দ্র ঋতুরূপের অনুরূপ, তবে সামনের ডানার মধ্যবর্তী চক্ষুবিন্দুটি সাধারণত ক্ষুদ্রতর ও কোনো কোনো ক্ষেত্রে লুপ্ত। ডানার নিম্নতল বাদামি, কমবেশি হালকা বেগুনির ছোঁয়া যুক্ত ও কালচে বাদামি ছোটছোট তির্যক সরু দাগে ছাওয়া। ডিসকাল রেখাটি খুবই অস্পষ্ট;- কখনো কালো ছোট দাগ দ্বারা চিহ্নিত, আবার কখনো লালচে-হলুদ অস্পষ্ট বন্ধনী দ্বারা সীমায়িত (bordered)। চক্ষুবিন্দুগুলি মিলিয়ে গিয়ে ক্ষুদ্র কালো বিন্দুর আকার ধারণ করে। স্ত্রী ও পুরুষ প্রকার অনুরূপ।[৮]
অতি সুলভ দর্শন এই প্রজাতির উড়ান ধীর, দুর্বল ও ঝাঁকি দিয়ে ওড়ার প্রবণতা যুক্ত। এরা মাটির কাছাকাছি নীচ দিয়ে ওড়ে। পাতায়, ডালে বা মাটিতে বসে থাকতে থাকতে হটাৎ অন্য কোনো পুরুষ প্রকারকে ধাওয়া করতে প্রায়শই দেখা যায়। কখনো একটি স্ত্রী প্রজাপতির পিছনে একাধিক পুরুষ উড়ে বেড়ায়; আবার কখনো অনেকে মিলে গোল হয়ে উড়তে থাকে। একে ওপরের পিছু নেবার সময় কমন বুশব্রাউন প্রজাপতিরা মোটামুটি স্বাভাবিক ভঙ্গিতে ওড়ে, কিন্তু অন্যান্য সময়, যখন স্বেচ্ছায় বা বিব্রত হয়ে স্থানত্যাগ করে, তখন এদের ঝাঁকিপূর্ণ অদ্ভুত ভঙ্গিমায় উড়তে দেখা যায়। ওপর-নীচ ডানা ঝাঁকি দেবার ভঙ্গিতে ওড়ে; হটাৎ নীচ থেকে এক ঝাঁকিতে উপরদিকে উঠে যায় এবং তারপর যেন ওড়ার চেষ্টা বন্ধ করে দেয় ও নিচের দিকে পড়তে থাকে। বেশ খানিকটা পড়ার পর আবার এক ঝাঁকিতে শূন্যে লাফিয়ে ওঠে।[৯]
এই প্রজাতি গাছপালা ছাওয়া ঝোপঝাড়ের আশেপাশে অবস্থান করে, যেমন- আমবাগান, বাঁশবাগানের কিনারায় থাকা ঝোপঝাড় এদের ভারী পছন্দের জায়গা। অন্যান্য ঝোপঝাড় পূর্ণ অংশেও জংলা পরিবেশে এদের দেখা যেতে পারে, তবে উন্মুক্ত স্থানে এদের দর্শন মেলে না। সাঁঝলা প্রজাতিরা যেমন পরিবেশে বসবাস করে, সেইরকম জায়গাতেই এরা তাদের সঙ্গে মিশে থাকে। তবে সাঁঝলারা যেমন রোদে বিচরণ করতে নারাজ, জংলাবিড়ারা তেমন নয়। এরা হামেশাই পাতা, ডাল বা গাছের কান্ডে বসে রোদ পোহায় সকালের দিকে। মুখ্যত ডানা বন্ধ অবস্থাতেই এই প্রজাতিকে রোদ পোহাতে দেখা যায়, ডানা মেলে খুবই কম বসে। এরা অন্ধকার জায়গায়, শুকনো পাতার উপর অবস্থান করতে বিশেষ পছন্দ করে। পশু-পাখির বিষ্ঠা, অতিপক্ক ও পচা ফল, ভিজেমাটি বা পাথরের ভিজে ছোপে বসে খ্যাদ্যরস আহরণ করতে এদের প্রায়ই চোখে পড়ে; তবে ভিজেমাটি বা পাথরে বসে খ্যাদ্যরস পান করতে পরুষদেরই দেখা যায় । ইহারা মূলত সকাল, পড়ন্ত বিকেল ও সন্ধ্যার সময় সক্রিয় হয়। পার্বত্য জঙ্গল ও সমতলের জংলা জায়গা-উভয় পরিবেশেই এই প্রজাতির দর্শন মেলে প্রায় সারা বছরই। একমাত্র আর্দ্র ঋতুরূপেই এদের শুষ্কতর পরিবেশে অবস্থান করতে দেখা যায়। উত্তর-পশ্চিম ভারতের আর্দ্র ও জঙ্গলময় পরিবেশের অন্যতম সুলভ দর্শন প্রজাপতি এই কমন বুশব্রাউন প্রজাতি। উত্তর-পশ্চিম হিমালয়ের নিচু উচ্চতায় (৪০০ মিটার) ও হিমালয়ের অন্যান্য অংশে পাদদেশ থেকে ৪০০০-৫০০০ ফুট উচ্চতা পর্যন্ত এদের বিচরণ লক্ষ্য করা যায়।[১০]
ডিম গোলাকার ও ময়লাটে সাদা বর্ণের।[১১]
শূককীটের বর্ণ খয়েরী। পিঠের দিকে খয়েরীর উপর গাঢ় খয়েরী বরফি আঁকা। শরীর সামনে পিছনে সরু ও মধ্যভাগে স্ফীত। মাথায় একজোড়া কাঁটাওয়ালা খুব ছোট শিং দেখা যায়। মাথা কালো বা গাঢ় খয়েরী। উদরের শেষপ্রান্তে দুটো সরু বাড়ানো (projected) অংশ চোখে পড়ে। শূককীটের আহার্য বিভিন্ন প্রকার ঘাস। ঘাসের ফলকের নিচের তলে শুককীট লম্বালম্বি অবস্থান করে ও ফলকের পাশ থেকে খাওয়া শুরু করে। সম্পূর্ণ ঘাসটিকে মুড়িয়ে খেয়ে শেষ করার লক্ষণ দেখা যায় না; একটুখানি খেয়েই অন্য কোনো ঘাসে চলে যায়।[১১]
এই শূককীট বিভিন্ন প্রকার ঘাস, Oryza spp, Poaceae spp. ইত্যাদি গাছের পাতার রসালো অংশ আহার করে।[১][১১]
মুককীট সৃষ্টি হয় ঘাসের নিম্নপৃষ্ঠে। মুককীটের রঙ সবুজ ও দেহের নানা স্থানে হলুদ বিন্দুযুক্ত। বক্ষদেশ ও উদর দুইই পিঠের দিকে অনেকটা ফোলানো।[১১]
|শিরোনাম=
at position 55 (সাহায্য)