সদ্গুরু জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে পরিবেশ রক্ষার পক্ষেও পরামর্শ দেন, প্রজেক্ট গ্রিনহ্যান্ডস (পিজিএইচ), নদীর জন্য র্যালি, কাভেরী কলিং এবং জার্নি টু সেভ সয়েল-এর মতো অনেক উদ্যোগের নেতৃত্ব দিয়েছেন। ২০১৭ সালে, তিনি আধ্যাত্মিকতা এবং মানবিক সেবায় অবদানের জন্য ভারতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার পদ্মবিভূষণ লাভ করেন। এছাড়াও ২০১৭ সালে, সদগুরু ভারতের কোয়েম্বাটুরে বিশ্বের বৃহত্তম আবক্ষ মূর্তি আদিযোগী শিব মূর্তির নকশা প্রণয়ন করেছিলেন।
সদ্গুরু বেশকিছু ছদ্ম বৈজ্ঞানিক দাবি প্রচারের জন্য বিভিন্নসময়ে সমালোচিত হয়েছেন।[২][৩]
জগদীশ বাসুদেব, ৩ সেপ্টেম্বর ১৯৫৭ সালে ভারতের মহীশূর রাজ্যের মহীশূরে (বর্তমানে কর্ণাটক) একটি তেলুগু পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন।[৪][৫] তিনি সাধারণভাবে জগ্গি নামে পরিচিত। তার বাবা বি.ভি. বাসুদেব এবং মা সুশীলা বাসুদেব। পাঁচ সন্তানের মধ্যে তিনি ছিলেন কনিষ্ঠ। তার বাবা ছিলেন মহীশূর রেলওয়ে হাসপাতালের একজন চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ এবং তার মা একজন গৃহিণী।[৬][৭] বাবার পেশাগত কারণে তাদের পরিবারকে ঘন ঘন জায়গা বদলাতে হতো।
১০ বছর বয়সে তিনি মল্লাদিহাল্লি শ্রী রাঘবেন্দ্র স্বামীজিগের সাথে যোগাযোগ করেন। তাঁর কাছ থেকে তিনি সাধারণ যোগের একটি আনুষঙ্গিক অংশ শিখিয়েছিলেন, যা তিনি নিয়মিতভাবে পালন করেছিলেন।[৮] তিনি বলেন যে "একদিনের বিরতি ব্যতিরেকে, এই সহজ যোগব্যায়াম আমাকে শেখানো হয়েছিল এবং যার ফলে পরবর্তীতে গভীর অভিজ্ঞতা লাভ করেছি।"[৯]:৩৯
১৯৭৩ সালে মহীশূরে ডেমনোসট্রেশন স্কুল অ্যান্ড মহাজন প্রাক বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে পড়েন তিনি। আনুষ্ঠানিক শিক্ষা শেষ করার পর, বাসুদেব মাধ্যমিক-পরবর্তী শিক্ষায় আগ্রহী ছিলেন না। তবে, এক বছর পরে, তিনি মহীশূর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন, যেখানে তিনি ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতক করেন।[১০] বাসুদেব দ্বিতীয় স্থানে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন।[৭] যদিও তার বাবা-মা চেয়েছিলেন যে তিনি স্নাতকোত্তর অধ্যয়ন চালিয়ে যান, যদিও বাসুদেব তাতে অসম্মত হন এবং ব্যবসায় শুরু করেন।[১১]
কলেজের বছরগুলোতে তিনি ভ্রমণ এবং মোটরসাইকেলে আগ্রহী ছিলেন।[১৬][১৭] মোটরসাইকেলে যাত্রার সময় তার প্রিয় স্থানগুলির মধ্যে একটি ছিল মহীশূরের চামুন্ডি পর্বত, যদিও তিনি মাঝে মাঝে নেপাল পর্যন্ত যেতেন।[৭][১৮] বাসুদেব নিরামিষভোজীর পক্ষে কথা বলেন, কিন্তু ভ্রমণের সময় কোনো নিরামিষ খাবার সহজলভ্য না হলে তিনি সামুদ্রিক খাবার খান।[১৯] তিনি প্রতিদিন ৪০ মিনিটের জন্য সূর্য নমস্কার অনুশীলন করেন।[১৯]
স্নাতক শেষের পর, বাসুদেব মহীশূরে একটি পোল্ট্রি ফার্মের ব্যবসা শুরু করেন।[২০] বাসুদেব ব্যাখ্যা করেছিলেন যে, মুরগির খামার শুরু করার প্রেরণাটি কাজ না করলেও তিনি যে প্রশান্তি লাভ করেছিলেন তা পরবর্তীতে তার চালিকাশক্তি হয়েছিল।[৭] ব্যবসার জন্য ব্যস্ত থাকায় বাসুদেব তার ছুটির সময় তার অন্যান্য চর্চাগুলি চালিয়ে যান, যেমন কবিতা লেখা।[৭] ব্যবসাটি লাভজনক হয়ে ওঠে, কিন্তু তার পরিবার বারবার সমালোচনা করে এবং তার পোল্ট্রি নিয়ে কাজ করার সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে।[৭] ফলে বাসুদেব বিল্ডএইডস নামে একটি কোম্পানির সাথে নির্মাণ শিল্পে প্রবেশ করেন।[৭] তিনি তার এক পুরকৌশলী বন্ধুর সাথে অংশীদারিত্বে কোম্পানিটি শুরু করেছিলেন। যদিও বাসুদেবের কোনো আনুষ্ঠানিক প্রকৌশল প্রশিক্ষণ না থাকায়, তিনি তার পোল্ট্রি ফার্ম তৈরির মাধ্যমে অর্জিত অভিজ্ঞতাকে তার নতুন প্রচেষ্টায় ব্যবহার করেছিলেন।[৭]
২৫ বছর বয়সে, আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতার একটি সিরিজের পর, তিনি তার ব্যবসা বন্ধ করে দেন এবং ভ্রমণ এবং যোগ শেখাতে শুরু করেন।[৭][১১]
১৯৮৩ সালে তিনি মহীশূরে সাতজন অংশগ্রহণকারী নিয়ে প্রথম যোগব্যায়াম ক্লাস পরিচালনা করেন। সময়ের সাথে সাথে তিনি কর্ণাটক ও হায়দ্রাবাদ জুড়ে মোটরসাইকেলে চড়ে সহজ স্থিতী যোগ নামে নিজস্ব শৈলীর যোগব্যায়াম ক্লাস পরিচালনা শুরু করেন। তিনি তার পোল্ট্রি খামারের উৎপাদন বন্ধ করেন ও ক্লাসের জন্য পেমেন্ট নিতে অস্বীকার করেন। তার স্বাভাবিক অনুশীলন ক্লাসের শেষ দিন অংশগ্রহণকারীদের কাছ থেকে প্রাপ্ত সাহায্য স্থানীয় এক দাতব্য সংস্থায় দান করতেন।[১১]
যদিও বাসুদেব আধ্যাত্মিক পরিবারে বড় হননি, তবে তিনি ২৫ বছর বয়সে তার প্রথম আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতার কথা স্মরণ করেন।[১১] ১৯৮২ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর, তিনি চামুন্ডি পর্বতে উঠেছিলেন এবং যখন তিনি একটি শিলার উপর বসেছিলেন, বাসুদেব তার প্রথম আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতা লাভ করেছিলেন।[৭][১১] তিনি তার অভিজ্ঞতা ব্যাখ্যা করেছিলেন:
আমার জীবনের সেই মুহুর্ত পর্যন্ত আমি সবসময় নিজের কথা,অন্যের কথা ও অন্য কিছুর ব্যাপারে ভাবতাম । কিন্তু তখন প্রথমবারের মতো আমি জানতাম না যে কোনটা আমি আর কোনটা নই। হঠাৎ আমি সব জায়গায় নিজেকে অনুভব করলাম। যে শিলায় আমি বসে ছিলাম,যে বাতাসে আমি শ্বাস নিচ্ছিলাম, আমার চারপাশে বায়ুমণ্ডল সবকিছুতেই আমি ছড়িয়ে পড়েছিলাম । যা হয়ত কৌতুক বা পাগলামির মত শোনাচ্ছে। আমার মনে হয় এটি দশ থেকে পনের মিনিট পর্যন্ত স্থায়ী ছিল, কিন্তু যখন আমার স্বাভাবিক চেতনা ফিরে আসে তখন প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টা আমি সেখানে বসে ছিলাম। সম্পূর্ণ সচেতন ছিলাম, চোখ খোলা ছিল। কিন্তু কিছু সময় পর সব ঠিক হয়ে গেল।[২১]:০৪:০৪
প্রায় ছয় দিন পর বাসুদেবের বাড়িতে একই রকম আরেকটি অভিজ্ঞতা ঘটে।[৭][১১] এই অভিজ্ঞতার ছয় সপ্তাহ পরে, তিনি তার ব্যবসা ছেড়ে দেন এবং তার রহস্যময় অভিজ্ঞতার অন্তর্দৃষ্টি অর্জনের প্রচেষ্টায় ব্যাপকভাবে ভ্রমণ করেন।[১১] প্রায় এক বছর ধ্যান ও ভ্রমণের পর তিনি যোগব্যায়ামে তার অভ্যন্তরীণ অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।[১১]
১৯৯২ সালে, সদগুরু আধ্যাত্মিক, পরিবেশগত এবং শিক্ষামূলক কার্যকলাপের জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম হিসাবে,[২২][২৩][২৪]ঈশা ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেন।[২৫] এটি হচ্ছে একটি অধ্যত্ম, অলাভজনক মানবসেবা সংস্থা যা মানুষের শারীরিক, মানসিক এবং অভ্যন্তরীণ সুস্থতার জন্য নিবেদিত। ১৯৯৩ সালে, তিনি তার যোগ ক্লাসে ক্রমবর্ধমান আগ্রহ পূরণের জন্য একটি আশ্রম প্রতিষ্ঠার জন্য একটি অবস্থান অনুসন্ধান শুরু করেন।[৭] ১৯৯৪ সালে, তিনি তামিলনাড়ুরকোয়েম্বাটুরেভেলিয়ানগিরি পাহাড়ের কাছে ইশা যোগ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।[৭] এটি যোগের মাধ্যমে স্ব-সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য কয়েকটি অনুষ্ঠান পরিচালনা করে। ইশা ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠার পর থেকে তিনি এর প্রধান হিসেবে রয়েছেন। ফাউন্ডেশনের বেশিরভাগ কার্যক্রম স্বেচ্ছাসেবকদের দ্বারা পরিচালিত হয়।[২৬] এটি বিশ্বব্যাপী এক কোটিরও বেশি স্বেচ্ছাসেবক দ্বারা পরিচালিত হয়। সংস্থাটি ইশা যোগ নামে যোগ প্রোগ্রাম চালু করে।[২৭] ফাউন্ডেশনের লক্ষ্য ইশা বিদ্যা নামে একটি উদ্যোগের মাধ্যমে গ্রামীণ ভারতে শিক্ষার মান উন্নত করা।[২৮] এই প্রতিষ্ঠানটি জাতিসংঘেরঅর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদের মতো আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সাথে একত্রে কাজ করে।[২৯]
ইশা ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে, সদগুরু পরিবেশ সংরক্ষণ এবং সুরক্ষার উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে বেশকয়েকটি প্রকল্প এবং প্রচারাভিযান চালু করেছেন, যার মধ্যে রয়েছে প্রজেক্ট গ্রিনহ্যান্ডস (পিজিএইচ), র্যালি ফর রিভার, কাভেরী কলিং এবং সেভ সয়েল।[৩০][৩১][৩২] পুনঃবনায়ন প্রচেষ্টার মাধ্যমে তামিলনাড়ুতে জল ও মাটি সমস্যা সমাধানের জন্য সদগুরু পিজিএইচ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।[৩৩] প্রকল্পের উল্লিখিত লক্ষ্য হল, তামিলনাড়ু জুড়ে প্রায় ১৬ কোটি গাছ লাগানো। গ্রীনহ্যান্ডস প্রকল্পের অধীনে তামিলনাড়ু এবং পুদুচেরির ১৮০০ টিরও বেশি সম্প্রদায়ের ২০ লক্ষেরও বেশি মানুষ এখনও পর্যন্ত ৮২ লক্ষ চারা রোপণ করেছেন। এই সংস্থাটি ১৭ অক্টোবর ২০০৬ তারিখে তামিলনাড়ুর ২৭টি জেলায় একযোগে ৮.৫২ লক্ষ চারা রোপণ করে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড তৈরি করে। এটি পরিবেশ সুরক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্য ২০০৮ সালের ইন্দিরা গান্ধী পরিবেশ পুরস্কারে ভূষিত হয়।
২০১৯ সালের জুলাইয়ে, "কাবেরী কলিং" নামে একটি প্রচারাভিযানটি শুরু করা হয়, যা কাবেরী নদীর ০.৬৫ মাইল প্রশস্ত এলাকা বরাবর গাছ লাগানোর উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে যাতে নদীতে জলের স্তর এবং ভূগর্ভস্থ জলের সারণী পুনরায় পূরণ করা যায়।[৩৪][৩৫] ২০১৭ সালে, সদগুরু "র্যালি ফর রিভারস" প্রচারাভিযান শুরু করেছিলেন,[৩৬] যা "কাবেরী কলিং" প্রচারণার মতই সারা ভারত জুড়ে নদী পুনরুজ্জীবন প্রচেষ্টার জন্য ব্যাপক সমর্থন গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে।[৩৩][৩৭] ২০২২ সালে, সদগুরু তার "জার্নি টু সেভ সয়েল" নামে একক মোটরসাইকেল যাত্রা শুরু করেন। প্রচারাভিযানের অংশ হিসেবে ২০২২ সালের ২১ মার্চ তারিখে লন্ডন থেকে এই যাত্রা শুরু হয়ে তিনটি মহাদেশের ৩০,০০০ কিলোমিটার পেরিয়ে ২১ জুন ভারতে ১০০ দিনের মোটরসাইকেল যাত্রা সম্পন্ন করেন। এটি মাটির ক্ষয় সংক্রান্ত সমস্যা এবং কৃষিকাজে জৈব পদার্থ ব্যবহার করার সুবিধা সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে।[৩২][৩৮] এই যাত্রা পৃথিবীর প্রায় ৩৫০ কোটি মানুষকে প্রভাবিত করে। প্রায় একশত দেশ ও সংস্থা সদগুরুর সঙ্গে মাটি সুরক্ষার সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
জাতিসংঘেরখাদ্য ও কৃষি সংস্থা বলেছে যে "২০৫০ সালের মধ্যে পৃথিবীর মূল্যবান উপরের মাটির ৯০% ঝুঁকিতে পড়তে পারে"।[৪২] তবে, "মাটি বাঁচাও" অভিযান এই সমস্যাটির সমাধান করছে কিনা তা নিয়ে দ্বিমত রয়েছে৷[৩] খাদ্য ও কৃষি সংস্থার ডেপুটি ডিরেক্টর-জেনারেল মারিয়া হেলেনা সেমেডো, মতামত দিয়েছিলেন যে "জৈব [কৃষি] একমাত্র সমাধান নাও হতে পারে তবে এটি একক সেরা [বিকল্প] যা আমি ভাবতে পারি।"[৪৩] ইতোমধ্যে, একটি পরিবেশগত পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা সদগুরুর পদ্ধতিকে "গ্রিনওয়াশিং" হিসাবে চিহ্নিত করেছে।[৪৪]
১৯৯৬ সালে আশ্রম প্রতিষ্ঠার পর ভারতীয় হকি দলের জন্য তিনি কোর্সসহ ঈশা যোগ কেন্দ্রে নিয়মিত যোগব্যায়াম প্রোগ্রাম পরিচালনা শুরু করেন।[৪৫][৪৬] ১৯৯৭ সালে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ক্লাস পরিচালনা শুরু করেন।[৪৭][৪৮] ২০০১ সালে তিনি তামিলনাড়ু কারাগারে জীবনকালের বন্দীদের জন্য যোগচর্চা ক্লাস পরিচালনা শুরু করেন।[৪৯] ২০১১ সাল থেকে তিনি একবারে ১০,০০০ এবং ১৫,০০০ জন অংশগ্রহণকারীদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে বৃহৎ পরিসরে অংশগ্রহণের অনুষ্ঠান পরিচালনা শুরু করেন।
প্রোগ্রাম ঈশা যোগের অধীনে দেওয়া হয়। ঈশা শব্দটির অর্থ "নিরাকার অমরাত্মা "।[৫০] ঈশা যোগের প্রধান প্রোগ্রাম 'ইনার ইঞ্জিনিয়ারিং', যা কিছু সহজ যোগ অনুশীলন এবং সম্ভাবি মহামুদ্রার সাথে পরিচিত করে।[৫১] তিনি কর্পোরেট নেতৃত্বের জন্য যোগ ক্লাস পরিচালনা করেন যা তিনি "অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনীতি" বলে পরিচিত করিয়ে দেন। যা সম্পর্কে তিনি বলেছেন, এটি আজকের অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে সমবেদনা এবং অন্তর্নিহিততার একটি সূত্র।[৫২][৫৩]
তিনি নিয়মিত তামিলনাড়ু ও কর্ণাটক এ মহাসৎসঙ্গ পরিচালনা করেন। এখানে তিনি বক্তৃতা দেন, ধ্যান শিক্ষা দেন এবং দর্শকদের প্রশ্নের উত্তর দিয়ে থাকেন। এই অনুষ্ঠানগুলো গাছ-রোপণ কার্যক্রমকে উত্সাহিত করার জন্য প্ল্যাটফর্ম হিসাবেও ব্যবহার করা হয়।[৫৪] তিনি কৈলাশ ও হিমালয়পর্বতমালার বার্ষিক যাত্রাগুলোতে আধ্যাত্মিক পদপ্রার্থীদেরও গ্রহণ করেন। তার নেতৃত্বে কৈলাশ যাত্রা ২০১৪ সালে যাত্রা শুরু করে ৫১৪ জন তীর্থযাত্রীসহ, যা কৈলাশ ভ্রমণের জন্য সবচেয়ে বড় দলগুলোর মধ্যে রয়েছে।[৫৫][৫৬]
তিনি ঈশা সেন্টারে প্রতি বছর মহাশিবরাত্রি উদযাপন করেন। ২০১৩ সালে এই উদযাপনে ৮০০,০০০ মানুষ উপস্থিত ছিলেন বলে অনুমান করা হয়েছে।[৫৭][৫৮][৫৯] সে রাতে সঙ্গীত, নৃত্য, এবং নির্দেশিত ধ্যান এর অন্তর্ভুক্ত ছিল। ২০১৩ সালে কর্ণাটক এর গায়ক অরুণা সাইরাম, নর্তকী অনিতা রত্নম এবং ব্যান্ড দ্য রাঘু দীক্ষিত প্রজেক্ট এতে অংশগ্রহণ করেন।[৫৯]
২০০৫ সালের মার্চে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টেনেসি, ম্যাকমিনভিলিতে ঈশা ইনস্টিটিউট অফ ইননার-সায়েন্সেস (তৃতীয়) নির্মাণ শুরু হয়। যা ৬ মাস পরে সম্পন্ন হয়। সদগুরু একে পশ্চিম গোলার্ধে আধ্যাত্মিকতা বৃদ্ধির কেন্দ্র হিসাবে স্থাপন করার সিদ্ধান্ত নেন। এখানে ২০০৮ সালের ৭ নভেম্বর তিনি ৩২,০০০ বর্গফুটের ফ্রি-স্ট্যান্ডিং মেডিটেশন হল ‘মহিমা হল’ তৈরি করেন। ‘মহিমা হল’ পশ্চিম গোলার্ধের বৃহত্তম ধ্যান হল।[৬০] ২০১০ সালের ৩০ জানুয়ারি তিনি লিঙ্গ ভৈরবী যা ঈশা যোগ কেন্দ্রে ঐশ্বরিক নারীর দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিনিধিত্ব করে তাকে প্রতিষ্ঠা করেন।[৯]
১৯৯৪ সালে নতুন প্রতিষ্ঠিত ঈশা যোগ কেন্দ্রের প্রাঙ্গনে প্রথম অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সদগুরু। ধ্যানলিঙ্গ হল যোগব্যায়াম এবং ধ্যানের স্থান। যা তার গুরুর নির্ধারিত মিশন ছিল।[১১] এর দায়িত্ব তিনি সদগুরুকে দেন। ১৯৯৮ সালে লিঙ্গ পাথর তৈরির আদেশ দেওয়া হয়েছিল এবং আশ্রমে পৌঁছেছিল। তিন বছরের কাজের পর ২০০১ সালের ২৩ জুন ধ্যানলিঙ্গ সম্পন্ন হয়।[৬১] সেই বছরের ২৩ নভেম্বর জনসাধারণের জন্য খুলে দেয়া হয়।[৬২]
এটি একটি ধ্যানের স্থান যা কোন বিশেষ বিশ্বাস বা বিশ্বাস ব্যবস্থার কথা বলে না।[৬৩] ৭৬ ফুট গম্বুজ, ইস্পাত বা কংক্রিট ছাড়া ইট এবং স্থিতিশীল কাদা মর্টার ব্যবহার করে নির্মিত[৬৪] পবিত্র ভাস্কর্য এর আচ্ছাদন। লিঙ্গ এর উচ্চতা ১৩ ফুট, ৯ ইঞ্চি এবং এটি কালো গ্রানাইট দিয়ে গঠিত। সামনে প্রবেশদ্বারে অবস্থিত সর্ব ধর্ম স্তম্ভ। যা এককত্বের প্রতীক এবং এতে হিন্দু, ইসলাম, খ্রিস্টান, শিখ, জৈন, তাও, জরাথুস্ট্র, ইহুদী, বৌদ্ধ এবং শিন্টো ধর্মের প্রতীকগুলো সর্বজনীনভাবে স্বাগত জানানোর সাথে এককতার প্রতীক হিসাবে কাজ করে।[৬৫]
২০১৩ সালের ২৩ জুন তিনি ঈশা কেন্দ্রের "ধর্মের সার্বজনীনতার উপর আন্তঃধর্মীয় আলোচনা" শিরোনামের একটি বহু ধর্মীয় অধিবেশন পরিচালনা করেন। এতে বিভিন্ন ধর্মের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন এবং ধ্যানলিঙ্গের ১৪ তম বার্ষিকী উদযাপনের জন্য ও সবাই মিলিত হন।[৬৬]
তিনি ঈশা যোগকেন্দ্রস্থলে অবস্থিত আদিযোগীর ১১২ ফুট মূর্তির ডিজাইন করেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রীনরেন্দ্র মোদি ২০১৭ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি মহাশিবরাত্রিতে এর উদ্বোধন করেন।[৬৭] আদিযোগী মূর্তিটি প্রথম যোগী বা আদিযোগীর। প্রথম গুরু বা আদি গুরু হিসেবে শিবকে চিত্রিত করা হয়। যিনি মানবতাকে যোগব্যায়াম দিয়েছেন। মূর্তিটি ভারতীয় স্টীল কর্তৃপক্ষ সরবরাহকৃত ২০,০০০ পৃথক লোহার প্লেট ব্যবহার করে ঈশা ফাউন্ডেশন নির্মাণ করে।[৬৮] এর ওজন প্রায় ৫০০ টন (৪৯০ টন দীর্ঘ; ৫৫০ টন শর্ট )। মূর্তিটি গিনিস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে "বৃহত্তমতম বাস্ট ভাস্কর্য" হিসেবে স্বীকৃত হয়েছে।[৬৯] "যোগেশ্বর লিঙ্গ" নামক একটি পবিত্র শিবলিঙ্গ আদিযোগী শিব মূর্তির সামনে স্থাপিত করা হয়েছে।[৭০]
২০০৬ সালের এক: দ্য মুভি প্রামান্যচিত্রে তাকে দেখা যায়। তিনি "ইন কনভারসেশন উইথ মিস্টিক" নামে এক কথোপকথনে অংশ নেন।[৮০]
২০১২ সালে তিনি ঈশা ইনসাইট প্রোগ্রাম শুরু করেছিলেন। যা ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়গুলোকে তাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রমকে বাড়িয়ে তুলতে সহায়তা করে। ফোর্বস ম্যাগাজিনের সাথে একটি সাক্ষাৎকারে প্রোগ্রাম তৈরির পিছনে প্রেরণা সম্পর্কে তিনি বলেন, "অর্থনৈতিক সংখ্যাগরিষ্ঠতা এবং ভারত ও বাইরের নেতাদের সাথে কথা বলার সময় আমি লক্ষ্য করেছি যে মানুষের মধ্যে সবচেয়ে গুরুতর সমস্যাটি অন্তর্দৃষ্টির অভাব যে তারা কি করছে বা তারা কি করতে পারে? যা আমাদের অন্তর্দৃষ্টি নামক এই প্রোগ্রামটি তৈরি করতে উৎসাহ দিয়েছে।"[৮১]
২০১২ সালে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের ১০০ সর্বাধিক শক্তিশালী ভারতীয়দের তালিকায় তিনি ৯২তম এবং ২০১৯ সালে ইন্ডিয়া টুডের ৫০ সর্বাধিক শক্তিশালী ভারতীয়দের তালিকায় ৪০তম স্থানে ছিলেন।[৯০][৯১]
যখন আয়ুষ্মান খুরানা তাকে "সঠিক রাজনৈতিক অবস্থান" কীভাবে বেছে নেবেন তা জিজ্ঞাসা করলে, সদগুরু এই বলে উত্তর দিয়েছিলেন যে তিনি কোনও রাজনৈতিক দলের সদস্যতা নেন নি এবং অন্যদেরও তা নেয়া উচিত নয়।[৯২] তিনি বলেছিলেন যে, "দলের সদস্যপদ বাতিল করা উচিত কারণ এটি একটি গোত্রে পরিণত হচ্ছে।"[৯২] তদনুসারে, তিনি ব্যক্তিদের অফিসে তাদের কর্মক্ষমতা মূল্যায়ন করার পরে একটি প্রদত্ত দলকে ভোট দিতে উত্সাহিত করেন "কে আরও বোধগম্য হয় তা দেখতে"।[৯২] যদিও, তার মতামত মাঝে-মাঝে হিন্দু জাতীয়তাবাদী এবং ভারতীয় জনতা পার্টির পক্ষে বলে মনে করা হয়।[৫][৯৩][৯৪][৪৪] ২০১৮ সালে, তিনি উদারপন্থীদেরকে ধর্মান্ধ বলে অভিযুক্ত করেছিলেন।[৯৫] ২০১৯ সালে তিনি লন্ডনে একজন মুসলিম ছাত্রকে "তালেবান" হিসাবে উল্লেখ করেছিলেন, যার জন্য তিনি তীব্র সমালোচনার পরে ক্ষমা চেয়েছিলেন।[৯৬] ভারতে ২০১৯ সালের নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের "সরকারের যোগাযোগে" ব্যর্থতা স্বীকার করার পরে, সদগুরু এই আইনের সমর্থনে কথা বলেছিলেন।[৯৭][৯৮][৯৯]
সদগুরু বিভিন্নসময়ে অনেকগুলো দাবি করেছেন যা বৈজ্ঞানিক ঐক্যমতের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ।[৩][১০০][২] যদিও ভারত পারদের ব্যবহার নিষিদ্ধ করার জন্য আন্তর্জাতিক মিনামাটা কনভেনশন অনুমোদন করেছে, সদগুরু সিদ্ধ ওষুধের মতো ঐতিহ্যবাহী ভারতীয় ওষুধের প্রেক্ষাপটে পারদ ব্যবহারের পক্ষে সমর্থন করেন।[১০১][১০২][২][১০৩] তিনি অস্ট্রেলিয়ার বিজ্ঞানী সুমাইয়া শেখের একটি দাবি খণ্ডন করে বারবার বলেছেন যে তিনি ঘরের তাপমাত্রায় পারদকে শক্ত করতে পারেন।[৩]
চন্দ্রগ্রহণ শরীরের শক্তিতে যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে সে সম্পর্কে বিবৃতির জন্য সদগুরুর সমালোচনা করা হয়েছে।[১০৪][১০০]
তার লেখা অনেক বই আছে।যেমন -ইনার ইঞ্জিনিয়ারিং: এ যোগীস গাইড টু জয়।[১০৫] তার লেখা হিন্দি, তামিল, তেলুগু, এবং কন্নড় সহ অন্যান্য অনেক ভাষায় অনূদিত হয়েছে।
↑"Telugu...Tamil...Telugu!"। Official Website of Sadhguru, Isha Foundation (ইংরেজি ভাষায়)। ১০ আগস্ট ২০১১। ৩০ এপ্রিল ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৪-৩০।
↑"Jaggi Vasudev's father passes away"। Star of Mysore (ইংরেজি ভাষায়)। ৯ নভেম্বর ২০১৯। ২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৮ জুন ২০২১।
↑Naidu, Jaywant (২৬ নভেম্বর ২০১৭)। "When beauty comes to life"। Deccan Chronicle। ৭ মে ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০।
↑Sadghguru Jaggi Vasudev (২০০৯)। TED India 2009 (YouTube)। Mysore: TED India। ৩ মার্চ ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ মে ২০১৯।উদ্ধৃতি টেমপ্লেট ইংরেজি প্যারামিটার ব্যবহার করেছে (link)
↑Zakaria, Namrata (জুন ২০১৩)। "The Lure of Isha"(পিডিএফ)। Harpers Bazaar। পৃষ্ঠা 106–108। ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৩ তারিখে মূল(পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৩।
↑ কখPadmanabhan, Mukund (১৫ মার্চ ২০০৯)। "Golf with the Guru"। The Hindu। ৩০ ডিসেম্বর ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৯ জানুয়ারি ২০১৩।
↑MG Arun; Shwweta Punj; Suhani Singh; Kaushik Deka; Prachi Bhuchar; Chinki Sinha; Anshuman Tiwari; Sandeep Unnithan; Amarnath K. Menon; Anilesh S. Mahajan; Uday Mahurkar (২৬ জুলাই ২০১৯)। "Top 50 power people | The High & Mighty Part-4"। India Today। ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ মার্চ ২০২০।
Berghella, Vincenzo (২০১৮), Chennai and Coimbatore, India, আইএসবিএন978-0-578-20085-9উদ্ধৃতি টেমপ্লেট ইংরেজি প্যারামিটার ব্যবহার করেছে (link)
Hudson, Simon; Hudson, Louise (২০১৭), Marketing for Tourism, Hospitality & Events: A Global & Digital Approach, London, etc.: SAGE, আইএসবিএন978-1-5264-1437-3উদ্ধৃতি টেমপ্লেট ইংরেজি প্যারামিটার ব্যবহার করেছে (link)