![]() জাতিসংঘ মানব বসতি কর্মসূচি | |
---|---|
![]() | |
সংস্থার ধরন | কর্মসূচি |
মর্যাদা | চলমান |
প্রধান কার্যালয় | নাইরোবি, কেনিয়া |
ওয়েবসাইট | www.unhabitat.org |
জাতিসংঘ মানব বসতি কর্মসূচি (ইউএন-হ্যাবিট্যাট) হলো জাতিসংঘের একটি কর্মসূচি[১], যা মানব বসতি এবং টেকসই নগর উন্নয়ন নিয়ে কাজ করে। এটি ১৯৭৬ সালে কানাডার ভ্যানকুভার অনুষ্ঠিত প্রথম জাতিসংঘ মানব বসতি এবং টেকসই শহুরে উন্নয়ন সম্মেলন (হ্যাবিট্যাট I) এর ফলাফল হিসেবে ১৯৭৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। ইউএন-হ্যাবিট্যাটের প্রধান কার্যালয় কেনিয়ার জাতিসংঘ কার্যালয়ে অবস্থিত। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের দ্বারা এটি সামাজিক এবং পরিবেশগতভাবে টেকসই শহর এবং নগর উন্নয়নকে প্রমোট করার জন্য ম্যান্ডেটপ্রাপ্ত, যার লক্ষ্য সকলের জন্য পর্যাপ্ত আশ্রয় নিশ্চিত করা। জাতিসংঘের এই সংস্থাটি জাতিসংঘ টেকসই উন্নয়ন গ্রুপের সদস্য।[২] ইউএন-হ্যাবিট্যাটের ম্যান্ডেট ১৯৯৬ সালে তুরস্কের ইস্তানবুলে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘ মানব বসতি সম্মেলন (হ্যাবিট্যাট II) দ্বারা গৃহীত হ্যাবিট্যাট এজেন্ডা থেকে উদ্ভূত। হ্যাবিট্যাট এজেন্ডার দুইটি মূল লক্ষ্য হলো সকলের জন্য পর্যাপ্ত আশ্রয় এবং একটি নগর-ভিত্তিক বিশ্বে টেকসই মানব বসতির উন্নয়ন।
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের প্রস্তাব ৩৩২৭ (XXIX) থেকে ইউএন-হ্যাবিট্যাট এর ম্যান্ডেট নির্ধারিত হয়, যার মাধ্যমে পরিষদ জাতিসংঘ আবাসন ও মানব বসতি ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করে।[৩] প্রস্তাব ৩২/১৬২ এর মাধ্যমে জাতিসংঘ মানব বসতি কেন্দ্র (হ্যাবিট্যাট) গঠন করা হয়, এবং প্রস্তাব ৫৬/২০৬-এর মাধ্যমে পরিষদ মানব বসতি কমিশন ও জাতিসংঘ মানব বসতি কেন্দ্রকে (হ্যাবিট্যাট) এবং জাতিসংঘ আবাসন ও মানব বসতি ফাউন্ডেশনকে ইউএন-হ্যাবিট্যাট-এ রূপান্তরিত করে। ইউএন-হ্যাবিট্যাট এর ম্যান্ডেট অন্যান্য আন্তর্জাতিকভাবে গৃহীত উন্নয়ন লক্ষ্যের উপরও ভিত্তি করে, যার মধ্যে জাতিসংঘের সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (প্রস্তাব ৫৫/২) অন্তর্ভুক্ত, বিশেষ করে ২০২০ সালের মধ্যে অন্তত ১০ কোটি বস্তিবাসীর জীবনে উল্লেখযোগ্য উন্নতির লক্ষ্যমাত্রা এবং টেকসই উন্নয়ন শীর্ষ সম্মেলনের বাস্তবায়ন পরিকল্পনার অধীনে ২০১৫ সালের মধ্যে নিরাপদ পানীয় জল ও মৌলিক পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার টেকসই প্রবেশাধিকারহীন মানুষের অনুপাত অর্ধেকে নামিয়ে আনার লক্ষ্য অন্তর্ভুক্ত।[৪] সাধারণ পরিষদের প্রস্তাব ৬৫/১-এর মাধ্যমে সদস্য রাষ্ট্রসমূহ বস্তি হ্রাস করে এবং বস্তিবাসীদের জীবনের মানোন্নয়ন করে বস্তিমুক্ত শহর প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ অব্যাহত রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হন।[৫]
ইউএন-হ্যাবিট্যাট পাঁচ মহাদেশের ৭০টিরও বেশি দেশে কাজ করছে এবং এর কার্যক্রম সাতটি ক্ষেত্রে কেন্দ্রীভূত:
ইউএন-হ্যাবিট্যাট স্থানীয় অংশীদারদের সাথে কাজ করে, যেমন মিয়ানমার-এর ইয়াঙ্গুনে দোহ এইন, যা নগর পুনর্নির্মাণ এবং ঐতিহ্য সংরক্ষণের ওপর গুরুত্বারোপ করে।[৬]
ইউএন-হ্যাবিট্যাট-এর প্রশাসনিক কাঠামো তিনটি সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী সংস্থা নিয়ে গঠিত: ইউএন-হ্যাবিট্যাট পরিষদ, একটি নির্বাহী বোর্ড এবং স্থায়ী প্রতিনিধিদের কমিটি।[৭] পূর্বে, এই কর্মসূচির সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী সংস্থা ছিল পরিচালনা পরিষদ, তবে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের একটি প্রস্তাবের পর এটি বিলুপ্ত করা হয়।[৮]
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ একটি সার্বজনীন সংস্থা, যা জাতিসংঘের ১৯৩টি সদস্য রাষ্ট্র নিয়ে গঠিত এবং এটি প্রতি চার বছর অন্তর নাইরোবিতে ইউএন-হ্যাবিট্যাট সদর দপ্তরে বসে। প্রথম অ্যাসেম্বলি অনুষ্ঠিত হয় মে ২০১৯-এ।[৯] প্রথম অ্যাসেম্বলির সভাপতিত্ব করে মেক্সিকো, এবং এই সভাপতিত্বে মেক্সিকোর প্রতিনিধিত্ব করেন বহুপাক্ষিক বিষয় ও মানবাধিকার বিষয়ক মেক্সিকান উপসচিব মার্থা ডেলগাডো পেরাল্টা।[১০] এই সংস্থার দ্বিতীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী বিভাগ হলো নির্বাহী বোর্ড, যা ইউএন-হ্যাবিট্যাট অ্যাসেম্বলি দ্বারা নির্বাচিত ৩৬টি সদস্য রাষ্ট্র নিয়ে গঠিত এবং এতে প্রতিটি আঞ্চলিক গ্রুপের প্রতিনিধিরা থাকে। বোর্ডটি বছরে তিনবার বৈঠকে বসে। ইউএন-হ্যাবিট্যাটের স্থায়ী প্রতিনিধিদের কমিটি (CPR) সকল স্থায়ী প্রতিনিধি নিয়ে গঠিত, যারা নাইরোবিতে জাতিসংঘ কার্যালয়-এ স্বীকৃত।[১১]
ইউএন-হ্যাবিট্যাট সচিবালয়ের প্রধান হলেন নির্বাহী পরিচালক, যিনি জাতিসংঘের মহাসচিব দ্বারা মনোনীত হন এবং জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ কর্তৃক অনুমোদিত হন। বর্তমান নির্বাহী পরিচালক হলেন মালয়েশিয়ার মাইমুনাহ মোহাম্মদ শরীফ, যিনি ডিসেম্বর ২০১৭ সালে নিয়োগপ্রাপ্ত হন।[১২] সহকারী নির্বাহী পরিচালক হলেন স্লোভাকিয়ার মিচাল ম্লিনার, যিনি ডিসেম্বরে ২০২২ সালে নিয়োগপ্রাপ্ত হন।[১৩]
২০০২ সালের আগে, এই কর্মসূচির প্রধানের পদবী ছিল জাতিসংঘ মানব বসতি কেন্দ্রের পরিচালক।[১৫]
বিশ্ব নগর ফোরামটি জাতিসংঘ কর্তৃক ২০০১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। বিশ্বের অন্যতম গুরুতর সমস্যা—দ্রুত নগরায়ন এবং এর সামাজিক, অর্থনৈতিক, নগরী ও জলবায়ুর ওপর প্রভাব বিশ্লেষণ করার জন্য এই ফোরামটি কাজ করে থাকে।[১৬] গত দুই দশকে, এই ফোরামটি টেকসই নগরায়ন নিয়ে বৈশ্বিক পর্যায়ের প্রধান সম্মেলনে পরিণত হয়েছে।[১৬] জাতিসংঘের মানব বসতি কর্মসূচি (ইউএন-হ্যাবিট্যাট) দ্বারা আহ্বানকৃত এই ফোরামটি একটি অনন্য এবং অ-আইন প্রণয়নকারী প্ল্যাটফর্ম, যা নগর সংক্রান্ত বিষয়ে সর্বাধিক অন্তর্ভুক্তিমূলক আন্তর্জাতিক সমাবেশগুলোর একটি। প্রথম ডব্লিউইউএফ ২০০২ সালে নাইরোবি, কেনিয়ায় অনুষ্ঠিত হয় এবং এর পর থেকে এটি বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে আয়োজিত হয়ে আসছে। ফোরামটি প্রতি দুই বছর অন্তর বিভিন্ন স্থানে আয়োজিত হয়।[১৭][১৮][১৯][২০]
বিশ্ব নগর প্রচারণা হল ইউএন-হ্যাবিট্যাট-এর নেতৃত্বাধীন একটি উদ্যোগ, যা সারা বিশ্বে টেকসই নগর উন্নয়ন এবং বাসযোগ্য শহর গঠন ও উন্নয়ন করতে কাজ করে।[২১] এর প্রধান লক্ষ্য হলো নতুন নগর এজেন্ডার বাস্তবায়নের জন্য প্রচার করা, যা ২০১৬ সালে জাতিসংঘ কর্তৃক গৃহীত একটি বৈশ্বিক কাঠামো, যা পরবর্তী ২০ বছরের জন্য নগর উন্নয়ন নীতি ও কৌশলকে দিকনির্দেশনা প্রদান করে। এই প্রচারণাটি সরকার, নাগরিক সমাজ সংস্থা, বেসরকারি খাত এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন অংশীদারদের একত্রিত করে নগর উন্নয়নের বিষয়ে সহযোগিতায় কাজ করে। এটি সাশ্রয়ী মূল্যের আবাসন, টেকসই পরিবহন, স্থিতিশীল নগর পরিকল্পনা এবং সামাজিক অন্তর্ভুক্তির মতো গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি বিষয়ে মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করে।