ব্যক্তিগত তথ্য | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
পূর্ণ নাম | ফ্রাঞ্জ কোপল্যান্ড মারে আলেকজান্ডার | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
জন্ম | কিংস্টন, জ্যামাইকা উপনিবেশ | ২ নভেম্বর ১৯২৮|||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
মৃত্যু | ১৬ এপ্রিল ২০১১ অরেঞ্জ গ্রোভ, জ্যামাইকা | (বয়স ৮২)|||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
ব্যাটিংয়ের ধরন | ডানহাতি | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
ভূমিকা | উইকেট-রক্ষক | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
আন্তর্জাতিক তথ্য | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
জাতীয় দল |
| |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
টেস্ট অভিষেক (ক্যাপ ৯৬) | ২৫ জুলাই ১৯৫৭ বনাম ইংল্যান্ড | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
শেষ টেস্ট | ১০ ফেব্রুয়ারি ১৯৬১ বনাম অস্ট্রেলিয়া | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
| ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
উৎস: ইএসপিএনক্রিকইনফো.কম, ৮ ডিসেম্বর ২০১৭ |
ফ্রাঞ্জ কোপল্যান্ড মারে জেরি আলেকজান্ডার, ওডি (ইংরেজি: Gerry Alexander; জন্ম: ২ নভেম্বর, ১৯২৮ - মৃত্যু: ১৬ এপ্রিল, ২০১১) জ্যামাইকার কিংস্টনে জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান আন্তর্জাতিক ক্রিকেট তারকা ও অধিনায়ক ছিলেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট দলের পক্ষে ২৫ টেস্টে অংশগ্রহণ করেছিলেন। দলে তিনি মূলতঃ উইকেট-রক্ষকের দায়িত্ব পালন করতেন ও ৯০ ডিসমিসালের সাথে নিজনামকে জড়িয়ে রেখেছেন। টেস্ট ও প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে তার ব্যাটিং গড় প্রায় ৩০-এর কাছাকাছি ছিল। প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে জেরি আলেকজান্ডার তার একমাত্র সেঞ্চুরিটি করেছেন ১৯৬০-৬১ মৌসুমে স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে।[১]
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট দলের সর্বশেষ শ্বেতাঙ্গ অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন আলেকজান্ডার। ১৯৫৮ সালে নিজদেশে সফরকারী পাকিস্তান, ১৯৫৮-৫৯ মৌসুমে ভারত ও পাকিস্তান সফর এবং ১৯৬০ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দলকে নেতৃত্ব দেন তিনি। শৃঙ্খলাভঙ্গের কারণে রয় গিলক্রিস্টকে ভারত সফরের মাঝামাঝি সময়ে নিজদেশে ফেরৎ পাঠান ও দলকে নিয়ে পাকিস্তান সফরে চলে যান।
১৭২৯ সালে প্রতিষ্ঠিত ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের সর্বাপেক্ষা প্রাচীন বিদ্যালয়গুলোর একটি উলমার্স বয়েজ স্কুলে অধ্যয়ন করেছেন তিনি। এরপর কেমব্রিজের গনভিল ও কায়াস কলেজে ভর্তি হন। কেমব্রিজ ক্রিকেট দলের সদস্যরূপে ১৯৫২ ও ১৯৫৩ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলায় অক্সফোর্ডের বিপক্ষে অংশ নিয়ে ব্লু লাভ করেন। এছাড়াও ফুটবলে ব্লু পেয়েছেন তিনি। ইংল্যান্ড অ্যামেচার ক্যাপ পান ও ১৯৫৩ সালে পেগাসাসের পক্ষে খেলার স্বীকৃতিস্বরূপ এফএ অ্যামেচার কাপ বিজয়ী পদক লাভ করেন। ১৯৫৪ ও ১৯৫৫ সালে কেমব্রিজশায়ারের পক্ষে ক্রিকেট খেলেছেন তিনি।[২][৩]
১৯৫৬ সালে গ্রেট ব্রিটেনের সদস্যরূপে ফুটবল খেলায় অংশ নিয়েছেন। ১২ মে, ১৯৫৬ তারিখে ওয়েম্বলিতে বুলগেরিয়ার বিপক্ষে অনুষ্ঠিত বাছাইপর্বের ঐ খেলাটি ৩-৩ ব্যবধানে ড্রয়ে পরিণত হয়েছিল।[৪]
১৯৫৩ সাল পর্যন্ত প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করেননি জেরি আলেকজান্ডার। মার্চ, ১৯৫৭ সালে জ্যামাইকার সদস্যরূপে সফরকারী নরফোক ডিউক একাদশের বিপক্ষে দুই খেলায় অংশ নেন। ঐ মৌসুমের গ্রীষ্মে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সদস্যরূপে ইংল্যান্ড সফরের জন্য প্রস্তুতিমূলক খেলায় অংশ নেন। ওয়েস হলের সাথে ১৩৪ রানের জুটি গড়ার স্বীকৃতিস্বরূপ ইংল্যান্ড সফরের জন্য উইকেট-রক্ষক হিসেবে তাকে দলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তবে দলে তার অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছিল।
কেবলমাত্র সিরিজের শেষ দুই টেস্টে অংশগ্রহণ করার সুযোগ হয়েছিল তার। প্রথম তিন টেস্টে পরিবর্তিত উইকেট-রক্ষক হিসেবে রোহন কানহাইকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। তবে কোন খেলাতেই নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি তিনি। অপরাজিত ০, ১১, ০ ও ০ রান করেন এবং উইকেট-রক্ষণেও তেমন ভালো করেননি। উভয় খেলাতেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ ইনিংসের ব্যবধানে পরাজিত হয়েছিল।
ঐ সিরিজের পর জন গডার্ড অধিনায়কের দায়িত্ব থেকে অবসর গ্রহণ করেন। ফলশ্রুতিতে প্রথমবারের মতো তার স্থলাভিষিক্ত হবার জন্য কোন কৃষ্ণাঙ্গের অধিনায়কত্ব লাভের সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়ে উঠে। ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিষয়ে স্নাতক শ্রেণীতে অধ্যয়নরত থাকায় ফ্রাঙ্ক ওরেল এ দায়িত্ব নিতে অস্বীকৃতি জানান। এভারটন উইকস ও ক্লাইড ওয়ালকটের ন্যায় অন্যান্য জ্যেষ্ঠ খেলোয়াড়দেরকে এ পদের উপযোগীরূপে গণ্য করা হয়নি। ফলশ্রুতিতে আলেকজান্ডারকে এ দায়িত্ব গ্রহণের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়। এ প্রসঙ্গে টেলিগ্রাফ তাদের স্মরণিকায় উল্লেখ করে যে - ধৈর্যশীল, দক্ষ ও সাহসী ব্যক্তি হিসেবে তিনি এ পদের উপযোগী। এরফলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল সুসংগঠিত ও সফলতম দলে রূপান্তরিত হবে।
১৯৫৮ সালে অধিনায়ক হিসেবে প্রথম টেস্ট সিরিজে নেতৃত্ব দেন তিনি। সফরকারী পাকিস্তান দলের বিপক্ষে ৩-১ ব্যবধানে সিরিজ জয় করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এছাড়াও ব্যাটসম্যান ও উইকেট-রক্ষক হিসেবেও বেশ ভালো খেলেন। তন্মধ্যে, দ্বিতীয় টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে ৫৭ রানের গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলেন তিনি।
পরবর্তীতে ভারত ও পাকিস্তান গমন করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর দলের প্রধান ব্যাটিং মেরুদণ্ড ওরেল, উইকস ও ওয়ালকট - 'থ্রি ডব্লিউজ' নামে খ্যাত এ তিনজন ব্যাটসম্যান ছাড়াই দলকে টেনে নিয়ে যেতে সক্ষমতা দেখায়। ভারতের বিপক্ষে তিন টেস্টে জায়গায় ও দুই টেস্টে ড্র করে তার দল। কেবলমাত্র একবারই তারা প্রতিরোধের মুখোমুখি হয়েছিল। দ্বিতীয় টেস্টে লেগ স্পিনার সুভাষ গুপ্তের বিপক্ষে লড়ে আলেকজান্ডার ৭০ রান তুলে দিনটি পাড় করেন।
সফরের সর্বশেষ প্রথম-শ্রেণীর খেলায় উত্তর অঞ্চলের বিপক্ষে খেলা চলাকালীন ক্রুদ্ধান্বিত ও হতাশাগ্রস্ত অবস্থায় থাকাকালে পূর্বেকার খেলাগুলোর ন্যায় রয় গিলক্রিস্টকে ক্যামব্রিজে পরিচিত শরণজিৎ সিংকে বিমার ছোঁড়া থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করেন। গিলক্রিস্ট তার অধিনায়কের নির্দেশনা অগ্রাহ্য করে এ জাতীয় বোলিং আক্রমণ করেন। মধ্যাহ্নভোজনের বিরতির পর গিলক্রিস্টর পরিবর্তে অতিরিক্ত খেলোয়াড়কে মাঠে নামান। এরপর গিলক্রিস্টকে দেশে ফেরৎ পাঠিয়ে দেয়া হয় ও বাদ-বাকী খেলোয়াড়দেরকে নিয়ে পাকিস্তান সফরে চলে যান। আলেকজান্ডার গিলক্রিস্টকে বলেছিলেন, তুমি পরের বিমানে চড়ে এখান থেকে চলে যাবে। শুভ অপরাহ্ন! এভাবেই গিলক্রিস্টের টেস্ট খেলোয়াড়ী জীবনের অকাল সমাপ্তি ঘটে। ধারণা করা হয় যে, আলেকজান্ডারকে ছুড়ি উঁচিয়ে ভয় দেখিয়েছিলেন গিলক্রিস্ট।
স্বাগতিক পাকিস্তানের বিপক্ষে ওয়েস্ট ইন্ডিজ তাদের প্রথম দুই টেস্টে পরাজিত হয়। তবে, তৃতীয় টেস্টে জয়লাভ করে দলটি। এরফলে নিজমাঠে প্রথম পরাজয়ের স্বাদ আস্বাদন করে পাকিস্তান দল।
পরবর্তী শীতে আলেকজান্ডারের অধিনায়কত্বে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১-০ ব্যবধানে পরাজয়বরণ করে ও বাদ-বাকী চার টেস্টে ড্র করতে সক্ষম হয়। তবে স্বান্তনাসূচক ব্যক্তিগত অর্জনে সক্ষমতা দেখান তিনি। উইকেট-রক্ষক হিসেবে সিরিজে ২৩টি আউটের সাথে নিজনামকে যুক্ত করেন তিনি। এরফলে জন ওয়েটের গড়া বিশ্বরেকর্ডের সাথে ভাগ বসান তিনি। ত্রিনিদাদের দ্বিতীয় টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজ শোচনীয়ভাবে হেরে বসে। প্রথম ইনিংস দ্রুত গুটিয়ে গেলে ক্ষুদ্ধ দর্শকেরা দাঙ্গা-হাঙ্গামায় জড়িয়ে পড়ে। শ্বেতাঙ্গ ও জ্যামাইকীয় হওয়ায় জেরি আলেকজান্ডার ত্রিনিদাদের দর্শকদের কাছে পছন্দসই ব্যক্তিত্ব ছিলেন না।
ঐ সিরিজে ফ্রাঙ্ক ওরেল দলে ফিরে আসেন। দ্য নেশন সম্পাদক সিএলআর জেমস অধিনায়কের দায়িত্বভার বহনে আলেকজান্ডারের পরিবর্তে ওরেলের সমর্থনে প্রচারণা চালান। ফলশ্রুতিতে ওরেলকে অস্ট্রেলিয়া সফরের জন্য ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের নেতৃত্ব দেয়া হয়। আলেকজান্ডার এ সিদ্ধান্তটি ভালোভাবে মেনে নেন। নিকটতম বন্ধু ওরেলকে যথাসাধ্য সহযোগিতা করতে সচেষ্ট হন তিনি। তার স্মরণিকায় উল্লেখ করা হয় যে, বিশৃঙ্খল দলকে শৃঙ্খলায় আনয়ণ করে ভবিষ্যতের ভিত্তি সুদৃঢ় করে গেছেন তিনি।
অস্ট্রেলিয়া সফরে অবিস্মরণীয় ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শন করেন। ব্যাট হাতে টেস্টগুলোয় ৬০, ৫, ৫, ৭২, ০, ১০৮, ৬৩, অপরাজিত ৮৭, ১১ ও ৭৩ রান তুলেন তিনি। তন্মধ্যে সিডনিতে করা সেঞ্চুরিটি ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিজয়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এ সেঞ্চুরিটি তার খেলোয়াড়ী জীবনের একমাত্র ঘটনা ছিল। এছাড়াও গ্লাভস হাতে বেশ ভালো করেন। এ সফর শেষে ক্রিকেটকে চিরতরে বিদায় জানান।
ক্রিকেটার হিসেবে অবসর নেয়ার পর তিনি ওয়েস্ট ইন্ডিজে ফিরে যান। সেখানে তিনি পশু চিকিৎসক হিসেবে কর্মজীবন গড়তে মনোনিবেশ ঘটান। একপর্যায়ে প্রধান পশু কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ১৯৮২ সালে ক্রীড়াক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রাখার স্বীকৃতিস্বরূপ সম্মানসূচক আদেশনামা পুরস্কারে ভূষিত হন।
১৬ এপ্রিল, ২০১১ তারিখে ৮২ বছর বয়সে জ্যামাইকার অরেঞ্জ গ্রোভ এলাকায় জেরি আলেকজান্ডারের দেহাবসান ঘটে। তার মৃত্যুর মাত্র চার সপ্তাহ পূর্বে তদ্বীয় পত্নী বারবারা’র মৃত্যু হয়। এ দম্পতির দুই সন্তান ছিল।
পূর্বসূরী জন গডার্ড |
ওয়েস্ট ইন্ডিজের টেস্টক্রিকেট অধিনায়ক ১৯৫৭/৫৮–১৯৫৯/৬০ |
উত্তরসূরী ফ্রাঙ্ক ওরেল |