জলদস্যু কোড হলো জলদস্যুদের মধ্যে চেইন অফ কমান্ড রক্ষা করার জন্য তৈরি একধরনের নিয়মাবলি। সপ্তদশ শতকে এটি প্রথম ব্যবহার করেন পর্তুগীজ জলদস্যু বার্থোলুমিউ পর্তুগীজ।[১] সাধারণত প্রত্যেক জলদস্যু ক্যাপ্টেনেরই নিজস্ব কোড অফ কনডাক্ট বা আর্টিকেল ছিল যাতে দলীয় শৃঙ্খলা, চোরাই পণ্যের ভাগ ও আহত জলদস্যু ক্রুদের ক্ষতিপূরণ সম্পর্কে বিভিন্ন ধরনের নিয়ম-কানুন লিপিবদ্ধ থাকত।
জলদস্যু কোড সম্বন্ধীয় সম্পূর্ণ বা প্রায় সম্পূর্ণ চারটি কোডের সেট এখনো রয়েছে, এগুলো প্রথম প্রকাশ করা হয় ১৭২৪ সালে ক্যাপ্টেন চার্লস জনসন লিখিত অ্য জেনারেল হিস্টোরি অফ দ্য পাইরেটস বইয়ে। হেনরি মর্গানের একটি জলদস্যু কোডের আংশিক ১৬৭৮ সালে আলেক্সান্ড্রে জকুয়েমেলিনের দ্য বাক্যানারস অফ আমেরিকা বইয়ে রয়েছে। অনেক জলদস্যুরই নিজস্ব আর্টিকেল ছিল বলে জানা যায়। মাত্র কয়েকটি কোডই উদ্ধার করা হয়েছে কারণ জলদস্যুদের যখন গ্রেফতার করা হত বা তাদের আত্মসমর্পণের সময় তাদের নিজেদের বিরুদ্ধে যেন পরবর্তীকালে বিচারের সময় কোডগুলো প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপণ না করা যায় সে জন্য নথিপত্রগুলো জলদস্যুরা পুড়িয়ে ফেলতেন।
I. প্রত্যেকেই বিভিন্ন ঘটনায় ভোট দেওয়ার অধিকার রাখত; যেকোন সময়ের আক্রমণ থেকে প্রপ্ত নগদ পণ্য বা পানীয় প্রত্যেকের সমানভাবে প্রাপ্য, ও বিনোদোনের কাজে ব্যবহার্য, যদিনা কোন জরুড়ি পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়, সকলের সুবিধার জন্য ছাঁটাইয়ে ভোট দেওয়া।
II. তালিকা অনুসারে প্রত্যেককে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বা পুরষ্কারের দিক দিয়ে সমান সুযোগ দেওয়া হত: কিন্তু তারা যদি প্লেট, স্বর্ণালংকার বা অর্থের জন্য জাহাজের অন্যান্যদের সাথে প্রতারনা করত তাহলে তাকে নির্বাসনে পাঠিয়ে শাস্তি দেওয়া হত। যদি ডাকাতি তাদের নিজেদের মধ্যে ঘটত তাহলে, তাহলে তাকে নির্বাসনে পাঠানোর পরীবর্তে কোন তীরে নামিয়ে দেওয়া হত যেখানে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বিভিন্ন বিপদের সম্মুখীন হত।
III. অর্থের জন্য তাস বা পাশা খেলা নিষিদ্ধ ছিল।
IV. আলো ও মোমবাতি রাত আট ঘটিকায় বন্ধ করে দিতে হত; যদি কোন ক্রূর এরপরও পানাহারের জন্য বাতির প্রয়োজন হতো তাহলে তাদের জাহাজের খোলা ডেকে কার্য সম্পাদন করতে হত।
V. বিভিন্ন সরঞ্জাম, পিস্তল, কাটারি প্রয়োজনের জন্য পরিষ্কার রাখা।
VI. তাদের মধ্যে কোন বালক বা নারী অনুমদিত ছিল না।
VII. যুদ্ধের সময় জাহাজে বা তাদের কোয়ার্টারে না থাকলে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ড বা নির্বাসনে দেওয়া হত।
VIII. জাহাজের মধ্যে অবস্থান করা কালে কোন ধরনের মারামারি করা নিষিদ্ধ ছিল। কিন্তু প্রত্যেকের মধ্যকার ঝগড়া তীরে তরবারি বা পিস্তলের মাধ্যমে নিষ্পত্তি হত।
IX. তাদের জীবযাত্রা বা জীবিকা নির্বাহের পন্থা সম্পর্কে নিজেদের মধ্যে আলোচনা নিষিদ্ধ ছিল।
X. ক্যাপ্টেন ও কোয়ার্টার মাস্টার বিভিন্ন মালামালের দুটি ভাগ পেত: মাস্টার, সারেঙ্গ, ও গানার, একটি ও অর্ধেক ভাগ পেত, এবং অন্যান্য অফিসাররা একটি ও তিন ভাগের এক ভাগ পেত।
XI. রবিবারে বিনোদনকারীদের ছুটি থাকত, এছাড়া বাকী ছয় দিন ও রাত বিশেষ আনুকূল্য ছাড়া তাদের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে পরিবেশন করতে হত।