জোয়াও এন্টোনিও সামারাঞ্চ | |
---|---|
![]() 1998 | |
আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির ৭ম সভাপতি | |
কাজের মেয়াদ ১৬ জুলাই, ১৯৮০ – ১৬ জুলাই, ২০০১ | |
পূর্বসূরী | মাইকেল মরিস |
উত্তরসূরী | জ্যাকুয়েস রগ |
ব্যক্তিগত বিবরণ | |
জন্ম | বার্সেলোনা, স্পেন | ১৭ জুলাই ১৯২০
মৃত্যু | ২১ এপ্রিল ২০১০ বার্সেলোনা, স্পেন | (বয়স ৮৯)
জাতীয়তা | স্পেনীশ |
দাম্পত্য সঙ্গী | মারিয়া তেরেসা স্যালিসাস রো (১৯৫৫–২০০০; আমৃত্যু) |
সন্তান | জোয়াও এন্টোনিও, মারিয়া তেরেসা |
বাসস্থান | বার্সেলোনা, স্পেন |
প্রাক্তন শিক্ষার্থী | আইইএসই |
পেশা | ক্রীড়া প্রশাসক কূটনীতিবিদ |
ধর্ম | রোমান ক্যাথলিক |
পুরস্কার | ![]() |
জোয়াও এন্টোনিও সামারাঞ্চ (কাতালানঃ Joan Antoni Samaranch i Torelló)[১] (জন্মঃ ১৭ জুলাই, ১৯২০ – মৃত্যুঃ ২১ এপ্রিল, ২০১০) ছিলেন কাতালান জনগোষ্ঠীর স্পেনিয়ার্ড বা স্পেনীয় ক্রীড়া প্রশাসক।
বার্সেলোনার এক ধনাঢ্য পরিবারে সামারাঞ্চের জন্ম। বার্সেলোনায় অবস্থিত স্থানীয় সুইস স্কুল এবং জার্মান স্কুলে পড়াশোনা করেন। শৈশবেই তিনি রোলার হকি (কোয়াড) খেলায় গভীরভাবে অনুরক্ত ছিলেন।[২] স্পেনের গৃহযুদ্ধ চলাকালে ১৮ বছর বয়সে তিনি ২য় স্পেনীশ প্রজাতন্ত্রের বাহিনীতে ১৯৩৮ সালে যোগদান করেন। সেখানে তিনি চিকিৎসকের ভৃত্য হিসেবে নিয়োগ পান।
কিন্তু তিনি রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গীতে প্রজাতন্ত্রের বিরুদ্ধে তার অবস্থান ব্যক্ত করেন ও ফ্রান্সে পলায়ন করতে বাধ্য হন। তবে অল্প কিছুদিন পরেই তিনি ফ্রান্সিসকো ফ্রাঙ্কো'র নিয়ন্ত্রণাধীন জাতীয়তাবাদী স্পেনে ফিরে আসেন এবং স্প্যানীয় ফ্যাশিস্ট আন্দোলন ফ্যাল্যাঞ্জে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।[৩]
১ ডিসেম্বর, ১৯৫৫ সালে মারিয়া তেরেসা স্যালিসাস রো নামীয় এক মহিলাকে তিনি বিয়ে করেন। তিনি সংক্ষেপে বিবি নামে পরিচিত ছিলেন। ২০০০ সালে সিডনীতে অনুষ্ঠিত গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকে সামারাঞ্চের অংশগ্রহণকালীন সময়ে তিনি স্পেনে মৃত্যুবরণ করেন। তাদের সংসারে দু'টি সন্তান রয়েছে। বড় সন্তান হিসেবে মেয়ে মারিয়া তেরেসা সামারাঞ্চ স্যালিসাস (জন্মঃ ১৯৫৬) ২০০৫ সালে স্পেনীশ ক্রীড়া সংস্থায় সভাপতি হিসেবে আসীন।[৩] ছোট একমাত্র ছেলে জোয়াও এন্টোনিও সামারাঞ্চ স্যালিসাস (জন্মঃ ১৯৫৯) ২০০১ সাল থেকে আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি'র সদস্য হিসেবে রয়েছে।
১৯৩৯ সালে স্পেনীশ প্রজাতন্ত্রের পতনের পর সামারাঞ্চ বাণিজ্য বিষয় নিয়ে বার্সেলোনাভিত্তিক আইইএসই বিজনেস স্কুলে পড়াশোনা করেন। স্বল্প সময়ের জন্য তিনি খেলাধূলাবিষয়ক সংবাদপত্র লা প্রেন্সাতে সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নেন। কিন্তু ১৯৪৩ সালে রিয়াল মাদ্রিদ সি. এফ. সমর্থকদের সমালোচনা করেন। দলটি এফসি বার্সেলোনার কাছে ১১-১ গোলে পরাজিত হয়েছিল। ফলে, তিনি চাকুরীচ্যুত হন। এরপর তিনি পারিবারিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হিসেবে টেক্সটাইলে যোগ দেন। ১৯৮৪ সালে স্পেনের সবচেয়ে বড় সঞ্চয়ী ব্যাংক লা কেইক্সায় পরিচালনা পরিষদে যোগ দেন। সেখানে তিনি ১৯৮৭ সাল থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত পরিচালনা পরিষদের সভাপতি হিসেবে আসীন ছিলেন। ১৯৯৯ সালে অবসরগ্রহণের পর আমৃত্যু সম্মানিত সভাপতি হিসেবে মর্যাদার অধিকারী হন।[৩]
সামারাঞ্চ ১৯৫৫ থেকে ১৯৬২ সাল পর্যন্ত বার্সেলোনার স্থানীয় সরকারের কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করেন। ক্রীড়া সংক্রান্ত বিষয়াদি দেখাশোনা করাই তার দায়িত্ব ছিল। ফ্রাঙ্কো শাসনামলে ১৯৬৪ থেকে ১৯৭৭ সাল অবধি তিনি কোর্টেস ইস্পানোলাসের (নিম্ন কক্ষ) প্রোকিউরেডর বা সদস্য ছিলেন। এছাড়াও বার্সেলোনা প্রদেশের পরিচালনা পরিষদের সভাপতি হিসেবে ১৯৭৩ থেকে ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত ক্রীড়ায় জাতীয় প্রতিনিধি (মন্ত্রী পর্যায়) মনোনীত হন।
কূটনৈতিক সম্পর্ক পুণঃস্থাপনের পরক্ষণেই স্পেনের রাষ্ট্রদূত হিসেবে তিনি ১৯৭৭ সালে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং মঙ্গোলিয়ায় দায়িত্ব পালন করেন। এ পদে থাকা অবস্থাতেই সোভিয়েত জোটভূক্ত দেশসমূহের সমর্থন লাভে সক্ষমতা অর্জন করেন। ফলশ্রুতিতে তিনি আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির সভাপতি হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ১৯৮০ সালে অনুষ্ঠিত আইওসি'র নির্বাচনে তিনি সভাপতি হিসেবে জয়যুক্ত হন।[৩]
স্পেনের জাতীয় অলিম্পিক দলে তিনি দলীয় প্রধান বা সেফ দ্য মিশন হিসেবে অংশ নেন। এরপরই তাকে ১৯৬৭ সালে স্পেনের রাষ্ট্রপ্রধান ফ্রান্সিস্কো ফ্রাঙ্কো ক্রীড়ায় সরকারি সচিব হিসেবে নিয়োগ দেন। এছাড়াও তিনি স্পেনের জাতীয় অলিম্পিক কমিটি-সহ আইওসি'র সদস্যরূপে মনোনীত হন। ১৯৭৪ থেকে ১৯৭৮ পর্যন্ত সময়কালে আইওসি'র তিনি সহ-সভাপতি ছিলেন।
আইওসি'র ৮৩তম অধিবেশনে সামারাঞ্চ সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হন। মস্কোয় অনুষ্ঠিত ১৯৮০ সালের গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক আসরের পূর্বে ১৫ - ১৮ জুলাই তিনি এ মর্যাদার অধিকারী হন।[৪]
সভাপতির দায়িত্ব পালনকালীন সময়ে তিনি অলিম্পিক গেমসের তহবিলকে সমৃদ্ধকরণে সচেষ্ট হন ও সফলতা লাভ করেন। বৃহৎ টেলিভিশন সম্প্রচার প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি ও সম্প্রচার সৌজন্য বিষয়ের মাধ্যমেই তার এ সফলতা। ১৯৮৪ সালে সোভিয়েত জোটভূক্ত দেশসমূহ গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক গেমস বয়কট করে। তারপরও সামারাঞ্চের আমলে আইওসি'র সদস্য রাষ্ট্রের অংশগ্রহণের সংখ্যা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেতে থাকে। সামারাঞ্চ আরও চেয়েছিলেন যে অলিম্পিক ক্রীড়ায় নির্বাচিত সেরা অ্যাথলেটগণ পেশাদারী অ্যাথলেটগণকে উদ্বুদ্ধ করবেন।
হৃদযন্ত্র ক্রিয়া বন্ধজনিত কারণে ২১ এপ্রিল, ২০১০ সালে বার্সেলোনায় অবস্থিত হসপিটাল কুইরানে তিনি মারা যান। দীর্ঘ কয়েক বছর যাবৎ সামারাঞ্চ স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছিলেন।[৫] উত্তরাঞ্চলীয় স্পেনের নিয়ন্ত্রাধীন কাতালোনিয়া সরকারের পক্ষ থেকে স্বর্ণপদক গ্রহণকারী সামারাঞ্চের শবদেহ পালাউ দ্য লা জেনারেলিটাট প্রাসাদে রাখা হয়। ২২ April, ২০১০ সালে সান্তা ইউল্যালিয়া ক্যাথেড্রালে শবযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। এতে স্পেনের রাজকীয় পরিবারসহ অলিম্পিক আন্দোলনে সম্পৃক্ত ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।[৫][৬][৭] পরবর্তীতে তাকে মন্তজুইক সিমেট্রিতে সমাহিত করা হয়।[৭]
মৃত্যু পরবর্তীকালে সামারাঞ্চের সম্মানে ২০০৭ সালে প্রতিষ্ঠিত কাতালানের ক্রীড়া যাদুঘরের নাম পরিবর্তন করে জুন, ২০১০ সালে অলিম্পিক এন্ড স্পোর্টস মিউজিয়াম জোয়াও এন্টোনি সামারাঞ্চ নাম রাখা হয়।[৮] এছাড়া, সারায়েভোয় তার নামকে স্মরণপূর্বক অলিম্পিক হল জেতরা'র নাম পরিবর্তন করা হয়।
পুরস্কার | ||
---|---|---|
পূর্বসূরী![]() |
প্রিন্স অব অস্তুরিয়াস এ্যাওয়ার্ড ফর স্পোর্টস ১৯৮৮ |
উত্তরসূরী![]() |
পৌর অফিস | ||
পূর্বসূরী![]() |
আইওসি সভাপতি ১৯৮০-২০০১ |
উত্তরসূরী![]() |
স্পেনীয় অভিজাত সম্প্রদায় | ||
নতুন পদবী | মার্কুইজ অব সামারাঞ্চ ১৯৯১–২০১০ |
উত্তরসূরী মারিয়া তেরেসা সামারাঞ্চ |