জামালপুর সদর | |
---|---|
উপজেলা | |
মানচিত্রে জামালপুর সদর উপজেলা | |
স্থানাঙ্ক: ২৪°৫৫′১৭″ উত্তর ৮৯°৫৭′২৯″ পূর্ব / ২৪.৯২১৩৯° উত্তর ৮৯.৯৫৮০৬° পূর্ব | |
দেশ | বাংলাদেশ |
বিভাগ | ময়মনসিংহ বিভাগ |
জেলা | জামালপুর জেলা |
আয়তন | |
• মোট | ৪৮৯.৫৬ বর্গকিমি (১৮৯.০২ বর্গমাইল) |
জনসংখ্যা (২০১১)[১] | |
• মোট | ৬,১৫,০৭২ |
• জনঘনত্ব | ১,৩০০/বর্গকিমি (৩,৩০০/বর্গমাইল) |
সময় অঞ্চল | বিএসটি (ইউটিসি+৬) |
পোস্ট কোড | ২০০০ |
প্রশাসনিক বিভাগের কোড | ৩০ ৩৯ ৩৬ |
ওয়েবসাইট | দাপ্তরিক ওয়েবসাইট |
জামালপুর সদর বাংলাদেশের জামালপুর জেলার অন্তর্গত একটি উপজেলা। এটি ময়মনসিংহ বিভাগের অধীন জামালপুর জেলার ৭ টি উপজেলার একটি এবং এটি জেলার পূর্বভাগে অবস্থিত। এটি ১৫টি ইউনিয়ন এবং একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত। জামালপুর সদরের ১ম ইউনিয়ন হচ্ছে ১নং কেন্দুয়া ইউনিয়ন।
জামালপুর সদর উপজেলার উত্তরে শেরপুর সদর উপজেলা, দক্ষিণে টাঙ্গাইল জেলার ধনবাড়ী উপজেলা ও সরিষাবাড়ী উপজেলা, পূর্বে ময়মনসিংহ জেলার ময়মনসিংহ সদর উপজেলা ও মুক্তাগাছা উপজেলা, পশ্চিমে মেলান্দহ উপজেলা ও মাদারগঞ্জ উপজেলা। জামালপুর সদর উপজেলার সাথে ময়মনসিংহ সদর ও শেরপুর সদর উপজেলা সংযুক্ত। বাংলাদেশের কোন সদর উপজেলার সাথে দুটি সদর উপজেলার সংযুক্তির এটি একমাত্র উদাহরণ। জামালপুর সদর উপজেলার প্রধান নদ-নদী ব্রহ্মপুত্র ও ঝিনাই।
ব্রিটিশ শাসনামলে ১৮৩৪ সালে জামালপুর থানা গঠিত হয়। বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পর ১৯৮৩ সালে জামালপুর সদর উপজেলা প্রতিষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামালপুর সদর জামালপুর-৫ সংসদীয় আসনের অন্তর্ভুক্ত । এ আসনটি জাতীয় সংসদে ১৪২ নং আসন হিসেবে চিহ্নিত।
জামালপুর সদর উপজেলার আয়তন ৪৮৯.৫৬ বর্গ কিলোমিটার এবং জনসংখ্যা ২০১১ সনের আদম শুমারী অনুযায়ী ৬,১৫,০৭২ জন; বাৎসরিক জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১.৪৬%। জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ১২০৯ জন।[২]
আরও দেখুন: জামালপুর জেলা
অতি প্রাচীনকালে জামালপুরের কোন অস্তিত্ব ছিল না। আধুনিক ভূতত্ত্ববিদগণ মনে করেন অতি প্রাচীনকালে বাংলাদেশের কোন অস্তিত্ব ছিল না, এটি সমুদ্রগর্ভে নিমজ্জিত ছিল। তারা অনুমান করে বলেন- গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্রের স্রোতে আসা কাদামাটি থেকে বাংলাদেশের উৎপত্তি হয়েছে।
কালের বিবর্তনে বাংলাদেশের এ অংশ সমুদ্রতলদেশ থেকে উত্থিত হয়। ঐ সময় এ অঞ্চল কর্দমাক্ত, গভীর অরণ্য ও জঙ্গলাবৃত ছিল এবং এক সময় অনার্যরা এখানে বসবাস করত।
খ্রিষ্টীয় চতুর্থ শতাব্দীতে এ অঞ্চল কামরূপ রাজ্যের শাসনাধীন ছিল। কামরূপ প্রাগজ্যোতিষ দেশ নামে পরিচিত ছিল। প্রাগজ্যোতিষ (কামরূপ) এর রাজধানী ছিল প্রাগজ্যোতিষপুর। ঐ সময় বৌদ্ধ ধর্মের আবির্ভাব হয় এবং সমগ্র অঞ্চলে প্রভাব বিস্তার করে।
ময়মনসিংহ জেলা বিবরণীর রচয়িতা এফএ সাকসির মতে এ অঞ্চল পঞ্চদশ শতাব্দীর শেষ দশক পর্যন্ত কোচ সামন্তদের অধীনে ছিল। দলিপা সামন্ত নামে এক কোচ রাজা এ অঞ্চল শাসন করত। তার রাজধানী ছিল গড়দলিপা। গড়দলিপা বা গড়জরিপা এখন শেরপুর জেলার শ্রীবর্দি থানার অন্তর্ভুক্ত। কোচবংশীয় রাজারা বহুবছর গড়দলিপা শাসন করে। বাংলার স্বাধীন সুলতানদের ক্রমাগত আক্রমণে কোচ সামন্তদের শক্তি নিঃশেষ হয়ে যায়। ১৪৯১ সালে সাইফুদ্দিন দ্বিতীয় ফিরোজ শাহের নির্দেশে সেনাপতি মজলিস খাঁ কোচরাজা দলিপা সামন্তকে পরাজিত ও হত্যা করে গড়দলিপা দখল করে। সেই থেকে এ অঞ্চল মুসলমানদের দখলে আসে। সম্রাট জাহাঙ্গীরের সময়ে (১৬০৫-১৬১৭) সমগ্র ময়মনসিংহ অঞ্চল মুঘলদের সাম্রাজ্যভুক্ত হয়।
ইতিহাস থেকে জানা যায় গৌড়ের আফগানদের সাথে দিল্লীর মুঘলদের রাজ্যবিস্তার নিয়ে সংঘাত হলে আফগানরা মুঘলদের আক্রমণ প্রতিরোধের জন্য জামালপুর সদরের পাথালিয়া মৌজায় একটি ঘাঁটি স্থাপন করে। এখনও এ এলাকায় পল্টন নামের জনশ্রুতি আছে।
১৭৫৭ সালে পলাশির যুদ্ধে ইংরেজরা বাংলার নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে পরাজিত করে বাংলা, বিহার ও ঊড়িষ্যা দখল করে। ১৭৬৫ সালে ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী মোঘল বাদশাহর নিকট থেকে এ অঞ্চলের দেওয়ানী লাভ করে। ব্রিটিশ শাসনামলে ১৭৮৭ সালের মে মাসে ময়মনসিংহ জেলা গঠিত হয়।[৩] ময়মনসিংহ জেলার অধীনে ১৮৩৪ সালে জামালপুর থানা গঠিত হয়। ১৮৪৫ সালে জামালপুরকে প্রশাসনিক মহকুমায় উন্নীত করা হয়। বিশেষ করে তৎকালে মধুপুর জঙ্গল জামালপুর পৌর এলাকা পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। দক্ষিণে মধুপুর জঙ্গল ও উত্তরে শেরপুরের বন-জঙ্গলে লুকিয়ে থাকা ফকির-সন্ন্যাসীদের দমন করার জন্যই জামালপুরে একটি শাসনকেন্দ্রের প্রয়োজন হয়ে পড়ে।[৪] ফকির-সন্ন্যাসীদের দমন করার ইংরেজরা জামালপুর সদরে সেনানিবাস স্থাপন করে। কম্পপুর আজও তার স্মৃতি বহন করে। ১৮৪৫ থেকে ১৮৫২ সার পর্যন্ত সেনানিবাসের মেজরগণ এ অঞ্চল শাসন করত। পরবর্তীকালে মহকুমা ম্যাজিস্ট্রেটগণ মহকুমার প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করে। সন্ন্যাসীদের অবস্থানের জন্য একসময় জামালপুরের নাম সন্ন্যাসীগঞ্জে পরিণত হয়। এখনও শহরের পশ্চিম দিকে সন্ন্যাসীপাড়া, সন্ন্যাসীভিটা নামে পাড়া আছে।
স্বাধীনতা যুদ্ধে জামালপুর সদর ১১ নং সেক্টরের অধীনে ছিল। ১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর জামালপুর সদর উপজেলা হানাদার মুক্ত হয়। বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ ফয়েজুর রহমান জামালপুর সদরে প্রথম স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলন করেন।
১লা ফেব্রুয়ারি ১৮৬৯ সালে জামালপুর পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হয়। ২৬ শে ডিসেম্বর ১৯৭৮ সালে জামালপুর জেলা ঘোষিত হয়। ১লা ডিসেম্বর ১৯৮৩ সালে জামালপুর সদর উপজেলা প্রতিষ্ঠিত হয়।
জামালপুর নামকরণ নিয়ে অনেক লোকগাঁথা এবং ধর্মীয় ঐতিহ্য জড়িয়ে নানামুখী কাহিনী প্রচলিত রয়েছে এবং নানা ধরনের ইতিহাসও রয়েছে। তবে নানা মতবাদ থাকা সত্ত্বেও একটি বিষয়ে সকলেই প্রায় এক ও অভিন্ন মত পোষণ করেন যে, এ জনপদের পূর্বনাম ছিল সিংহজানী। তার আগে এ অঞ্চলের নাম ’গঞ্জের হাট’ ছিল বলে কেউ কেউ উল্লেখ করেন। তবে এ নাম সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানা যায় না। মোঘল আমলে সিংহজানী মৌজা জাফরশাহি পরগনার অধীনে ছিল। ১৯৫৪ সালে মুদ্রিত ‘‘জামালপুরের গণ ইতিবৃত্ত’’বইয়ের লেখক আলহাজ্ব গোলাম মোহাম্মদ হযরত শাহ্ জামাল সর্ম্পকে তার গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন ‘‘ভারত সম্রাট আকবরের রাজত্ব কালে আরবের ইয়েমেন প্রদেশ হতে দেশভ্রমন উপলক্ষে হযরত শায়েখ জামাল নামক একজন কামেল এই উপমহাদেশে আগমন করেন এবং ইহার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে ব্রহ্মপুত্র নদের দক্ষিণ তীরে সিংহজানী বর্তমান জামালপুর নামক স্থানে তাহার খানকা স্থাপন করেন। তাহার কৃচ্ছসাধনা ও অলৌকিক ক্ষমতার কথা অচিরেই দিল্লী পর্যন্ত পৌঁছিলে মহামান্য ভারত সম্রাট তাহার খানকা শরীফের ব্যয়ভার নির্বাহের জন্য বর্তমান জামালপুরের অন্তর্গত কয়েকটি পরগণা ‘‘পীরপাল’’ প্রদান পূর্বক পীর সাহেবের নিকট ইহার সনদ পাঠাইয়া দেন। কিন্তু হযরত শাহ জামাল তা গ্রহণ করেননি।
পরবর্তীকালে এ অঞ্চল হযরত শাহ্ জামাল এর নামেই পরিচিত হয়ে ওঠে এবং তাঁর নাম অনুসারেই প্রথমে জামালপুর থানার, পরে জামালপুর মহকুমার এবং আরো পরে জামালপুর জেলার নামকরণ হয়েছে।
জামালপুর সদর উপজেলার ভৌগোলিক অবস্থান ২৪.৪২° থেকে ২৪.৫৮° উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯.৫২° থেকে ৯০.১২° পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত। জামালপুর সদর উপজেলার আয়তন ৪৮৯.৫৬ বর্গ কিলোমিটার।[৫] এর উত্তরে শেরপুর সদর, দক্ষিণে টাঙ্গাইল জেলার ধনবাড়ী উপজেলা ও সরিষাবাড়ী উপজেলা, পূর্বে ময়মনসিংহ সদর ও মুক্তাগাছা উপজেলা, পশ্চিমে মেলান্দহ ও মাদারগঞ্জ উপজেলা অবস্থিত। এ উপজেলার মৌসুমী জলবায়ু উষ্ণ, আর্দ্র ও নাতিশীতোষ্ণ। শীত ও গরম মধ্যম ধরনের; চরমাভাবাপন্ন নয়। শীতকালে প্রচুর কুয়াশা হয়। নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাসে কোনো কোনো বছর বৃষ্টিপাত হয়। এই সময় তাপমাত্রা ১৫° থেকে ২৭° সেলসিয়াস থাকে। গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা ৩০° থেকে ৩৩° সেলসিয়াস। বাৎসরিক গড় বৃষ্টিপাতের পরিমান ১৮৭৫ মি.লি. থেকে ১৯৫০ মি.লি। উপজেলার ভূমি এঁটেল, বেলে-দোআঁশ ও দোআঁশ প্রকৃতির। এখানে প্রচুর পরিমানে ফসল উৎপন্ন হয়। এলাকার সমতল ভূমি পলিসিক্ত ও উর্বর। এখানকার ৭০% এলাকা সমতল, বাকি অংশ অসমতল ও বনভূমি দ্বারা গঠিত।
জামালপুর সদর উপজেলায় বর্তমানে ১২ ওয়ার্ডবিশিষ্ট ১টি পৌরসভা ও ১৫টি ইউনিয়ন রয়েছে। সম্পূর্ণ উপজেলার প্রশাসনিক কার্যক্রম জামালপুর সদর থানার আওতাধীন।[৬]
এ উপজেলায় ২৫৩ টি মৌজা, ৩৬৫টি গ্রাম রয়েছে।[২] ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে ও জামালপুর-ময়মনসিংহ সড়কের পাশ্বে উপজেলা হেডকোয়ার্টার অবস্থিত।
ময়মনসিংহ জেলার অধীনে ১৮৩৪ সালে জামালপুর থানা গঠিত হয়। ১৮৪৫ সালে জামালপুরকে প্রশাসনিক মহকুমায় উন্নীত করা হয়। ১লা ফেব্রুয়ারি ১৮৬৯ সালে জামালপুর পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হয়। ২৬ শে ডিসেম্বর ১৯৭৮ সালে জামালপুর জেলা ঘোষিত হয়। ১লা ডিসেম্বর ১৯৮৩ সালে জামালপুর সদর উপজেলা প্রতিষ্ঠিত হয়।
এই জনপদের ভৌগোলিক গুরুত্ব ও অর্থনৈতিক বিবেচনায় ইংরেজরা ১৮৪৫ সালে জামালপুরকে প্রশাসনিক মহকুমায় উন্নীত করে। জামালপুর মহকুমায় উন্নীত হওয়ার ফলশ্রুতিতে ভূমির ব্যক্তি মালিকীকরণ ও গ্রামীণ জীবনাচারণের পাশাপাশি মানুষ দ্রুত নগরকেন্দ্রিক হয়ে উঠে। মহকুমা শহরে নাগরিক চাপ বৃদ্ধির ফলে সৃষ্ট নানাবিধ সমস্যাও দেখা দেয়। এ অবস্থায় শহরে নাগরিক জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন এবং সুবিধা বৃদ্ধির লক্ষে ১৮৬৯ সালের ১লা এপ্রিল ৪৬.৬২ বর্গ কি.মি. এলাকা নিয়ে ৪ টি ওয়ার্ড এর সমন্বয়ে “গ” শ্রেণীর জামালপুর পৌরসভা গঠিত হয়। ১০ ই এপ্রিল ১৯৯৩ তারিখে ৮৪ টি মহল্লা, ৪৭ টি মৌজা নিয়ে জামালপুর পৌরসভা “ক” শ্রেণীভুক্ত হয় এবং ৫৩.২৮ বর্গ কি.মি. এলাকায় উন্নীত হয়। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে সেবার মান নিশ্চিত করতে ১৯শে মে ১৯৯৮ সালে ৪ টি ওয়ার্ডকে ১২ টি ওয়ার্ডে বিভক্ত করা হয় । বর্তমানে জামালপুর পৌরসভা বাংলাদেশের পুরাতন ও বৃহৎ পৌরসভা হিসেবে প্রথম সারিতে স্থান করে নিয়েছে। ১৯১৯ সাল পর্যন্ত মহকুমা প্রশাসকদের উপর পৌরসভা পরিচালনার দায়িত্ব অর্পিত ছিল। ১৯২০ সালে পৌরসভার প্রথম চেয়ারম্যান নির্বাচন হয়। দেড়শ বছরের পুরনো ঐতিহ্যবাহী এই পৌরসভার প্রথম চেয়ারম্যান হচ্ছেন বাবু অক্ষয় কুমার সেন।
বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামালপুর সদর জামালপুর-৫ সংসদীয় আসনের অন্তর্ভুক্ত । এ আসনটি জাতীয় সংসদে ১৪২ নং আসন হিসেবে চিহ্নিত। প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এর মোহাম্মদ আব্দুল হাকিম, ১৯৭৯ সালে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল এর খন্দকার আব্দুল হামিদ, ১৯৮৬ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এর এম খলিলুর রহমান, ১৯৮৮ সালে মোহাম্মদ রেজা খান, ১৯৯১ ওফেব্রুয়ারি ১৯৯৬ বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল এর সিরাজুল হক, জুন ১৯৯৬ তারিখে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এর রেজাউল করিম হীরা,২০০১ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এর রেজাউল করিম হীরা, ২০০৮ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এর রেজাউল করিম হীরা, ২০১৪ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এর রেজাউল করিম হীরা ও ২০১৮ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এর মোঃ মোজাফফর হোসেন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী মোট জনসংখ্যা ৬,১৫,০৭২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৩,০১,৯১২ জন এবং মহিলা ৩,১৩,১৬০ জন। লোক সংখ্যার ঘনত্ব ১,২০৯ জন/ বর্গ কিলোমিটার। জামারপুর সদরে প্রধানত মুসলমান ও হিন্দু এই দুই সম্প্রদায়ের লোকের বসবাস। অন্যান্য ধর্মের লোকসংখ্যা একেবারেই কম। এর মধ্যে মুসলমান জনগোষ্ঠীই সংখ্যাগরিষ্ঠ। মুসলিম ৬,০৩,২৩০, হিন্দু ১১,৩৩৬, বৌদ্ধ ২, খ্রিস্টান ২৯৪ এবং অন্যান্য ২১০ জন।
নৃ-তাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীঃ
জামালপুর সদর উপজেলায় বাগড়া, হায়েতপুর, বিষ্ণপুর, শ্রীপুর কুমারিয়া, তুলশীপুর, রামনগর, চাঁদপুর, মাইনপুর, তারাগঞ্জ, দড়িপাড়া, ডেংগার ঘড়, বেড়াপাথালিয়া, রণরামপুর, শাহবাজপুর ও মির্জাপুরে নৃ-তাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর বাস রয়েছে। এরা গারো ও কোচ সম্প্রদায়ভুক্ত। এদের জীবন ধারা সত্যই বড় বৈচিত্রময়। আমাদের বাঙালী সমাজের জীবন ধারার চেয়ে এদের জীবন যাত্রা প্রণালী ভিন্ন ধরনের। এরা মাতৃতান্ত্রিক পরিবার। মেয়েরা ক্ষেত খামার সহ পরিবারের যাবতীয় কাজ করে থাকে। তবে পুরুষরাও ক্ষেত খামার সহ পরিবারের অন্যান্য কাজ করে। এদের মধ্যে প্রায় অধিকাংশ ছেলে-মেয়েই শিক্ষিত।
এদের প্রধান কর্ম বাঁশ বেত, মাছ ধরা, দিন মজুরী, চাকরি, সেলাই, বৃক্ষরোপন, হাঁস-মুরগী, ছাগল ও গরু পালন। এদের বসতবাড়ি ব্যতীত আবাদী কোন জমি নেই বললেই চলে। এরা অন্যের জমি বর্গা চাষ করে। এদের খাবারের মধ্যে রয়েছে ভাত, মাছ, মিষ্টি আলু, শিকড়ের আলু, থামা আজং, গরু, ছাগল, খাসী, শুকুর, কচ্ছপ, কুইচ্চা, নাখাম, চু, কাকতোয়া ইত্যাদি।
মেয়েরা বিয়ের পর স্বামীকে নিজ বাড়ীতে নিয়ে আসে। এদের উত্তরাধীকারী হলো মেয়ে। এদের সামাজিক উৎসবগুলির মধ্যে উল্লেখ যোগ্য হলো ২৫ ডিসেম্বর বড় দিন এবং ইংরেজি নববর্ষ। সামাজিক উৎসবের মধ্যে ওয়ানগালা-আর্শ্বিন মাসে পালিত হয়। ঐ দিন নাচ গানসহ বিনোদনের ব্যবস্থা থাকে। অন্যান্য উৎসবের মধ্যে রয়েছে চৈত্রসংক্রান্তীমেলা।
এরা অবসর সময় খুব কমই পায়। তবে যে টুকু অবসর পায় সেসময় তারা জাল, বুনন, বেতের কাজ, গান বাজনা, ও রেডিও টি.ভি দেখে থাকে।
মোট উপজাতির সংখ্যা : ৫৩৮৭ জন।
পুরুষ : ২৫৩৯ জন।
মহিলা : ২৮৪৮ জন।
পরিবার সংখ্যা : ১৯৮৫টি।
খানার সংখ্যা : ১৯৮৫ টি।
শিক্ষার হার : ৯৪.৮১%
জামালপুর সদরে আধুনিক শিক্ষার সূত্রপাত ঘটে ১৮৮১ সালে, ব্রিটিশ শাসনামলে। ১৮৫৭ থেকে ১৮৭৪ সাল পর্যন্ত তৎকালীন জামালপুর মহকুমার ম্যাজস্ট্রেট ছিলেন টি.এ ডনো নামের এক ইংরেজ। তিনি নিজ বাসভবনে ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার জন্য একটি পাঠশালা খোলেন। ওই পাঠশালাকে বলা হতো ডনো সাহেবের পাঠশালা। কয়েক বছরের মধ্যে পাঠশালাটি মাইনর স্কুলে পরিণত হয়। ১৮৮১ সালে মাইনর স্কুলটিকে এন্ট্রান্স স্কুলে উন্নীত করে নামকরণ করা হয় ‘ডনো হাই স্কুল’। এই স্কুল প্রতিষ্ঠার মধ্যদিয়ে তৎকালীন জামালপুর মহকুমায় শিক্ষার নবযুগের সূচনা হয়। এ জন্য এই ইংরেজ ব্যক্তিটিকেই জামালপুরের আধুনিক শিক্ষার অগ্রদূত বলে অবিহিত করা হয়। ১৮৮২ সালে স্যার রিচার্ড টেম্পল স্কুলটিকে সরকারি সাহায্যের অন্তর্ভুক্ত করেন। এ সময় নামকরণ করা হয় ‘জামালপুর ডনো ইংলিশ হাই স্কুল’। ১৯১২ সালে স্কুলটি সরকারিকরণ করা হয় এবং স্কুলের নাম হয় ‘জামালপুর সরকারি বিদ্যালয়’। ১৯৭৯ সালে জামালপুর জেলা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর এর নাম হয় ‘জামালপুর জিলা স্কুল’।
জামালপুর সদর উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ বিদ্যালয়গুলো হলো- জামালপুর জিলা স্কুল (১৮৮১), জামালপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৮২), সিংহজানী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯০১), সিংহজানী বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৮), কৈডোলা শাহবাজপুর উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২০), বাংলাদেশ উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২৪), নান্দিনা এম. এইচ. কে. সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৩৫), নান্দিনা এম. গার্লস স্কুল, জামালপুর উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৬৪), নরুন্দী স্কুল এন্ড কলেজ,সৈয়দা নাজিবা আখতার উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়,ফয়েজিয়া সিনিয়র মাদ্রাসা,ঝাওলা গোপালপুর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় ইত্যাদি।
মেয়েদের শিক্ষা বিস্তারের লক্ষ্যে তৎকালীন স্থানীয় বিদ্যোৎসাহী মহিমচন্দ্র ঘোষ ও মহিমচন্দ্র সেনের উদ্যোগে প্রাথমিক পর্যায়ে আরবান গার্লস স্কুল নামে প্রতিষ্ঠা করা হয়। জামালপুর পাবলিক মেলার অর্থানুকূল্যে স্কুলটি বিল্ডিং করা হয়। পরবর্তীকালে স্কুলটি জামালপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে পরিণত হয়। সিংহজানী বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়টি তৎকালীন তারাকান্ত আচার্য, শশী মোহন দে, গোলাম মোহাম্মদ, দেবেন্দ্রনাথ সেন রায়, অক্ষয় কুমার সেন রায় প্রমুখ বিদ্যোৎসাহী ব্যক্তিবর্গের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয়। নান্দিনা এম. এইচ. কে. সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন সুশীল কুমার বসু। এটি ১৯৩৫ সালে স্থাপিত হয়। তৎকালে এই স্কুলে হিন্দু ও মুসলিম ছাত্রদের জন্য পৃথক ছাত্রাবাস নির্মান করা হয়েছিল। জামালপুরের শিক্ষাবিস্তারে স্কুলটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তিনি নান্দিনা এম. গার্লস স্কুলও প্রতিষ্ঠা করেন।
জামালপুর সদর উপজেলার উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হলো- সরকারি আশেক মাহমুদ কলেজ (১৯৪৬), নান্দিনা শেখ আনোয়ার হোসাইন কলেজ (১৯৬৬), সরকারি জাহিদা সফির মহিলা কলেজ (১৯৬৭), নরুন্দি কলেজ ইত্যাদি।
২০১৪ সালে জামালপুর শহরে শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ স্থাপিত হয়।
২০১১ সালের পরিসংখ্যান অনুসারে জামালপুর সদর উপজেলায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ১৬৬টি, রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয় ৬০টি, বেসরাকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ৫টি, কিন্ডার গার্টেন ২৬টি, এনজিও স্কুল ৫৩টি; সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ৩টি, বেসরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ১০১ টি, স্কুল এন্ড কলেজ ২টি; সরকারি কলেজ ২টি, বেসরকারি কলেজ ১১টি; মাদ্রাসা ১১টি, কওমি মাদ্রাসা ৬৩টি, এবতেদায়ি মাদ্রাসা ৩৭টি; টেকনিক্যাল এবং ভোকেশনাল ইন্সিটিটিউট ৪টি, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় ১টি।
উপজেলায় ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট একটি সরকারি জেনারেল হাসপাতাল, ১ টি পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র, ১৫টি উপ-স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র রয়েছে। ২০১১ সালের পরিসংখ্যান অনুসারে জামালপুর সদর উপজেলায় ২০টি বেসরকারি হাসপাতাল/ক্লিনিক এবং ৫১টি ডায়াগনোস্টিক সেন্টার রয়েছে।[৭]
জামালপুর মহকুমা হাসপাতালটি ১৮৬৮ সারে স্থাপিত হয়্ ১৯৪৪ সারে এটি সরকারীকরণ হাসপাতাল করা হলে এটিকে ২৫টি শয্যাসম্বলিত প্রথম শ্রেণীর হাসপাতরে রূপান্তরিত করা হয়। জামারপুর জেলায় উন্নীত হবার পর এই হাসপাতালটি আধুনিকীকরণ করে জেলা সদর হাসপাতালে পরিণত হয় এবং সে সময় এতে শয্যা সংখ্যা বাড়িয়ে ৫০ টি করা হয়।[৮] বর্তমানে এটি ২৫০ শয্যার একটি আধুনিক হাসপাতাল।
জামালপুর মূলত কৃষিপ্রধান অঞ্চল। সব ধরনের ফসলই এখানে উৎপন্ন হয়। চরাঞ্চলে ধান, আলু, পাট, তামাক, বেগুন, মরিচ, সরিষা, ভুট্টা, গম এবং বিভিন্ন শাক-সবজি উৎপন্ন হয়। অপর দিকে পাহাড়ী অঞ্চলে ফলমূল ও ধান উৎপন্ন হয়। জামালপুর সদর উপজেলাটি দেওয়ানগঞ্জ জিলবাংলা সুগার মিল এলাকার আওতার্ভৃূক্ত হওয়ায় এখানে প্রচুর আখ উৎপন্ন হয়। এখানকার মাটি যে কোন ফসলের জন্য অত্যন্ত উপযোগী।
শিল্পের মধ্যে রয়েছে জামালপুর অর্থনৈতিক জোন, ৪৩৬.৯২ একর জমির ওপর এ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন করা হয়েছে।[৯] জামালপুর অর্থনৈতিক অঞ্চলে হালকা প্রকৌশল, তৈরি পোশাক, ভোগ্যপণ্য ও খাদ্যসামগ্রী তৈরি হবে। ইউনাইটেড জামালপুর পাওয়ার লিমিটেড জামালপুর সদর উপজেলার চরযথার্থপুরে জামালপুর ১১৫ মেগাওয়াট উৎপাদনক্ষম এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি স্থাপন করেছে।[১০] এছাড়া জামালপুর-শেরপুর বাইপাস সড়কের পাশে শাহপুর এলাকায় ৭ একর জমিতে পাওয়ার প্যাক মুতিয়ারা নামের একটি কোম্পানি ‘৯৫ মেগাওয়াট পাওয়ার প্লান্ট জামালপুর’ নামে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপন করেছে।[১১]
১৯৮০ সালে জামালপুর শহরের দাপুনিয়ায় ২৬.৩০ একর জমিতে বিসিক শিল্প নগরী প্রতিষ্ঠা করা হয়। এখানে স্থানীয় চাহিদা ও কাচামাল নির্ভর ক্ষুদ্র শিল্পকারখানা গড়ে উঠেছে।
নকশি কাঁথা জামালপুরে জেলা ব্র্যান্ডিং, জামালপুরের নকশিকাঁথা বাংলাদেশের গর্বগাথা। জামালপুরের নকশি কাঁথা শুধু দেশে নয় বিদেশেও এর সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে। এই অঞ্চলের দুই লক্ষাধিক মানুষ এই শিল্পের সাথে জড়িত।[১২]
অন্যান্য শিল্পকারখানাগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল, তাঁতকল, চালকল, লেদ ও ওয়েল্ডিং কারখানা, ফ্লাওয়ারমিল, বেকারি। কুটিরশিল্পের মধ্যে রয়েছে তাঁত, স্বর্ণ, লৌহশিল্প, বাঁশের তৈজসপত্র ও সেলাই কাজ। প্রধান রপ্তানি পণ্যের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল নকশি কাথা, পাট, ধান ইত্যাদি। এছাড়া সেগুন, মেহেগনি, আকাশমনি কাঠের পাশাপাশি বিভিন্ন বনজ উপাদান হয় ও স্থানীয় বাজারে বিক্রি করা হয়।
জামালপুর সদর উপজেলার যোগাযোগ সড়ক ও রেল এই দুইভাবেই আছে। বর্ষাকালে সীমিতভাবে নৌপথে চলাচল করে। জামালপুর সদর উপজেলার মোট সড়ক পথের দৈর্ঘ্য ১০৪৩.৮ কিলোমিটার; এর মধ্যে পাকা রাস্তা ২৩২.১৯ কিলোমিটার এবং কাঁচা রাস্তা ৮১১.৬১ কিলোমিটার।[১৩] এ উপজেলায় রেলপথ আছে ৪৮.৫ কিলোমিটার।[১৪] নৌপথ আছে ৮৬ নটিক্যাল মাইল।[১৪]
সদর থেকে বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটা জেলায় যাতায়াতের জন্য সুব্যবস্থা আছে। জামালপুর থেকে ঢাকার সাথে যোগাযোগের জন্য ময়মনসিংহ হয়ে ঢাকা-ময়মনসিংহ জাতীয় মহাসড়ক এন৩ (বাংলাদেশ) এবং টাঙ্গাইল হয়ে এন৪ (বাংলাদেশ) মহাসড়ক জয়দেবপুরকে রাজধানী ঢাকা ও জামালপুরের সাথে সংযুক্ত করেছে। এটি এশিয়ান হাইওয়ে নেটওয়ার্ক-এ এএইচ১-এর অংশ।[১৫] মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে জামালপুর বাস টার্মিনালে রাজধানীর সাথে সড়কপথের যোগাযোগ করা হয়। ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহী, খুলনা, বগুড়া, রংপুর, পঞ্চগড়, যশোরে নিয়মিত প্রতিদিনই বাস চলাচল করে।
১৮৮৫ সালে ময়মনসিংহের সঙ্গে ঢাকার সংযোগ স্থাপন করে রেলপথ স্থাপিত হয়। এই রেলপথ ১৮৯৪ সালে জামালপুর পর্যন্ত, ১৮৯৯ সালে জগন্নাথগঞ্জ পর্যন্ত এবং ১৯১২ সালে জামালপুর থেকে বাহদুরাবাদ পর্যন্ত সম্প্রসারিত হয়।[১৬] ২০১২ সালে সরিষাবাড়ীর তারাকান্দি হতে ভূঞাপুর যমুনা বহুমুখী সেতু পর্যন্ত ৩৫ কিলোমিটার লিংক রেলপথ চালু হয়।[১৭] জামালপুরের জনসাধারণ যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে সাধারণত রেলকেই বেছে নেয়।
জামালপুর জংশন থেকে ঢাকা, ময়মনসিংহ, নেত্রকোণা, কিশোরগঞ্জ, চট্টগ্রাম, যমুনা সেতু যাওয়ার জন্য মেইল ও আন্তঃনগর ট্রেন রয়েছে। রেলের রুটগুলো হলঃ
নাব্যতা না থাকায় নৌপথে চলাচল সীমিত। বর্ষা মৌসুমে নৌপথে জামালপুর ফেরিঘাট থেকে নান্দিনা, নরুন্দি, পিয়ারপুর ইত্যাদি ঘাটে নৌযান ব্যবহার করে যাতায়াত করা হয়।
জামালপুর সদর উপজেলার প্রধান নদ-নদী ব্রহ্মপুত্র ও ঝিনাই। উপজেলার উত্তর পার্শ্ব দিয়ে ব্রহ্মপুত্র নদ এবং পশ্চিম প্রান্ত দিয়ে ঝিনাই নদী বয়ে চলেছে। ব্রহ্মপুত্র নদটি তিববতের মানস সরোবর থেকে সাংপো নামে উৎপন্ন হয়ে ভারতের অরূণাচল প্রদেশের মধ্য দিয়ে ব্রহ্মপুত্র (ব্রহ্মার সন্তান) নামে প্রবাহিত হয়েছে। প্রবাহস্থানে ৫টি প্রধান উপনদী থেকে ব্রহ্মপুত্র পানি সংগ্রহ করেছে যাদের মধ্যে ডিহঙ্গ এবং লুহিত প্রখ্যাত। এ ধারা পশ্চিম দিকে প্রবাহিত হয়ে কুড়িগ্রাম জেলার মাজাহরালীতে দক্ষিণ দিকে মোড় নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের একটি উল্লেখ্যযোগ্য শাখা নদী হলো ঝিনাই। এটি জামালপুরের নিকট পুরাতন ব্রহ্মপুত্র থেকে উৎপন্ন হয়ে সরিষাবাড়ীর নিকট যমুনার সাথে মিলিত হয়েছে। এর অপর একটি শাখা গোপালপুর হয়ে দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত হয়েছে।[১৮] একসময় ঝিনাই নদীর আকৃতি অনেক প্রশস্ত ছিল । তখন ঝিনাই নদীরপাড়ে ব্যবসাবাণিজ্য কেন্দ্র গড়ে উঠেছিল।
এ উপজেলায় বিল আছে ৩৫ টি এবং খাল আছে ১২ টি। বামুনজি বিল, শিংগার বিল, চাতাল বিল, বুবিল বিল ও রাওহা বিল উল্লেখযোগ্য।
এছাড়াও দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে আছে নরুন্দির ছালামাবাদ দরবার শরিফ, নান্দিনার শোলাকুড়ি পাহাড়, শ্রীপুরের রানীপুকুর দিঘি ইত্যাদি।
|সংগ্রহের-তারিখ=
(সাহায্য)