মহর্ষি জমদগ্নি বর্তমান মন্বন্তরের সপ্তর্ষিদের একজন। তিনি বিষ্ণুর ষষ্ঠ অবতার, মহাতেজস্বী পরশুরামের পিতা। জমদগ্নি, ব্রহ্মার মানসপুত্র প্রজাপতি ভৃগুর বংশে জন্মগ্রহণ করেন।[১]
ঋগ্বেদের কতকগুলো সূক্তে এমনভাবে জমদগ্নির নাম করা হয়েছে, যাতে মনে হয় তিনি সেগুলোর মন্ত্রদ্রষ্টা ঋষি। ঋগ্বেদের তৃতীয় মণ্ডলের ৬২ সূক্তের ১৮তম ঋক-
গৃণানাং জমদগ্নিনা যোনাবৃতস্য সীদতম্।
পাতং সোমমৃতাবৃধা।।[২]
প্রজাপতি ভৃগুর বংশধর জমদগ্নি। তাঁর নামের আক্ষরিক অর্থ 'দগ্ধকারী অগ্নি'। ভৃগুর পুত্র চ্যবন। চ্যবনের দুই পুত্র- আপ্রবান্(আপ্নুবান্) এবং দধীচি। আপ্রবানের পুত্র ঔর্ব। ঔর্বের পুত্র ঋচীক। ঋচীকের পুত্র জমদগ্নি। চ্যবন ও পৌলমীর পুত্র আপ্রবান্। আপ্রবান্ ও রুচির পুত্র মহর্ষি ঔর্ব। ঔর্বের পুত্র ঋচীক।[টীকা ১]
মহর্ষি ঋচীকের পত্নী, গাধি রাজার কন্যা সত্যবতীর গর্ভে মহর্ষি জমদগ্নির জন্ম হয়। মহাভারতের বনপর্বে জমদগ্নির এইরকম জন্মবৃত্তান্ত আছে যে, ঋচীকের সঙ্গে সত্যবতীর বিবাহের পর, একদিন প্রজাপতি ভৃগু তাঁদের দেখতে আসেন। দেবগণের সদা পূজনীয় মহর্ষি ভৃগুকে ঋচীক-সত্যবতী যথাযথ সম্মান প্রদর্শনপূর্বক তাঁর সেবা করলেন। অতঃপর মহর্ষি ভৃগু প্রসন্ন হয়ে সত্যবতীকে বর প্রার্থনা করতে বললেন। তখন সত্যবতী নিজের ও নিজের মাতার জন্য ভৃগুর কাছে পুত্র প্রার্থনা করলেন। মহর্ষি ভৃগু তাঁদেরকে শুচি-শুদ্ধ হয়ে আলাদা আলাদা ভাবে সত্যবতীকে একটি উড়ুম্বরবৃক্ষ ও সত্যবতীর মাতাকে একটি অশ্বত্থবৃক্ষকে আলিঙ্গন করতে বললেন। এবং সেইসাথে সত্যবতী ও তাঁর মাতাকে দুই পাত্রভর্তি চরু(পায়েস) দিয়ে বললেন, 'আমি তোমার ও তোমার মাতার জন্য বিশ্বব্রহ্মাণ্ড অনুসন্ধান করে এই দুইভাগ পায়েস এনেছি। তোমরা ভক্তিসহকারে এই পায়েস খাবে।' এই কথা বলে তিনি চলে গেলেন।
এদিকে সত্যবতী ও তাঁর মাতার মধ্যে বৃক্ষ আলিঙ্গন এবং পায়েস খাওয়া নিয়ে গোলমাল হলো। অর্থাৎ কিনা, সত্যবতী আলিঙ্গন করলেন বটবৃক্ষ এবং তাঁর মাতা উড়ুম্বর, মাতার জন্য নির্ধারিত চরু খেলেন সত্যবতী এবং সত্যবতীর টা খেলেন তাঁর মাতা।
তারপর বহুকাল অতিবাহিত হলে মহর্ষি ভৃগু ধ্যানে বসে সেই বিপর্যয়ের কথা জানতে পেরে সত্যবতীর কাছে এসে বললেন, 'কন্যা, তোমরা বিপরীতভাবে বৃক্ষ আলিঙ্গন ও চারু ভক্ষণ করেছো। তোমার মাতাই এর জন্য দায়ী। তিনি তোমায় ঠকিয়েছেন। সুতরাং তোমার পুত্র ব্রাহ্মণ হয়েও ক্ষত্রিয় হবে, আর তোমার মাতার পুত্র ক্ষত্রিয় হয়েও ব্রাহ্মণ হবে। তখন সত্যবতী তাঁর শ্বশুর ভৃগুর নিকট অনুনয় করে বললেন, 'পিতা, আমার পুত্র যেনো এমন না হয়, আমার পৌত্র যেন এমন হয়।' তখন ভৃগু সত্যবতীকে 'বেশ, এমন-ই হবে' বলে প্রস্থান করলেন।
তারপর নির্দিষ্ট সময় অতিবাহিত হওয়ার পর সত্যবতী এক পুত্রের জন্ম দিলেন। সেই পুত্রই জমদগ্নি। তপস্যা ও বেদাধ্যায়ন করে জমদগ্নি বহু ঋষি-তপস্বীদের অতিক্রম করেছিলেন।[৩]
সত্যবতীর মাতার গর্ভে জন্ম নিলেন জগদ্বিখ্যাত মহাঋষি বিশ্বামিত্র। যিনি রাজা হলেও পরবর্তীকালে তপস্যার দ্বারা ব্রহ্মর্ষি পদ প্রাপ্ত হন । বেদে বর্ণিত বিশ্বমিত্র এবং জমদগ্নির ঘনিষ্ঠ সম্বন্ধ এই কাহিনীতে সমর্থিত হয়েছে । এই কাহিনী থেকে জানা যাচ্ছে যে বিশ্বামিত্র জমদগ্নির সমবয়স্ক মাতুল ছিলেন।[৪]
মহাভারতের বনপর্বে জমদগ্নির এরকম জন্মবিবরণ আছে। আবার মহাভারতের শান্তিপর্বেও জমদগ্নির জন্মকথা আছে। কিন্তু সেখানে ভৃগুর পরিবর্তে ঋচীকের নাম আছে। অর্থাৎ সত্যবতী পুত্রের জন্য ভৃগু নয়, ঋচীকের নিকট প্রার্থনা করেছিলেন।[৫]
মহর্ষি জমদগ্নি ইক্ষ্বাকুবংশীয় রাজা প্রসেনজিতের কন্যা রেণুকা কে দেখে মুগ্ধ হয়ে প্রসেনজিতের কাছে রেণুকার পাণিপ্রার্থনা করেন। প্রসেনজিত সানন্দে রেণুকার সাথে জমদগ্নির বিবাহ দেন। রেণুকাকে পেয়ে হর্ষিত জমদগ্নি পত্নীর সঙ্গে বহুকাল আনন্দে কাটালেন।
জমদগ্নি-রেণুকার পাঁচটি সন্তান হয়। তাঁরা হলেন- রুমণ্বান্, সুষেণ, বসু ,বিশ্বাবসু ও রাম।[৬]
কোনো একসময় পুত্রেরা ফলসংগ্রহের জন্য বনে গেলেন এবং ব্রতপরায়ণা রেণুকা নদীতে স্নান করতে গেলেন। স্নান করে ফিরে আসবার সময় রেণুকা মর্ত্তিকাবতদেশের রাজা চিত্ররথ কে দেখতে পেলেন। দেবী রেণুকা স্বর্ণপদ্মের মালাধারী পরমসুন্দর চিত্ররথকে জলের মধ্যে স্ত্রীদের সাথে খেলা করতে দেখে কামাসক্ত হলেন। এবং চিত্ররথের কথা ভাবতে ভাবতে আশ্রমের দিকে প্রস্থান করলেন। আশ্রমে ফিরে এলে ঋষি জমদগ্নি রেণুকার ভাবান্তরের কারণ বুঝতে পেরে রেণুকাকে ধিক ধিক শব্দে নিন্দা করতে লাগলেন। এই সময় জমদগ্নির চারপুত্র আশ্রমে ফিরে এলেন। তখন জমদগ্নি বয়ঃক্রম অনুসারে তাঁর পুত্রদের মাতৃহত্যার জন্য প্রনোদিত করতে লাগলেন। কিন্তু জমদগ্নির প্রথম চার পুত্রের কেউ-ই মাতাকে অস্ত্রাঘাত করতে চাইলেন না। সেই কারণে ক্রোধান্বিত হয়ে জমদগ্নি তাঁর চার পুত্রকে অভিশাপ দিলেন; সেই অভিশাপে তাঁরা তখনই মানুষী চেতনা হারালেন, এবং পশুপক্ষীর মতো জড়চেতা হলেন। এরপরে মহাতেজস্বী পরশুরাম সকলের পরে আশ্রমে এলেন। তখন জমদগ্নি তাঁকে বললেন, পুত্র! তোমার এই পাপিষ্ঠ মাতাকে বধ কর; দুঃখ কোরো না।' তৎক্ষণাৎ পরশুরাম মাতাকে কুঠার দিয়ে হত্যা করলেন।
রেণুকার মৃত্যুতে জমদগ্নির ক্রোধ শান্ত হলো। তিনি প্রসন্ন হয়ে পরশুরামকে বললেন,'বৎস! তুমি আমার আদেশমাত্রই এই দুষ্কর কার্য করিয়াছ; সুতরাং তোমার যত ইচ্ছা তত বর নাও।' তখন পরশুরাম-মাতার পুনরায় জীবিত হওয়া, সেই হত্যার কথা মনে না থাকা, হত্যার পাপ জমদগ্নিকে স্পর্শ না করা, ভ্রাতাদের স্বাভাবিক অবস্থা, যুদ্ধে অপ্রতিদ্বন্দ্বীতা এবং দীর্ঘ আয়ু এই সকল বর চাইলেন। মহাতপস্বী জমদগ্নি সেই সকল বরই দিলেন।[৭][৮]
হিন্দুশ্রাদ্ধে এবং অন্যান্য পুন্যকর্মে কেন ছত্র ও পাদুকা দান করা হয় এই প্রসঙ্গে পিতামহ ভীষ্ম একটি প্রাচীন ইতিবৃত্ত বলেন।
একদিন ভগবান জমদগ্নি তীর-ধনুক দিয়ে লক্ষ্যবিদ্ধ করবার অভ্যাস করছিলেন। তাঁর স্ত্রী রেণুকা লক্ষ্যভ্রষ্ট তীরগুলি সংগ্রহ করে এনে আবার জমদগ্নিকে দিচ্ছিলেন। এরকম অভ্যাসকালে তাঁর কত সময় চলে গেল সে খেয়াল ছিল না। বেলা গড়িয়ে সূর্য ধীরে ধীরে মধ্যগগনে এসে পৌঁছলেন। প্রখর রৌদ্রের মধ্যে তীর সংগ্রহ করতে করতে রেণুকা ক্লান্ত হয়ে পড়লেন । চলনক্ষমতাও বেশি ছিলনা। অথচ পাছে স্বামী ক্রুদ্ধ হয়ে শাপ দেন, সেই ভয়ে কিছু বলতেও পারেন না । শেষ পর্যন্ত সূর্যের তাপে তাঁর মাথা যেন জ্বলতে লাগল , খালি পায়ে চলতে চলতে পা - দুটি যেন পুড়ে যেতে লাগল । বাধ্য হয়েই রেণুকা একটি বৃক্ষের ছায়ায় দাঁড়িয়ে খানিক বিশ্রাম করলেন । ফলে তীর কুড়িয়ে আনতে খানিক দেরি হল । জমদগ্নি রেণুকাকে বিলম্বের কারণ জিজ্ঞাসা করলেন । রেণুকা ভয়ে ভয়ে স্বামীকে বলেই ফেললেন নিজের কষ্টের কথা । কথা । এতক্ষণে জমদগ্নির হুঁশ হল যে বেলা হয়েছে অনেক , রােদের তাপও অতি ভীষণ । রেণুকার অবস্থা দেখে তার কষ্টও হল আর খুব রাগ ও হলো। আর তাঁর যত রাগ গিয়ে পড়ল মাঝ আকাশে জ্বলতে থাকা সূর্যদেবের ওপর । জমদগ্নি রেগে গিয়ে সূর্যকেই ধ্বংস করতে উদ্যোত হলেন । সূর্য ভয় পেলেন ঋষির ক্রোধ দেখে । তারপর ব্রাহ্মণের বেশে এসে দাঁড়ালেন জমদগ্নির সামনে । ক্রুদ্ধ জমদগ্নিকে ছদ্মবেশী ব্রাহ্মণ ধীরে ধীরে বােঝাতে লাগলেন সূর্যের প্রয়ােজনীয়তা কতখানি । বলতে লাগলেন সূর্যই এ জগতে প্রাণের উৎস; সূর্য বস্তু থেকে যে রস শোষণ করে, বর্ষাকালে সেই রস-ই বর্ষণ করেন ইত্যাদি। এ সকল কথার মধ্যেই জমদগ্নি কিন্তু ব্রাহ্মণবেশী সূর্যকে চিনে ফেললেন এবং বেশ ক্রুদ্ধ হয়েই তাঁকে বললেন - রেণুকার যত কষ্ট হয়েছে তার জন্য শাস্তি তােমাকে পেতেই হবে । মধ্যাহ্নে তুমি যখন মাঝ আকাশে থাকবে , তখন তােমাকে আমি অবশ্যই শাস্তি দেব । সূর্য তখন জমদগ্নির শরণাপন্ন হয়ে প্রাণ ভিক্ষা করলেন । জমদগ্নি শরণাগত সূর্যকে প্রাণ দান করে বললেন, 'বেশ , তােমাকে বধ করব না । শরণাগতকে বধ করা অন্যায়।কিন্তুএই যে প্রখর তাপে চলাফেরা করতে মানুষের এত কষ্ট হয় , তার একটা বিহিত তোমাকে করতেই হবে। এমন ব্যবস্থা করাে যাতে উত্তপ্ত পথে চলতে কষ্ট না হয় , তােমার প্রখর তাপ থেকে মানুষের শরীর যাতে রক্ষা পায়।' তখন সূর্য জমদগ্নির হাতে তুলে দিলেন মস্তক রক্ষাকারী ছত্র এবং চরণ রক্ষাকারী চর্ম পাদুকা। জমদগ্নি সন্তুষ্ট হলেন । সেই সময় থেকেই জগতে ছত্র এবং পাদুকার ব্যবহার প্রচলিত হল ।[৯]
একদিন পরশুরাম ও তাঁর অন্যান্য ভ্রাতারা ফল সংগ্রহের জন্য বনে গেলে মাহিষ্মতীরাজ কার্তবীর্যার্জুন যুুুুদ্ধ আকাঙ্খায় উন্মত্ত হয়ে চারিদিকে ঘুরতে ঘুরতে জমদগ্নির আশ্রমের নিকট এলেন। কার্তবীর্যার্জুন অতিথি হয়ে এসেছেন। কাজেই পরশুরামের মা রেণুকাদেবী রাজাকে যথাযথ সেবা করলেন,কিন্তু রাজা তাতে সন্তুষ্ট হলেন না। তিনি আশ্রমে যথেচ্ছ উৎপীড়ন করে আশ্রমের হোমধেনুর বৎসকে হরণ করে তাঁর নগরী উদ্দেশ্যে প্রস্থান করলেন। তারপর পরশুরাম ফল-সংগ্রহ করে আশ্রমে ফিরে পিতার মুখে এই দুর্দ্দশার বৃত্তান্ত শুনলেন।এবং সেই হোমধেনুর আর্তনাদ শুনে পরশুরাম অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হলেন।
ক্রুদ্ধ পরশুরাম কার্তবীর্যার্জুনের হত্যার উদ্দেশ্যে তাঁর দিকে অগ্রসর হন। পরশুরাম ও কার্তবীর্যার্জুনের মধ্যে প্রবল যুদ্ধ হয়,অবশেষে পরশুরাম তীক্ষ্ণ ভল্ল(বল্লম) দ্বারা কার্তবীর্যার্জুনের সহস্রবাহু ছেদন করে তাকে হত্যা করেন। এবং সেই হোমধেনু নিয়ে আশ্রমে ফিরে আসেন।
কার্তবীর্যার্জুনের মৃত্যুতে তার পুত্ররা পলায়ন করলেও পিতৃহত্যার প্রতিশোধ নেবার জন্য সুযোগ খুঁজছিল।
একদিন যখন পরশুরাম আশ্রমের বাইরে ছিলেন, তখন কার্তবীর্যার্জুনের পুত্ররা জমদগ্নির আশ্রমে এসে তপস্যারত মহর্ষিকে হত্যা করে। আশ্রমে ফিরে এসে ভ্রাতাদের মুখে পিতৃহত্যার সংবাদ শুনে, ক্রোধিত পরশুরাম মহিষ্মতী কার্তবীর্যার্জুনের পুত্রদের মস্তক ছেদন করে হত্যা করেন। এরপর পরশুরাম ক্রমাগত একুশবার পৃথিবীকে ক্ষত্রিয়শূন্য করেন।[টীকা ২][১২][১৩]
শ্রীরামচন্দ্র রাবণ বধের পর অযোধ্যায় প্রত্যাবর্তন করলে অনেক ঋষি-মুনিদের আগমন ঘটে তাঁকে দেখবার জন্য। এদের মধ্যে জমদগ্নি একজন যিনি উত্তর দিক থেকে এসেছিলেন।
কিন্তু রামচন্দ্রের রাবণবধের অনেক আগেই জমদগ্নির মৃত্যু হয়, কাজেই এই জমদগ্নি হয়ত অন্য কোনো ভৃগুবংশীয় ঋষি।[১৪]
মহাভারতের আদিপর্ব থেকে জানা যায় পাণ্ডুপুত্র অর্জুনের জন্মােৎসবে যে সকল মহর্ষি সমবেত হন তাঁদের মধ্যে জমদগ্নি অন্যতম । এক্ষেত্রে বলতে হবে যে , জমদগ্নি স্বর্গলােকের অন্যান্য ঋষিদের সঙ্গে এসেছিলেন ।[১৫]
মহাভারতের সভাপর্বে নারদ যুধিষ্ঠিরকে ব্রহ্মার সভার যে বর্ণনা দিয়েছেন তা থেকে জানা যায় ব্রহ্মার সভায় যে সকল মহর্ষি উপস্থিত থেকে ব্রহ্মার উপাসনা করতেন তাঁদের মধ্যে জমদগ্নি অন্যতম।[১৬]
দ্রোণাচার্যের মৃত্যুর ঠিক আগে স্বর্গ থেকে বহু ঋষি-মুনি এসে উপস্থিত হয়েছিলেন তাঁর সামনে । দ্রোণকে যুদ্ধ বন্ধ করে স্বর্গলােকে যাবার অনুরােধ করেছিলেন তাঁরা । এদের সঙ্গে মহর্ষি জমদগ্নিও এসেছিলেন।[১৭]
একদিন বহু মহর্ষি-রাজর্ষি গণ প্রভাসতীর্থে একত্রিত হয়ে পরামর্শ করলেন সবাই মিলে পৃথিবীর সমস্ত তীর্থস্থান পর্যটন করবেন। সমস্ত ঋষি-মুনি-রাজারা ইন্দ্রকে অগ্রবর্তী করে যাত্রা শুরু করলেন। এদের মধ্যে জমদগ্নি ও ছিলেন। ঘুরতে ঘুরতে তাঁরা ব্রহ্ম সরোবরে উপস্থিত হলেন। সেখানে স্নান করে ঋষিরা পদ্মের মৃণাল(ডাঁটা) তুলে নিচ্ছিলেন। ঋষি অগস্ত্য একটি সুন্দর পদ্মফুল তুলেছিলেন। সেই পদ্মফুলটি কেউ চুরি করে নিয়েছিল(বোধ হয় ইন্দ্র)। মহর্ষি অগস্ত্য তখন সেই ঋষিদের দোষারোপ করলেন। তখন ঋষি ও রাজর্ষিরা নিজের নির্দোষ প্রমাণ করবার জন্য প্রকৃত অপরাধীর উদ্দেশ্যে দিলেন। মহর্ষি জমদগ্নি বলেছিলেন, 'যে লোক আপনার পদ্ম হরণ করেছে, সে লোক অনাধ্যায়(যা পড়া উচিত নয়) অধ্যয়ন করুক, শ্রাদ্ধে মিত্রকে ভোজন করাক(?) এবং নিজে শূদ্রের শ্রাদ্ধে ভোজন করুক।
সেকালের দিনে এসব কাজ নিন্দনীয় ছিল।[১১][১৮]
মহাবগ্গের বিনয়পিটকে বলা হয়েছে, ভগবান বুদ্ধ মহর্ষি জমদগ্নিকে অত্যন্ত শ্রদ্ধা করতেন, কারণ যে সকল ঋষিগণ বেদের মন্ত্র দর্শন করেছিলেন, তাঁদের মধ্যে জমদগ্নি একজন। [১৯][২০]