জোড়াসাঁকো | |
---|---|
কলকাতার অঞ্চল | |
স্থানাঙ্ক: ২৩°৪৮′ উত্তর ৮৮°১৫′ পূর্ব / ২৩.৮° উত্তর ৮৮.২৫° পূর্ব | |
দেশ | ভারত |
রাজ্য | পশ্চিমবঙ্গ |
শহর | কলকাতা |
ওয়ার্ড |
|
নিকটবর্তী মেট্রো স্টেশন | গিরিশ পার্ক |
সরকার | |
• বিধায়ক | স্মিতা বক্সী (সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেস) |
উচ্চতা | ৩৬ ফুট (১১ মিটার) |
জনসংখ্যা (২০০১) | |
• মোট | ৩৪,৮১৯ |
সময় অঞ্চল | IST (ইউটিসি+5:30) |
PIN | 700 006 |
এলাকা কোড | +91 33 |
জোড়াসাঁকো উত্তর কলকাতার একটি অঞ্চল ও বিধানসভা কেন্দ্র। ঠাকুর পরিবারের বাসভবন জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি এই অঞ্চলেই অবস্থিত। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মস্থান জোড়াসাঁকো বাংলার নবজাগরণের ইতিহাসে এক বিশিষ্ট স্থানের অধিকারী। ঠাকুরবাড়ি বর্তমানে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষাপ্রাঙ্গন। এছাড়া জোড়াসাঁকো কলকাতার শঙ্খশিল্পের একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র।
জোড়াসাঁকো অঞ্চলের আদি নাম ছিল মেছুয়াবাজার।[১] ইতিহাসপ্রসিদ্ধ জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি ছিল বাংলার নবজাগরণের অন্যতম মুখ্য ধারক ও বাহক ঠাকুর পরিবারের ভদ্রাসন। ঠাকুর পরিবার ছাড়াও নবজাগরণের অন্যান্য পৃষ্ঠপোষক সিংহ পরিবার (কালীপ্রসন্ন সিংহের পরিবার), পাল পরিবার (কৃষ্ণদাস পালের পরিবার), এবং দেওয়ান বানারসি ঘোষ ও চন্দ্রমোহন চট্টোপাধ্যায়ের পরিবারের ভদ্রাসনও এই অঞ্চলে অবস্থিত ছিল। এইভাবে জোড়াসাঁকো হয়ে উঠেছিল “বাংলার নবজাগরণের শিশুশয্যা।” [২]
জোড়াসাঁকো থানা কলকাতার প্রাচীনতম থানাগুলির অন্যতম। ১৭৮৫ সালে শহরের পৌর প্রশাসন ও পুলিশ বিভাগের জন্য যে ৩১টি থানা সৃষ্টি করা হয়েছিল, জোড়াসাঁকো ছিল তার অন্যতম।[২]
আদি ব্রাহ্মসমাজ, জোড়াসাঁকো ভারতী নাট্যসমাজ, কলিকাতা হরিভক্তিপ্রদায়িনী সভা, মিনার্ভা লাইব্রেরি, ওরিয়েন্টাল সেমিনারি প্রভৃতি ইতিহাসখ্যাত প্রতিষ্ঠানগুলি জোড়াসাঁকো অঞ্চলেই স্থাপিত হয়েছিল।[২] ১৯২৯ সালে শিক্ষাবিদ গৌরমোহন আঢ্য প্রতিষ্ঠিত ওরিয়েন্টাল সেমিনারি ছিল কলকাতার প্রাচীনতম বেসরকারি ও প্রথম শ্রেণির শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। হিন্দুদের দ্বারা চালিত এই বিদ্যালয়ে কেবলমাত্র মধ্যবিত্ত ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত হিন্দু ছাত্ররাই পড়াশোনার সুযোগ পেতেন।[৩]
১৯৬২ সালে জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি প্রাঙ্গনে কলকাতার তৃতীয় বিশ্ববিদ্যালয় রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হয়। প্রথম দিকে এই বিশ্ববিদ্যালয় ছিল সঙ্গীত ও চারুকলা শিক্ষাকেন্দ্র; পরবর্তীকালে এখানে কলা ও মানবীয় বিদ্যা পঠনপাঠন শুরু হয়।[৪]
জোড়াসাঁকো অঞ্চলটি রবীন্দ্র সরণির উপর অবস্থিত। এই ঐতিহাসিক রাস্তাটির আদিনাম চিৎপুর রোড। ১৯০৯ সালে এইচ. ই. এ. কটন এই রাস্তাটি প্রসঙ্গে লেখেন, “The great thoroughfare, which commencing in the extreme south, assumes the various names of Russa Road, Chowringhee Road, Bentick Street, Chitpore Road, and Barrackpore Trunk Road, forms a continuation of the Dum Dum Road and was the old line of communication between Morshedabad and Kalighat. It is said to occupy the site of the old road made by the Sabarna Roy Choudhurys, the old zemindars of Calcutta, from Barisha, where the junior branch resided, to Halisahar, beyond Barrackpore, which was the seat of the senior branch.” [৫] কেউ কেউ জোড়াসাঁকো সহ এই রাস্তার দুইধারের সমগ্র অঞ্চলটিকে চিৎপুর নামে অভিহিত করে থাকেন।
জোড়াসাঁকো নাট্যশালা নামে জোড়াসাঁকোয় দুটি নাট্যশালার কথা জানা যায়। প্যারীমোহন ঘোষ তার বানারসি ঘোষ স্ট্রিটস্থ বাসভবনে প্রথমটি প্রতিষ্ঠা করেন। এই নাট্যশালায় মঞ্চস্থ হওয়া একমাত্র নাটকটি ছিল উইলিয়াম শেক্সপিয়রের জুলিয়াস সিজার। ১৮৫৪ সালের ৩ মে এই নাটকটি জোড়াসাঁকো নাট্যশালায় মঞ্চায়িত হয়েছিল।[৬]
১৮৬৫ সালে গণেন্দ্রনাথ ঠাকুর পারিবারিক থিয়েটার হিসেবে দ্বিতীয় জোড়াসাঁকো নাট্যশালাটির প্রতিষ্ঠা করেন। এই বছরই এই নাট্যশালায় মাইকেল মধুসূদন দত্তের কৃষ্ণকুমারী নাটকটি অভিনীত হয়। এই নাটকে তরুণ জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রথম নাট্যাভিনয়ের সুযোগ পেয়েছিলেন। তিনি অহল্যাদেবীর চরিত্রে অভিনয় করেন।[৭] প্রথম দিকে পুরুষেরা মহিলা চরিত্রে অভিনয় করলে পরবর্তীকালে ঠাকুরবাড়ির মহিলারা আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধবদের সম্মুখে মঞ্চাভিনয়ে এগিয়ে আসেন। পরবর্তীকালে তারা জনসমক্ষেও অভিনয় করেছেন।[১]
সেযুগে বাংলা ভাষায় অভিনয়োপযোগী নাটকের সংখ্যা কমই ছিল। এই কারণে গণেন্দ্রনাথ একটি নাট্যরচনা প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছিলেন। রামনারায়ণ তর্কালঙ্কার রচিত নবনাটক এই প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অধিকার করে। গণেন্দ্রনাথ নাট্যকারকে ২০০ টাকা পুরস্কার স্বরূপ দেন; যা সেযুগের হিসেব অনুযায়ী ছিল মহার্ঘ্য। এছাড়াও তিনি নাটকের এক হাজার কপি প্রকাশের খরচ বহনের প্রতিশ্রুতিও দেন।[৮][৯] অভিনয়ে অংশ নিয়েছিলেন অক্ষয় মজুমদার, সারদাপ্রসাদ গঙ্গোপাধ্যায়, জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রমুখ ব্যক্তিবর্গ।[১০]
বর্তমানে জোড়াসাঁকো কলকাতার শঙ্খশিল্পের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র।[১১] যদিও এই শিল্প সাম্প্রতিককালে নানা সমস্যায় দীর্ণ।[১২]
জোড়াসাঁকো বিধানসভা কেন্দ্র কলকাতা উত্তর লোকসভা কেন্দ্রের একটি অংশ। পূর্বে এটি কলকাতা উত্তর পশ্চিম লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত ছিল।[১৩] সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের দীনেশ বাজাজ এই বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক।[১৪] ২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের পর এই অঞ্চলের সাংসদ নির্বাচিত হয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসের সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়।
এর অন্তর্গত রয়েছে কলকাতা চক্ররেলের বড়বাজার স্টেশনটি।