১৯৪১ সালের ৮ ডিসেম্বর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস আগের দিন জাপানের পার্ল হারবারে অতর্কিতে আক্রমণের প্রতিক্রিয়া হিসাবে জাপান সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ (টেমপ্লেট:USStatute) ঘোষণা করে। রাষ্ট্রপতি ফ্র্যাঙ্কলিন ডি. রুজভেল্টের কুখ্যাত বক্তৃতার এক ঘণ্টা পরে এটি প্রস্তুত করা হয়েছিল। জাপান ওয়াশিংটনে তাদের দূতাবাসে একটি বার্তা পাঠিয়েছিল, তবে দীর্ঘ বার্তাটি ডিকোডিং এবং টাইপ করতে সমস্যা হওয়ায় - ঘোষণাপত্রের নির্ধারিত উচ্চ স্তরের-নিরাপত্তা ব্যবস্থার অর্থ হলো কেবলমাত্র খুব উচু স্তরের ছাড়পত্রধারী কর্মীরা সাংকেতিকলিপির পাঠোদ্ধার করতে পারবেন, যা প্রক্রিয়াটিকে ধীর করে দেয় - এটি পার্ল হারবার হামলার পরে পর্যন্ত মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে প্রদান করা হয়নি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষণার পর জাপানের মিত্র জার্মানি ও ইতালি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে, এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পুরোপুরিভাবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জড়িযে পড়ে।
জাপানের যুদ্ধ ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্রকে প্রদান করা আগেই পার্ল হারবারে আক্রমণ করে। মূলত এই শর্ত ছিল যে জাপান যুক্তরাষ্ট্রকে পরবর্তী শান্তি আলোচনা থেকে সরে আসার ঘোষণা দেওয়ার অন্তত ত্রিশ মিনিট আগে হামলা শুরু করবে না,[১][২] কিন্তু নোটিশ দেওয়ার আগেই আক্রমণ শুরু হয়েছিল। টোকিও ৫,০০০ শব্দের ইশতেহারটি – "১৪-খন্ডের বার্তা" হিসাবে পরিচিত – ওয়াশিংটনে জাপানি দূতাবাসের দুটি ব্লকে স্থানান্তরিত করে। তবে বার্তা খুব গোপনীয় প্রকৃতির হওয়ার কারণে দূতাবাসের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাগণ সাংকেতিকলিপির পাঠোদ্ধার, অনুবাদ এবং টাইপ করেন, তারা যথাসময়ে এই কাজগুলি করতে অক্ষম হন। সুতরাং আক্রমণ শুরু হওয়ার আগেই রাষ্ট্রদূত তা সরবরাহ করতে পারেননি। তবে তা হলেও, ইশতেহারটি এমনভাবে ঘোষণা করা হয়েছিল যে এটিতে যুদ্ধের ঘোষণা দেয়নি বা কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করেনি, তাই কূটনৈতিক ঐতিহ্য অনুসারে এটি যুদ্ধের যথাযথ ঘোষণা ছিল না।[৩]
ব্রিটিশ উপনিবেশ মালয়, সিঙ্গাপুর এবং হংকংয়ে জাপানের আক্রমণের কারণে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের নয় ঘণ্টা আগে যুক্তরাজ্য জাপানের বিরুদ্ধে আংশিকভাবে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিল; এবং আংশিকভাবে উইনস্টন চার্চিলের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জাপানের হামলার "এক ঘণ্টার মধ্যে" যুদ্ধ ঘোষণা করার প্রতিশ্রুতির কারণে।[৪]
৮ ডিসেম্বর সকাল সাড়ে বারোটায় রাষ্ট্রপতি রুজভেল্ট কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশন এবং জাতির উদ্দেশ্যে তার কুখ্যাত বক্তৃতায় আনুষ্ঠানিকভাবে এই ঘোষণার আবেদন করেন।[৫] ঘোষণাটি দ্রুত ভোটে আনা হয়; সেনেট এটি পাস হয় এবং এরপরে দুপুর দেড়টায় এটি নিম্ন কক্ষে পাস হয়।[৫] সিনেটে ৮২-০ ভোটে এবং নিম্ন কক্ষে ৩৮৮-১ ভোটে এটি পাস হয। একজন শান্তিবাদী এবং কংগ্রেসে নির্বাচিত প্রথম মহিলা (১৯১৬ সালে নির্বাচিত) জ্যানেট রেনকিন ঘোষণার বিরুদ্ধে একমাত্র ভোটটি দেন, তার কিছু সহকর্মীর কাছ থেকে হিস্হিস ধ্বনি শুনতে পান। একাধিক সহকর্মী গ্রহীত সিদ্ধান্তকে সর্বসম্মত করতে ভোট পরিবর্তন করতে বা কমপক্ষে বিরত থাকতে তাকে চাপ দিয়েছিল কিন্তু তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন।[৬][৭] তিনি বলেন, "একজন মহিলা হিসাবে আমি যুদ্ধে যেতে পারি না," এবং "আমি অন্য কাউকে প্রেরণ করতে অস্বীকার করছি।" অন্য নয় জন মহিলা এই সময় কংগ্রেসের আসনে ছিলেন। ভোটগ্রহণের পর সাংবাদিকরা তাকে পিছনে পিছনে রিপাবলিকান ক্লোকরুমে যান, সেখানে তিনি কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটল পুলিশ ক্লকরুমটি খালি না করা পর্যন্ত তিনি একটি টেলিফোন বুথে আশ্রয় নেন।[৮] এর দু'দিন পরে জার্মানি এবং ইতালির বিরুদ্ধে একই ধরনের যুদ্ধ ঘোষণার ভোট নেওয়া হয়; কিন্তু র্যাঙ্কিন বিরত থাকেন। অন্য নয় জন মহিলা যুদ্ধ ঘোষণার পক্ষে ভোট দেন।
রুজভেল্ট ঐ দিনই বিকাল ৪:১০ মিনিটে ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করেন।[৫] মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে যুদ্ধ ঘোষণা করার ক্ষমতা একচেটিয়াভাবে কংগ্রেসকে দেওয়া হয়েছে, এটিতে তার স্বাক্ষর নিয়মানুযায়ী প্রয়োজনীয় ছিল কিনা তা নিয়ে প্রকাশ্য প্রশ্ন তৈরি হয়।[৫] [যাচাই প্রয়োজন] তবে, তার স্বাক্ষরটি প্রতীকীভাবে শক্তিশালী ছিল এবং যেকোন সন্দেহের অবসান করেছিল।
যৌথ গ্রহীত সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে যে জাপান সাম্রাজ্যিক সরকার এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরকার ও জনগণের মধ্যে যুদ্ধাবস্থা বিদ্যমান এবং এবং তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ চালিয়ে যেতে পারবে।
যেখানে জাপানের সাম্রাজ্যিক সরকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরকার ও জনগণের বিরুদ্ধে বিনা প্ররোচনায় যুদ্ধে প্রবৃত্ত হয়েছে:
সুতরাং এটি কংগ্রেসে সমবেত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিনেট এবং প্রতিনিধিদের নিম্ন কক্ষ দ্বারা সমাধান করা হোক, যেটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং জাপানের সাম্রাজ্যিক সরকারের মধ্যে যুদ্ধাবস্থা যা এতদনুসারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উপর জোর করে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে তা এতদ্বারা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হয়েছে; এবং রাষ্ট্রপতি এতদ্বারা জাপানের সাম্রাজ্যবাদী সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানোর জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমগ্র নৌ ও সামরিক বাহিনী এবং সরকারের সংস্থানসমূহ নিয়োগ করার জন্য অনুমোদিত এবং নির্দেশিত; এবং, দ্বন্দ্বর সফল পরিসমাপ্তি ঘটাতে, দেশের সমস্ত সংস্থানসমূহ এর মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস দ্বারা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।[৯]