জুতা পালিশ (কিংবা বুট পালিশ), একটি নরম চটচটে পেস্ট, ক্রিম, বা তরল যা জুতা বা বুট পালিশ, চকচকিকরণ, ও চামড়াকে পানিরোধী করে একে দীর্ঘস্থায়ী ও আকর্ষণীয় করে তোলার কাজে ব্যবহৃত হয়।
প্রাকৃতিক মোম ও চর্বি থেকে শুরু করে শতশত বছর ধরে অনেক কিছুই জুতা পালিশ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। আধুনিক পালিশ প্রস্তুতের উপায় ২০শ শতাব্দীর শুরুর দিকে উদ্ভাবিত হয়, আর সেগুলোর অনেকগুলো এখনো ব্যবহৃত হয়। বর্তমান জুতার পালিশ সাধারণত প্রাথমিক রসায়ন প্রকৌশলকে কাজে লাগিয়ে প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম রাসায়নিক উপাদান, যেমনঃ ন্যাপ্থা, তারপেন্টাইন, ডাই রঙ, বাবলা গাছের আঠা থেকে প্রস্তুত করা হয়। জুতা পালিশ সাধারণত দাহ্য, ও বিষাক্ত হতে পারে, এবং অসতর্কতার কারণে চামড়ায় দাগ ফেলে যেতে পারে। আলোবাতাস যুক্ত পরিবেশে এর ব্যবহার করা উচিৎ, যাতে পোশাক, কার্পেট ও আসবাবপত্রে না লেগে যায়।
১৯শ শতাব্দী থেকে শুরু করে আসল ও কৃত্রিম চামড়ার ব্যপক উৎপাদন ও ব্যবহারের কারণে জুতার পালিশের চাহিদাও অনেক বেড়েছে। বিশ্বযুদ্ধের সময় সেনাদের বুট পালিশ করার জন্য এর জাহিদা হু হু করে বেড়ে যায়।
জুতা পালিশ ন্যাকড়া, কাপড়, বা বুরুশ ব্যবহার করে প্রয়োগ করা হয়। এটা কোন পরিষ্কারক উপাদান নয়, আর তাই এটি প্রয়োগের আগে জুতা ভালোভাবে পরিষ্কার করে শুকিয়ে নিতে হবে। ভালোভাবে ঘষে ঘষে জুতা বা বুটে পালিশ লাগাবার পর নরম পরিষ্কার কাপড় বা বুরুশ দিয়ে ভালোভাবে ঘষে দিলে ভালো ফল পাওয়া যায়। আরেকটি পদ্ধতি আছে, যা থুথু পালিশ বা বুল পালিশ নামে পরিচিত। এ পদ্ধতিতে কাপড় দিয়ে কোমলভাবে চামড়ায় পালিশ লাগানো হয় এবং সাথে পানি বা লালা ব্যবহার করা হয়। এর ফলে আয়নার মতো চকচকে জুতো পাওয়া যায়। এটি সেনাবাহিনীতে অনেক গুরুত্ব বহন করে। নাম থুথু পালিশ হলেও তরল হিসেবে পানির ব্যবহারই বেশি লক্ষণীয়। যেসব পালিশে কার্নোবা মোম থাকে, সেগুলো চামড়ার জুতার স্থায়িত্ব ও সৌন্দর্য বর্ধন করে তোলে। [১]
বর্তমানে জুতাপালিশ স্পঞ্জে লাগানো অবস্থায় পাওয়া যায়, ফলে পরবর্তীতে স্পঞ্জ বা চামড়ায় আর কোন অতিরিক্ত পালিশ লাগাবার দরকার হয়না। একে প্রলেপক বলা হয়। কিছু জুতা যত্নসামগ্রী প্রস্তুতকারক কোম্পানি চাপ দেয়া যায় এরকম প্লাস্টিকের বোতলে তরল জুতা পালিশ উৎপাদন করে। ঘনত্ব কমাবার জন্য বোতলজাত পালিশে মোমজাতীয় উপাদান খুব কম থাকে।
ঠিক জুতার পালিশ নয়, কিন্তু এর মতো অনেক পণ্য আছে। অন্যান্য রাসায়নিক পণ্য জুতা পরিষ্কার বা চকচকে করার কাজে ব্যবহৃত হতে পারে। নির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে, সাদা জুতার জন্য রঙ সাদাকারী উপাদান, জুতা পরিষ্কার বা পানিরোধী করার জন্য বিভিন্ন ধরনের স্প্রে ও এরোসল। [২] কলার খোসা দিয়েও জুতা চকচকে করা যায়,[৩] কিন্তু সেটা করা অনুচিৎ।
যদিও জুতা পালিশ চামড়ার জুতার জন্য লক্ষ্য করে বানানো, কিছু ব্র্যান্ড এর পালিশ নিরন্ধ্র উপাদান, যেমনঃ ভাইনাল এ ব্যবহার করা যায়। পালিশ ও যে জুতায় এটা লাগানো হবে, তার রঙ সাধারণত একই হয়। কিংবা এটি কোন নির্দিষ্ট বর্ণহীনও হতে পারে।
মধ্যযুগ থেকেই, ডাবিন, একটি মোমজাতীয় পণ্য, চামড়া নরম ও পানিরোধী করার কাজে ব্যবহৃত হতো; যদিও, এটি জুতাকে চকচকে করতে পারত না। এটি প্রাকৃতিক মোম, তেল, সোডা অ্যাশ ও চর্বি দিয়ে বানানো হতো। ১৮শ শতাব্দীর দিকে পাতলা কাঠের আবরণ দেয়া চামড়ার কদর বেড়ে যায়, ও জুতার চকচকে ভাব গুরুত্ব লাভ করে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বিভিন্ন গৃহনির্মিত পালিশ, যেমনঃ ল্যানোলিন বা মোম ইত্যাদি এসব কাজে ব্যবহার করা হতো।
১৮শ শতকের শেষ ও ১৯শ শতকের শুরুর দিকে অনেক রকমের জুতা পালিশ উদ্ভাবিত হয়, যদিও সেগুলোকে জুতা পালিশ বা বুট পালিশ বলার প্রচলন তখনো তৈরি হয়নি। বরং, এদেরকে কালো করার বস্তু (যখন এতে ভুসাকালি মেশানো হতো), কিংবা শুধু ডাবিন বলা হতো। চর্বি, পশুজাত উপাদান, যা এ সময়ে সরল প্রকৃতির জুতা পালিশ তৈরিতে ব্যবহৃত হতো। শিকাগো, ইলিনয়, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের ৮২% মাংস ভক্ষণ করা হয়, তা হয়ে গেল সে দেশের প্রধান জুতা পালিশ উৎপাদনকারী অঞ্চল।[৪]
লন্ডনে থমাস ও জনাথন ওয়ারেন, দুই ভাই ১৭৯৫-১৭৯৮ সালে জুতার কালি বানানো শুরু করে। শুরুতে যৌথভাবে, পরে আলাদা আলাদা নিজস্ব কোম্পানিতে। জনাথন ওয়ারেন এর কালি কোম্পানি বেশি উল্লেখযোগ্য, কারণ সেখানে ১৮২৩ সালে ১২ বছর বয়সে কাজ করতেন ছোট্ট চার্লস ডিকেন্স। [৫] The competitor to the Warren companies in London is the Day & Martin company formed in 1801.[৬]
১৮৪২ সালে Day & Martin এর কার্যক্রম চলাকালীন [৭] জানা যায়, দুই ধরনের কালি উৎপাদিত হয়। বোতলজাত তরল, ও ঘন মণ্ড যা ছোট বড় মুখ বিশিষ্ট পাথরের টিউবে, অয়েল পেপারে মোড়ানো, কিংবা গোলাকার টিনের বাক্সে পাওয়া যেত।