জাপানের ইতিহাস |
---|
ধারাবাহিকের অংশ |
জাপানের সংস্কৃতি |
---|
বিষয় সম্পর্কিত ধারাবাহিক |
ইতিহাস |
জনগোষ্ঠী |
ভাষা |
রান্না |
অনুষ্ঠান |
জাপান দ্বীপপুঞ্জে মানুষ প্রথম বসতি স্থাপন করে প্রাগৈতিহাসিক কালে।[১] খ্রিষ্টপূর্ব প্রথম সহস্রাব্দে জাপানের আদি জোমোন সংস্কৃতি (যার নামকরণ হয়েছে স্বতন্ত্র "দড়ির দাগ দেওয়া" মাটির বাসন থেকে) ক্রমশ য়ায়োই সংস্কৃতির দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়ে যায়।[২] য়ায়োই যুগে মূল এশীয় ভূখণ্ড থেকে জাপানে নতুন প্রযুক্তির আগমন ঘটেছিল। খ্রিষ্টীয় প্রথম শতাব্দীতে চীনের হান গ্রন্থে জাপানের প্রথম লিখিত উল্লেখ পাওয়া যায়। খ্রিষ্টীয় তৃতীয় থেকে অষ্টম শতাব্দীর মধ্যে জাপানের বহুসংখ্যক রাজ্য ও উপজাতিসমূহ একটি কেন্দ্রীভূত শাসনব্যবস্থার অধীনে একত্র হয়, যার প্রশাসনিক প্রধান হন সম্রাট। এই সময়ে প্রতিষ্ঠিত জাপানের রাজবংশ আজ অবধি নিরবচ্ছিন্নভাবে জাপান শাসন করে আসছে। ৭৯৪ খ্রিঃ হেইআন-ক্যো (আধুনিক কিয়োতো) শহরে নতুন রাজধানী স্থাপন হয়; এই ঘটনা হেইআন যুগের সূচনা নির্দেশ করে। ১১৮৫ খ্রিঃ পর্যন্ত এই যুগ স্থায়ী হয় এবং একে জাপানের ধ্রুপদী সংস্কৃতির স্বর্ণযুগ বলে গণ্য করা হয়। এই সময় থেকে জাপানের ধর্মবিশ্বাসে কোরিয়া থেকে আগত বৌদ্ধধর্ম এবং জাপানের নিজস্ব শিন্তো ধর্মের এক মিশ্রণ লক্ষ্য করা যায়।
পরবর্তী শতাব্দীগুলিতে সম্রাট ও তার পার্ষদদের ক্ষমতা ক্রমশ খর্ব হয় এবং বিভিন্ন সামরিক গোষ্ঠী ও তাদের অনুগত সামুরাই যোদ্ধারা দেশের সর্বেসর্বা হয়ে ওঠেন। ১১৮০-৮৫ খ্রিঃ গেন্পেই যুদ্ধে মিনামোতো নো য়োরিতোমোর নেতৃত্বে মিনামোতো গোষ্ঠী জয়লাভ করে। ক্ষমতা দখলের পর য়োরিতোমো কামাকুরায় তার রাজধানী স্থাপন করেন এবং শোগুন উপাধি নেন। ১২৭৪ এবং ১২৮১ খ্রিঃ দু'বার কামাকুরা শোগুনতন্ত্র মঙ্গোল আক্রমণ প্রতিহত করে। কিন্তু ১৩৩৩ খ্রিঃ শোগুন পদের এক প্রতিদ্বন্দ্বী দাবিদারের কাছে তারা পরাস্ত হলে মুরোমাচি যুগ আরম্ভ হয়। মুরোমাচি যুগে শোগুনের ক্ষমতা হ্রাস পায় এবং তার অধীনস্থ স্থানীয় যোদ্ধা-নেতারা ক্ষমতা বহুলাংশে কুক্ষিগত করেন। এই যোদ্ধা-নেতাদের ডাইমিয়ো বলা হত। ক্রমশ জাপানে গৃহযুদ্ধের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। ষোড়শ শতাব্দীর শেষভাগে জনৈক দাইমিও ওদা নোবুনাগা ও তার উত্তরাধিকারী তোয়োতোমি হিদেয়োশির নেতৃত্বে জাপানের রাজনৈতিক সংহতি পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়। ১৫৯৮ খ্রিঃ হিদেয়োশির মৃত্যুর পর তোকুগাওয়া ইএয়াসু ক্ষমতা লাভ করেন এবং সম্রাট কর্তৃক শোগুন পদে নিযুক্ত হন। তোকুগাওয়া শোগুনতন্ত্রের রাজধানী ছিল এদো (বর্তমান তোকিও) শহরে এবং এই শোগুনতন্ত্রের শাসনকাল এদো যুগ (১৬০০-১৮৬৮) ছিল আপেক্ষিকভাবে সমৃদ্ধ ও শান্তিপূর্ণ। তোকুগাওয়া শোগুনতন্ত্র জাপানের সমাজে কঠোর জাতিভেদ প্রতিষ্ঠা করে এবং অবশিষ্ট বিশ্বের সাথে জাপানের সমস্ত যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়।
১৮৫৩-৫৪ খ্রিঃ মার্কিন পেরি অভিযান জাপানের সচেতন বিচ্ছিন্নতার অবসান ঘটায়। এরই পরোক্ষ ফল হিসেবে শোগুনতন্ত্রের পতন হয় এবং ১৮৬৮ খ্রিঃ পুনরায় সম্রাটের ক্ষমতায়ন হয়। এইভাবে শুরু হওয়া মেইজি যুগের নব্য জাতীয় নেতৃত্ব জাপানকে একটি বিচ্ছিন্ন, অনুন্নত দ্বীপরাষ্ট্র থেকে সাম্রাজ্যে পরিণত করে। পাশ্চাত্য নকশা অনুসরণ করে জাপান এই সময় অন্যতম বিশ্বশক্তি হয়ে ওঠে। তাইশো যুগে (১৯১২-২৬) জাপানে গণতন্ত্রের আগমন ঘটলেও জাপানি সেনাবাহিনীর অনিয়ন্ত্রিত স্বায়ত্তশাসন ছিল, আর তারা ১৯২০ ও ৩০ এর দশকে নাগরিক নেতৃত্বকে নিয়মিত উপেক্ষা করত। ১৯৩১ এ জাপানি সেনাবাহিনী মাঞ্চুরিয়া অধিকার করে, এবং ১৯৩৭ থেকে চীনের সাথে জাপানের দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধের সূত্রপাত হয়। ১৯৪১ এর ডিসেম্বরে পার্ল হারবার আক্রমণের মাধ্যমে জাপানের সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধ আরম্ভ হয়। জাপানি সমরশক্তি ক্ষমতার চেয়ে অনেক বেশি জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে দুর্বল হয়ে যায়, কিন্তু মার্কিন বিমান আক্রমণের মাধ্যমে জনসাধারণের অত্যধিক ক্ষয়ক্ষতি সত্ত্বেও সেনাবাহিনী অনমনীয় থাকে। সোভিয়েত ইউনিয়নের মাঞ্চুরিয়া অধিকার ও হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে পারমাণবিক বোমাবর্ষণের অব্যবহিত পরে ১৪ই আগস্ট ১৯৪৫ এ জাপান নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ করে।
১৯৫২ পর্যন্ত জাপান মিত্রশক্তির অধীনে থাকে। ১৯৪৭ এ মিত্রশক্তির তত্ত্বাবধানে নতুন সংবিধান রচিত হয়। এর মাধ্যমে জাপান একটি সংসদীয় রাজতন্ত্রে পরিণত হয়। ১৯৫৫ এর পর জাপানের অর্থনীতি অত্যন্ত দ্রুতহারে বৃদ্ধি পায়। ১৯৯০ এর পর থেকে এই পর্যায় সমাপ্ত হয় এবং আর্থিক অচলাবস্থা প্রশাসনের চিন্তার কারণ হয়ে ওঠে। ২০১১ তে একটি বড় ভূমিকম্প ও সুনামি এবং ফুকুশিমা-দাইচি নিউক্লীয় দুর্ঘটনা ব্যাপক আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি সাধন করে।