জেসিকা চ্যাস্টেইন | |
---|---|
Jessica Chastain | |
জন্ম | জেসিকা মিশেল চ্যাস্টেইন[ক] ২৪ মার্চ ১৯৭৭ |
শিক্ষা | জুলিয়ার্ড স্কুল (চারুকলায় স্নাতক) |
মাতৃশিক্ষায়তন | স্যাক্রামেন্টো সিটি কলেজ |
পেশা | অভিনেত্রী, চলচ্চিত্র প্রযোজক |
কর্মজীবন | ২০০৪–বর্তমান |
কর্ম | পূর্ণ তালিকা |
দাম্পত্য সঙ্গী | জিয়ান লুকা পাসি দি প্রেপোসুলো (বি. ২০১৭) |
সন্তান | ২ |
পুরস্কার | পূর্ণ তালিকা |
জেসিকা মিশেল চ্যাস্টেইন (ইংরেজি: Jessica Michelle Chastain; জন্ম: ২৪শে মার্চ, ১৯৭৭) হলেন একজন মার্কিন অভিনেত্রী ও চলচ্চিত্র প্রযোজক। তিনি নারীবাদী বিষয়বস্তু সংবলিত প্রবল ইচ্ছাশক্তি সমৃদ্ধ নারী চরিত্রে অভিনয়ের জন্য সুপরিচিত। তিনি তার কর্মজীবনে একটি একাডেমি পুরস্কার এবং একটি গোল্ডেন গ্লোব পুরস্কার লাভ করেছেন। টাইম সাময়িকী তাদের ২০১২ সালের বিশ্বের ১০০ ক্ষমতাধর নারী তালিকায় তার নাম অন্তর্ভুক্ত করে।
ক্যালিফোর্নিয়ার স্যাক্রামেন্টোতে জন্মগ্রহণ করা ও বেড়ে ওঠা চ্যাস্টেইনের শৈশব থেকেই অভিনয়ের প্রতি আগ্রহ জন্মে। ১৯৯৮ সালে শেকসপিয়ারের জুলিয়েট চরিত্রে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে তার পেশাদার মঞ্চ অভিনয় জীবন শুরু হয়। জুইলিয়ার্ড স্কুলে অভিনয় নিয়ে পড়াশোনার পর তিনি টেলিভিশন প্রযোজক জন ওয়েলসের সাথে একটি প্রতিভা অন্বেষণ চুক্তিতে আবদ্ধ হন। তাকে ল অ্যান্ড অর্ডার: ট্রায়াল বাই জুরি-সহ কয়েকটি টেলিভিশন ধারাবাহিকে অতিথি চরিত্রে দেখা যায়। এছাড়া তিনি ২০০৪ সালে আন্তন চেখভের দ্য চেরি অরচার্ড এবং ২০০৬ সালে অস্কার ওয়াইল্ডের বিয়োগান্ত সালোমে মঞ্চনাটকে অভিনয় করেন।
নাট্যধর্মী জোলেন'' (২০০৮) চলচ্চিত্র দিয়ে চলচ্চিত্রে অভিষেকের পর চ্যাস্টেইন ২০১১ সালে টেক শেল্টার ও দ্য ট্রি অব লাইফসহ ৬টি চলচ্চিত্রে শ্রেষ্ঠাংশে অভিনয় করে ব্যাপক সমাদৃত হন ও পরিচিতি লাভ করেন। তিনি নাট্যধর্মী দ্য হেল্প (২০১১) চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেত্রী বিভাগে একাডেমি পুরস্কারের মনোনয়ন এবং থ্রিলারধর্মী জিরো ডার্ক থার্টি (২০১২) চলচ্চিত্রে সিআইএ বিশ্লেষক মিয়া চরিত্রে অভিনয় করে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে গোল্ডেন গ্লোব পুরস্কার লাভ করেন এবং তার দ্বিতীয় একাডেমি পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন। একই বছর দি এয়ারেস নাটক দিয়ে তার ব্রডওয়েতে অভিষেক হয়। তার সর্বোচ্চ আয়কারী চলচ্চিত্রসমূহ হল বিজ্ঞান কল্পকাহিনীমূলক ইন্টারস্টেলার (২০১৪) ও দ্য মার্শিয়ান (২০১৫) এবং ভীতিপ্রদ ইট চ্যাপ্টার টু (২০১৯)। এছাড়া তিনি নাট্যধর্মী আ মোস্ট ভায়োলেন্ট ইয়ার (২০১৪), মিস স্লোয়ান (২০১৬) ও মলিস গেম (২০১৭) চলচ্চিত্র এবং সিনস ফ্রম আ ম্যারিজ (২০১২) টেলিভিশন মিনি ধারাবাহিক দিয়ে প্রশংসা অর্জন করেন। তিনি তার প্রযোজিত জীবনীমূলক দি আইজ অব ট্যামি ফে (২০২১) চলচ্চিত্রে ট্যামি ফে মেসনারের ভূমিকায় অভিনয় করে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে একাডেমি পুরস্কার অর্জন করেন।
চ্যাস্টেইন প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ফ্রেকল ফিল্মসের প্রতিষ্ঠাতা, যা চলচ্চিত্রে বৈচিত্রতাকে প্রচারের লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। তিনি ফুটবল ক্লাব অ্যাঞ্জেল সিটি এফসির বিনিয়োগকারী। তিনি মানসিক স্বাস্থ্য এবং লিঙ্গ ও বর্ণ সমতার বিষয়ে সোচ্চার। তিনি ফ্যাশন নির্বাহী জিয়ান লুকা পাসি দে প্রেপোসুলোকে বিয়ে করেছেন, তাদের দুই কন্যা রয়েছে।
চ্যাস্টেইন ১৯৭৭ সালের ২৪শে মার্চ ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের স্যাক্রামেন্টোতে জন্মগ্রহণ করেন।[ক][৪] তার পিতা মাইকেল মোনাস্টেরিও ছিলেন একজন রক সঙ্গীতজ্ঞ এবং মাতা জেরি রেনি হ্যাস্টি (প্রদত্ত নাম: চ্যাস্টেইন)।[২][৫] তার জন্মের সময় তার পিতামাতা দুজনেই কিশোর-কিশোরী ছিলেন। চ্যাস্টেইন তার পরিবার সম্পর্কে জনসম্মুখে আলোচনা করতে অনিচ্ছুক। তিনি মোনাস্টেরিও থেকে দূরে ছিলেন, যিনি ২০১৩ সালে মারা যান। তিনি বলেন তার জন্মসনদে পিতার নাম তালিকাভুক্ত হয়নি।[২][৫] তার দুই বোন ও দুই ভাই রয়েছে। তার ছোট বোন জুলিয়েট মাদকাসক্ত হয়ে ২০০৩ সালে ২৪ বছর বয়সে আত্মহত্যা করেন।[৬] চ্যাস্টেইন তার মাতা ও সৎ বাবা মাইকেল হ্যাস্টির কাছে বড় হন। হ্যাস্টি একজন অগ্নি নির্বাপনকর্মী ছিলেন।[৩][৭] চ্যাস্টেইন বলেন তার সৎ বাবাই প্রথম ব্যক্তি যিনি তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছিলেন।[৫] তার মাতামহ ম্যারিলিনের সাথে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। তিনি বলেন ম্যারিলিন "সর্বদা আমার প্রতি বিশ্বাস রেখেছে।"[৭][৮]
সাত বছর বয়সে তার মাতামহ তাকে জোসেফ অ্যান্ড দি আমেজিং টেকনিকালার ড্রিমকোট মঞ্চনাটক দেখতে নিয়ে যাওয়ার পর চ্যাস্টেইনের অভিনয়ের প্রতি আগ্রহ জন্মে।[৩] তিনি নিয়মিত অন্যান্য ছেলেমেয়েদের সাথে অপেশাদার নাটকে কাজ করতেন এবং নিজেকে তাদের সৃজনশীল পরিচালক বলে মনে করতেন।[৭] স্যাক্রামেন্টোর এল কামিনো ফান্ডামেন্টাল হাই স্কুলে শিক্ষার্থী থাকাকালীন তিনি শিক্ষা কার্যক্রমে খারাপ ফলাফল করেন।[২][৯] তিনি বিদ্যালয়ে একাকী ছিলেন এবং নিজেকে বিদ্যালয়ের জন্য অনুপযুক্ত বলে মনে করতেন, এবং অবশেষে তার কাছে প্রদর্শন কলার দ্বার উন্মুক্ত হয়।[১০] তবে তিনি শেকসপিয়ারের লেখা পড়তে না পারার জন্য বিদ্যালয়ের অভাব বোধ করেন,[১১] কারণ তার সহপাঠীদের সাথে ওরেগন শেকসপিয়ার উৎসবে তার নাটকে দেখতে গিয়ে বিমোহিত হয়েছিলেন।[১২] বিদ্যালয়ের শেষভাগে এসে অনেক বেশি অনুপস্থিতির জন্য তিনি চূড়ান্ত পরীক্ষায় বসতে পারেননি, তবে পরবর্তীকালে তিনি একটি ডিপ্লোমা অর্জন করেন।[৯] তিনি এরপর ১৯৯৬ থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত স্যাক্রামেন্টো সিটি কলেজে পড়াশোনা করেন। এই সময়ে তিনি এই প্রতিষ্ঠানের বিতর্ক দলের একজন সদস্য ছিলেন।[১৩] তার শৈশবের বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি স্মরণ করেন:
আমি একক মায়ের সাথে বড় হই যিনি আমাদের টেবিলে খাবার দেওয়ার জন্য কঠোর পরিশ্রম করতেন। অনেক রাত আমরা না খেয়ে ঘুমাতে যেতাম। আমাদের বেড়ে ওঠা খুবই কষ্টকর ছিল। আমার বেড়ে ওঠা এত সহজ ছিল না।[১৪]
১৯৯৮ সালে চ্যাস্টেইন আমেরিকান একাডেমি অব ড্রামাটিক আর্টস থেকে পড়াশোনা সম্পন্ন করেন এবং সান ফ্রান্সিস্কো বে এলাকার থিয়েটারওয়ার্কস কোম্পানি কর্তৃক মঞ্চস্থ রোমিও অ্যান্ড জুলিয়েট নাটকে জুলিয়েট চরিত্রে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে তার পেশাদার মঞ্চ অভিনয়ের যাত্রা শুরু হয়।[১৫][১৬][১৭] এই নাটক তাকে নিউ ইয়র্ক সিটির জুলিয়ার্ড স্কুলে অডিশন দিতে সহায়তা করে, যেখানে তিনি অভিনেতা রবিন উইলিয়ামস কর্তৃক অনুদানকৃত একটি বৃত্তি অর্জন করেন।[৭][৯] এই বিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষে চ্যাস্টেইন দুঃশ্চিন্ত ছিলেন এবং এই শিক্ষা কার্যক্রম থেকে বাদ পড়ে যাওয়া নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন এবং তার বেশিরভাগ সময় বই পড়ে ও চলচ্চিত্র দেখে কাটাতেন।[৭][১৭] তিনি বলেন দ্বিতীয় বর্ষে তার অভিনীত দ্য সিগাল নাটকের সফলতা তাকে আত্মবিশ্বাসী করে তুলতে সহায়তা করে।[১৭] তিনি ২০০৩ সালে এই প্রতিষ্ঠান থেকে চারুকলায় স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।[১৭]
চ্যাস্টেইন প্রথম টেলিভিশনের জন্য অভিনয় করেন ২০০৪ সালে ওয়ার্নার ব্রস নেটওয়ার্কের সোপ অপেরা ডার্ক শ্যাডোস-এ ক্যারোলিন স্টোডার্ড ভূমিকায়। ধারাবাহিকটি পরিচালনা করেন পি. জে. হোগান, কিন্তু এটি সম্প্রচারিত হয়নি। পরবর্তী বছর তিনি মেডিক্যাল নাট্যধর্মী ধারাবাহিক ইআর-এ অতিথি চরিত্রে অভিনয় করেন। ২০০৪ থেকে ২০০৭ সালে তিনি ভেরোনিকা মার্স (২০০৪),[১৮] ক্লোজ টু হোম (২০০৬),[১৯] ও ল অ্যান্ড অর্ডার: ট্রায়াল বাই জুরি (২০০৫-২০০৬) টেলিভিশন ধারাবাহিকে অভিনয় করেন।[২০]
চ্যাস্টেইন ২০১১ সালে ৬টি চলচ্চিত্রে শ্রেষ্ঠাংশে অভিনয় করে ব্যাপক সমাদৃত হন ও পরিচিতি লাভ করেন।[২১] এই বছরে তার অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র টেক শেল্টার-এ তিনি মাইকেল শ্যাননের চরিত্রের স্ত্রী ভূমিকায় অভিনয় করেন। জেফ নিকোল্স পরিচালিত ছবিটি ২০১১ সালে সানড্যান্স চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয়। দ্য ডেইলি টেলিগ্রাফ-এর সমালোচক টিম রোবি এই চলচ্চিত্রের গল্পবলায় চ্যাস্টেইনের অভিনয় কতটুকু ভূমিকা রেখেছে তা উল্লেখ করেন।[২২] শেকসপিয়ারীয় বিয়োগান্ত নাটক অবলম্বনে রেফ ফাইঞ্জের নির্মিত করিওলানাস চলচ্চিত্রে তিনি ভার্জিলিয়া চরিত্রে অভিনয় করেন।[২৩] তার পরবর্তী চলচ্চিত্র ছিল ব্র্যাড পিটের বিপরীতে টেরেন্স মালিক পরিচালিত দ্য ট্রি অব লাইফ। এটি ২০০৮ সালে চিত্রায়িত হয়েছিল[২৪][২৫] এবং তিনি কোন প্রকার চিত্রনাট্য না পেয়েই এই চলচ্চিত্রের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলেন। পরবর্তীতে চিত্রায়ন চলাকালীন তিনি ও পিট তাদের দৃশ্য ও সংলাপ পরিবর্তন করেছিলেন।[২৬]
এই বছরে চ্যাস্টেইনের সেরা সাফল্য আসে দ্য হেল্প চলচ্চিত্রের মধ্য দিয়ে। ক্যাথরিন স্টকেটের একই নামের উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত এই চলচ্চিত্রে তিনি ভায়োলা ডেভিস, অক্টাভিয়া স্পেন্সার ও এমা স্টোনের সাথে অভিনয় করেন।[২৭] এই ছবিতে অভিনয়ের জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেত্রী বিভাগে একাডেমি পুরস্কার, বাফটা পুরস্কার, গোল্ডেন গ্লোব পুরস্কার ও স্ক্রিন অ্যাক্টরস গিল্ড পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন।[২৮][২৯] ২০১২ সালে থ্রিলারধর্মী জিরো ডার্ক থার্টি চলচ্চিত্রে সিআইএ এজেন্ট মিয়া চরিত্রে অভিনয় করে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে গোল্ডেন গ্লোব পুরস্কার লাভ করেন এবং তার দ্বিতীয় একাডেমি পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন। একই বছর দ্য এয়ারেস নাটক দিয়ে তার ব্রডওয়েতে অভিষেক হয়।[৩০]
তার সর্বোচ্চ আয়কারী দুটি চলচ্চিত্র হল বিজ্ঞান কল্পকাহিনীমূলক ক্রিস্টোফার নোলান পরিচালিত ইন্টারস্টেলার (২০১৪) ও রিডলি স্কট পরিচালিত দ্য মার্শিয়ান (২০১৫) ও মলিস গেম (২০১৭) চলচ্চিত্র দিয়ে প্রশংসা অর্জন করেন।
২০১৪ সালে চ্যাস্টেইনের অভিনীত শেষ চলচ্চিত্র ছিল জে. সি. চ্যান্ডর পরিচালিত অপরাধ নাট্যধর্মী আ মোস্ট ভায়োলেন্ট ইয়ার। এটি ১৯৮১ সালের নিউ ইয়র্ক সিটির পটভূমিতে নির্মিত। ১৯৮১ সালে এই শহরে অপরাধের হার সর্বাধিক ছিল। চলচ্চিত্রটিতে তেল কোম্পানির মালিক (অস্কার আইজ্যাক অভিনীত) ও তার নির্দয় স্ত্রীর (চ্যাস্টেইন) গল্প বর্ণিত হয়েছে।[৩১] চ্যাস্টেইন তার চরিত্রের প্রস্তুতি হিসেবে এই সময় নিয়ে অধ্যয়ন করেন এবং ব্রুকলিনের উপভাষা রপ্ত করার জন্য একজন প্রশিক্ষকের অধীনে প্রশিক্ষণ নেন।[৩২] তিনি পোশাক পরিকল্পনাকারী কাসিয়া ওয়ালিকা-মাইমোনের সাথে যুক্ত হয়ে তার চরিত্রের পোশাক-পরিচ্ছদ নিয়েও কাজ করেন এবং উক্ত সময়ের কাপড়ের জন্য আরমানির সাথে যোগাযোগ করেন।[৩২] সান ফ্রান্সিস্কো ক্রনিকল-এর মাইক লাসাল চ্যাস্টেইনের অভিনয়কে "সেই যুগের নব্য ধনী নিউ ইয়র্কের নারীর বিমূর্ত প্রকাশ" বলে বর্ণনা করেন; এবং দ্য গার্ডিয়ান-এর মার্ক কেরমোড লেডি ম্যাকবেথের চরিত্র থেকে অনুপ্রাণিত এই চরিত্রে চ্যাস্টেইনকে "অসাধারণ" বলে উল্লেখ করেন।[৩৩][৩৪] তিনি এই চলচ্চিত্রের জন্য চলচ্চিত্রে শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেত্রী বিভাগে গোল্ডেন গ্লোব পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন।[৩৫] ২০১৪ সালে তার কাজের জন্য ব্রডকাস্ট ফিল্ম ক্রিটিকস অ্যাসোসিয়েশন তাকে একটি বিশেষ সম্মাননা পুরস্কার প্রদান করে।[৩৬]
কয়েকটি প্রগাঢ় চরিত্রে অভিনয়ের পর চ্যাস্টেইন প্রফুল্ল চরিত্রের খোঁজ করছিলেন।[৩৭] তিনি তারকাবহুল কল্পনাধর্মী দ্য হান্টসম্যান: উইন্টার্স ওয়ার (২০১৬) চলচ্চিত্রের খোঁজ পান। এটি মূলত ২০১২ সালের স্নো হোয়াইট অ্যান্ড দ্য হান্টসম্যান চলচ্চিত্রের পূর্ববর্তী ও অনুবর্তী উভয় হিসেবে কাজ করে। তিনি এই চরিত্রের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিলেন কারণ এতে তার অভিনীত নারী যোদ্ধার দক্ষতা পুরুষ যোদ্ধার সমান ছিল, কিন্তু চলচ্চিত্রটি নেতিবাচক পর্যালোচনা লাভ করে।[৩৭][৩৮][৩৯] তিনি এরপর রাজনৈতিক থ্রিলারধর্মী মিস স্লোয়ান (২০১৬) চলচ্চিত্রের নাম ভূমিকায় অভিনয় করেন। এতে তিনি পুনরায় জন ম্যাডেনের সাথে অভিনয় করেন।[৩৭][৪০] তার চরিত্রটি ছিল একজন লবিকারীর। এজন্য তিনি আমেরিকায় লবির অনুশীলন সম্পর্কে অধ্যয়নের জন্য জ্যাক আব্রামফের ক্যাপিটল পানিশমেন্ট উপন্যাসটি পড়েছিলেন এবং নারী লবিকারীদের আচরণ ও তাদের বাচনভঙ্গী সম্পর্কে জানতে কয়েকজন নারী লবিকারীর সাথে সাক্ষাৎ করেন।[৪১] রোলিং স্টোন-এর পিটার ট্র্যাভার্স তাকে এই গ্রহের অন্যতম সেরা অভিনেত্রী হিসেবে অভিহিত করে বলেন চ্যাস্টেইন সফলভাবে দর্শকদের স্লোয়ানের জীবনের প্রতি আকৃষ্ট করেছেন। অন্যদিকে লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমস-এর জাস্টিন চ্যাং তার অভিনয়কে "বাগাড়ম্বরপূর্ণ যথার্থ এবং দৃঢ়ভাবে কুণ্ডলী পাকানো ভাবানুভূতিপূর্ণ ঐকান্তিকতা" বলে উল্লেখ করেন।[৪২][৪৩] চ্যাস্টেইন তার অভিনয়ের জন্য নাট্যধর্মী চলচ্চিত্রে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে গোল্ডেন গ্লোব পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন।[৪৪]
জীবনীমূলক দি আইজ অব ট্যামি ফে চলচ্চিত্রে চ্যাস্টেইন ও অ্যান্ড্রু গারফিল্ড টেলিভ্যানজেলিস্ট ট্যামি ফে মেসনার ও জিম বেকারের ভূমিকায় অভিনয় করেন। তিনি ২০১২ সালে ফের জীবনীর স্বত্ব লাভ করেন এবং তার প্রযোজনা কোম্পানি ফ্রেকল ফিল্মসের ব্যানারে এই চলচ্চিত্র প্রযোজনা করেন।[৪৫] পর্দায় দেখতে ফের মত হওয়ার জন্য চ্যাস্টেইন এক ধরনের কৃত্রিম রূপসজ্জা নেন, যেটি প্রয়োগ করতে ৪-৭ ঘণ্টা লাগত।[৪৬] এই ভূমিকায় কাজের জন্য তাকে গান গাইতেও হত, তিনি বলেন এতে তিনি বিচলিত হয়ে পড়তেন।[৪৭] এই চলচ্চিত্রের সঙ্গীতের জন্য তিনি সঙ্গীত পরিচালক ডেভ কবের সাথে সাতটি গান রেকর্ড করেন।[৪৫] রোলিং স্টোন-এর ডেভিড ফিয়ার "এই কৌতূহল আশ্রিত জীবনীটি" দেখার একমাত্র কারণ হিসেবে চ্যাস্টেইনের নাম উল্লেখ করেন এবং পাণ্ডুলিপি ছাপিয়ে গিয়ে ফে-কে প্রতিফলিত করার জন্য তার প্রশংসা করেন।[৪৮] দ্য টাইমস-এর কেভিন মাহের তার অভিনয়কে "মনোযোগ আকর্ষক, অবারিত ও পুরস্কার পাওয়ার যোগ্য অভিনয়" বলে উল্লেখ করেন এবং জোকার (২০১৯) চলচ্চিত্রের হোয়াকিন ফিনিক্সের অভিনয়ের সাথে তুলনা করেন।[৪৯] তিনি এই কাজের জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে একাডেমি পুরস্কার, ক্রিটিকস চয়েস পুরস্কার ও স্যাগ পুরস্কার অর্জন করেন এবং সঙ্গীতধর্মী বা হাস্যরসাত্মক চলচ্চিত্রে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে গোল্ডেন গ্লোব পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন।[৫০][৫১]
২০০০-এর দশকে চ্যাস্টেইন লেখক ও পরিচালক নেড বেনসনের সাথে দীর্ঘদিন প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে ছিলেন। ২০১০ সালে সেই সম্পর্কের বিচ্ছেদ ঘটে।[৫২] ২০১২ সালে তিনি ইতালীয় অভিজাত পরিবার পাসি দে প্রেপসুলো কাউন্টের জিয়ান লুকা পাসি দে প্রেপোসুলোর সাথে সম্পর্কে জড়ান।[৭] প্রেপসুলো ফ্যাশন ব্র্যান্ড মঙ্কলারের নির্বাহী।[৫৩] ২০১৭ সালের ১০ই জুন তারা ইতালির কার্বোনেরায় প্রেপসুলোর পারিবারিক নিবাসে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন।[৫৪] তারা নিউ ইয়র্ক সিটিতে বসবাস করেন।[৫৫][৫৬] ২০১৮ সালে সারোগেসির মাধ্যমে তাদের এক কন্যা জন্ম নেয়।[৫৭] তার নাম গুলেত্তা পাসি চ্যাস্টেইন।[৫৮]
চ্যাস্টেইন একজন নারীবাদী এবং তাকে প্রায়ই হলিউডে নারী ও ক্ষুদ্রগোষ্ঠীদের বৈষম্য নিয়ে কথা বলতে দেখা যায়।[৫৯][৬০] তিনি দ্য হলিউড রিপোর্টার-এর ডিসেম্বর ২০১৫ সংখ্যায় হলিউড শিল্পে লিঙ্গ বৈষম্য নিয়ে মতামত কলাম লিখেন।[৬১] ২০১৭ সালে কান চলচ্চিত্র উৎসবে তিনি জুরি সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং তিনি অধিকাংশ চলচ্চিত্রে নারীর গৌণ ভূমিকা নিয়ে আক্ষেপ করেন।[৬২][৬৩] তিনি নারী চলচ্চিত্র সমালোচকের কমতির অভিযোগ করেন, এবং তিনি মনে করেন এর ফলে চলচ্চিত্রে লিঙ্গ-নিরপেক্ষ দৃষ্টিকোণ বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে।[৬৩] চ্যাস্টেইন চলচ্চিত্রের সেটে আরও লিঙ্গ ভারসাম্যের কথা বলেন, তন্মধ্যে রয়েছে চলচ্চিত্রের কলাকুশলীদের মধ্যে এবং ক্ষমতাধর অবস্থানে আরও নারীর উপস্থিতি।[৬৪] সামাজিক মাধ্যমে চ্যাস্টেইন এই শিল্পে যৌন নিপীড়নের ভুক্তভোগীদের সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান।[৬৫] যৌন নিপীড়ন ও বৈষম্য থেকে নারীদের রক্ষার জন্য ২০১৮ সালে তিনি হলিউডে ৩০০ নারীকে নিয়ে টাইম্স আপ আন্দোলন শুরু করেন।[৬৬]
পর্যালোচনা সংগ্রাহক ওয়েবসাইট রটেন টম্যাটোস ও বক্স অফিস ওয়েবসাইট বক্স অফিস মোজো অনুসারে চ্যাস্টেইনের সবচেয়ে সমাদৃত ও ব্যবসাসফল চলচ্চিত্রগুলো হল টেক শেল্টার (২০১১), করিওলানাস (২০১১), দ্য ট্রি অব লাইফ (২০১১), দ্য হেল্প (২০১১), মাদাগাস্কার থ্রি: ইউরোপ্স মোস্ট ওয়ান্টেড (২০১২), জিরো ডার্ক থার্টি (২০১২), মামা (২০১৩), ইন্টারস্টেলার (২০১৪), আ মোস্ট ভায়োলেন্ট ইয়ার (২০১৪), দ্য মার্শিয়ান (২০১৫), মিস স্লোয়ান (২০১৬), মলিস গেম (২০১৭), ও ইট চ্যাপ্টার টু (২০১৯)।[৬৭][৬৮] মঞ্চে তার উল্লেখযোগ্য কাজ হল ২০১২ সালে ব্রডওয়েতে দি এয়ারেস-এর পুনরুজ্জীবিতকরণে অভিনয়।[৩০]
চ্যাস্টেইন দুটি একাডেমি পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেছেন, তন্মধ্যে দ্য হেল্প চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেত্রী বিভাগে এবং জিরো ডার্ক থার্টি চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে। তিনি জিরো ডার্ক থার্টি চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য নাট্যধর্মী চলচ্চিত্রে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে গোল্ডেন গ্লোব পুরস্কার অর্জন করেছেন; এবং মিস স্লোয়ান ও মলিস গেম চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য নাট্যধর্মী চলচ্চিত্রে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে এবং দ্য হেল্প ও আ মোস্ট ভায়োলেন্ট ইয়ার চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেত্রী বিভাগে আরও চারটি গোল্ডেন গ্লোব পুরস্কারের মনোনয়ন পেয়েছেন।[৭][৩৫][৪৪]