জনপ্রিয়তার দোহাই দিয়ে যুক্তি এক প্রকারের অনুপপত্তি বা কুযুক্তি বা হেত্বাভাস। যুক্তিপ্রদানের তত্ত্ব (argumentation theory) অনুসারে এই কুযুক্তি দিয়ে বুঝানো হয় বেশিরভাগ মানুষ বিশ্বাস করে এরকম যেকোনও প্রকার প্রতিজ্ঞা বা বিবৃতি অবশ্যই সত্য। একে সংক্ষেপে এভাবেও বলা যায়, "যা বেশিরভাগ মানুষ বিশ্বাস করে তাই সঠিক"। এই কুযুক্তি বিচার বিবেকের মাধ্যমে নির্ধারিত হয় না, বরং এই কুযুক্তি সংখ্যার প্রাচুর্যতাকে বিবেচনাধীন রেখে সিদ্ধান্ত নেয়। চীনা ভাষায় একটি প্রবাদ আছে। প্রবাদটি হলো "তিনজনেতে বাঘ বলিলে, বাঘ জন্মায় সে স্থানে"। এই প্রবাদের সাথে এই হেত্বাভাসের অর্থগত সাদৃশ্য আছে।
লাতিন ভাষায় একে "আর্গুমেন্তুম আদ পোপুলুম" (argumentum ad populum) বলে; একে ইংরেজিতে "আর্গুমেন্টাম অ্যাড পপুলাম" উচ্চারণ করা হয়। এই কুযুক্তি ইংরেজি ভাষায় আরও বিভিন্ন নামে পরিচিত।(ইংরেজি:appeal to the masses, appeal to belief, appeal to the majority, appeal to democracy, appeal to popularity, argument by consensus, consensus fallacy, authority of the many, bandwagon fallacy, vox populi)।[১]
কোনো মানুষকে প্রভাবিত করতে গিয়ে এই হেত্বাভাষের ব্যবহারের প্রবণতা অনেক বেশি দেখা যায়। বলা হয়, এটা বিশ্বাস করতেই হবে বা এটাই যৌক্তিক কারণ সংখ্যাধিক্য মানুষ এটাই মনে করে। এরকম কিছু উদাহরণ হলো
ধরা যাক কোনো একটা বিষয়ের উপর ভোট গণনা করা হচ্ছে। ক এবং খ-এর মধ্যে যে কোনও একটি বাছাইয়ের সুযোগ আছে। ধরা যাক ৭৫ শতাংশ মানুষ এক্ষেত্রে "ক" পছন্দটি বাছাই করে নিল। এক্ষেত্রে গণতন্ত্র হিসাব করে খ পছন্দকে বাতিল করে দেওয়া হবে। আপাতদৃষ্টিতে এটা সর্বশ্রেষ্ঠ মনে হলেও এটা সঠিক নয়। এক্ষেত্রে যে ২৫ শতাংশ খ সুযোগটিকে বাছাই করেছে, তাদের বক্তব্য শোনা প্রয়োজন এবং বিবেচনা করা প্রয়োজন যে কেন তারা ক পছন্দটিকে বেছে নিলো না। কিন্তু সমাজ বা রাষ্ট্রপরিচালনায় এরকম সংখ্যালঘুদের মতামত বেশিরভাগ সময়েই উপেক্ষিত হয়। ফলশ্রুতিতে ঐতিহাসিকভাবে রাষ্ট্র এবং সভ্যতাকে অনেক সময় সে ভুলের প্রতিদান দিতে হয়।