রোমান ক্যাথলিক বিশ্বাস অনুযায়ী "জ্ঞানের আসন" বা "জ্ঞানের সিংহাসন" (লাতিন: sedes sapientiae, ইংরেজি: Seat of Wisdom) যিশুর মাতা মেরির প্রতি ভক্তিমূলক আখ্যাগুলোর অন্যতম। এটি মেরির পবিত্র পুত্র জন্মের আধার হওয়াকে নির্দেশ করে। "জ্ঞানের আসন"-এর প্রতিকৃতি ও ভাস্কর্যগুলোতে বালক যিশুকে কোলে নিয়ে সিংহাসনে উপবিষ্ট মেরির প্রতিকায়ন করা হয়। রোমান ক্যাথলিক গির্জাসমূহ জুন মাসের ৮ তারিখ মেরির জ্ঞানের আসন পর্বদিবস হিসেবে পালন করে।
প্রোটেস্টেন্ট সংস্কৃতিতেও একই নাম ও চিত্রসংবলিত প্রতিকৃতি পাওয়া যায়। ২০১৪ সালে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্টন কলেজ চ্যাপেলে "আওয়ার লেডি, সিট অব উইজডম" নামের একটি মূর্তির অনুমোদন দেয়।[১]
এই প্রকারের ম্যাডোনার প্রতীক বাইজেন্টাইন আদি অ্যাকাথিস্ট স্তুতিতে উল্লিখিত বিশেষণমূলক Chora tou Achoretou ("অধৃতসম্ভবদের ধারক") থেকে উৎসরিত,[২] যা ১১শ শতকের প্রথমার্ধের পূর্ব গ্রিক সভ্যতায়ও পাওয়া যায়, যখন জার্মানিতে মাথিলডির ক্রুশের জন্য বাইজেন্টাইনদের থেকে উদ্বুদ্ধ হয়ে এনামেল তৈরি হতে থাকে। তখন থেকে এ ধরনের ভাস্কর্য, এবং পরবর্তীতে ১২০০ সালের দিকে পশ্চিম ইউরোপে চিত্রকর্ম ব্যাপকভাবে তৈরি হতে থাকে। এই সমস্ত শিল্পকর্মগুলোর সিংহাসনের গাঠনিক উপাদানে, তা শুধু হাতল বা সামনের পায়ার জন্য হলেও, ব্যাপক মিল খুঁজে পাওয়া যায়। রাজসিক উপস্থাপনার জন্য মেরির পা দুইটিকে প্রায়ই নিচু টুলের ওপর স্থাপন করতে দেখা যায়। পরবর্তীতে গথিক ভাস্কর্যশৈলীতে এইরূপ প্রতিকৃতির মেরির সিংহাসনের সাথে সলোমনের সিংহাসনের ব্যাপক মিল খুঁজে পাওয়া যায়, যেখানে:
প্রতি হাতলে একটি করে দুইটি সিংহ থাকে। এবং একদিকের (ছয়টি পায়া) এবং অন্যদিকের ছয়টি করে পায়ায় বারোটি সিংহ থাকে।
জ্ঞানের আসন বা Sedes sapientiae ইলুমিনেটেড পান্ডুলিপি, রোমান সভ্যতার বিভিন্ন ফ্রেসকো ও মোজাইক, এমনকি সিলমোহরেও পাওয়া যায়। এছাড়া দামিয়ানি বা গিলবার্ট দে নোজেন্ট রাজাদের বইয়ে সাংকেতিক ব্যাখ্যায় মেরির জ্ঞানের আসনকে সলোমনের সিংহাসনের (১ কিংস ১০: ১৮-২০, এবং ২ ক্রনিকলস ৯: ১৭-১৯ এ পুনরাবৃত্ত) প্রতীকায়ন বলে মত দেন। এই মতবাদ আদি নেদারল্যান্ডীয় চিত্রকলায় (যেমন: জন ভন আইকের লুকা ম্যাডোনা) ব্যাপক প্রতিফলিত হয়।
আধুনিক যুগে, sedes sapientiae বা জ্ঞানের আসন লুভেন ক্যাথলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মূলমন্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এখানে বিশ্ববিদ্যালয়টি নিজেই নিম্নদেশের একটি প্রধান শিক্ষাঙ্গন ছিল। ঢাকার নটর ডেম কলেজে ১৯৯৯ সালে মাতা মেরির কোলাজচিত্র বসানো হয়, যার শিল্পী মির্জা রবিউল আলম খোকন। এতে মাতা মেরির জ্ঞানের আসনকে প্রতীকায়িত করা হয়।[৩] ২০০০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে পোপ দ্বিতীয় জন পল স্লোভেনীয় জেস্যু শিল্পী মার্কো ইভান রুপনিককে বিশ্বের সব ক্যাথলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য মেরির জ্ঞানের আসন মোজাইক তৈরি করতে বলেন। তখন থেকেই বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশে ক্যাথলিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে এই রেওয়াজ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে।
উইকিমিডিয়া কমন্সে জ্ঞানের আসন সম্পর্কিত মিডিয়া দেখুন।