জ্ঞানেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় | |
---|---|
জন্ম | |
মৃত্যু | ১০ মে ১৯৮৩ কলকাতা, ভারত | (বয়স ৯০)
জাতীয়তা | ভারতীয় |
মাতৃশিক্ষায়তন | কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় |
পরিচিতির কারণ | বাউন্ডারী মেথড |
পুরস্কার | পদ্মভূষণ |
বৈজ্ঞানিক কর্মজীবন | |
ডক্টরেট শিক্ষার্থী | বরদানন্দ চট্টোপাধ্যায় |
জ্ঞানেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়, সিবিই,এফআরএসসি (২৩ এপ্রিল, ১৮৯৩ - ১০ মে, ১৯৮৩), রসায়ন বিজ্ঞানের কলয়েড বিভাগের আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ভারতীয় বাঙালি রসায়নবিদ।[১]
জ্ঞানেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের জন্ম ব্রিটিশ ভারতের অধুনা বাংলাদেশের রাজশাহী জেলার মহাদেবপুর গ্রামে। তার পিতা দুর্গাদাস মুখোপাধ্যায় ছিলেন বরিশালের রাজচন্দ্র কলেজের অধ্যক্ষ। মাতার নাম সরস্বতী দেবী। তিনি তাঁদের জ্যেষ্ঠ পুত্র ছিলেন। মাত্র বারো বছর বয়সে জ্ঞানেন্দ্রনাথের পিতার মৃত্যু হয়। ছোট ভাইয়ের সাথে তিনি একসাথে পড়াশোনা করেন।[২]
১৯০৯ খ্রিষ্টাব্দে জ্ঞানেন্দ্র নাথ বর্ধমানের মিউনিসিপাল হাই স্কুল থেকে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে জেলা বৃত্তি লাভ করেন। জ্ঞানেন্দ্র নাথ প্রেসিডেন্সি কলেজের ছাত্র ছিলেন (১৯০৯-১৯১৫)। ১৯১৩ খ্রিষ্টাব্দে বিএসসি এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজাবাজার বিজ্ঞান কলেজ -এ স্নাতকোত্তর পড়াশোনার পর ১৯১৫ খ্রিষ্টাব্দে এমএসসি ডিগ্রী অর্জন করেন। তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেমচাঁদ-রায়চাঁদ বৃত্তি পেয়েছিলেন। এমএসসি ছাত্রবস্থায় লিখিত তার প্রথম কোলাইড সংক্রান্ত গবেষণাপত্রটি আমেরিকান কেমিক্যাল সোসাইটির জার্নালে (১৯১৫,৩৯, ২৯২) প্রকাশিত হয়েছিল।[২]
অধ্যাপক মুখোপাধ্যায় কলয়েড নিয়ে প্রথম গবেষণার কাজটি স্বাধীনভাবে করেছিলেন, যখন তিনি প্রেসিডেন্সি কলেজের এমএসসি ছাত্র ছিলেন এবং তার এই গবেষণা ১৯১৫ খ্রিষ্টাব্দে আমেরিকান কেমিক্যাল সোসাইটির জার্নালে প্রকাশিত হয়েছিল। ১৯১৯ খ্রিষ্টাব্দে তিনি এবং জ্ঞান চন্দ্র ঘোষ অধ্যাপক এফজি ডনাননের অধীনে লন্ডনের ইউনিভার্সিটি কলেজের ভৌত রসায়ন পরীক্ষাগারে যোগ দেন। অধ্যাপক মুখোপাধ্যায় সেখানে কলয়েড নিয়ে গবেষণা চালিয়ে যান এবং তার প্রধান কাজটি ছিল বৈদ্যুতিন ডাবল স্তর এবং এর আয়নিক গঠন তত্ত্বটির সত্যতা প্রকাশ করা। জে এন মুখোপাধ্যায়ের তড়িৎরসায়ন বিদ্যায় কোলয়েড সংক্রান্ত কাজ অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে বিবেচিত হয়। কোলয়েড কণার ক্যাটাফোরেটিক গতি নির্ধারণের জন্য তিনি যে বাউন্ডারী মেথড বা সীমানা পদ্ধতিটি স্থির করেছিলেন সেজন্যও তিনি সুপরিচিত।[২]
ডাঃ মুখার্জি মৃত্তিকার কোলয়েড অধ্যয়নের মাধ্যমে মাটির অনেক বৈশিষ্ট্য এবং সমস্যা সম্পর্কিত বিষয়ে আলোকপাত করতে সমর্থ হয়েছিলেন। বছরের পর বছর ধরে গবেষণায় লিপ্ত থেকে তিনি যে সমস্ত সরঞ্জাম ও পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছিলেন সেগুলি মৃত্তিকা গবেষণায় ব্যবহা্রের কাজে এসেছে।[২] ১৯৪২ সালে, এনসি সেন গুপ্তের সাথে, মিলিত ভাবে তিনি অসাধারণ সান্দ্র গুণ বা বৈশিষ্ট্য নির্ণয়ের জন্য সাধারণ ঘূর্ণমান ভিস্কোমিটার তৈরি করেন। ১৯৪৪ সালে, তিনি ক্রোমাটোগ্রাফি কৈশিক বিশ্লেষণ এবং আল্ট্রা ভায়োলেট আলোকের ফ্লুরোসেন্সের উপর ভিত্তি করে অপরিশোধিত তেলের গুণাগুণ স্থির করার পদ্ধতিটি তৈরি করেন।[৩]
মৃত্তিকা বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে অগ্রণী অবদানের পাশাপাশি ড। মুখার্জি দেশে কৃষি গবেষণা ও শিক্ষার উন্নয়নে গুরুত্বপূরণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। ১৯৪৫ সালে ভারতের কৃষি সংক্রান্ত মূল গবেষণা কেন্দ্র (বর্তমানে ভারতীয় কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, নয়াদিল্লি) এর অধিকর্তা নিযুক্ত হওয়ার পরপর ড। মুখার্জি সারা দেশে ইনস্টিটিউটের গবেষণা ও শিক্ষামূলক কার্যক্রমের পুনর্গঠন শুরু করেন। তার নির্দেশনায় ইনস্টিটিউট এর একাডেমিক কার্যক্রম এবং বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও কাজকর্মের ক্ষেত্র যথেষ্ট প্রসারিত হয়েছিল। তিনি মৃত্তিকা-উদ্ভিদ অধ্যয়নের ক্ষেত্রে গবেষণা শুরু করেছিলেন। মৃত্তিকা বিজ্ঞান ও কৃষি রসায়ন বিভাগে তিনি যে কয়েকটি বিভাগ তৈরি করেছিলেন সেগুলির হ'ল - মৃত্তিকা সমীক্ষা,্মৃত্তিকা পদার্থবিজ্ঞান, কৃষি রসায়ন, মাটির উর্বরতা, মাটি মাইক্রোবায়োলজি, জৈব রসায়ন, জৈব রসায়ন এবং স্পেকট্রোস্কোপি। মাটি জরিপ, মাইক্রোবায়োলজি, জৈব রসায়ন, কৃষি রাসায়নিক, কৃষি পদার্থবিজ্ঞানের মতো কয়েকটি বিভাগের সাম্প্রতিক সম্প্রসারণ তার কাছে জমা হয়েছিল। মৃত্তিকা এবং উদ্ভিদে ক্ষুদ্র উপাদানসমূহের জন্য এবং অত্যাধুনিক যন্ত্রের সাহায্যে এবং আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে মাটির মৃত্তিকা খনিজবিজ্ঞানের উপর নিয়মিত পদ্ধতিগত গবেষণা শুরু করার কৃতিত্ব তারই। তিনি ইনস্টিটিউটে খাবার, ফিড এবং চারণের পুষ্টিকর মূল্য, কীটনাশক এবং ছত্রাকনাশক এবং উদ্ভিদের পণ্যগুলির রসায়নের বিষয়ে ইনস্টিটিউটে কাজ শুরু করেছিলেন। তিনিই দেশের প্রথম ব্যক্তি যিনি কৃষির বিকাশের জন্য মাটি জরিপের গুরুত্বের উপর অত্যন্ত জোর দিয়েছিলেন এবং ভারতের মাটির জরিপ, শ্রেণিবদ্ধকরণ এবং নামকরণের পদ্ধতির উপর গুরুত্ব তুলে ধরেছিলেন। তার পরামর্শে ভারত সরকারের কৃষি মন্ত্রণালয়, মৃত্তিকা বিজ্ঞান সংক্রান্ত কমিটি গঠন করে এবং ১৯৪৯ সালে তিনিই হন ওই কমিটির চেয়ারম্যান। কমিটির শর্তাবলী এবং উদ্দেশ্যগুলি ১৯৫৬ সালে প্রতিষ্ঠিত নিখিল ভারত মাটি ও ভূমি ব্যবহার জরিপ সংস্থার ৪ টি আঞ্চলিক কেন্দ্রের লক্ষ্যগুলির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল। ভারতের মাটির মানচিত্রটি তার প্রদর্শিত (স্কেল ১"- ৭০ মাইল) হিসাবে ১৯৫৪ সালে ২০ টি শ্রেণীতে সংশোধিত আকারে প্রকাশিত হয়েছিল। তিনি ভারতের মাটির শ্রেণিবিন্যাসে মৌলিক মৃত্তিকার অনুরূপ বৈশিষ্ট্য যেমন, জলবায়ু, টোগোগ্রাফি, উদ্ভিদ ইত্যাদির উপর ভিত্তি করে মৌলিক ধারনাটি তৈরি করেছিলেন।[২]
অধ্যাপক মুখার্জি ভারতীয় কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট,(আইএআরআই) কে একটি নিয়মিত বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। ১৯৫৮ সালে,কৃষি গবেষণা ও শিক্ষা বিষয়ক ইন্দো-আমেরিকান টিমের সুপারিশ এবং রকফেলার ফাউন্ডেশনের উদার সহায়তায়, স্নাতকোত্তর স্তরের স্কুল ভারত সরকারের এই ইনস্টিটিউটে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এখন ইনস্টিটিউটটি ১৯৫৬ সালের বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন আইন মোতাবেক বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা লাভ করেছে।[২]
অধ্যাপক মুখার্জী তার উজ্জ্বাল কর্মজীবনে বেশ গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। যেমন -