জীবজ অণু

একটি মায়োগ্লোবিন অণুর ত্রিমাত্রিক কাঠামো, যার আলফা-কুণ্ডলীগুলিকে (আলফা-হেলিক্স) ফিতা দিয়ে উপস্থাপন করা হয়েছে। এটিই প্রথম প্রোটিন অণু কাঠামো, যা মাক্স পেরুৎস ও জন কেনড্রিউ ১৯৫৯ সালে রঞ্জনরশ্মি কেলাসবিজ্ঞানের গবেষণা পদ্ধতি ব্যবহার করে সমাধান করেন এবং এই কাজের সুবাদে রসায়নে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।

জীবজ অণু পরিভাষাটি দিয়ে জীবদেহের বিভিন্ন কোষ দ্বারা উৎপন্ন বহু-বিভিন্ন ধরনের অণুকে নির্দেশ করা হয়, যেগুলি জীবদেহের এক বা একাধিক জৈবিক প্রক্রিয়ার (যেমন কোষ বিভাজন, আকৃতি-নিরূপণ/মর্ফোজেনেসিস, বা জীবদেহের বিকাশ, ইত্যাদি) জন্য অত্যাবশ্যক ভূমিকা পালন করে।[] একে ইংরেজিতে বায়োমলিকিউল (biomolecule) বা বায়োলজিকাল মলিকিউল (biological molecule) বলে। জীবজ অণুগুলির আকার ও কাঠামো বহু-বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে এবং এগুলির কাজের পরিধিও বহুমুখী। জীবজ অণুগুলিকে আকারের উপর ভিত্তি করে দুইটি প্রধান ভাগে বিভক্ত করা যায়। একটি প্রকারভেদ হল বৃহৎ জীবজ অণু (macromolecule ম্যাক্রোমলিকিউল) যাদের মধ্যে প্রোটিন বা দেহসার, শর্করা বা কার্বোহাইড্রেট, স্নেহ পদার্থ বা লিপিডনিউক্লিয়িক অ্যাসিড ইত্যাদির অণু অন্তর্ভুক্ত। দ্বিতীয় দলটি হল ক্ষুদ্র জীবজ অণু (small molecule), যাদের মধ্যে খাদ্যপ্রাণ বা ভিটামিন ও উদ্বোধক গ্রন্থিরস বা হরমোন অন্তর্ভুক্ত। জীবজ অণুগুলি যেসব পদার্থ গঠন করে, সেগুলিকে সাধারণভাবে জীবজ পদার্থ (biological materials) বলে। উৎস অনুযায়ী জীবজ অণুগুলিকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়: অন্তর্জনিষ্ণু (endogenous) ও বহির্জনিষ্ণু (exogenous)। অন্তর্জনিষ্ণু জীবজ অণুগুলি বেশি সাধারণ[] এবং এগুলি জীবদেহের অভ্যন্তরে উৎপাদিত হয়।[] কিন্তু অপর দিকে জীবদেরকে বেঁচে থাকতে হলে কিছু বহির্জনিষ্ণু জীবজ অণুরও (যেমন কিছু পুষ্টি উপাদান) প্রয়োজন পড়ে।

জীবজ অণুগুলি ও এগুলির সাথে সংশ্লিষ্ট বিক্রিয়াগুলিকে জীববিজ্ঞান ও তার উপক্ষেত্র প্রাণরসায়ন ও আণবিক জীববিজ্ঞান শাস্ত্রগুলিতে অধ্যয়ন করা হয়। বেশিরভাগ জীবজ অণুই জৈব অণু বা জৈব যৌগ (হাইড্রোজেন ও কার্বনের সমবায়ে গঠিত যৌগ); অক্সিজেন, কার্বন, হাইড্রোজেন ও নাইট্রোজেন - মাত্র এই চারটি মৌলিক পদার্থ মানবদেহের ভরের ৯৬% গঠন করেছে। তবে জীবদেহে, বিশেষ করে মানবদেহে, আরও অনেক মৌলিক পদার্থ বিদ্যমান, যেমন খুব অল্প পরিমাণে বিভিন্ন ধরনের জীবজ ধাতু দেহে উপস্থিত থাকে।

বহু-বিভিন্ন রূপের জীবসমূহের দেহের ভেতরের জীবজ অণুগুলি একই হয়ে থাকে। এমনকি কিছু বিপাকীয় বিক্রিয়াপথও (metabolic pathway) একই রকম বা অভিন্ন হয়ে থাকে। তাই এই জীবজ অণু ও বিপাকীয় বিক্রিয়াপথগুলিকে "বিশ্বজনীন প্রাণরাসায়নিক উপাদানসমূহ" ("biochemical universals") নামে ডাকা হয়।[] এর আরেক নাম "জীবসমূহের ভৌত অভিন্নতা তত্ত্ব", যা কোষ তত্ত্ববিবর্তন তত্ত্বের পাশাপাশি জীববিজ্ঞান শাস্ত্রের একটি ঐক্যবদ্ধকারী ধারণা।[]

আরও দেখুন

[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. Bunge, M. (1979). Treatise on Basic Philosophy, vol. 4. Ontology II: A World of Systems, p. 61-2. link.
  2. Voon, C. H.; Sam, S. T. (২০১৯)। "2.1 Biosensors"। Nanobiosensors for Biomolecular Targeting (ইংরেজি ভাষায়)। Elsevier। আইএসবিএন 978-0-12-813900-4 
  3. endogeny. (2011) Segen's Medical Dictionary. The Free Dictionary by Farlex. Farlex, Inc. Accessed June 27, 2019.
  4. Green, D. E.; Goldberger, R. (১৯৬৭)। Molecular Insights into the Living Process। New York: Academic Press – Google Books-এর মাধ্যমে। 
  5. Gayon, J. (১৯৯৮)। "La philosophie et la biologie"। Mattéi, J. F.। Encyclopédie philosophique universelle। IV, Le Discours philosophique। Presses Universitaires de France। পৃষ্ঠা 2152–2171। আইএসবিএন 9782130448631 – Google Books-এর মাধ্যমে। 

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]

টেমপ্লেট:Biomolecular structure