জর্জ আর্মিটেজ মিলার | |
---|---|
জন্ম | চার্লসটনে, পশ্চিম ভার্জিনিয়া | ৩ ফেব্রুয়ারি ১৯২০
মৃত্যু | ২২ জুলাই ২০১২ প্লেইনসবারো, নিউ জার্সি | (বয়স ৯২)
জাতীয়তা | আমেরিকান |
মাতৃশিক্ষায়তন | হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়, আলাবামা বিশ্ববিদ্যালয় |
পরিচিতির কারণ |
|
পুরস্কার |
|
বৈজ্ঞানিক কর্মজীবন | |
কর্মক্ষেত্র | মনোবিজ্ঞান, সংজ্ঞানাত্মক বিজ্ঞান |
প্রতিষ্ঠানসমূহ | |
অভিসন্দর্ভের শিরোনাম | 'অপটিমাল ডিজাইন অফ জ্যামিং সিগনালস' (১৯৪৬) |
ডক্টরাল উপদেষ্টা | স্ট্যানলি স্মিথ স্টিভেনস |
উল্লেখযোগ্য শিক্ষার্থী | জর্জ স্পার্লিং, উলরিক নেইসার |
জর্জ আর্মিটেজ মিলার (৩ ফেব্রুয়ারি ১৯২০ - ২২ জুলাই ২০১২) ছিলেন একজন মার্কিন মনোবিজ্ঞানী ও সংজ্ঞানমূলক মনোবিজ্ঞান শাখার প্রতিষ্ঠাতাদের একজন। মনোভাষাবিজ্ঞান (Psycholinguistics) এবং সংজ্ঞানমূলক বিজ্ঞানের জন্মের ক্ষেত্রেও তার অবদান অনস্বীকার্য।
মিলার বেশ কিছু বই লিখেছেন এবং কম্পিউটারের মাধ্যমে ব্যবহার উপযোগী অনলাইন আভিধানিক শব্দার্থিক নেটওয়ার্ক, ওয়ার্ডনেটের উন্নয়ন কাজ পরিচালনা করেন। তিনি দ্যা ম্যাজিক্যাল নাম্বার সেভেন, প্লাস অর মাইনাস টু নামে দুটি গবেষণাপত্র রচনা করেন। তিনি অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে পর্যবেক্ষণ করে একাধিক ভিন্ন গবেষণামূলক ফলাফল একসঙ্গে বিবেচনা করে লক্ষ্য করেন যে, মানুষের স্বল্পমেয়াদী স্মৃতিশক্তির ধারণক্ষমতা সাত ভাবে প্রকাশিত হয়। তার সেই গবেষণাপত্রগুলো মনোবিজ্ঞান এবং নানা সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়। তিনি জাতীয় বিজ্ঞান পদকসহ বেশ কিছু পুরস্কারে ভূষিত হন।
মিলার বাচনভঙ্গি ও ভাষার উপর গুরুত্ব আরোপ করে তার পড়াশোনা শুরু করেন এবং এই বিষয়গুলোর উপর তার গবেষণাপত্র প্রকাশ করেন। তিনি যখন তার ক্যারিয়ার শুরু করেন তখন মনোবিজ্ঞানে ছিল চেষ্টিতবাদের রাজত্ব, যা কোন মানসিক প্রক্রিয়া বুঝার চেষ্টা পরিহার করে শুধুমাত্র পর্যবেক্ষণীয় আচরণের দিকেই গুরুত্ব আরোপ করেছিল। মিলার বেশিরভাগ সময় হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয়, এমআইটি এবং প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ করেছেন, সেখানে তিনি মনোবিজ্ঞানের মানসিক প্রক্রিয়া বুঝার পরীক্ষামূলক পদ্ধতিগুলোর সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন। তিনি ছিলেন মনোভাষাবিজ্ঞানের প্রতিষ্ঠাতাদের একজন এবং ১৯৭৮ সাল নাগাদ বৃহত্তর পরিসরে সংজ্ঞানাত্মক বিজ্ঞানের নতুন শাখা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে মূল ব্যক্তিত্ব। তিনি নোম চমস্কিসহ মনোভাষাবিজ্ঞান ও সংজ্ঞানাত্মক বিজ্ঞানের অন্যান্য ব্যক্তিত্বের সাথে সহযোগী হিসেবে এবং সহরচয়িতা হিসেবে কাজ করেছেন। মনোবিজ্ঞানকে মানসিক প্রক্রিয়ার মধ্যে পরিচালিত করা এবং সেই প্রক্রিয়াকে তাত্ত্বিক মতবাদ, কম্পিউট্যাশন মতবাদ ও ভাষাতত্ত্বের দিকে পরিচালিত করতে অনস্বীকার্য অবদান রাখার দরুন মিলারকে বিংশ শতাব্দীর অন্যতম সেরা মনস্তাত্ত্বিক হিসেবে গণ্য করা হয়। ২০০২ সালে প্রকাশিত এ রিভিউ অফ জেনারেল সাইকোলজি পরিচালিত একটি গনণায় মিলার ২০ জন সময়ের সেরা মনস্তাত্ত্বিকদের তালিকায় স্থান পান।[১]
মিলার ৩ ফেব্রুয়ারি ১৯২০ সালে পশ্চিম ভার্জিনিয়ার চার্লসটনে জন্ম গ্রহণ করেন। তার বাবা জর্জ ই মিলার ছিলেন একটি ইস্পাত কোম্পানির কার্যনির্বাহী, মা ফ্লোরেঞ্জ (আর্মিটেজ) মিলার। মিলার জন্মের কিছুদিন পর তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। ‘মহা বিষন্নতা’র দিনগুলোতে তিনি তার মায়ের কাছে থেকে বড় হন। ১৯৩৭ সালে তিনি চার্লসটন উচ্চ বিদ্যালয় থেকে পাশ করে তার স্কুল জীবনের ইতি টানেন। মিলার তার মা এবং সৎবাবার সাথে ওয়াশিংটন ডিসিতে আসেন এবং এক বছর জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। রোগ থেকে আরোগ্য লাভের জন্য চিকিৎসা বিজ্ঞান বাদ দিয়ে তার পরিবার খ্রিশ্চিয়ান বিজ্ঞান চর্চা করতেন, যা শুধু প্রার্থনার মাধ্যমে করা হত। তার সৎবাবা আলাবামার বার্মিংহামে বদলি হলে মিলার আলাবামা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থানান্তরিত হন।
তিনি আলাবামা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৪০ সালে ইতিহাস ও বাক্ প্রণালীতে ব্যাচেলর ডিগ্রি এবং ১৯৪১ সালে বাক্ প্রণালীতে মাস্টার্স ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি ধ্বনিবিজ্ঞান, স্বরবিজ্ঞান এবং বাক্ রোগতত্ত্বে কিছু কোর্স সম্পন্ন করেন। নাট্যদলের সদস্য হওয়ার পর তিনি বাক্ প্রণালী বিভাগে কোর্স করার জন্য আগ্রহী হয়ে ওঠেন। এছাড়া অধ্যাপক ডোনাল্ড র্যামসডেল তাকে অনুপ্রাণিত করেন। তিনিই মিলারকে মনোবিজ্ঞানের সাথে এবং একটি সেমিনারে পরোক্ষভাবে তার ভাবি সহধর্মীনি ক্যাথরিন জেমসের সাথে তাকে পরিচিয় করিয়ে দেন। তারা ২৯ নভেম্বর ১৯৩৯ সালে বিয়ে করেন। ক্যাথরিন ১৯৯৬ সালের জানুয়ারীতে মারা যান। এরপর ২০০৮ সালে মিলার মার্গারেট ফার্গুসনকে বিয়ে করেন।
মিলার আলাবামায় দুই বছর “মনোবিজ্ঞান পরিচয়”-এর একটি কোর্সে অধ্যাপনা করেন। ১৯৪২ সালে তিনি হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেন, সেখানে ১৯৪৩ সালে তিনি তার পিএইচডি শুরু করেন। স্ট্যানলে স্মিথ স্টিভেনের তত্ত্ববধানে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিয়োজিত আমেরিকান সেনাবাহিনীর ধ্বনি যোগাযোগ নিয়ে গবেষণা করে ১৯৪৬ সালে তিনি হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয়ের সাইকো-একুস্টিক ল্যাবরেটরী থেকে তার ডক্টরেট লাভ করেন। তার পিএইচডি থিসীসটির নাম ছিল “দ্যা অপটিমাল থিসীস অফ জ্যামিং সিগনালস” আমেরিকান সেনাবাহিনী যা অত্যন্ত গোপনীয় হিসেবে শ্রেনীবদ্ধ করেছিল।
পিএইচডি ডিগ্রী লাভ করার পর মিলার রিসার্চ ফেলো হিসেবে হার্ভাডে থেকে বাক্ প্রণালী ও শ্রুতি নিয়ে তার গবেষণা চালিয়ে যান। ১৯৪৮ সালে তিনি হার্ভাডে মনোবিজ্ঞানের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে নিযুক্ত হন। সেখানে ভাষা ও যোগাযোগের উপর একটি কোর্সে পড়ানোর সময় মিলার তার প্রথম বই ভাষা এবং যোগাযোগ (১৯৫১) রচনা করার দিকে ধাবিত হন। মিলার ১৯৫০ সালে একটু বিশ্রাম নেন। পরের একটি বছর গণিতে তার আগ্রহ অনুধাবণ করে তিনি প্রিন্সটনের ইন্সটিটুট অফ এডভান্স স্টাডিতে ভিজিটিং ফেলো হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরামানু বোমার জনক, তাত্ত্বিক পদার্থ বিজ্ঞানী জে রবার্ট ওপেনহাইমারের সাথে তার বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। মিলার তার সাথে স্কোয়াস খেলতেন। ১৯৫১ সালে মিলার এমআইটিতে মনোবিজ্ঞানের সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে নিযুক্ত হন। এমআইটি লিংকন ল্যাবে তিনি মনোবিজ্ঞান গ্রুপের নেতৃত্ব দেন। তিনি ধ্বনি যোগাযোগ এবং মানব প্রকৌশলের উপর কাজ করেন, যার ফলে তিনি বাক্ প্রণালীর স্বরের কিছুটা অবয়ব চিহ্নিত করতে সক্ষম হন। তার কাজের উপর ভিত্তি করে কিছু বলার জন্য ১৯৫৫ সালে তিনি ইস্টার্ন সাইকোলজিক্যাল এসোসিয়েশনে একটি আলোচনা সভায় অংশ নেন। তার উপস্থাপিত “দ্যা ম্যাজিক্যাল নাম্বার সেভেন, প্লাস অর মাইনাস টু” পরে প্রবন্ধ আকারে প্রকাশিত হয় যা জ্ঞানীয় বিজ্ঞানে একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন।
মিলার ১৯৫৫ সালে আবার হার্ভাডে আসেন এবং খণ্ডকালীন সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে যুক্ত হন। ১৯৫৮ সালে তিনি সেখানে পূর্নকালীন অধ্যাপক হিসেবে নিযুক্ত হন এবং কীভাবে ভাষা মানব চেতনাকে প্রভাবান্বিত করে সেই বিষয়ে তার গবেষণা বিস্তৃত করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে তার সাথে তরুণ নোম চম্স্কি-র পরিচয় হয়, যিনি সংজ্ঞানাত্মক বিজ্ঞানের সহ প্রতিষ্ঠাতাদের একজন। পুরো একটি গ্রীষ্ম তারা স্ট্যানফোর্ড ট্রেনিং ফ্যাকাল্টিতে একসাথে কাটান এবং দু'জনে এক বাড়িতে পরিবার নিয়ে বসবাস করেন। ১৯৫৮-৫৯ সালের দিকে মিলার আগের চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়ে ক্যালিফোর্নিয়ার প্যালো আল্টোতে সেন্টার ফর এডভান্স স্টাডি ইন দ্যা বিহেভরাল সায়েন্স-এ নিযুক্ত হন (এখন স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়)। সেখানে তিনি ইউজিন গ্যালেন্টার এবং কার্ল প্রিবরামের সাথে "প্ল্যানস অ্যান্ড দ্যা স্ট্রাকচার অফ বিহেভর" বইটি রচনা করেন। ১৯৬০ সালে জেরম এস ব্রানারের সাথে মিলে তিনি হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয়ে সেন্টার ফর সংজ্ঞানাত্মক স্ট্যাডিস প্রতিষ্ঠা করেন। সংজ্ঞানাত্মক বিষয়টি নিয়ে সেই সময়ের প্রভাবশালী মনস্তাত্ত্বিক বিশ্ববিদ্যালয় গুলো এই বলে প্রবল ভাবে আপত্তি জানায় যে, কগনিশন বিজ্ঞানের বিষয় হিসেবে পড়ানোর জন্য উপযোগী নয়। কিন্তু জেন পিয়াজেট, আলেকজান্ডার লুরিয়া এবং চমস্কিসহ বিশিষ্ট ব্যক্তি তাদের প্রতিষ্ঠানটি দেখে আকৃষ্ট হন। পরবর্তিতে মিলার মনোবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান হিসেবে নিযুক্ত হন। টিমোথি লেরি’র অসুস্থতার সময় মিলার হার্ভাডে পড়িয়েছিলেন। মিলার জানতেন যে, লেরি আলাবামা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন যেখানে মিলার মনোবিজ্ঞান পড়িয়েছিলেন এবং লেরি সেই বিভাগ থেকে স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করেন।
১৯৬৭ সালে মিলার রকেফেলার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিজিটিং অধ্যাপক হিসেবে এক বছর পড়ান। ১৯৬৮ থেকে ১৯৭৯ পর্যন্ত তিনি রকেফেলার বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক হিসেবে যুক্ত ছিলেন এবং ১৯৭৯ থেকে ১৯৮২ পর্যন্ত সেখানে অধস্তন সহকারী অধ্যাপক হিসেবে বহাল থাকেন। একজন নতুন সভাপতি নিযুক্ত হওয়ার পর তিনি রকেফেলার ত্যাগ করেন।
১৯৭৯ সালে তিনি প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ে মনোবিজ্ঞান বিভাগে অধ্যাপক হিসেবে নিযুক্ত হন।
১৯৮৬ সালে প্রিন্সটনে সংজ্ঞানাত্মক সায়েন্স ল্যাবরেটরি প্রতিষ্ঠায় তিনি সহযোগিতা করেন। শেষে তিনি প্রিন্সটনে মনোবিজ্ঞানের জ্যেষ্ঠ গবেষক এবং প্রফেসর এমেরিটাস হন। তিনি সংজ্ঞানাত্মক বিজ্ঞানে ম্যাকডোনেল-পেউ কর্মশালাটিও পরিচালনা করেন।
মিলার সাসেক্স বিশ্ববিদ্যালয় (১৯৮০), ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয় (১৯৭৯), লওভিন ক্যাথলিক বিশ্ববিদ্যালয় (১৯৭৮), কার্নেগ মেলন বিশ্ববিদ্যালয় (হিউমেন লেটার্স, ২০০৩) থেকে সম্মান সূচক ডক্টরেট ডিগ্রী লাভ করেন এবং উইলিয়ামস কলেজ থেকে (২০০০) সম্মান সূচক ডক্টর অফ সায়েন্স ডিগ্রী লাভ করেন। মিলার আমেরিকান অ্যাকাডেমি অফ আর্টস অ্যান্ড সায়েন্স থেকে ১৯৫৭ সালে, ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্স থেকে ১৯৬২ সালে, দ্যা প্রেসিডেন্সি অফ দ্যা ইস্টার্ন সাইকোলজিক্যাল এ্যাসোসিয়েশন থেকে ১৯৬২ সালে, দ্যা প্রেসিডেন্সি অফ দ্যা আমেরিকান সাইকোলজিক্যাল এ্যাসোসিয়েশন থেকে ১৯৬৯ সালে এবং দ্যা রয়্যাল নেদারল্যান্ডস একাডেমী অফ আর্টস অ্যান্ড সায়েন্স থেকে ১৯৮৫ সালে নির্বাচিত হন।[২] মিলার ১৯৮৯ সালে এ্যাসোসিয়েশন ফর সাইকোলজিক্যাল সায়েন্সের প্রথম সমাবর্তনে ছিলেন প্রধান বক্তা। তিনি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৬৪-৬৫ সাল পর্যন্ত ফুলব্রাইট রিসার্স ফেলো হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং ১৯৯১ সালে ন্যাশনাল মেডেল অফ সায়েন্স লাভ করেন।
শেষ জীবনে মিলার গলফ খেলা খুব উপভোগ করেন। ২০১২ সালে নিউ জার্সির প্ল্যাইনসবোরোতে নিজ বাড়িতে মিলার মৃত্যুবরণ করেন। তিনি ফুসফুসে প্রদাহ ও স্মৃতিভ্রংশজনিত অসুখে ভুগছিলেন। মৃত্যুর সময় স্ত্রী মার্গারেট, তার প্রথম পক্ষের স্ত্রীর সন্তান ছেলে ডোন্যালী জেমস, মেয়ে ন্যান্সি সাউন্ডার্স; দুই সৎছেলে ডেভিড স্কুচ, ক্রিসটোফার স্কুচ; তিন নাতী গ্যাভিন মউরি মিলার, মরগান মউরি মিলার এবং নাথানেইল জেমস মিলার তার পাশে ছিলেন।
মিলার যখন তার কর্মজীবন শুরু করেন তখন মনোবিজ্ঞানে আচরণবাদ আধিপত্য বিস্তার করে ছিল। তারা উদ্দীপনার প্রতিক্রিয়া নিয়ে কাজ করার দিকে মনোযোগ দিতেন, বিশেষভাবে অন্যান্য প্রাণীদের মধ্যে। মিলার এতে আপত্তি জানালেন। মিলার, জেরম ব্রানার এবং নোম চম্স্কিকে সংজ্ঞানমূলক মনোবিজ্ঞান শাখার প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে গণ্য করা হয়। তারা আচরণবাদকে মন বিশ্লেষণের নির্মাণ কাঠামোতে পরিবর্তন করেন।
উইলিয়াম জেমসের সময়ে মনোবিজ্ঞানীদের স্বল্পমেয়াদী স্মৃতি ও দীর্ঘমেয়াদি স্মৃতির ধারণা ছিল। সেই সময় অনুমান করা হতো স্বল্পমেয়াদী স্মৃতি সীমাবদ্ধ এবং এটির যথাযথ সীমারেখা ছিল অজানা। ১৯৫৬ সালে মিলার “দ্যা ম্যাজিক্যাল নাম্বার সেভেন, প্লাস অর মাইনাস টু” প্রবন্ধে এটির সীমা সংখ্যায় গণনা করেন। তিনি কয়েক ভাবে প্রত্যক্ষ স্মৃতি নিয়ে পরীক্ষা করেন, যেমনঃ তিনি একজন ব্যক্তিকে একটি চিরকুটের কয়েকটি সংখ্যা পুনরাবৃত্তি করতে বলেন; উদ্দীপনা এবং চিরকুট নিয়ে তার মতামত গ্রহণ করেন, পরে তাকে সেই চিরকুটটি পুনরায় স্মরণ করতে বলেন। মনোযোগের ব্যাপ্তি বুঝার জন্য একটি শাখায় কয়েকটি বিষয় তালিকাবদ্ধ করে তাদের দ্রুত গণনা করতে বলেন। তিনটি ঘটনাতেই মিলার গড়ে সেই সীমার সাতটি তালিকা খুঁজে পান। স্বল্পমেয়াদী স্মৃতির ক্ষেত্রে যথার্থ সংখ্যা হিসেবে সাত গণনা - নিজের কাজে মনোযোগের ব্যাপারে তার অনুভূতি ছিল মিশ্র এবং তিনি উপলব্দি করলেন যে এটি প্রায়ই ভুলভাবে ব্যাখ্যা করা হচ্ছে। তিনি উল্লেখ করেছেন, এই বিষয়টি নিয়ে প্রথম গবেষণার সময় মনে হয়েছিল, একটি পূর্ন সংখ্যা দ্বারা তিনি নির্যাতিত হচ্ছেন। মিলার পারিভাষিক খণ্ডটি উদ্ভাবন করে অত্যন্ত পরিবর্তনশীল এককটি চিহ্নিত করেন।
১৯৮৬ সালে শুরু করার পর অনেক বছর মিলার ওয়ার্ডনেট উন্নয়নের কাজ পরিচালনা করেন, যেটি হল কম্পিউটারের মাধ্যমে পাঠ যোগ্য বৃহৎ ইলেকট্রনিক কোষ যা সার্চ ইঞ্জিনের মাধ্যমে ব্যবহার উপযোগী। ওয়ার্ডনেট হল একটি বড় আবিধানিক উপাদানসংগ্রহ যা মানুষের শব্দার্থিক স্মৃতি ইংরেজি ভাষায় উপস্থাপন করে। এর প্রাথমিক গঠন প্রতিবন্ধকতা হল সিনসেট, যা একটি ধারণার সমার্থক প্রতিনিধির সংকলন। শব্দ অনেক রকম সিনসেটের হতে পারে। সিনসেটের সমগ্র শ্রেণীটি আলাদাভাবে বিশেষ্য, বিশেষণ, ক্রিয়া এবং ক্রিয়া-বিশেষণ শাখায় বিভক্ত, সেগুলো এই প্রধান চারটি শাখার সাথে যুক্ত কিন্তু পরস্পরের সাথে যুক্ত নয়। জ্ঞানভাণ্ডারকে অতিক্রম করে ওয়ার্ডনেট আন্তঃবিশ্ব সম্পর্ক স্থাপনে অন্তর্ভুক্ত। শুধু অভিধান হিসেবেই নয়, সময়ের সাথে সাথে ওয়ার্ডনেটে অনেক সংক্ষিপ্ত সংজ্ঞা যুক্ত করা হয়। মিলার ও তার সহকর্মীরা মনোভাষাবিজ্ঞানের কিছু মতবাদ পরীক্ষা করে দেখেন মানুষ কীভাবে শব্দ ব্যবহার করে এবং বুঝতে পারে। পরে মিলার উদ্যোক্তা এবং সিমপ্লি.কম ইনকর্পোরেটেডের বিজ্ঞানী জেফ স্টিবেলের সাথে ওয়ার্ডনেটের শাব্দিক অর্থ ভিত্তিক সার্চ ইঞ্জিন নিয়ে কাজ করেন। ওয়ার্ডনেট আন্তর্জাতিক ভাবে অত্যন্ত প্রভাবশালী হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। ওয়ার্ডনেট এখন অনেক ভাষায় অনুকরণ করা হচ্ছে।
মিলারকে মনোভাষাবিজ্ঞানের প্রতিষ্ঠাতাদের একজন হিসেবে গণ্য করা হয়। মনোবিজ্ঞানে ভাষা এবং বোধের সমন্বয় সাধন করে বিশ্লেষণ করা হয়েছে কীভাবে মানুষ ভাষা সৃষ্টি ও ব্যবহার করে। ১৯৫১ সালে তার প্রকাশিত বই ভাষা এবং যোগাযোগ এই ক্ষেত্রে প্রজনক হিসেবে বিবেচিত। দ্যা সায়েন্স অফ ওয়ার্ডস নামে ১৯৯১ সালে প্রকাশিত তার পরবর্তি বইটিও ভাষা মনোবিজ্ঞানের উপর ভিত্তি করে রচিত। মিলান গণিত, ভাষার গণনীয় দৃষ্টিভঙ্গি এবং এটির বাক্যরীতি নিয়ে নোম চম্স্কির সাথে প্রবন্ধ প্রকাশ করেন, যা ছিল শিক্ষার দুটি নতুন ক্ষেত্র। কীভাবে মানুষ শব্দ ও বাক্য বুঝতে পারে মিলার তা নিয়েও গবেষণা করেন, একই সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিলেন কৃত্তিম কন্ঠ সনাক্তকরণ প্রযুক্তিতে। ইউজিন গ্যালেন্টার এবং কার্ল এইচ প্রিবরামের সাথে লেখা দ্যা প্ল্যানস অ্যান্ড স্ট্রাকচার অফ বিহেভার (১৯৬০) বইয়ে তিনি ব্যাখ্যা করেছেন কীভাবে মানুষ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে ও কাজ করে, একটি প্রোগ্রাম করা রোবট কীভাবে স্বিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং কাজ করতে পারবে তা পূর্বেই ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছেন। এছাড়া মিলার তার উদ্ভাবিত মিলার’স ল-এর জন্য পরিচিত।
মিলার বেশ কিছু বই লিখেছেন, তার বেশ কিছু বই সেগুলোর স্ব স্ব ক্ষেত্রে প্রথম গুরুত্বপূর্ণ কাজ বলে বিবেচিত।
মিলারের লেখা ল্যাঙ্গুয়েজ অ্যান্ড ক্যমিউনিকেশন ছিল ভাষা আচরণ শিক্ষার ক্ষেত্রে প্রথম গুরুত্বপূর্ণ বই। এই বইটি ভাষার বিজ্ঞান সম্মত শিক্ষা, গুরুত্বপূর্ণ সংখ্যাত্মক উপাত্ত এবং ক্লদ শ্যাননের তাথ্যিক মতবাদের গাণিতিক মডেলের উপর ভিত্তি করে লেখা। এটিতে চেষ্টিতবাদের অনুকরণে সংঘবদ্ধ শিক্ষা গ্রহণ প্রণালীর সম্ভাব্য নকশা ব্যবহৃত হয়েছে যেটিতে মিলার তখনও বিশুদ্ধ সংজ্ঞানাত্মক দর্শানুপাত যুক্ত করেন নি। বইটির প্রথম খণ্ডে তাত্ত্বিক মতবাদ, ধ্বনিবিজ্ঞানের দেহতত্ত্ব ও শ্রবণশক্তি, কন্ঠ শনাক্তকরণ ও অধিগমন এবং ভাষা বিশ্লেষণের পরিসংখ্যান সংক্রান্ত পদ্ধতি নিয়ে পর্যালোচনা করা হয়েছে। বইটিতে ভাষা শনাক্তকরণের চেয়ে কন্ঠ সংজননে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। দ্বিতীয় খণ্ডে মনোবিজ্ঞান : নানা মানুষের ভাষা ব্যবহারের ক্ষেত্রে স্বাভাবিক পার্থক্যসমূহ; ভাষাতত্ত্বে বিবর্তন; শব্দ সংযোজনে মানুষের সম্পৃক্ততা; ভাষায় প্রতীকীত্বের ব্যবহার এবং ভাষা ব্যবহারের সামাজিক রুপ নিয়ে ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
চার্লস ই.ওসগুড এই বইটি নিয়ে পর্যালোচনা করেছেন। তিনি বইটি তাত্ত্বিক গঠনের চেয়ে বস্তুগত বিষয়গুলোর উপর ভিত্তি করে স্নাতক স্তরের-পাঠ্য হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করেছিলেন। তিনি ভেবেছিলেন, কিছু বিষয়ে বইটি ছিল বাগাড়ম্বরপূর্ণ এবং বাকি বিষয়গুলো বেশ সংক্ষিপ্ত যা লেখকের অভিজ্ঞতার সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত নয়। তিনি মিলারের স্কিনারবাদী "সিংগল স্টেজ স্টিমুলাস-রেসপন্স লার্নিং" অর্থাৎ "এক ধাপের উদ্দীপক-প্রতিক্রিয়া শিখন" প্রয়োগ করে মানুষের ভাষা গ্রহণ ও ব্যবহারের অনাড়ম্বরপূর্ন ব্যাখ্যার সমালোচনা করেছেন। ওসগুডের এই পর্যালোচনার পর এই ধারণাটির অর্থ এবং প্রতিনিধিত্বমূলক লক্ষণ গঠিত ভাষার ধারণা বিশ্লেষণ করা অসম্ভব হয়ে যায়।
প্ল্যানস অ্যান্ড দ্যা স্ট্রাকচার অফ বিহেভিয়র বইটিতে মিলার ও তার সহ-লেখকরা কম্পিউটারের ভাষায় কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছেন কীভাবে প্রাণীরা সিদ্ধান্ত নেয় এবং কাজ করে। এটি আচরণবাদের ভিত্তিতে নাড়া দেয়, আচরণকে একটি দল অথবা উদ্দীপনায় সাড়া দেয়ার পর্যায় হিসেবে ব্যাখ্যা করে। সে ক্ষেত্রে এই লেখকরা এক ধরনের কর্ম পরিকল্পনা পদ্ধতি উপস্থাপন করেন। তারা দেখলেন সব পরিকল্পনা সম্পাদিত হয় সংরক্ষিত তথ্য ব্যবহারের উপর ভিত্তি করে অথবা পরিবেশ থেকে তথ্য উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়ে (প্রতিচ্ছায়া আহ্বান করে) এবং টেস্ট-অপারেট-টেস্ট-ইক্সিট (টিওটিই) কৌশল ব্যবহার করে। এই প্রতিচ্ছায়া মূলত অতীতের সব অনুষঙ্গের সংরক্ষিত স্মৃতি যা টোলম্যান’স সংজ্ঞানাত্মক ম্যাপের সমগোত্রীয়। টিওটিই কৌশলটি উন্নতির প্রাথমিক ধাপে নিবেশকে প্রতিচ্ছবির সাথে তুলনা করে; সেখানে যদি কোন অসমতা থাকে তা পরিচালনা কাজটি ব্যাহত করার চেষ্টা করে। অসমতা বিলুপ্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত এই চক্রটির পুনরাবৃত্তি ঘটতে থাকে এবং এরপর প্রস্থান ক্রিয়াটিকে আহ্বান করা হয়।
পিটার মিলনার কানাডিয়ান জার্নাল অফ সাইকোলজি-তে বইটি পর্যালোচনা করে লিখেছেন টিওটিই কৌশল বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বইটিতে সুনিদৃষ্ট তথ্য উপাত্তের ঘাটতি রয়েছে। এছাড়া তিনি এর মডেলটি স্নায়ুশারীরবিদ্যা থেকে আণবিক পর্যায়ে সংযুক্ত হতে না পারার দিকটিও সমালোচনার দৃষ্টিতে দেখেছেন।
১৯৬৭ সালে প্রকাশিত দ্য সাইকোলজি অফ কমিউনিকেশন বইটি ছিল মিলারের পূর্বে প্রকাশিত সাতটি নিবন্ধের সংকলন। বইটিতে ক্ষণস্থায়ী স্মৃতির ধারণক্ষমতাকে মনস্তাত্ত্বিক ব্যাপ্তির একক দ্বারা মাপা হয়েছে।
দ্য কগনিটিভ নিউরোসায়েন্স সোসাইটি এই ক্ষেত্রে তার অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ ১৯৯৫ সালে জর্জ এ.মিলার পুরস্কার প্রবর্তন করে। দ্যা আমেরিকান সাইকোলজিক্যাল এ্যাসোসিয়েশন ১৯৯৫ সালে সাধারণ মনোবিজ্ঞানে অসাধারণ প্রবন্ধের জন্য জর্জ এ.মিলার পুরস্কার প্রবর্তন করে। প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগ সংজ্ঞানাত্মক বিজ্ঞানে সেরা আন্তঃশাস্ত্রীয় জ্যেষ্ঠ অভিসন্ধর্ভের জন্য ১৯৮৭ সাল থেকে প্রতিবছর জর্জ এ.মিলার পুরস্কার প্রদান করে আসছে। সাত সংখ্যার ফোন নাম্বার পছন্দ করার ব্যাখ্যা এবং নয় সংখ্যার ডাক কোডের বিপক্ষে বিতর্ক, উভয় ক্ষেত্রে জনপ্রিয় সংবাদ মাধ্যমে দ্য ম্যাজিক্যাল নাম্বার সেভেন প্রবন্ধটির উল্লেখ বহাল রয়েছে এবং এটির গুরুত্ব আধুনিক মনোবিজ্ঞান দ্বারা চেষ্টিতবাদী দৃষ্টান্তের সাথে সবার দৃষ্টিগোচর করা হয়েছে।
দ্য আমেরিকান সাইকোলজিক্যাল এসোসিয়েশন এবং অন্য কয়েকটি সংগঠন মিলারকে বিংশ শতাব্দীর সেরা ২০ জন বিশিষ্ট মনোবিজ্ঞানীর একজন হিসেবে ঘোষণা করে।
|পাতাসমূহ=
at position 3 (সাহায্য)