জামি | |
---|---|
রহস্য, আধ্যাত্মিক কবি, ইতিহাসবেত্তা, ধর্মতাত্ত্বিক | |
জন্ম | [১] জাম, খোরাসান (বর্তমান ঘোর প্রদেশ, আফগানিস্তান) | ৭ নভেম্বর ১৪১৪
মৃত্যু | ৯ নভেম্বর ১৪৯২ হেরাত, খোরাসান, (বর্তমান হেরাত প্রদেশ, আফগানিস্তান) | (বয়স ৭৮)
শ্রদ্ধাজ্ঞাপন | ইসলাম |
যার দ্বারা প্রভাবিত | ইসলামের পয়গম্বর খাজা উবাইদুল্লাহ আহরার |
যাদের প্রভাবিত করেন | হামজা হাকিমজাদে নিয়াজি |
ঐতিহ্য বা ধরন | সুফি কবিতা |
উল্লেখযোগ্য কর্ম | হাফত আওরং, লাইলী-মজনু |
নূর আদ-দীন আবদার রহমান জামি (ফার্সি ভাষা: نورالدین عبدالرحمن جامی), মাওলানা নূর আল-দীন আবদার রহমান বা আবদার রহমান নূর আল-দীন মুহাম্মদ দাস্তি, বা সাধারণভাবে জামি বা তুর্কি ভাষায় মোল্লা জামি নামে পরিচিত, (৭ নভেম্বর ১৪১৪ - ৯ নভেম্বর ১৪৯২) ছিলেন একজন ফার্সি কবি।[২] তিনি রহস্যধর্মী সুফি সাহিত্যের পণ্ডিত ও লেখক হিসেবে অবদানের জন্য সর্বাধিক পরিচিত। তার সবচেয়ে বিখ্যাত কাব্যসমূহ হল হাফত আওরং, তোহফা আল-আহরার, লায়লী-মজনু, ফাতিহা আল-শাবাব, লাওয়াই, আল-দুররা আল ফাকিরা।
জামি ১৪১৪ সালের ৭ নভেম্বর খোরাসানের জামে (বর্তমান ঘোর প্রদেশ, আফগানিস্তান) জন্মগ্রহণ করেন।[৩] তার জন্মের পূর্ব তার পিতা নিজাম আল-দীন আহমাদ বি. শামস আল-দীন মুহাম্মদ ইস্ফাহান জেলার দস্ত থেকে সেখানে আসেন।[৪] জামির জন্মের কয়েক বছর পরে তাদের পরিবার হেরাতে চলে যান এবং সেখানে নিজামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে গণিত, ফার্সি সাহিত্য, প্রাকৃতিক বিজ্ঞান, আরবি ভাষা, যুক্তি এবং ইসলামি দর্শন বিষয়ে অধ্যয়ন করেন।[৫]
তিনি মুসলিম বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিজ্ঞান শিক্ষা কেন্দ্র সমরখন্দে যান এবং তার শিক্ষা সম্পন্ন করেন। তিনি একটি তীর্থে অবস্থান করেন, যেখানে তার খ্যাতি বৃদ্ধি পায় এবং পারস্যে তার গুরুত্ব বেড়ে যায়।[৪] জামির ভাই মওলান মোহাম্মদ একজন পণ্ডিত ব্যক্তি এবং সঙ্গীত সাধক ছিলেন। তার মৃত্যুতে জামি একটি শোকসঙ্গীত রচনা করেন। জামির চার পুত্র জন্মগ্রহণ করেছিল, তন্মধ্যে তিনজন প্রথম বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পূর্বেই মৃত্যুবরণ করে।[৬] জীবিত একমাত্র পুত্র ছিলেন জিয়াউল-দীন ইউসেফ। জামি এই পুত্রের জন্য তার বাহারেস্তান লিখেছিলেন।
জামি ১৪৫৩ সালে সুফি শায়খ হিসেবে তার কর্মজীবন শুরু করেন। তিনি সুফি পথের উপর একাধিক পাঠের ব্যাখ্যা প্রদান করেন। তিনি সুফিদের দুই শ্রেণিতে ভাগ করেন।[৭] জামি তার অত্যধিক ধর্মনিষ্ঠা ও রহস্যের জন্য পরিচিত।[৫][৮] তিনি বাল্যকালে খাজা মোহাম্মদ পার্সা যখন তাদের শহরে আসেন তখন তার আশীর্বাদ পাওয়ার পর সুফিবাদের আগ্রহী হয়ে ওঠেন।[৯] সেখান থেকে স্বপ্নে তিনি সাদ-আল দীন কাসগারির নির্দেশ প্রাপ্ত হন ও তার সঙ্গী হন।[১০] জামি কাসাগারির অনুসারী হন এবং তিনি কাসাগারির নাতনীকে বিবাহ করে তার সাথে আত্মীয়তার সম্পর্ক গড়ে তোলেন।[৯] তিনি স্রষ্টার প্রতি অনুগত ছিলেন এবং স্রষ্টার সান্নিধ্য লাভের জন্য তিনি ইহজীবন ত্যাগ করতেও ইচ্ছাপোষণ করতেন। ফলে তিনি সামাজিক রীতি-নীতি পালনে উদাসীন ছিলেন।[৯]
জামি হেরাতে তিমুরি রাজসভায় দোভাষী ও সংবাদদাতার দায়িত্ব পালন করতেন। তার কবিতায় পারস্য সংস্কৃতি প্রতিফলন ঘটেছে এবং ইসলামি প্রাচ্য, মধ্য এশিয়া ও ভারত উপমহাদেশে তার জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।[৫] তার কবিতায় জনসংস্কৃতির কিছু ধারণা প্রতিফলিত হয়, যা তার কাজে সুফিবাদ ও সুফিবাদের বাইরের ধারণাকে উপজীব্য করে তোলে।[৭] তিনি শুধু তার কবিতার জন্যই নন, তার ধর্মতাত্ত্বিক কাজ ও সাংস্কৃতিক কাজের জন্য পরিচিত ছিলেন।[৫] তার কাজগুলো সমরখন্দ থেক ইস্তানবুল ও পারস্যের খায়রাবাদ, এমনকি মুঘল সাম্রাজ্যের বিভিন্ন বিদ্যালয়ে পড়ানো হত। শতাব্দীর ধরে জামি তার কবিতা ও ব্যাপক জ্ঞানের জন্য প্রসিদ্ধ ছিলেন। গত শতাব্দীর শেষার্ধ্ব থেকে ইসলামি ও পারস্য শিক্ষার গবেষণার অভাবে তাকে এবং তার কাজসমূহ উপেক্ষিত ও বিস্মৃত হয়ে যাচ্ছে।[৫]