জেরুসালেম অবরোধ | |||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
মূল যুদ্ধ: প্রথম ক্রুসেড | |||||||||
উনবিংশ শতাব্দীর শিল্পীর কল্পনায় ক্রুসেডারদের কাছে বন্দি জেরুসালেম | |||||||||
| |||||||||
বিবাদমান পক্ষ | |||||||||
ক্রুসেডার্স | ফাতেমীয় খিলাফত | ||||||||
সেনাধিপতি ও নেতৃত্ব প্রদানকারী | |||||||||
গডফ্রে অব বুলিয়ন টউলাউজের রেমন্ড চতুর্থ নরমান্ডির রবার্ট দ্বিতীয় ফ্ল্যান্ডার্সের রবার্ট দ্বিতীয় বুলোইনের ইউস্টেস তৃতীয় হুটিভিলের ট্যানড্রেড বার্নের গ্যাস্টন চতুর্থ | ইফতিখার আদ-দাউলা | ||||||||
শক্তি | |||||||||
১,২০০-১,৩০০ নাইটস ১১,০০০-১২,০০০ পদাতিক সৈন্যবাহিনী [২][৩][৪] |
আকারযোগ্য দুর্গ নিরাপত্তারক্ষী[৫] ৪০০ অভিজাত অশ্বারোহী[৪][৬] | ||||||||
হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতি | |||||||||
৩,০০০-৪,০০০[৭] |
আরব সুত্র: আধুনিক অনুমান: |
জেরুসালেম অবরোধ (আরবি: حصار القدس) ৭ থেকে ১৫ জুলাই, ১০৯৯ সালে প্রথম ক্রুসেডের সময় ঘটে। প্রথম ক্রুসেডের সমাপ্তি হয় ক্রুসেডাররা ফাতেমীয় খিলাফত থেকে জেরুসালেম জয় করা এবং জেরুসালেম রাজত্বের ভিত্তি স্থাপন করার মাধ্যমে।
সফলভাবে আন্তিখিয়ায় অবরোধের পর জুন ১০৯৮ সালে ক্রুসেডাররা বছরের বাকী সময়ের জন্য অই এলাকাতেই অবস্থান করে। পাপেল লেজেট আদহেমার অব লে পাই মারা যান এবং টরেন্টোর বোহেমোন্ডো আন্তিখিয়ায় তার বলে দাবী করেন। বোল্ডউইন অব বুলুয়িন এডেসাতে অবস্থান করেন এবং ১০৯৮ এর শুরুর দিকে দখল করেছিলেন। অধিপতিদের মধ্যে পরবর্তীতে কি করতে হবে তা নিয়ে কলহ শুরু হয়; টুলুজের রেমন্ড এতে অসন্তুষ্ট হয়ে আন্তিখিয়ায় ত্যাগ করেন এবং মারাত আল নুমানের দুর্গ অধিকার করতে মারাত অবরোধে রওনা হয়। অই বছরের শেষের দিকে, গৌন নাইট ও পদাতিক সৈন্যদের হুমকি দেয়া হচ্ছিলো যে, তাদের ছাড়াই জেরুসালেমের উদ্দেশ্যে যাত্রা করা হবে। ১৩ জানুয়ারি ১০৯৯ সালে রেয়মন্ড ভূমধ্য উপকূল দিয়ে দক্ষিণে মার্চ করা শুরু করেন, সাথে ছিলেন নরমান্ডির রবার্ট এবং বোহেমন্ডের ভাতিজা ট্যানক্রেড।
যাওয়ার পথে ক্রুসেডাররা আরকা ঘেরাও করে, কিন্তু তারা ধরতে ব্যর্থ হয় এবং ১৩ মে অবরোধ বর্জন করে। ফাতিমদ ক্রুসেডাররা যাতে জেরুসালেমের দিকে আর না আগায় এ শর্তে শান্তি চুক্তি করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু তা উপেক্ষা করা হয়। ফাতিমদ শানকর্তা ইফতিখার আদ-দৌলা ক্রুসেডারদের উদ্দেশ্য সম্পর্কে অবগত ছিলেন। তাই তিনি জেরুসালেমের সমস্ত খ্রিস্টান অধিবাসীদের বহিষ্কার করেন। [৯] জেরুসালেমের দিকে পুনরায় মার্চ করা শুরু করলে, তাদের বাধা দিতে কেউ এলো না।
৭ জুন, ক্রুসেডাররা জেরুসালেম পৌঁছায়, যা সেলযুকদের কাছ থেকে ফাতিমদরা মাত্র একবছর পূর্বে পুনর্দখল করে। অনেক ক্রুসেডাররা তাদের এত ভ্রমণের পর গন্তব্যে পৌঁছে কাঁদতে শুরু করলো। [১০] আন্তিখিয়ায়র মত, ক্রুসেডাররা শহরটি অবরোধ করলো, যেখানে সম্ভবত ক্রুসেডাররা শহরের নাগরিকদের চেয়ে বেশি দুর্ভোগে ছিলো খাদ্য এবং জলের অভাবে। শহরটি অবরোধের জন্য উপযুক্ত ছিলো এবং ফাতিমদ শাসনকর্তা ইফতিখার আদ-দৌলা শহরের অধিকাংশ খ্রিস্টানদের বহিষ্কার করেন। আনুমানিক ৫,০০০ নাইটের মধ্যে শুধু মাত্র ১,৫০০ অবস্থান করেন, সাথে ১২,০০০ স্বাস্থ্যবাদন পদাতিক সৈন্যবাহিনী ( সম্ভবত ৩০,০০০ থেকে)।
অবরোধের প্রথম দিকে কিছু নিচু শ্রেণির নাইটরা দাবী করে অল্প কিছুদিন আগে জ্বরবিকারে মারা যাওয়া পেপাল লেজেট আদহেমার ক্রুসেডের জন্যে তাদের কাছে আসে। তারা দাবী করেন যে, এটি জেরিকো যুদ্ধের অনুরূপ হবে এবং সে তাদের শহরের দেয়ালের চারপাশে নগ্নপায়ে মার্চ করতে নির্দেশ দিয়েছে। ।ভজন গীত গায়তে গায়তে তারা কিছুদিনের জন্যে তাই করে। এরপর পিটার হারমিট যিহোশাফট উপত্যকায়, গেটসেমেনের বাগান, এবং জলপাই মাউন্টে ধর্মীয় উপদেশ সভার আয়োজন করে। অবরোধের জন্যে এখন সবাই প্রস্তুত।
গডফ্রে, ফ্ল্যান্ডার্সের রবার্ট, নরমান্ডির রবার্ট ( গডফ্রের সাথে যোগ যে রেয়মন্ডকে ত্যাগ করেছিলো) উত্তরের দেয়াল থেকে দক্ষিণের ডেভিড টাওয়ার পর্যন্ত ঘেরাও করে, যেখানে রেয়মন্ড তার ক্যাম্প ফেলে পশ্চিমের দিকে, ডেভিড টাওয়ার থেকে মাউন্ট জিওন পর্যন্ত। জুন ১৩-তে দেয়ালে প্রত্যাক্ষ হত্যাকাণ্ড একটি ব্যর্থ প্রচেষ্টা ছিলো। জল ও খাদ্য ব্যতীত, মানুষ ও প্রাণীসমূহ দ্রুত খাদ্যাভাবে ও তৃষ্ণায় মারা যাচ্ছিলো, এবং ক্রুসেডাররা বুঝে গিয়েছিলো সময় তাদের পক্ষে নেই।
কাকতলীয়ভাবে, প্রথম হত্যাকাণ্ডের কিছুদিন পর, দুটো জিনোজ গ্যালিজ জাফা উপকূলে এসে ভীড়ে। অবরোধের জন্যে সামারিয়া থেকে ক্রুসেডাররা কাঠ সংগ্রহ করা শুরু করে। তারা তখনও জল ও খাদ্যের অভাবে ছিলো, এবং জুনের শেষের দিকে সংবাদ এলো ফাতিমদ সৈন্যের একটি দল উত্তরে মিশর থেকে মার্চ করে আসছে।
জেরুসালেমের দেওয়ালের উচ্চতা পরিমাপে ক্রুসেডারদের এ মুহূর্তে প্রয়োজন ছিলো মই ও অবরোধ টাওয়ার। মিশরীয় ফাতিমদ সৈন্যবাহিনী বৃক্ষের আশপাশের এলাকা মুক্ত করে নেয়। ক্রুসেডাররা লুণ্ঠনকারী দলকে সামারিয়াতে পাঠায় কাঠ ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় উপাদানের জন্যে। তারা ৪০০ খণ্ড বৃক্ষের গুড়ি পায়, যা দুটো ৫০ ফুট অবরোধ টাওয়ার, একটি আঘাতক, এবং অনেকগুলো গুলতি নির্মানের জন্য যথেষ্ট। জিনিয়োজ জাহাজের একটি বহন পদাতিক ক্রুসেডারদের সাহায্যের জন্যে জাফাতে এসে পৌঁছায়। জিনিয়োজরা জাহাজগুলো নষ্ট করে কাঠ, রশি জোগাড় করে।
১৪ জুলাই রাতে, ক্রুসেডাররা দ্বিমুখী হত্যাকাণ্ড শুরু করে দেয়ালে। একটি টাওয়ার ছিলো দক্ষিণে এবং অন্যটি উত্তর-পশ্চিমে। মুসলমানরা জানতো যে, যদি কোন একটি অবরোধ টাওয়ার দেওয়ালের সাথে সংযোগ ঘটাতে পারে তাহলে জেরুসালেম ধ্বংস হয়ে যাবে। মুসলমান সৈন্যরা প্রথম অবরোধ টাওয়ারকে জ্বলন্ত তীর ও তেল পাত্র নিয়ে আক্রমণ করে যতক্ষণ না এটি আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায়। তারপর শুধু মাত্র একটি অবরোধ টাওয়ার বাকী ছিলো, গডফ্রের অধীনে, উত্তর-পশ্চিমে। গডফ্রের টাওয়ারের দুঘণ্টা লেগেছিলো উত্তর-পশ্চিমের কোণার গেটের কাছে দেওয়ালের দূর্বল জায়গায় পৌঁছাতে। জেস্তার মতে, লেথালদে ও এঙ্গেলবার্ট ছিলো প্রথম দুজন যারা শহরে প্রবেশ করতে পারে, যাদের পরপর যায় গডফ্রে ও তার ভাই ইউস্টাস, ট্যানক্রেড এবং তাদের লোক। রেয়মন্ডের টাওয়ার প্রথম একটি পরিখার দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত হয়, কিন্তু ততক্ষণে যেহেতু আরও ক্রুসেডার প্রবেশ করে গেট পাহাড়া দেওয়া মুসলিমরা পিছু হঁটে।
অবরোধের পর শহরের অধিবাসীদের উপর নৃশংসতা মধ্যযুগে স্বাভাবিক ঘটনা থাকলেও, এ হত্যাকাণ্ড পূর্বের যেকোন মানদণ্ডকে অতিক্রম করে। ঐতিহাসিক মাইকেল হালের মতে এ নিধন শুধুমাত্র স্বাভাবিক হত্যাকাণ্ডের চেয়ে বেশি কিছু ছিলো, জেরুসালেমকে আবার তথাকথিত যথাযথ ক্রিস্টান শহরে পরিণত করাই ছিলো এ নৃশংসতার মূল কারণ।[১১]
অনেক মুসলমান আল-আকসা মসজিদ, ডোম অব দ্যা রক এবং টেম্পল মাউন্টে আশ্রয় গ্রহণ করেন। জেস্তা দাবী করেন যে ক্রুসেডরা সোলোমন টেম্পলেও মানুষ মারছিলো এবং এডেসার মতে নারী বা শিশু কেউই তাদের লোকদের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছিলো না। মুসলমান ঐতিহাসিক ইবনে আল-আথির শহর দখল হওয়ার পর কিছু মুসলমান নিজেদের দাউদ মেহরাবের আবদ্ধ করে নেয় এবং কিছুদিনের জন্যে যুদ্ধ করতে থাকে। তারা আত্মসমর্পণের বদলে নিজেদের জীবন দিতেই প্রস্তুত ছিলো। [১২]