জিউফেন | |||||||||||||||
চীনা | 九份 | ||||||||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
আক্ষরিক অর্থ | নয়টি অংশ | ||||||||||||||
|
জিউফেন (যাকে চিউফেন বা জিওফেন নামেও ডাকা হয়; চীনা: 九份; ফিনিন: Jiǔfèn; Pe̍h-ōe-jī: Káu-hūn; আক্ষরিক: "নয়টি অংশ") হল তাইওয়ানের নয়া তাইপের রুইফাং জেলার সমুদ্র তীরবর্তী একটি পাহাড়ী অঞ্চল।
চিং শাসনামলের প্রথমদিকে, বিচ্ছিন্ন এই গ্রামটিতে মোট নয়টি পরিবার বাস করত। এইভাবে শহর থেকে প্রতিবার চালান আসার সময় গ্রামটিকে "নয়টি অংশ" নামে ডাকা হত। এভাবে পরবর্তীতে গ্রামটির নাম কৌ-হুন (হকিয়েন ভাষায় এর অর্থ "নয়টি অংশ") হয়ে যায়।
দ্বীপে ১৪৩০ সালে প্রথম স্বর্ণ উৎপাদন হওয়ার প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে।[১] এরপর তৎকালীন স্থানীয় অধিবাসী, জাপানি দর্শনার্থী, ওলন্দাজ, দখলদার এবং কোকসিংগা রক্ষাকারীরা বেশ কয়েকবার এগুলো পুনঃআবিষ্কার করে। অথচ তাইওয়ানের সোনার খনি বিশিষ্ট জেলাগুলোর সম্পদ সম্পর্কে চিং যুগের শেষাংশের আগে সচেতনতা তৈরি হয়নি। ১৮৯০ সালে তাইপে-কেলুং নতুন রেলপথ নির্মাণের সময় সেখানে কর্মরত শ্রমিকরা সোনার অস্তিত্ব আবিষ্কার করে।[২] ১৮৯৩ সালে কাউ-হুনের পাহাড়গুলোতে একটি সমৃদ্ধ প্লেসার জেলা আবিষ্কার করা হয়, যা থেকে দিনে বেশ কয়েক কেজি[ক] স্বর্ণ উৎপাদন করেছিল করা যেত। পরের বছর এই ব্যাপারটি আগের চেয়ে বড় হয়ে ওঠে, যখন ক্যালিফোর্নিয়ায় কাজ করা একজন চীনা "বিশেষজ্ঞ" উক্ত পাহাড়ে স্বর্ণ সম্পন্ন কোয়ার্টজ খুঁজে পান।
স্বর্ণের খোঁজ গ্রামটির উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করে এবং গ্রামটি বেশ দ্রুতই একটি শহরে পরিণত হয়। জাপান যুগে এটি উন্নতির শীর্ষে পৌঁছে। দ্য আইল্যান্ড অফ ফরমোসা, পাস্ট অ্যান্ড প্রেজেন্ট (১৯০৩) গ্রন্থে মার্কিন কূটনৈতিক জেমস ডব্লিউ ডেভিডসন কৌ-হুনকে অস্বাভাবিক জনপদ আখ্যা দিয়ে লিখেছেন যে, "লেখক এর আগে কখনো এত ছোট জায়গায় এতগুলো বাড়ি দেখেন নি। কিছু কিছু ভবনকে পার্শ্ববর্তী ভবনগুলোর তুলনায় অতি ক্ষুদ্র বলে মনে হয়। বাকি ভবনগুলো উপরে দাঁড়িয়ে আছে, যেন তারা পথকে তাদের দলে যেতে বাধ্য করতে পারছে না। প্রতিটি স্থাপনা যেন তার পাশ্ববর্তী কাঠামোগুলোকে সরে যাওয়ার জন্য নীরব আবেদন জানাচ্ছে।"[৪] সেখানে পানি প্রবাহিত হয় "অনেকগুলো ছোট ছোট জলধারায়, যাতে প্রতিটি ভবন একটি করে সরু জলধারা পায়। এটি নিশ্চিত করতে কখনো কখনো প্রবেশদ্বার দিয়ে এমনকি কখনো কখনো ভবনে মেঝে দিয়েও জলধারা প্রবাহিত হয়।" এমন দাবি করেছে ফুজিতা কোম্পানি। এটি ছিল তাইওয়ানের খনি খননকারী প্রথম জাপানি সংস্থা, যারা কৌ-হুনে সোনার কাজ করে প্রায় মাসেই কয়েক হাজার ইয়েন করে আয় করত।
জিউফেনের অনেকগুলো বর্তমান বৈশিষ্ট্য জাপানি ঔপনিবেশিক যুগকে প্রতিফলিত করে। অনেক জাপানী ইনস আজও সেখানে টিকে রয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় সেখানে কিনকাসেকি নামে একটি বন্দী শিবির স্থাপন করা হয়। সিঙ্গাপুর থেকে আটককৃত মিত্রশক্তির সৈন্যদের সেখানে বন্দী করে রাখা হত, যেখানে অনেক ব্রিটিশ সৈন্যও আটক ছিলেন। তাদের দিয়ে নিকটবর্তী স্বর্ণের খনিতে কাজ করানো হত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সোনার খনির ক্রিয়াকলাপ হ্রাস পেতে থাকে এবং ১৯৭১ সালে এটি পুরোপুরি হয়ে যায়। ফলে কিছুদিনের জন্য জিউফেন স্মৃতির অন্তরালে হারিয়ে যায়।
১৯৮৯ সালে হৌ সিয়াউ-সিয়েন পরিচালিত আ সিটি অব স্যাডনেস ছিল ২৮ ফেব্রুয়ারির ঘটনা নিয়ে নির্মিত প্রথম চলচ্চিত্র, যার চিত্রধারণ করা হয় জিউফেনে। এই ২৮ ফেব্রুয়ারির ঘটনাটি তাইওয়ানের একটি নিষিদ্ধ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এই ট্যাবু ভঙ্গ করায় চলচ্চিত্রটি সারা বিশ্বে প্রশংসিত হয়। চলচ্চিত্রটির জনপ্রিয়তার ফলে জিউফেন পুনরুজ্জীবিত হয়। উক্ত চলচ্চিত্র ও অন্যান্য মাধ্যমে প্রদর্শিত জিউফেনের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য অনেক মানুষকে বিমোহিত করে এবং সেখানে ভ্রমণের জন্য উদ্বুদ্ধ করে। নব্বইয়ের দশকের শুরুতে জিউফেনে পর্যটকের ঢল নামে। তাদের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে শহরটিতে রেট্রো-চীনা ধাঁচের ক্যাফে, চা ঘর, "আ সিটি অব স্যাডনেস" লেখা বিভিন্ন স্মারক দ্রব্যের দোকান ইত্যাদি গড়ে ওঠে। এভাবে এটি একটি পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হয়।
স্টুডিও জিবলির জাপানি অ্যানিমে স্পিরিটেড অ্যাওয়েতে প্রদর্শিত শহরের কেন্দ্রস্থলের সাথে মিল থাকায় ২০০১ সালে জিউফেন আবারও বিখ্যাত হয়ে ওঠে।[৫] ফলে জিউফেন দ্রুতই জাপানি পর্যটকদের আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়। তাইওয়ান সম্পর্কিত অনেক জাপানি ভ্রমণ বিষয়ক পত্রিকা ও গাইডে জিউফেনের কথা উল্লেখ করা হয়। এতে এটি জাপানি পর্যটকদের ভ্রমণের একটি অত্যাবশ্যকীয় জায়গা হয়ে ওঠে। তবে জিউফেনের উক্ত অ্যানিমেতে প্রদর্শিত শহর হওয়ার বিষয়টি হায়াও মিয়াজাকি নিজেই অস্বীকার করেছেন।[৬]
বর্তমানে জিউফেন তাইওয়ানের একটি বিখ্যাত পর্যটন কেন্দ্র। সপ্তাহ শেষে ভ্রমণের জন্য তাইপের বহু মানুষ এই স্থানটিকে বেছে নেন।