জুতি উত্তর ভারত ও তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের এক প্রকার অত্যন্ত জনপ্রিয় পাদুকা। এগুলো সাধারণত চামড়া দিয়ে তৈরি হয় এবং এতে সূক্ষ্ম কারুকাজ থাকে। অতীতে এই পাদুকায় সোনা এবং রুপোর সুতো ব্যবহার করা হত। যদিও এখন সময়ের পরিবর্তনে রাবারের তলি ব্যবহৃত হয়। পাঞ্জাবি জুতি ছাড়াও স্থানীয় বিভিন্ন প্রকার জুতি পাওয়া যায়। অমৃতসর এবং পাটিয়ালা ( "তিল্লা জুতি") হস্তনির্মিত জুতির অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য কেন্দ্র, যেখান থেকে বিশ্বজুড়ে পাঞ্জাবি প্রবাসীদের জন্য এই পাদুকা রপ্তানি করা হয়ে থাকে। এরা ঘনিষ্ঠভাবে মোজারির সঙ্গে সম্পর্কিত। বিভিন্ন স্থানীয় নকশার বৈচিত্র এর বিবর্তনের ধারাকে প্রলম্বিত করছে, যা অনেকাংশেই স্বতন্ত্র মুচির উপর নির্ভর করে। [১][২][৩] এদের তলি সমতল হয় এবং এদের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল এতে কোন বাম বা ডান পা এর প্রকারভেদ থাকে না। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এরা পায়ের আকৃতি নিতে শুরু করে।এই পাদুকার গড়ন উভয়ক্ষেত্রে নারী এবং পুরুষদের জন্য অনুরূপ হয়। পুরুষদের ক্ষেত্রে এই জুতির সামনের দিকে একটি বাঁকা অংশ থাকে, আর নারীদের ক্ষেত্রে অনেকসময় পায়ের গোড়ালির কাছটা উন্মুক্ত থাকে। আনুষ্ঠানিক পোশাকের অংশ হিসাবে, প্রধানত বিবাহের অনুষ্ঠানে জুতি এক বিশেষ ভূমিকা পালন করে। অনঅলঙ্কৃত জুতি পাঞ্জাবের অধিকাংশ জায়গায় পুরুষ এবং মহিলাদের দৈনন্দিন ব্যবহারের জন্য ব্যবহৃত হয়ে থাকে। অনেক পাঞ্জাবি পল্লীগীতিতে জুতির উল্লেখ আছে। [১]
কিছু নির্দিষ্ট উৎসবে এক বিশেষ ধরনের জুতি গরুর পায়েও লাগানো হয়। ভারতের অন্যত্র জায়গায় এই পাদুকা সাধারণভাবে মোজারী হিসাবে পরিচিত। আবার পাকিস্তানে এর একটি বিকল্প নাম হল খুসসা এবং এই পাদুকা এখন পাশ্চাত্য দেশে অত্যন্ত জনপ্রিয়।
মোজারীর মতো এই জুতি আকারে লম্বা হয় এবং এর সামনের দিকের অংশটি শুঁড়ের মত বক্রাকৃতী হয়ে থাকে।
জুতি একধরনের ঐতিহ্যবাহী ভারতীয় পাদুকা বিশেষ, যার নকশা এক প্রজন্মের থেকে অন্য প্রজন্মে কিছু রুপান্তরের মাধ্যমে প্রসার লাভ করেছে।
জুতি সাধারণত মসৃণ চামড়া দিয়ে তৈরি হয় এবং এতে সুতো অথবা পুঁতির কাজ থাকে। এই গুলো পায়ে গলিয়ে পরার জুতো এবং এদের পায়ের পেছনে অ্যাকিলিস টেন্ডনের কাছে একটু উঠে থাকে। জুতির সামনের দিকে পায়ের আঙ্গুল গুলি ঢাকা থাকে এবং সামনের দিকটা গোলাকার অথবা ইংরাজি m অক্ষরের মত হয়। উপরের দিকে প্রচুর কারুকাজ থাকে কিন্ত পায়ের পাতার উপরের অংশ প্রায় উন্মুক্ত থাকে। কিছু কিছু জুতি সম্পূর্ণভাবে হস্তনির্মিত হয় এবং সুন্দরভাবে সূচিকর্মের নকশায় সুসজ্জিত থাকে।
ভারতে বিশেষত পাঞ্জাবে এই ধরনের পাদুকা বিত্তশালি জমিদার, চৌধুরী, নবাব, জায়গীরদার, মহারাজা এবং মহারানীদের পরিধান সামগ্রী হিসাবে পরিগণিত হত। মুঘল আমলের থেকে অনুপ্রাণিত বিভিন্ন নকশার ব্যবহার এখানে দেখা যায়।
এই জুতি ভারতের প্রত্যন্ত কোণে অত্যন্ত দক্ষ কারিগরদের দ্বারা হস্তনির্মিত পদ্ধতিতে তৈরি করা হয়।
উত্তর ভারতে বিশেষ করে পাঞ্জাব, হরিয়ানা ও রাজস্থানের ঐতিহ্যবাহী ভারতীয় পাদুকা হিসাবে জুতি অত্যন্ত জনপ্রিয়। কুর্তাপাজামা বা শেরওয়ানীর সঙ্গে এই জুতির ব্যবহার বিশেষভাবে প্রচলিত।