জয়া বচ্চন | |
---|---|
দায়িত্বাধীন | |
অধিকৃত কার্যালয় জুলাই ২০০৪ | |
সংসদীয় এলাকা | উত্তর প্রদেশ |
ব্যক্তিগত বিবরণ | |
জন্ম | জয়া ভাদুড়ী ৯ এপ্রিল ১৯৪৮ জব্বলপুর, ভারত |
রাজনৈতিক দল | সমাজবাদী পার্টি |
দাম্পত্য সঙ্গী | অমিতাভ বচ্চন (বি. ১৯৭৩) |
সম্পর্ক | দেখুন বচ্চন পরিবার |
সন্তান | অভিষেক বচ্চন শ্বেতা নন্দা |
পিতামাতা | তরুনকুমার ভাদুড়ী (পিতা) ইন্দিরা ভাদুড়ী (মাতা) |
শিক্ষা | ভারতীয় চলচ্চিত্র ও দূরদর্শন সংস্থান |
পেশা | অভিনেত্রী, রাজনীতিবিদ |
স্বাক্ষর |
জয়া বচ্চন (বিবাহপূর্ব ভাদুড়ি; জন্ম ৯ এপ্রিল ১৯৪৮) হলেন একজন ভারতীয় বাঙালি অভিনেত্রী ও রাজনীতিবিদ। তিনি বর্তমানে সমাজবাদী পার্টির রাজ্যসভার সংসদ সদস্য,[১] তিনি ২০০৪ সাল থেকে চার মেয়াদে এই পদে অধিষ্ঠিত রয়েছেন। তাকে তার সময়ের হিন্দি চলচ্চিত্রের অন্যতম সেরা অভিনেত্রী হিসেবে গণ্য করা হয়; বিশেষ করে মূলধারার ও "মধ্যবর্তী" চলচ্চিত্রে তার সহজাত অভিনয়ের জন্য।[২][৩] কর্মজীবনে তিনি নয়টি ফিল্মফেয়ার পুরস্কার অর্জন করেছেন, তন্মধ্যে তিনটি শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে, তিনটি শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেত্রী বিভাগে; ফলে তিনি অভিনয় বিভাগে নারীদের মধ্যে রানী মুখার্জীর সাথে যৌথভাবে সর্বাধিক পুরস্কার বিজয়ী। তিনি ২০০৭ সালে ফিল্মফেয়ার আজীবন সম্মাননা পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৯২ সালে ভারত সরকার তাকে ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা পদ্মশ্রীতে ভূষিত করে।[৪]
কিশোর বয়সে সত্যজিৎ রায়ের মহানগর (১৯৬৩) চলচ্চিত্র দিয়ে অভিষেকের পর প্রাপ্ত বয়স্ক চরিত্রে তার প্রথম চলচ্চিত্র ছিল হৃষিকেশ মুখোপাধ্যায়ের গুড্ডি (১৯৭১)। এরপর তিনি হৃষিকেশের পরিচালনায় আরও কয়েকটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। তিনি উপহার (১৯৭১), কোশিশ (১৯৭২) ও কোরা কাগজ (১৯৭৪) চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য খ্যাতি অর্জন করেন। তিনি তার স্বামী অমিতাভ বচ্চনের বিপরীতে জঞ্জির (১৯৭৩), অভিমান (১৯৭৩), চুপকে চুপকে (১৯৭৫), মিলি (১৯৭৫) ও শোলে (১৯৭৫) চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন।
তিনি অভিনেতা অমিতাভ বচ্চনের স্ত্রী ও অভিষেক বচ্চন ও শ্বেতা নন্দার মা।[৫] বিয়ের পর তাকে চলচ্চিত্রে কম অভিনয় করতে দেখা যায়। ১৯৮১ সালে সিলসিলা চলচ্চিত্রে অভিনয়ের পর তিনি অভিনয় থেকে দীর্ঘ বিরতি নেন। এরপর তিনি গোবিন্দ নিহলানির হাজার চৌরাশি কী মা চলচ্চিত্র দিয়ে অভিনয়ে ফিরে আসেন। তখন থেকে তিনি কয়েকটি সমাদৃত ও ব্যবসা সফল চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন, তন্মধ্যে রয়েছে ফিজা (২০০০), কভি খুশি কভি গম... (২০০১), ও কাল হো না হো (২০০৩), যার জন্য তিনি সমাদৃত হন এবং কয়েকটি পুরস্কার ও মনোনয়ন লাভ করেন।
জয়া ভাদুড়ী ১৯৪৮ সালের ৯ই এপ্রিল মধ্যপ্রদেশ রাজ্যের জবলপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা ছিলেন খ্যাতনামা সাংবাদিক তরুণকুমার ভাদুড়ী ও মা'র নাম ইন্দিরা ভাদুড়ী। তরুণকুমার ভাদুড়ীর রচিত বিখ্যাত বই অভিশপ্ত চম্বল, হিন্দি চলচ্চিত্রের প্রায় সকল ডাকাত সম্পর্কিত চলচ্চিত্র এই বই থেকে বিষয়বস্তু গ্রহণ করেছে এবং এটি থেকে অনুপ্রাণিত। জয়া ভোপালের সেন্ট জোসেফ কনভেন্ট স্কুলে পড়াশোনা করেন। ১৯৬৬ সালে সারা ভারতের সেরা এনসিসি ক্যাডেট সম্মানে সম্মানিত হন জয়া। জয়া বচ্চনের আদিনিবাস বাংলাদেশের নেত্রোকানা জেলাতে।
জয়া ১৫ বছর বয়সে সত্যজিৎ রায়ের বাংলা ভাষার চলচ্চিত্র মহানগর (১৯৬৩) চলচ্চিত্রে পার্শ্ব চরিত্রে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে চলচ্চিত্রে আত্মপ্রকাশ করেন। এতে শ্রেষ্ঠাংশে অভিনয় করেছিলেন অনিল চট্টোপাধ্যায় ও মাধবী মুখোপাধ্যায়। এরপর তিনি আরও দুটি বাংলা চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন, সেগুলো হল ১৩ মিনিট দৈর্ঘ্যের স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র সুমন এবং ১৯৭১ সালে ধন্যি মেয়ে চলচ্চিত্রে উত্তম কুমারের ভাতৃবধূ চরিত্রে।[৬]
সত্যজিৎ রায়ের পরিচালনায় অভিনয়ের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে তিনি পুনের ভারতীয় চলচ্চিত্র ও দূরদর্শন সংস্থানে ভর্তি হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি সেখানে অভিনয় বিষয়ে অধ্যয়ন করেন এবং স্বর্ণপদক সহ স্নাতক সম্পন্ন করেন। এই সময়ে হৃষিকেশ মুখোপাধ্যায় তাকে গুড্ডি (১৯৭১) চলচ্চিত্রে নাম ভূমিকায় কাজের জন্য নির্বাচন করেন। এতে তাকে ধর্মেন্দ্রর প্রতি মোহাগ্রস্থ স্কুল বালিকার চরিত্রে দেখা যায়।[৭] গুড্ডি চলচ্চিত্রটি সফলতা লাভ করে,[৬] এবং তিনি বম্বে চলে যান ও আরও কাজের প্রস্তাব পেতে থাকেন। ১৪ বছর বয়সী স্কুল বালিকা চরিত্রে তার অভিনয় তাকে এই ধরনের ভাবমূর্তি প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করে এবং তাকে পরবর্তী কালেও এই ধরনের চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যায়। তিনি পরিচালক গুলজার, বাসু চ্যাটার্জী ও হৃষিকেশ মুখোপাধ্যায়ের পরিচালিত চলচ্চিত্রগুলিতে সৌহার্দপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করে সফলতা অর্জন করেন।[৮]
তিনি উপহার (১৯৭১) চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য তিনি ফিল্মফেয়ার বিশেষ পুরস্কার লাভ করেন। এরপর পিয়া কা ঘর (১৯৭২), পরিচয় (১৯৭২), কোশিশ (১৯৭২) ও বাবুর্চি (১৯৭২) চলচ্চিত্রগুলিতে তার অভিনয়কে অনুভূতিপ্রবণ বলে বিবেচনা করা হয়।[৭][৯] ততদিনে তিনি জনপ্রিয় তারকা হয়ে ওঠেন।[৬] গুলজারের কোশিশ চলচ্চিত্রে তিনি ও সঞ্জীব কুমার শ্রবণ প্রতিবন্ধী দম্পতি চরিত্রে অভিনয় করেন, যারা তাদের প্রতিবন্ধী হিসেবে বিভিন্ন দুর্ভোগের সম্মুখীন হন। তিনি এই চলচ্চিত্রের অভিজ্ঞতাকে তার ভবিষ্যৎ জীবনে সামাজিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হতে অনুপ্রেরণা বলে উল্লেখ করেন।[১০] যদিও তিনি জওয়ানি দিওয়ানি (১৯৭২) চলচ্চিত্রে আড়ম্বরপূর্ণ চরিত্রে,[২] এবং অনামিকা (১৯৭৩) চলচ্চিত্রে খল চরিত্রে অভিনয় করে এই ভাবমূর্তি থেকে বের হয়ে আসতে চেয়েছিলেন, কিন্তু তিনি মূলত মধ্যবিত্ত ভাবানুভূতি নিয়ে নির্মিত চলচ্চিত্রগুলিতে অভিনয় করে সমাদৃত হন।
১৯৭২ সালে তিনি প্রথমবারের মত তার ভবিষ্যৎ স্বামী অমিতাভ বচ্চনের বিপরীতে বংশী বিরজু (১৯৭২) চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। একই বছর তিনি বি. আর. ইশারার এক নজর চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন।[৬] অমিতাভ কয়েকটি চলচ্চিত্রে ব্যর্থ হওয়ার পর যখন অধিকাংশ প্রধান অভিনেত্রী তার সাথে সেলিম-জাভেদ রচিত জঞ্জির (১৯৭৩) চলচ্চিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন, জয়া তখন এই চলচ্চিত্রের প্রস্তাব গ্রহণ করেন। চলচ্চিত্রটি ব্যবসা সফল হয় এবং অমিতাভের রাগী যুবক ভাবমূর্তি প্রতিষ্ঠা করে।[১১] এরপর তারা অভিমান (১৯৭৩), চুপকে চুপকে (১৯৭৫) ও শোলে (১৯৭৫) চলচ্চিত্রে একসাথে অভিনয় করেন। অভিমান চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার অর্জন করেন। পরের বছর তিনি কোরা কাগজ চলচ্চিত্রে অভিনয় করে টানা দ্বিতীয়বারের মত শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার অর্জন করেন।
জয়া ও অমিতাভ শোলে চলচ্চিত্রে অভিনয়ের সময় তাদের কন্যা শ্বেতার জন্ম হয়। এরপর তিনি চলচ্চিত্রে অভিনয়ের পরিমাণ কমিয়ে দেন এবং সন্তান লালনপালনে মনযোগী হয়ে ওঠেন। ১৯৭৯ সালে তিনি নৌকর চলচ্চিত্রে গীতা চরিত্রে অভিনয়ের জন্য তার তৃতীয় শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার অর্জন করেন। প্রধান অভিনেত্রী হিসেবে তার সর্বশেষ চলচ্চিত্র ছিল তার স্বামী অমিতাভের বিপরীতে সিলসিলা (১৯৮১)। তিনি শাহেনশাহ (১৯৮৮) চলচ্চিত্রের কাহিনি লিখেন, এতে তার স্বামী প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন।
দীর্ঘ বিরতির পর তিনি গোবিন্দ নিহলানির নকশাল আন্দোলন নিয়ে নির্মিত হাজার চৌরাশি কা মা (১৯৯৮) চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। এই চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য তিনি ফিল্মফেয়ার বিশেষ পুরস্কার লাভ করেন। ২০০০ সালে তিনি ফিজা চলচ্চিত্রে অভিনয় করে শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেত্রী বিভাগে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার লাভ করেন। পরের বছর তিনি করণ জোহরের তারকাসমৃদ্ধ পারিবারিক নাট্যধর্মী কভি খুশি কভি গম... (২০০১) চলচ্চিত্রে তার স্বামীর সাথে অভিনয় করেন। এই কাজের জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেত্রী বিভাগে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার অর্জন করেন। এরপর তিনি করণ জোহরের পরবর্তী চলচ্চিত্র কাল হো না হো (২০০৩)-এ প্রীতি জিন্টার মায়ের চরিত্রে অভিনয় করে পুনরায় শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেত্রী বিভাগে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার অর্জন করেন।[১২] তিনি তার পুত্র অভিষেক বচ্চনের সাথে লাগা চুনারি মেঁ দাগ (২০০৭) ও দ্রোণা (২০০৮) চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন।
২০১১ সালে তিনি বাংলাদেশী চলচ্চিত্র মেহেরজান-এ নাম ভূমিকায় অভিনয় করেন। এটি ১৯৭১ বাংলাদেশে গণহত্যার সময়ে বাংলাদেশী তরুণী মেহের ও একজন পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তার ভালোবাসার গল্প, যেখানে সেই কর্মকর্তাটি যুদ্ধে যোগ দিতে অস্বীকৃতি জানায় এবং পাকিস্তানি সেনাদলের নিকট থেকে মেহেরকে রক্ষা করে।[১৩] ২০১৬ সালে কারিনা কাপুর ও অর্জুন কাপুর অভিনীত কি অ্যান্ড কা (২০১৬) চলচ্চিত্রে তিনি ও অমিতাভ বচ্চন বিশেষ দৃশ্যে অভিনয় করেন।[১৪]
জয়া ২০০৪ সালে প্রথম সমাজবাদী পার্টি থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয় এবং ২০০৬ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত রাজ্যসভায় উত্তর প্রদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন।[১৫] ২০০৬ সালের জুন মাসে তিনি দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচিত হন,[১৬] ২০১০ সালের জুলাই মাস পর্যন্ত এই পদে বহাল থাকেন। ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু অমর সিংকে সমাজবাদী পার্টির প্রাথমিক সদস্যপদ থেকে বহিষ্কার করা হলে তিনি তার মেয়াদ পূর্ণ করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেন এবং বলেন যে কেবল মুলায়েল সিং তাকে অব্যহতির কথা বললেই তিনি অব্যহতি দিবেন।[১৭] ২০১২ সালে তিনি তৃতীয় মেয়াদে এবং ২০১৮ সালে চতুর্থ মেয়াদে পুনর্নির্বাচিত হন।
জয়া ১৯৭৩ সালের জুন মাসের ৩ তারিখে অভিনেতা অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। অমিতাভ-জয়া দম্পতির দুই সন্তান - শ্বেতা বচ্চন নন্দা ও অভিষেক বচ্চন দুজনেই অভিনয়শিল্পী। শ্বেতা শিল্পপতি নিখিল নন্দাকে বিয়ে করেন। তাদের দুই সন্তান রয়েছে, তারা হলেন নব্য নবেলি ও অগস্ত্য নন্দা।[১৮] অন্যদিকে অভিষেক বচ্চন অভিনেত্রী ঐশ্বর্যা রাইকে বিয়ে করেন। তাদের এক কন্যা, আরাধ্য বচ্চন। বচ্চন পরিবার মুম্বইয়ের জুহুতে জলসা বাংলোয় বসবাস করে।[১৯]
Probably the only actress to make a virtue out of simplicity, Jaya was the first whiff of realistic acting in an era when showbiz was bursting with mannequins
Probably the only actress to make a virtue out of simplicity, Jaya was the first whiff of realistic acting in an era when showbiz was bursting with mannequins