জীবনের অর্থ একটি দার্শনিক এবং আত্মিক প্রশ্ন যা সাধারণভাবে জীবন অথবা অস্তিত্ব এসবের তাৎপর্য নিয়ে আলোচনা করে। সম্পর্কিত আরো কিছু প্রশ্ন হচ্ছে, "আমরা এখানে কেন?", "জীবনের উদ্দেশ্য কী?", জীবনের কি আদৌ কোনো উদ্দেশ্য আছে?" সভ্যতার শুরু থেকেই নানা সংস্কৃতি ও আদর্শ দিক থেকে এসব প্রশ্নের বিভিন্ন রকম উত্তর প্রস্তাব করা হয়ে আসছে। জীবনের অর্থ খুঁজতে গিয়ে দর্শন, বিজ্ঞান, অধিবিদ্যা এবং ধর্ম নানা ধরনের মতবাদ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] একেক জনগোষ্ঠী ও সংস্কৃতির কাছে এই প্রশ্নের উত্তর একেক রকম।
বৈজ্ঞানিক সম্প্রদায়ের এবং বিজ্ঞানের দর্শন সম্প্রদায়ের অনেক সদস্য মনে করেন যে বিজ্ঞান প্রাসঙ্গিক প্রেক্ষাপট প্রদান করতে পারে, এবং জীবনের অর্থ সম্পর্কিত বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করার জন্য প্রয়োজনীয় মাপকাঠি নির্ধারণ করতে পারে। তাদের মতে, বিজ্ঞান সুখের বিজ্ঞান থেকে শুরু করে মৃত্যু উদ্বেগ পর্যন্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে নানাবিধ অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করতে পারে। বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান এই কাজ করে জীবন এবং বাস্তবতার মত নমোলজির বিভিন্ন দিক নিয়ে অনুসন্ধানের মাধ্যমে। বিভিন্ন দিকের মধ্যে রয়েছে মহা বিস্ফোরণ, জীবনের উৎপত্তি, এবং বিবর্তন, এবং উদ্দেশ্যগত দিক নিয়ে অধ্যয়ন, যা অর্থ এবং সুখের মত বস্তুনিষ্ঠ বিষয়গুলোর সাথে সম্পর্ক যুক্ত করে।
ইতিবাচক মনোবিজ্ঞানের গবেষকরা অভিজ্ঞতামূলক বিষয় নিয়ে গবেষণা করেন যা জীবনকে সন্তুষ্টির দিকে নিয়ে যায়,[১৫] কর্মকাণ্ডে পূর্ণ সম্পৃক্ততা আনে,[১৬] ব্যক্তিগত শক্তিকে কাজে লাগিয়ে করে একটি পরিপূর্ণ অবদান রাখতে পারে,[১৭] এবং নিজের চেয়ে বড় কিছুর সাথে যুক্ত হয়ে জীবনে অর্থ এনে দিতে পারে।[১৮]প্রবাহ অভিজ্ঞতা নিয়ে বড় আকারের গবেষণা ক্রমাগত প্রস্তাব করেছে যে চ্যালেঞ্জিং কাজে নিজেকে দক্ষ করে তুলবার সময় মানুষ অর্থ এবং পরিপূর্ণতা অনুভব করে। এই অনুভূতির কাজের ধরনের উপর নয়, বরং কাজটা কীভাবে করা হচ্ছে তার উপর নির্ভর করে। উদাহরণস্বরূপ, প্রবাহ অভিজ্ঞতার ক্ষেত্রে দেখা যায় এই অভিজ্ঞতার পরিমাণ ন্যূনতম সুবিধাবিশিষ্ট কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে বন্দীরা কোটিপতিদের চেয়ে সামান্য বেশি অনুভব করেন। একটি চিরায়ত উদাহরণ[১৬] হলো একটি কারখানায় আপাতদৃষ্টিতে একঘেয়ে উৎপাদনের দুজন শ্রমিক নিয়োজিত থাকার উদাহরণ। একজন এই কাজকে একটি ক্লান্তিকর কাজ হিসেবে বিবেচনা করে এবং অন্যজন এটিকে একটি খেলা হিসেবে দেখে। দ্বিতীয়জন চিন্তা করে যে সে প্রতিটি ইউনিটকে কত দ্রুত উৎপাদনের মাধ্যমে প্রক্রিয়ায় প্রবাহ বয়ে আনতে পারে।
নিউরোসায়েন্সনিউরোট্রান্সমিটার কার্যকলাপের ভিত্তিতে পুরস্কার, আনন্দ এবং প্রেরণা ইত্যাদি বিষয়কে ব্যাখ্যা করে, বিশেষ করে লিম্বিক সিস্টেম এবং ভেন্ট্রিল টেগমেন্টাল অঞ্চলের কার্যাবলীর মাধ্যমে। যদি কেউ বিশ্বাস করে যে জীবনের অর্থ হচ্ছে সুখ কে সর্বোচ্চকরণ করা এবং সাধারণ জীবনকে সহজ করা, তাহলে কীভাবে কাজ করে এটা অর্জন করা যায় সে সম্পর্কে আদর্শিক বা স্বাভাবিক নির্দেশনা প্রদান করে। একইভাবে, কিছু নৈতিক প্রকৃতিবাদী নৈতিকতার বিজ্ঞানকে সমর্থন করে ― যা সকল সচেতন প্রাণীর বিকাশ লাভের ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে রচিত হয়।
পরীক্ষামূলক দর্শন এবং নিউরোএথিক্স গবেষণা নিয়ন্ত্রিত পরিস্থিতিতে মানুষের নৈতিক সিদ্ধান্ত সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে। এরকম একটি নিয়ন্ত্রিত পরিস্থিত হলো ট্রলি সমস্যা। এসবের মাধ্যমে দেখানো হয়েছে যে অনেক ধরনের নৈতিক বিচার সকল সংস্কৃতিতেই বিদ্যমান, অর্থাৎ সেগুলো হয়তো সহজাত; এবং অন্যগুলো সংস্কৃতি-নির্দিষ্ট।
"জীবনের অর্থ কী?" এই প্রশ্নটি অনেকে তাদের জীবনের এক পর্যায়ে নিজেদেরকে জিজ্ঞাসা করে, অধিকাংশ "জীবনের উদ্দেশ্য কী?" প্রসঙ্গে নিজেদের এটা প্রশ্ন করে।[১০] কিছু জনপ্রিয় ধারণার মধ্যে রয়েছে:
হিন্দু ধর্মে জীবনের তাৎপর্য নিরূপনে ঈশ্বর বা পরমাত্মার অস্তিত্ব, জন্মান্তরবাদ, কর্মফল ইত্যাদি বিষয় জড়িত। ধর্ম-অর্থ-কাম-মোক্ষ এই চারটি বিষয়ের প্রাপ্তি জীবনের উদ্দেশ্য। এই চারটিকে পুরাষার্থ বলা হয়।
ধর্ম: "(ধর্মীয় ও সামাজিক) নীতিবোধ, আধ্যাত্মিক ও আনুষ্ঠানিক কর্তব্যকর্ম।
এই চারটি বিষয়ের মধ্যে মোক্ষ হচ্ছে জীবনের চূড়ান্ত প্রাপ্তি। দেহের সঙ্গে যতক্ষন পর্যন্ত জীবাত্মার সম্বন্ধ থাক ততক্ষণ জীব দুঃখ যন্ত্রণা ভোগ করে। মৃত্যুর পর পুনরায় দেহ ধারণ হয় বলে এই দুঃখের নিবৃত্তি হয় না। জন্মান্তরের ধারণা অনুযায়ী জীবের জন্ম-মৃত্যু চক্রাকারে চলতে থাকে যতক্ষন না পর্যন্ত জীবাত্মাপরমাত্মার সঙ্গে একাত্ম হয়ে মোক্ষ লাভ করতে পারে। আর এই একাত্ম হওয়ার উদ্দেশ্যই জীবের জন্মের কারণ। হিন্দু ধর্মে জীবনের অর্থকে এভাবে ব্যাখ্যা করা হয়।
↑Dennis Marcellino (১৯৯৬)। Why Are We Here?: The Scientific Answer to this Age-old Question (that you don't need to be a scientist to understand)। Lighthouse Pub। আইএসবিএন0-945272-10-3।
↑ কখHsuan Hua (২০০৩)। Words of Wisdom: Beginning Buddhism। Dharma Realm Buddhist Association। আইএসবিএন0-88139-302-9।
↑Russ Shafer-Landau; Terence Cuneo (২০০৭)। Foundations of Ethics: An Anthology। Blackwell Publishing। আইএসবিএন1-4051-2951-4।
↑E. Diener, J.J. Sapyta, E. Suh (1998). "Subjective Well-Being Is Essential to Well-Being." Psychological Inquiry, Lawrence Erlbaum
↑ কখCsíkszentmihályi, Mihály (1990). Flow: The Psychology of Optimal Experience. New York: Harper and Row. আইএসবিএন০০৬০৯২০৪৩২.
↑Peterson, Christopher; Seligman, Martin (2004). Character strengths and virtues: A handbook and classification. Oxford: Oxford University Press. আইএসবিএন০১৯৫১৬৭০১৫. "See brief summary"।
↑Seligman, M.E.P. (2002). Authentic Happiness: Using the New Positive Psychology to Realize Your Potential for Lasting Fulfillment. New York: Free Press. আইএসবিএন০৭৪৩২২২৯৭০ (Paperback edition, 2004, Free Press, আইএসবিএন০৭৪৩২২২৯৮৯)
↑Lee, Dong Yul; Park, Sung Hee; Uhlemann, Max R.; Patsult, Philip (জুন ২০০০)। "What Makes You Happy?: A Comparison of Self-reported Criteria of Happiness Between Two Cultures"। Social Indicators Research। 50 (3): 351–362। এসটুসিআইডি141773177। ডিওআই:10.1023/A:1004647517069।