ইংরেজি শব্দ militantএবং ল্যাটিন শব্দ 'militare' যার বাংলা প্রতিশব্দ জঙ্গি, হলো একইসাথে একটি বিশেষণ ও একটি বিশেষ্য, এবং সাধারণত পুরোদমে সক্রিয়, যুদ্ধংদেহী-মনোভাবাপন্ন ও আগ্রাসী, বিশেষত 'জঙ্গি সংষ্কারক' হিসেবে একটি বিশেষ কারণের সমর্থনকারী বোঝাতে ব্যবহৃত হয়।[১][২] এটি ১৫শ শতকের লাতিন "militare" শব্দ থেকে এসেছে যার অর্থ "একজন সৈনিকের ন্যায় দ্বায়িত্ব পালন করা"। বহিঃদখলকারীদের বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষামূলক সংগঠন হিসেবে মিলিশিয়া সম্পর্কিত আধুনিক মতবাদটি ১০শ শতকের জার্মান-মার্কিন সেনাবাহিনী ফারড হতে এসেছে। সঙ্কটকালীন সময়ে, উক্ত মিলিশিয়াগণ তাদের বেসামিরক দায়িত্ব ত্যাগ করে সৈনিক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে, এবং জরুরি অবস্থা শেষ হওয়ার পর আবার পুনরায় তাদের বেসামরিক পদে ফিরে আসে।
জঙ্গি শব্দটি বর্তমান অর্থে কোন নিবন্ধিত সৈনিককে বোঝানো হয় না: এটি এমন ব্যক্তি যে অতিউদ্যমী ও অনেকসময় চরমপন্থী কর্মকাণ্ডর ধারণাকে কোন উদ্দেশ্য, বিশেষত রাজনৈতিক উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য গ্রহণ করে। একজন জঙ্গি [রাজনৈতিক] কর্মীকে জঙ্গি হিসেবে বর্ণিত নয় এমন কর্মীর তুলনায় অধিক জেরাপ্রবন ও আগ্রাসী বলে মনে করা হয়।
জঙ্গিবাদে শারীরিক সহিংসতা, সশস্ত্র যুদ্ধ, এবং অনুরূপ অন্যান্য বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকতেও পারে আবার নাও থাকতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রে ট্রটস্কাইস্ট জঙ্গি দল একটি সংবাদপত্র প্রকাশ করত, যা শ্রমিক আন্দোলনে সক্রিয় ছিল, এটি রাজনৈতিক দলগুলোর লক্ষ্য বদলে দিয়েছিল, কিন্তু তা সহিংসতাভিত্তিক ছিল না, যদিও কিছু প্রতিদ্বন্দ্বিতা অস্ত্রবিহীন লড়াইয়ের জন্ম দিয়েছিল। খ্রিস্টান চার্চ জঙ্গিদের উদ্দেশ্য হল পাপ, শয়তান ও এই বিশ্বের অন্ধকারের শাসক, উচ্চক্ষেত্রে আত্মিক অধঃপতন-এর বিরুদ্ধে সংগ্রাম করা।" (এফিসিয়ান্স ৬ঃ১২), কিন্তু এটি কোন সহিংস আন্দোলন নয়।
জঙ্গি বলতে জঙ্গি সংস্কারকের মত সংজ্ঞার ন্যায় "বিশেষত কোন কারণের সমর্থনে পুরোদমে সক্রিয় ও আগ্রাসী ব্যক্তিবর্গকে বোঝায়।[১] দ্য আমেরিকান হেরিটেজ ডিকশনারি অফ ইংলিশ ল্যাঙ্গুয়েজে জঙ্গিকে "বিশেষ কোন কারণের সমর্থনে যুদ্ধ-মনোভাবী চরিত্রের অধিকারী, আগ্রাসী" হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। জঙ্গি হওয়ার একটি বিশেষ কারণ ধর্ম সম্পর্কে অজ্ঞতা।
বিশেষ্য হিসেবে, জঙ্গি হল একজন ব্যক্তি যে একটি উদ্দেশ্য সাধনের লক্ষ্যে জঙ্গি পদ্ধতি অবলম্বন করে।;[৩] পরিভাষাটির সঙ্গে মিলিটারি শব্দের কোন সম্পর্ক নেই। সাধারণ ব্যবহারে, জঙ্গি হল একজন জেরাপ্রবণ ব্যক্তি যে নিশ্চিতভাবে সহিংসতাকে ব্যবহার করে না। জঙ্গি বলতে সেসব ব্যক্তি বা দলকে নির্দেশ করা যেতে পারে যারা আক্রমণাত্নক আচরণ বা মনোভাব প্রদর্শন করে।
জঙ্গি শব্দটিকে মাঝেমধ্যে সন্ত্রাসী বা সশস্ত্র বিদ্রোহীর বিকল্প উত্তম-প্রতিশব্দ হিসেবে ব্যবহার করা হয়।[৪]
জঙ্গি শব্দটি প্রায়শই কিছু ধর্মীয় চক্রের মাঝে খ্রিস্টানদের চলমান যুদ্ধ (গির্জার সদস্যদের ভাষ্য অনুযায়ী) অথবা পাপের বিরুদ্ধে সংগ্রামরত খ্রিষ্টান গির্জাকে বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। নির্দিষ্টভাবে, রোমান ক্যাথলিক গির্জা চার্চ জঙ্গি ও চার্চ বিজয়ীদের মধ্যে পার্থক্য করে থাকে।[৫][৬]সেভেন্থ ডে এডভান্টিস্ট চার্চ-এর প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে একজন এলেন জি. হোয়াইট বলেন, "বর্তমানে গির্জাই হল জঙ্গিবাদী। বর্তমানে আমরা অন্ধকারাচ্ছন্ন একটি বিশ্বের সম্মুখীন, যা বলতে গেলে পুরোটাই পৌত্তলিকতার/ব্যক্তি পূজার কাছে সমর্পিত।"[৭] এমন ধর্মীয় অর্থকে কখনোই 'বেলিজারেন্ট' শব্দটির সঙ্গে গুলিয়ে ফেলা যাবে না, যা চরমপন্থি ধর্মীয় আচরণকারী কিছু লোকদের মধ্যে পাওয়া যায়, যারা তাদের চরমপন্থি ধর্মীয় বিশ্বাস ও আদর্শকে ভিত্তি করে অশথর হাতে তুলে নেয় এবং সশস্ত্র যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে, অথবা যারা তাদের চরমপন্থি ধর্মীয় এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য সহিংস বা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে। এমন চরমপন্থি দলগুলো হতে পারে খ্রিস্টান,[৮] মুসলিম,[৯][১০][১১] ইহুদি,[১২][১৩][১৪] অথবা অন্য কোন ধর্মের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত।
সংবাদপত্র, ম্যাগাজিন, অন্যান্য তথ্যউৎস সাধারণত জঙ্গি শব্দটিকে একটি নিরপেক্ষ পরিভাষা বিবেচনা করে,[১৫] যেখানে সন্ত্রাসী শব্দটি[১৬] বা গেরিলা[১৭] প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী উদ্দিষ্ট ব্যক্তি বা সংস্থার নিজস্ব তকমা অনুযায়ী আচরণকে অবৈধ ঘোষণা করে, তার এমন আচরণের উদ্দেশ্য যাই হোক না কেন। অন্যান্য ক্ষেত্রে, জঙ্গি বলতে এমন কোন ব্যক্তিকে বোঝায় যে প্রাক্তন সশস্ত্র বাহিনীর কোন সদস্য না হয়েও যুদ্ধে অংশ নেয় অথবা যোদ্ধা হিসেবে কাজ করে।
প্রচার মাধ্যম অনেকসময় "জঙ্গি" শব্দটি সন্ত্রাসবাদের প্রাসঙ্গিক শব্দ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।[৪] সাংবাদিকগণ অনেক সময় জঙ্গি পরিভাষাটি সেসব আন্দোলনের প্রতি প্রয়োগ করা হয়, যারা কৌশল হিসেবে সন্ত্রাসকে ব্যবহার করে। এছাড়াও প্রচারমাধ্যম সন্ত্রাসী সগঠনগুলোকে বোঝাতে জঙ্গি দল বা চরমপন্থি/মৌলবাদী জঙ্গি পরিভাষাগুলো ব্যবহার করে।[৪][১৮][১৯]
যারা একটি বিদেশী সামরিক অভিযানকে প্রতিহত করে তাদেরকে সন্ত্রাসী তকমার যোগ্য বলে ধরা হয় না, কারণ সশস্ত্র বাহিনীর বিরুদ্ধে তাদের রাজনৈতিক সহিংস কর্মকাণ্ড যা একটি বিদেশী জবরদখলকারীকে লক্ষ্য করে পরিচালিত হয় তা আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে না। জেনেভা কনভেনশনের এক নং নীতিমালায়, যেসব ব্যক্তি বহিরাগত (বা বিদেশী) সশস্ত্র দখল, উপনিবেশিক প্রভাববিস্তার ও বৈষম্যবাদী ক্ষমতাসীন সরকারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র লড়াইয়ে জড়িত থাকে, তাদেরকে বৈধ যোদ্ধার স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। দাপ্তরিক-পোশাকবিহীন গেরিলারাও যোদ্ধার পদমর্যাদা লাভ করে যদি তারা সশস্ত্র অভিযানগুলোতে প্রকাশ্যে অস্ত্র বহন করে। নীতিমালা ১ বেসামরিক লোকজনের উপর জঙ্গি কর্তৃক আক্রমণের বৈধতা দেয় না, যারা এই বিষয়শ্রেণীর মধ্যে পরে।
জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে সন্ত্রাসবাদ বিষয়ক গৃহীত সিদ্ধান্তে (৪২/১৫৯, ৭ ডিসেম্বর ১৯৮৭) যা আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদকে অবৈধ ঘোষণা করে এবং অপরাধটিকে প্রতিরোধ করতে প্রদত্ত শর্ত অনুযায়ী এর ক্ষতির পরিমাপ নির্ধারণ করে: "যে, জাতিসংঘ নীতিমালা অনুসারে বর্তমান গৃহীত সিদ্ধান্তের কোন কিছুই কোনভাবেই জোরপূর্বক অধিকারবঞ্চিত মানুষের আত্মসম্মান, স্বাধীনতা ও স্বনির্ভরতার অধিকারকে খর্ব করতে পারবে না [....], বিশেষত সেসব মানুষ যারা উপনিবেশবাদী ও বৈষম্যবাদী সরকারব্যাবস্থা ও বৈদেশিক দখলদারি বা অন্যান্যভাবে উপনিবেশবাদী শাসনব্যবস্থার অধীন, নতুবা [....] এসব মানুষের আমরণ সংগ্রামের অধিকার ও জাতিসংঘের নীতিমালা ও আন্তর্জাতিক আইনের নীতিমালা অনুযায়ী সমর্থন চাওয়া ও পাওয়ার অধিকার।"
জঙ্গিবাদ রাজনৈতিক বর্ণালীর একটি অংশ, যার মধ্যে বর্ণবাদী, বৈষম্যবাদী, ধর্মীয় আধিপত্যবাদী, বিচ্ছিন্নতাবাদী, গর্ভপাত বিরোধী ও পক্ষপাতী ও পরিবেশবাদীগণও অন্তর্ভুক্ত। উদাহরণস্বরূপ বামপন্থী, ডানপন্থী ও মানবাধিকার দলসমূহের জঙ্গিগণ যার মধ্যে অছে জঙ্গি সংস্কারকগণ, জঙ্গি নারীবাদী, জঙ্গি প্রাণী অধিকারকর্মী, জঙ্গি নৈরাজ্যবাদীর কথা বলা যেতে পারে। ইসলামী জঙ্গিবাদ বা জঙ্গি ইসলাম বলতে বোঝায় ইসলামী ব্যক্তি, দল, বা সরকার কর্তৃক ইসলামী সহিংস, আগ্রাসী রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড। বিভিন্নরকম গোপন সংগঠন যেগুলো সশস্ত্র হিসেবে পরিচিত তারাও জঙ্গি সংজ্ঞার অন্তর্ভুক্ত।
বিশ্বজুড়ে এমন সব মানুষ, যাদেরকে "বন্দী করা সহজ নয়" কিন্তু যারা "আসন্ন হুমকি" হিসেবে ভূমিকা রাখে, তাদেরকে গুপ্তহত্যা করতে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতির অনুমতি ব্যবহার করে[২০] ওবামা প্রশাসন নিয়মিতভাবে প্রত্যেক বিচারবহির্ভূত হত্যার ভুক্তভোগীকে জঙ্গি হিসেবে সংজ্ঞায়িত করে আসছে।[২১]
যে সকল সংগঠন নিজেদের জঙ্গি হিসেবে সংজ্ঞায়িত করে, তাদের মধ্যে আলস্টার ইয়াং মিলিট্যান্টস পরিকল্পিত কৌশল হিসেবে সহিংসতাকে (সন্ত্রাস, অগ্নিকাণ্ড ও হত্যা) মূল লক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করে।
কমিউনিস্টপন্থীরা নিজেদের সক্রিয় মাঠকর্মীদের উৎসাহিত করতে মিলিট্যান্ট উপাধিতে আখ্যায়িত করে থাকে।
সম্পর্কিত সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্যপূর্ণ নিবন্ধসমূহ:
এই নিবন্ধটি অসম্পূর্ণ। আপনি চাইলে এটিকে সম্প্রসারিত করে উইকিপিডিয়াকে সাহায্য করতে পারেন। |