ধর্ষণ |
---|
ধারার একটি অংশ |
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষ পর্যায়ে জার্মানি আক্রমণ ও দখলের সময় মিত্রপক্ষীয় সৈন্যদের হাতে প্রচুর সংখ্যক জার্মান নারী ধর্ষণের শিকার হন। অধিকাংশ ধর্ষণ সোভিয়েত সৈন্যদের দ্বারা সংঘটিত হয়, তবে মার্কিন, ব্রিটিশ, ফরাসি ও পোলিশ সৈন্যরাও এতে পিছিয়ে ছিল না।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষদিকে সোভিয়েত লাল ফৌজ জার্মানিতে প্রবেশ করে এবং জার্মান নারীদের ধর্ষণ করতে আরম্ভ করে[১]। প্রায় ২০ লক্ষাধিক জার্মান নারী সোভিয়েত সৈন্যদের দ্বারা ধর্ষিত হন[২][৩][৪][৫][৬]। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এক একজন জার্মান নারী ৬০ থেকে ৭০ বার পর্যন্ত ধর্ষণের শিকার হন[৭]। কেবল বার্লিনেই কমপক্ষে ১,০০,০০০ নারী সোভিয়েত সৈন্যদের হাতে ধর্ষিত হন[৪] এবং এর ফলে প্রায় ১০,০০০ নারী প্রাণ হারান[৮]। প্রায় ২,৪০,০০০ জার্মান নারী সোভিয়েত সৈন্যদের হাতে ধর্ষণের ফলে প্রাণ হারান[৯][১০]। কেবল পূর্ব প্রাশিয়া, পমেরানিয়া এবং সাইলেশিয়া অঞ্চলেই কমপক্ষে ১৪,০০,০০০ জার্মান নারী ধর্ষণের শিকার হন[১১]। নাতালিয়া গেজের মতে, সোভিয়েত সৈন্যরা ৮ বছর থেকে ৮০ বছর বয়সী প্রতিটি জার্মান নারীকে ধর্ষণ করেছিল[১২][১৩][১৪] কেবল তাই নয়, সোভিয়েত ইউনিয়ন আক্রমণের সময় জার্মান সৈন্যরা যেসব সোভিয়েত নারীকে বন্দি করে দাসশ্রমিক হিসেবে জার্মানিতে প্রেরণ করেছিল, সেসব সোভিয়েত নারীদের অনেকেও সোভিয়েত সৈন্যদের দ্বারা ধর্ষণের শিকার হন[১৫]। উল্লেখ্য, প্রাক্তন জার্মান চ্যান্সেলর হেলমুট কোলের স্ত্রী হান্নেলোর কোল ১৯৪৫ সালের মে মাসে ১২ বছর বয়সে সোভিয়েত সৈন্যদের দ্বারা গণধর্ষণের শিকার হন এবং ধর্ষণের পর তাকে ঘরের জানালা দিয়ে ছুঁড়ে ফেলা হয়। এই ঘটনার ফলে তিনি আজীবন রোগগ্রস্ত থাকেন এবং অবশেষে ২০০১ সালে আত্মহত্যা করেন[১৬][১৭]।
১৯৪৫ সালের গ্রীষ্মকালের পর থেকে সোভিয়েত কর্তৃপক্ষ জার্মান নারীদের ধর্ষণকারী সোভিয়েত সৈন্যদের শাস্তি দিতে শুরু করে, এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাদের মৃত্যুদণ্ডেও দণ্ডিত করে[১৮]। কিন্তু তার পরেও ১৯৪৭–১৯৪৮ সালের শীতকালে সোভিয়েত সৈন্যদের সুনির্দিষ্ট ঘাঁটিতে আবদ্ধ করার আগ পর্যন্ত ধর্ষণ অব্যাহত থাকে[১৯]।
সোভিয়েত সৈন্যদের দ্বারা ব্যাপক হারে জার্মান নারীদের গণধর্ষণের কারণ হিসেবে ঐতিহাসিক নর্মান নাইমার্ক তিনটি বিষয়কে চিহ্নিত করেন, 'ঘৃণাত্মক প্রচারণা', 'জার্মান বাহিনীর হাতে ব্যক্তিগত ভোগান্তি' এবং 'সোভিয়েত সৈন্যদের মধ্যে জার্মান নারীদের সম্পর্কে নিচু ধারণা'[২০]। এছাড়া রুশ সংস্কৃতির পিতৃতান্ত্রিক প্রকৃতি এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের অন্তর্গত এশীয় জাতিসমূহের সমাজব্যবস্থা (যেখানে অপমানের প্রতিশোধ নেয়া হয় শত্রুর নারীদেরকে ধর্ষণের মাধ্যমে) এর পিছনে বড় একটি ভূমিকা রেখেছিল বলে নাইমার্ক মনে করেন[২১]। বহু সোভিয়েত সৈন্য বিশ্বাস করত যে সোভিয়েত ইউনিয়ন আক্রমণ ও সেখানে বর্বর ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর মাধ্যমে জার্মানরা সোভিয়েতদের অপমানিত করেছে এবং এ অপমানের প্রতিশোধ নেয়া নীতিসঙ্গত। এই চিন্তাধারা থেকেই সোভিয়েত সৈন্যরা বহু জার্মান নারীকে জনসম্মুখে কিংবা তাদের স্বামীদের সামনে ধর্ষণ করেছিল[২১]।