জর্জ টমাস | |
---|---|
তিপ্পেরারী রাজ | |
স্বাধীন রাজ্য | ১৭৯৮-১৮০১ |
পূর্বসূরি | মুঘল সাম্রাজ্য ও মারাঠা সাম্রাজ্য |
উত্তরসূরি | ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী |
জন্ম | ১৭৫৬ রসক্রেয়া, তিপ্পেরারী, আয়ারল্যান্ড |
মৃত্যু | ১৮০২ (বয়স ৪৫–৪৬) বহরমপুর, (অধুনা পশ্চিমবঙ্গ, ভারত) |
বংশধর | এলেক (পুত্র), এনি (কন্যা) |
রাজবংশ | জাহান কোঠা মিউজিয়াম |
ধর্ম | ক্যাথলিক ধর্ম |
পেশা | সৈনিক, রাজা |
জর্জ টমাস (১৭৫৬ - ১৮০২) একজন ভাগ্যান্বেষী আইরিশ সৈনিক, পরবর্তীকালে ব্রিটিশ ভারতের হরিয়াণা রাজ্যের স্বাধীন রাজা হয়েছিলেন।
১৭৫৬ খ্ৰীঃ তিনি আয়ারল্যান্ডে গরীব কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। অল্প বয়সেই বাবা মারা যাওয়ায় তিনি ব্রিটিশ রয়াল নেভি-র একটি জাহাজের শ্রমিক হিসাবে মাদ্রাজ উপকূল আসেন। কিন্তু তার ঐ জীবন পছ্ন্দ না হওয়ায় তিনি একদিন জাহাজ থেকে লাফ দিয়ে সাঁতরে চলে আসেন তীরে। সেখান থেকে এক সরাইখানায় এসে পৌছান যার মালিক ছিলেন টমাস কেলি। ব্রিটিশ নেভি থেকে পলাতকের শাস্তি হল ৫০০ চাবুকের মার। কেলি তাকে আশ্রয় দেন। ১৭৮১ সালে ভারতে তখন এক অরাজক অবস্থা বিরাজমান ছিল। একদিকে মোগল সাম্রাজ্যের পতনের সূচনা, মারাঠাদের সাথে কিছু প্রাদেশিক শক্তির উত্থান অপরদিকে ব্রিটিশদের ভারতে ধীরে ধীরে প্রবেশ হতে থাকে।
জর্জ টমাস প্রথাগত শিক্ষায় শিক্ষিত ছিলেননা। টমাস কেলি-র পরামর্শমতো তিনি নিজামের সেনাবাহিনীতে নাম লেখান। সেখানে তিনি কয়েক মাস চাকরি করার পর হঠাতই নিখোঁজ হয়ে যান এবং পালিয়ে পিন্ডারিদের দলে নাম লেখান। তখন দুর্ধর্ষ ডাকাত হিসেবে পিন্ডারিরা পরিচিত ছিল। এরপর জর্জ টমাসের সামনে এক অভাবনীয় সুযোগ আসে। সেই সময়ে সর্দানার বেগম সমরু এক পেশাদার সৈন্যদল বানাতে চাইছিলেন আর সেই দায়িত্ব পেলেন জর্জ টমাস। তার ওপর ভার চাপলো ১০০০ জন সৈন্যকে শিক্ষা দেওয়ার। তার অধীনে খুব শীঘ্রই সেই বাহিনী এক অজেয় বাহিনীতে পরিনত হল।
পরের দু-বছরে জর্জ টমাস বেগম সমরুর সৈন্যদলের প্রধান হওয়ার সাথে সাথে তার প্রধান পরামর্শমদাতাও হলেন। কিন্তু বেগম সমরুর সাথে তার মতানৈক্য হওয়াতে তিনি আপ্পা রাওয়ের দলে যোগ দেন। সেই সময় তিনি “Warlike George” বা “জাহাজী সাহেব” নামে পরিচিত হন। তিনি ছিলেন দক্ষ, সাহসী ও যুদ্ধবিদ একজন সেনাপতি যিনি সবসময় তার দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতেন। সেসময় তার অধীনে ২০০০ সৈন্য ছিল। তিন বছর পরে আপ্পা রাওয়ের মৃত্যুর পর জর্জ টমাস নিজে কিছু করার কথা ভাবলেন। এভাবে ছয় বছর কাটাবার পর তিনি দিল্লি চলে যান। সৈনিক জর্জ টমাস ততদিনে হিন্দি আর ফার্সি ভাষা রপ্ত করে ফেলেছিলেন।
তিনি ১৭৯৭ সালে অধুনা হিসার ও রোহতকের কাছে তার নতুন রাজ্যের পত্তন করেন। হানসী (Hansi) নামক স্থানে তার রাজধানী স্থাপন করেন এবং সেখানে একটা দুর্গ স্থাপন করেন। তিনি রোহতক নগরের ২ মাইল দক্ষিণে নিজের নামে জর্জগড় নামে একটি দুর্গ স্থাপন করেন। সাধারণ লোকেরা সেটিকে জাহাজগড় বলত। তিনি হলেন হরিয়ানা রাজ্যের রাজা।
ঐতিহাসিক যদুনাথ সরকার তার রাজ্য সম্বন্ধে বলেছেন
"Oval in shape, with ill-defined and ever-shifting frontiers, it extended 32 to 48 miles in different directions. On the north lay the Ghaggar river which separates it from the lands under Sikh occupation; the west the country of predatory Bhatti tribes, beyond which lay the deserts of Bikaner. The south was bounded by the Rewari district."
প্রথমে তার রাজ্যে প্রজা কম থাকলেও, তার কুশল পরিচালনায় ধীরে ধীরে হরিয়াণা পূর্নতা লাভ করতে থাকে। তার রাজ্যের চারপাশে তখন মারাঠা, রাজপুতানা, শিখদের রাজ্য। জর্জ টমাস তার রাজ্যকে শক্তিশালী করতে গিয়ে ভুল করে পাঞ্জাব আক্রমণ করে বসলেন। কিছুদিন পরেই মারাঠা, শিখরা দলবদ্ধভাবে তার রাজ্য আক্রমণ করে। সেই দলে বেগম সমরুও কিছু সৈন্য পাঠিয়েছিলেন প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য। তিনি তার অল্প সংখ্যক সৈন্য নিয়ে, এই প্রবল প্রতিদন্দ্বীর সাথে যুদ্ধ করতে এগিয়ে যান। কিন্তু যুদ্ধের সময়, তার বন্ধু-সেনাপতি হপকিনের মৃত্যু হলে, তিনি পিছিয়ে আসতে বাধ্য হন। এখানেও মারাঠারা আক্রমণ করলে, তিনি পরাজয় স্বীকার করেন। শর্তস্বাপেক্ষে ইংরেজ সৈন্যদলে যোগ দেবার অনুমতি পান।
১৮০২ খ্রীঃ রাজ্য পরিত্যাগ করে বাধ্য হয়ে, স্বদেশে যাওয়ার সময়ে পথে মুর্শিদাবাদ জেলার বহরমপুরে অসুস্থ হয়ে মাত্র ৪৬ বছর বয়সে মারা যান। বহরমপুর শহরের বাবুলবোনাতে তার দেহ সমাধিস্থ করা হয়।