জাপান সরকার | |
---|---|
এক নজরে | |
রাষ্ট্র | জাপান |
নেতা | প্রধানমন্ত্রী |
নিয়োগকর্তা | সম্রাট |
মূল গঠন | ক্যাবিনেট |
যার প্রতি দায়বদ্ধ | জাতীয় ডায়েট |
সদর দপ্তর | চিয়্যোদা ওয়ার্ড, টোকিও |
ওয়েবসাইট | http://www.japan.go.jp/ |
জাপান সরকার একটি সংসদীয় রাজতন্ত্র, অর্থাৎ এই ব্যবস্থায় সম্রাটের ক্ষমতা মূলত আনুষ্ঠানিক ও সীমিত। অন্যান্য অনেক রাষ্ট্রের মত জাপানেও সরকার ব্যবস্থা তিন ভাগে বিভক্ত, যথা: আইন বিভাগ, শাসন বিভাগ এবং বিচার বিভাগ।
১৯৪৭ খ্রিঃ প্রণীত সংবিধান অনুযায়ী জাপান সরকার পরিচালিত হয়। এটি একটি এককেন্দ্রিক রাষ্ট্র যার প্রশাসনিক অঞ্চলের সংখ্যা ৪৭ টি এবং সম্রাট যার রাষ্ট্রপ্রধান।[১] সম্রাটের প্রকৃত ক্ষমতা নেই; শুধুমাত্র আনুষ্ঠানিক ক্ষমতা আছে।[২] সরকার চালানোর প্রকৃত ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রী ও তার অধীনস্থ রাষ্ট্রমন্ত্রীদের দ্বারা পরিচালিত ক্যাবিনেটের হাতে অর্পিত। ক্যাবিনেট দেশের শাসন বিভাগের সমস্ত ক্ষমতার উৎস, এবং সরকারের প্রধান হিসেবে প্রধানমন্ত্রী ক্যাবিনেট গঠন করেন। প্রধানমন্ত্রীকে নির্বাচন করে জাতীয় সংসদ বা ডায়েট, এবং তাকে তার পদে নিয়োগ করেন সম্রাট।
জাতীয় ডায়েট হল আইন বিভাগের কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রক। এটি দ্বিকক্ষবিশিষ্ট, যেখানে উচ্চকক্ষটি হল উপদেষ্টা পরিষদ এবং নিম্নকক্ষ জনপ্রতিনিধি পরিষদ। নিম্নকক্ষের সদস্যরা জনসাধারণ কর্তৃক সরাসরি নির্বাচিত হয়ে আসেন। জনসাধারণ সার্বভৌম ক্ষমতার উৎস।[৩] জাপানের সুপ্রিম কোর্ট ও অন্যান্য আদালত বিচার বিভাগ গঠন করে, এবং তা পুরোপুরি শাসন ও আইন বিভাগের নিয়ন্ত্রণমুক্ত।[৪]
মেইজি পুনর্গঠন এর আগে অবধি বহু শতাব্দী ধরে জাপান ক্রমান্বয়ে সামরিক নেতা শোগুনদের দ্বারা শাসিত হত। এই সময়ে প্রকৃত ক্ষমতার অধিকারী শোগুন সম্রাটের নামে নিজে দেশ চালনা করতেন।[৫] শোগুনরা ছিলেন বংশানুক্রমিক সামরিক নেতা। বর্তমানে জেনারালিসিমো নামক বিরল সামরিক পদটি শোগুনদের ক্ষমতার সমতুল্য বলে ধরা যেতে পারে। খাতায় কলমে সম্রাটরা দেশের সার্বভৌম ক্ষমতার ধারক হলেও তাদের হাতে প্রকৃত ক্ষমতা তখনও ছিল না।[৬]
১৮৬৮ খ্রিঃ মেইজি পুনর্গঠনের সময় শেষ শোগুন তোকুগাওয়া ইয়োশিনবু পদত্যাগ করেন এবং সম্রাটের "হুকুম তামিল করার যন্ত্র" হয়ে থাকতে সম্মত হন।[৭] এই ঘটনায় জাপানে সম্রাটের ক্ষমতা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়। ১৮৮৯ খ্রিঃ জাপানকে পাশ্চাত্য শক্তিগুলোর সমকক্ষ করে তুলতে মেইজি সংবিধান প্রণয়ন করা হয়। ফলে এশিয়ায় প্রথম সংসদ হিসেবে জাপানের সংসদ আত্মপ্রকাশ করে।[৮] এই পর্যায়ে শাসনব্যবস্থা ছিল নিরঙ্কুশ ও সংসদীয় রাজতন্ত্রের মিশ্রণ। সমসাময়িক প্রুশীয় মডেল অনুযায়ী বিচার বিভাগ ছিল স্বাধীন।
কাজোকু নামক এক নতুন অভিজাত শ্রেণী গড়ে ওঠে। এরা ধ্রুপদী হেইয়ান অভিজাত শ্রেণী কুগে এবং শোগুনের অধীনস্থ সামন্তপ্রভু দাইমিয়োদের সমগোত্রীয় হয়ে ওঠে।[৯] প্রতিনিধিকক্ষ ও অমাত্যকক্ষ সংবলিত সাম্রাজ্যিক ডায়েটও এই সময় প্রতিষ্ঠিত হয়। অমাত্যকক্ষের সভ্যরা হতেন রাজপরিবারের সদস্য, কাজোকু অথবা সম্রাট কর্তৃক নিযুক্ত ব্যক্তি। প্রতিনিধিকক্ষের সভ্যরা সাধারণ পুরুষ ভোটদাতাদের দ্বারা সরাসরি নির্বাচিত হতেন। মেইজি সংবিধানে সম্রাট ও সাসন বিভাগের ক্ষমতার মোটের উপর স্পষ্ট বিভাজন থাকলেও কিছু ক্ষেত্রে বৈপরিত্যের ফলে এক রাজনৈতিক সংকট উপস্থিত হয়। এতে সেনাবাহিনীর উপর অসামরিক জনসমাজের কর্তৃত্বের ধারণাটি ধাক্কা খায়, ফলে সেনাবাহিনী রাজনীতিতে প্রবল প্রভাবশালী হয়ে ওঠে।[১০]
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষে পূর্বতন সামরিক শাসন উৎখাত করে পাশ্চাত্য ধাঁচে উদার গণতন্ত্র নির্মাণের লক্ষ্যে জাপানের বর্তমান সংবিধান প্রণীত হয়।[১১]