![]() জ্বীন, তাদের বৈশিষ্ট্যযুক্ত খুর দ্বারা স্বীকৃত, নায়ক ফারামারজের সাথে যুদ্ধ করতে জড়ো হয় । ইরানী মহাকাব্য শাহনামেহ- এর একটি আলোকিত পাণ্ডুলিপিতে চিত্রণ | |
দল | কাল্পনিক জীব |
---|
জ্বীন জাতি (বিকল্প বানান জিন) হলো ইসলাম ধর্মের মূল গ্রন্থ কুরআনে বর্ণিত একটি জীব/ সৃষ্টি। প্রাক ইসলামী যুগেও জ্বীন জাতি সংক্রান্ত বিশ্বাস আরবসহ বিশ্বের বিভিন্ন জাতির মাঝে প্রচলিত ছিল। আরবি জ্বীন শব্দের আক্ষরিক অর্থ হল যা গুপ্ত, অদৃশ্য, অন্তরালে বসবাসকারী অথবা অনেক দূরবর্তী। [২] বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব এবং আধুনিক জ্ঞান অনুসারে, অ্যান্টিম্যাটার বা ডার্ক ম্যাটারের সাথে জ্বীনদের সৃষ্টির ধারণা তুলনা করা যেতে পারে। [৩] বিভিন্ন সমাজে কিছু কিছু মানুষ কর্তৃক জ্বীন বশ করা বা জ্বীনের সঙ্গে যোগাযোগের বিষয়টি প্রচলিত আছে। ইসলামি বিশ্বাস মতে, জীনের অস্তিত্ব কুরআন দ্বারা প্রমাণিত।[৪][৫]
জাতির পিতা আবু বীন সাম্মুম ৭ টি ফেরেস্তা জন্ম দেন। ওসিরিস জাফার, জীব্রাইল,মিকাইল, ইস্রাফিল,আজ্রাইল, ইসিস এবং ইফ্রিত। এদের মধ্যে মহা শক্তিশালি জীন হলেন জাফরে জীন ওসিরিস। তিনি এতটাই ক্ষমতাবান যে আগুন কে পানি এবং পানি কে কাঠে পরিনত করতে পারেন। এমনকি ফেরেস্তাকূলে তাকে সব থেকে সম্মান করা হয়। তিনি যখন ইচ্ছা জান্নাত জাহান্নাম বা আরশে আজিম এ প্রবেশ করতে পারেন। তিনি যে স্থানে থাকেন তার আশেপাশে ইবলিস বা অন্য কোন জীন আসে না তিনি হযরত আলী (রা) এর দেহরক্ষী ছিলেন। যতবার হায়দার আলী জন্ম নিবেন ততবারই তিনি হেফাজতে থাকবেন। জাতি একটি রহস্যময় সত্তা, যার উল্লেখ ইসলামিক ধর্মগ্রন্থ কুরআন ও হাদিসে পাওয়া যায়। মুসলিম ধর্মবিশ্বাস অনুসারে, জ্বীন এমন এক জাতি যারা আগুন থেকে সৃষ্টি এবং মানুষ ও ফেরেশতাদের থেকে পৃথক। বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব এবং আধুনিক জ্ঞান অনুসারে, অ্যান্টিম্যাটার বা ডার্ক ম্যাটারের সাথে জ্বীনদের সৃষ্টির ধারণা তুলনা করা যেতে পারে।[৬][৭]
ইসলামে জ্বীনকে এমন এক সৃষ্টি হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে যা মানুষ ও ফেরেশতাদের মতো নয়। কুরআনে বলা হয়েছে,
“এবং আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি মাটি থেকে এবং জ্বীনকে সৃষ্টি করেছি আগুনের বিষাক্ত শিখা থেকে।”
[৮][৯]জ্বীন জাতি আধ্যাত্মিক এবং অতিপ্রাকৃত ক্ষমতার অধিকারী। তারা মানুষের মতো স্বাধীন ইচ্ছা ও ক্ষমতা রাখে।
বিজ্ঞান অনুসারে, মহাবিশ্বে সাধারণ পদার্থের বাইরেও ডার্ক ম্যাটার ও অ্যান্টিম্যাটারের অস্তিত্ব রয়েছে। স্টিফেন হকিং এবং অন্যান্য বিজ্ঞানীদের তত্ত্ব অনুসারে, মহাবিশ্বের ৭৩% ডার্ক এনার্জি, ২৩% ডার্ক ম্যাটার এবং মাত্র ৪% সাধারণ পদার্থ নিয়ে গঠিত। অ্যান্টিম্যাটার এবং ডার্ক ম্যাটারের গঠন ও বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, এগুলি এমন এক রহস্যময় উপাদান যা দৃশ্যমান হয় না, কিন্তু শক্তিশালী মাধ্যাকর্ষণ তৈরি করতে সক্ষম।[১০]
কুরআনের আলোকে জ্বীন জাতিকে "সামুম আগুন" বা বিষাক্ত আগুন থেকে তৈরি বলা হয়েছে, যা অ্যান্টিম্যাটারের বৈশিষ্ট্যের সাথে তুলনীয় হতে পারে।[১১]
জ্বীনদের অদৃশ্যতা কুরআনে স্পষ্টভাবে উল্লেখিত। বিজ্ঞান অনুযায়ী, অ্যান্টিম্যাটারের কণা আমাদের দৃষ্টিগোচর হতে পারে না কারণ এগুলো সাধারণ আলো শোষণ বা প্রতিফলন করে না।[১২]
ধর্মীয় বিশ্বাস অনুসারে, জ্বীনদের জীবনকাল হাজার বছরেরও বেশি হতে পারে। এটি তাদের পদার্থবিরোধী প্রকৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।[১৩]
জ্বীনদের গতিশীলতা এবং দ্রুত চলাচলের ক্ষমতা তাদের ধর্মীয় বর্ণনার পাশাপাশি আধুনিক বিজ্ঞান দ্বারা আংশিকভাবে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে। অ্যান্টিম্যাটার বা ডার্ক ম্যাটারের কণাগুলি উচ্চ শক্তি ধারণ করতে পারে।[১৪]
ধর্ম এবং বিজ্ঞানকে একসঙ্গে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, জ্বীন জাতি এমন একটি রহস্যময় সত্তা যা এখনো পুরোপুরি ব্যাখ্যা করা সম্ভব হয়নি।[১৫]
ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে জ্বীনদের অস্তিত্ব আল্লাহর সৃষ্টির রহস্যের একটি অংশ। অন্যদিকে, বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব অনুযায়ী অ্যান্টিম্যাটার বা ডার্ক ম্যাটার হতে পারে এমন কিছু যা দৃশ্যমান নয় কিন্তু প্রভাব ফেলে।[১৬]
ইসলাম ধর্ম আবির্ভাবের অন্তত কয়েক শত বছর পূর্বে প্রাচীন আরবে জ্বীনের কিংবা সেরূপ কোন চরিত্রের আরাধনা প্রচলিত ছিল বলে নৃতত্ত্ববিদেরা প্রমাণ পেয়েছেন। পালমাইরার নিকট বেথ ফাসি'এল থেকে প্রাপ্ত আরামিক লিপিতে "জিনায়ে" কে "ভাল এবং ফলপ্রসূ ঈশ্বর" হিসেবে সম্মান জানানো হয়েছে।[১৭][১৮] এই ব্যাপারে তর্ক আছে যে, "জিনায়ে" শব্দটির থেকে আরবি জ্বীন শব্দের উৎপত্তি।[১৯] কুরআন এবং ইসলাম ও প্রাক-ইসলাম যুগের সাহিত্যে অনেক সংখ্যকবার জ্বীনের উল্লেখ ইঙ্গিত দেয় যে জ্বীনের অস্তিত্বে বিশ্বাস প্রাক-ইসলামিক বেদুইন ধর্মে বেশ প্রভাবশালী ছিল।[২০] জ্বীন শব্দটি যে আরামিক থেকে আগত তা প্যাগান ঈশ্বরদের "ডিমন (Demon)" হিসেবে আখ্যা দেয়ার মাধ্যমে সে ব্যাপারে কিছুটা প্রমাণ পাওয়া গেছে। যা পরবর্তীতে আরবীয় লোকগাঁথায় প্রাক-ইসলামিক যুগে প্রবেশ করে।[২০] জুলিয়াস ওয়েলহসেন পর্যবেক্ষণ করেন যে এই ধরনের আত্মারা জনশূন্য, অন্ধকার ও নোংরা পরিবেশে বিরাজ করে যেখানে সচরাচর এদের জন্য ভয় পাওয়া হয়।[২০] প্রচলিত মতে, মানুষকে এদের হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করে চলতে হয় যদিও এদের বাস্তব অস্তিত্ব প্রশ্নস্বাপেক্ষ।[২০]
ইসলাম পূর্ব আরব উপকথা গুলোতে জ্বীন সদৃশ সত্ত্বার উল্লেখ আছে। প্রাচীন সেমাইট জাতির জনগণ জ্বীন নামক সত্ত্বায় বিশ্বাস করতো। তাদের মতানুসারে নানাপ্রকারের জ্বীন পরিলক্ষিত হয়। যেমন, গুল (দুষ্ট প্রকৃতির জ্বীন যারা মূলত কবরস্থানের সাথে সম্পর্কিত এবং এরা যেকোন আকৃতি ধারণ করতে পারে), সিলা (যারা আকৃতি পরিবর্তন করতে পারতো) এবং ইফরিত (এরা খারাপ আত্মা)। এছাড়া মারিদ নামক এক প্রকার জ্বীন আছে যারা জ্বীনদের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী। প্রাচীন আরবদের মতে জ্বীনরা আগুনের তৈরি। (বিস্তারিত দেখুন ইউটিউবে জিনের প্রজাতি[২১]
কুরআন অনুসারে জ্বীন জাতি মানুষের ন্যায় আল্লাহ সৃষ্ট অপর আরেকটি জাতি, যারা পৃথিবীতে মানব আগমনের পূর্ব থেকেই ছিল এবং এখনো তাদের অস্তিত্ব রয়েছে। সাধারণত মানুষের চোখে তারা দৃষ্টিগ্রাহ্য নয়। কিন্তু, জ্বীনরা মানুষদেরকে দেখতে পায়। তাদের মধ্যেও মুসলিম এবং কাফির ভেদ রয়েছে। কুরআনে এসেছে,
“আমাদের মাঝে আছে মুসলমান এবং আছে কঠর আত্মার কাফির।[২২]
ইসলামী বিশ্বাস অনুসারে, মুহাম্মদ জ্বীন ও মানব উভয়জাতির নবী হিসেবে প্রেরিত হয়েছেন। সুলায়মান আঃ এর সেনাদলে জ্বীনদের অংশগ্রহণ ছিল বলে কুরআনে উল্লেখ আছে। আরো বলা হয় "ইবলিশ" তথা শয়তান প্রকৃতপক্ষে জ্বীন জাতির একজন ছিল।
কুরআনে জ্বীন সংক্রান্ত একটি পূর্ণাঙ্গ সূরা নাযিল করা হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন সূরাহতে অনেক আয়াত রয়েছে। যেমনঃ
"যখন আমি একদল জ্বীনকে আপনার (অর্থাৎ মুহাম্মাদ এর) প্রতি আকৃষ্ট করেছিলাম, তারা কোরআন পাঠ শুনছিল। তারা যখন কোরআন পাঠের জায়গায় উপস্থিত হল, তখন পরস্পর বলল, চুপ থাক। অতঃপর যখন পাঠ সমাপ্ত হল, তখন তারা তাদের সম্প্রদায়ের কাছে (জ্বীন সম্প্রদায়) সতর্ককারীরূপে ফিরে গেল।” (সূরা আল-আহক্বাফ, ২৯)
"হে জ্বীন ও মানব সম্প্রদায়, তোমাদের কাছে কি তোমাদের মধ্য থেকে নবীগণ আগমন করেনি? যাঁরা তোমাদেরকে আমার বিধানাবলী বর্ণনা করতেন এবং তোমাদেরকে আজকের এ দিনের সাক্ষাতের ভীতি প্রদর্শন করতেন? তারা বলবে, আমরা আমাদের গোনাহ স্বীকার করে নিলাম। পার্থিব জীবন তাদেরকে প্রতারিত করেছে। তারা নিজেদের বিরুদ্ধে স্বীকার করে নিয়েছে যে, তারা কাফের ছিল।” (সূরা আল-আনআ’ম, ১৩০)
“আমি জ্বীন ও মানুষকে কেবলমাত্র আমার ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছি” (সূরা আয্-যারিয়াত, ৫৬)
”হে জ্বীন ও মানবকূল, নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের প্রান্ত অতিক্রম করা যদি তোমাদের সাধ্যে কুলায়, তবে অতিক্রম কর। কিন্তু ছাড়পত্র ব্যতীত তোমরা তা অতিক্রম করতে পারবে না।” (সূরা আর-রহমান, ৩৩)
”বলুনঃ আমার প্রতি ওহী নাযিল করা হয়েছে যে, জ্বীনদের একটি দল কোরআন শ্রবণ করেছে, অতঃপর তারা বলেছেঃ আমরা বিস্ময়কর কোরআন শ্রবণ করেছি।” (সূরা জ্বীন, ১)
"আর এই যে মানুষের মধ্যের কিছু লোক জ্বীন জাতির কিছু লোকের আশ্রয় নিত, ফলে ওরা তাদের পাপাচার বাড়িয়ে দিত।” (সূরা জ্বীন, ৬)
কুরআন এবং হাদীস অনুসারে জ্বীনদের তৈরি করা হয়েছে ধোঁয়াবিহীন আগুন (আরবি শব্দ- 'নার') হতে। কুরআনে বলা হয়েছে,
“আর তিনি জ্বীনকে সৃষ্টি করেছেন আগুনের শিখা দিয়ে।” (সূরা আর-রহমান, ১৫)
আরেকটি আয়াতে বলা হয়েছে,
“আর আমি এর আগে জ্বীন সৃষ্টি করেছি প্রখর আগুন দিয়ে।” (সূরা আল-হিজর, ২৭)
জ্বীনের গঠন সম্পর্কে হাদীসেও বলা হয়েছে। যেমনঃ
আয়েশা(রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল(সঃ) বলেছেন-
“ফেরেশতারা আলোর তৈরী, জ্বীনরা আগুনের স্ফুলিংগ থেকে তৈরী এবং আদমকে যেভাবে সৃষ্টি করা হয়েছে তার বর্ণনা (মাটি থেকে) পবিত্র কুরআনে রয়েছে।” (মুসলিম শরীফ ১৮/১২৩ – তাফসীর আন নববী)
জ্বীন জাতি মানুষের মত পুরুষ ও স্ত্রী জাতিতে বিভক্ত। একটি হাদিসে উল্লেখ করা হয়েছে-
“যে এই আয়াত (আয়াতুল কুরসী) পড়বে, আল্লাহ তা’আলা তার জন্য একজন প্রহরী নিযুক্ত করে দিবেন এবং কোন পুরুষ এবং নারী জ্বীন-শয়তান তার কাছে আসতে পারবে না।” (সহিহ বুখারী, ৫০১০)
গঠন অনুযায়ী জ্বীন তিন ধরনের হয়ে থাকে। এক হাদীসে বলা হয়েছে, সা’লাবা আল খাসানি থেকে বর্ণিত, রাসুল(সঃ) বলেছেন-
“তিন ধরনের জ্বীন আছে- এক প্রকারের জ্বীন পাখার মাধ্যমে বাতাসে ওড়ে, এক প্রকারের জ্বীন সাপ এবং মাকড়শার আকারে থাকে, শেষ প্রকারের জ্বীনরা সাধারনভাবে থাকে এবং চলাচল করে।” (আত তাবারানী, আল হাকিম ৩৭০২, বায়হাক্বী এবং সহীহ আল জামে’ ৩১১৪)
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ “নামাযের জন্য আযান দেওয়ার সময় শয়তান সশব্দে বায়ু ছাড়িতে ছাড়িতে পালায়, যেন সে আযানের শব্দ না শোনে। আযান শেষ হইলে সে আবার আসে। ইকামত আরম্ভ হইলে আবার পলায়ন করে। ইকামত বলা শেষ হইলে পূনরায় উপস্থিত হয় এবং ওয়াসওয়াসা ঢালিয়া নামাযী ব্যক্তি ও তাঁহার অভীষ্ট লক্ষ্যের মধ্যে প্রতিবন্ধকতা সৃস্টী করে। যে সকল বিষয় তাহার স্বরণ ছিল না সেই সবের প্রতি আকৃষ্ট করিয়া সে বলিতে থাকেঃ অমুক বিষয় স্বরণ কর, অমুক বিষয় স্বরণ কর। ফলে সেই ব্যাক্তি কত রাকাআত নামায পড়য়াছে এমনকি সেটাও ভুলিয়া যায় ।(বিঃদ্রঃ নামাযে ওয়াসওয়াস প্রদাওনকারী শয়তানের নাম হচ্ছে "খানজাব") [মুয়াত্তা মালিক :স্বলাত অধ্যায় ৩, হাদিস ১৫২] এ থেকে বাচার উপায়ঃ নামাযে কিরাত পড়া শুরু করার আগে “আ'উযু বিল্লাহিমিনাশ-শাইতানির রাযীম” পড়বেন। আ’উযুবিল্ললাহ শুধু প্রথম রাকাতেই পড়তে হয়, এর পরের রাকাতগুলোর শুরুতে পড়তে হয়না। এই দুয়া পড়ে শয়তান থেকে আশ্রয় চাওয়া হয়, কারণ নামাযে দাড়ালে খানজাব নামের শয়তান কুমন্ত্রনা দিয়ে নামাযকে নষ্ট বা ক্ষতি করতে চায়। নামাযের মাঝখানে সুরা-কেরাতে বা কত রাকাত, রুকু সেজদা নিয়ে শয়তান খুব বেশি ওয়াসওয়াসা দেয়/সন্দেহে ফেলে দেয় তাহলে কি করতে হবে? সালাতে ও কেরাতের মাঝে শয়তানের কুমন্ত্রণায় পতিত ব্যক্তি যেই দো‘আ করবেঃ “আ‘ঊযু বিল্লা-হি মিনাশ শাইত্বানির রাজীম” এই দুয়া বলে তারপর বাম দিকে তিনবার থুতু ফেলবে (থুতু ফেলার মতো করে নিঃশব্দে ফু দিবে, কিন্তু থুতু ফেলবেনা)। উসমান ইবনুল ‘আস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! শয়তান আমার ও আমার নামাযের মাঝে অনুপ্রবেশ করে এবং কিরাতে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে সেটা (উপরে যা বলা হয়েছে) বলার নির্দেশ দেন, তিনি সেটা করার পর আল্লাহ তাঁকে সেটা থেকে মুক্ত করেন। [মুসলিম ৪/১৭২৯, ২২০৩] [২৩]
কি করতে হবে? এই ওয়াসওয়াসায় যারা আক্রান্ত তারা মনোযোগের সাথে কোন পাত্রে নির্দিষ্ট পানি নিয়ে ওযু করবেন, টেপ ছেড়ে দিয়ে অমনোযোগী হলে শয়তান সহজেই ওয়াসওয়াসা দিবে। অবশ্যই আল্লাহর নাম ‘বিসমিল্লাহ’ বলে আস্তে ধীরে ওযু শুরু করবেন, অবশ্যই তাড়াহুড়া করবেন না। প্রতিটা অংগ মনোযোগের সাথে উত্তমরুপে ধৌত হচ্ছে কিনা সেই দিকে খেয়াল রাখবেন। আর কোন অংগ ধৌত করতে ভুলে গেলে নিশ্চিত হলে মেজাজ খারাপ না করে ঐ অংগ থেকে ধোয়া শুরু করবেন। আর ওয়াসওয়াসা পড়লে এই দুয়া পড়বেনঃ “আ’উযু বিল্লাহিমিনাশ-শাইতানির রাযীম” – এই দুয়া পড়ে শয়তান মনে কি ওয়াসওয়াসা দেয় সেইদিকে কোন লক্ষ্য করবেন না। যেই অংগ থেকে ভুল করেছেন সেখান থেকে ওযু সম্পূর্ণ করবেন। আস্তে আস্তে মনোযোগী হয়ে ওযু করার অভ্যাস গড়ে তুললে আস্তে আস্তে শয়তানের বিরুদ্ধে বিজয়ী হতে পারবেন ইনশা'আল্লাহ।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
আ'উযু বিল্লাহি মিনাশ-শাইতানির রাযীম “মৃত্যুযন্ত্রণা নিশ্চিতই আসবে। এ থেকেইতো তুমি টালবাহানা করতে। এবং শিঙ্গায় ফুঁৎকার দেয়া হবে এটা হবে ভয় প্রদর্শনের দিন। প্রত্যেক ব্যক্তি আগমন করবে। তার সাথে থাকবে চালক ও কর্মের সাক্ষী। তুমি তো এই দিন সম্পর্কে উদাসীন ছিলে। এখন তোমার কাছ থেকে যবনিকা সরিয়ে দিয়েছি। ফলে আজ তোমার দৃষ্টি সুতীক্ষ্ন। তার সঙ্গী ফেরেশতা বলবেঃ আমার কাছে যে, আমলনামা ছিল, তা এই। তোমরা উভয়েই নিক্ষেপ কর জাহান্নামে প্রত্যেক অকৃতজ্ঞ বিরুদ্ধবাদীকে, যে বাধা দিত মঙ্গলজনক কাজে, সীমালঙ্ঘনকারী, সন্দেহ পোষণকারীকে। যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে অন্য উপাস্য গ্রহণ করত, তাকে তোমরা কঠিন শাস্তিতে নিক্ষেপ কর। ‘ক্বারীন’ (তার সঙ্গী শয়তান) বলবেঃ হে আমাদের পালনকর্তা, আমি তাকে অবাধ্যতায় লিপ্ত করিনি। বস্তুতঃ সে নিজেই ছিল সুদূর পথভ্রান্তিতে লিপ্ত। আল্লাহ বলবেনঃ আমার সামনে বাকবিতন্ডা করো না, আমি তো পূর্বেই তোমাদেরকে আযাব দ্বারা ভয় প্রদর্শন করেছিলাম। আমার কাছে কথা রদবদল হয় না এবং আমি বান্দাদের প্রতি জুলুমকারী নই।
লোকবিশ্বাসে, হামজাদ জ্বীন মানুষের মন্দ কাজ ও নেতিবাচক চিন্তা করতে উৎসাহিত করে। এটি নাকি সবসময় মানুষের কাছাকাছি থাকে, কিন্তু সাধারণত চোখে দেখা যায় না। কিছু মানুষ বিশ্বাস করে, হামজাদ জ্বীনকে নিয়ন্ত্রণ করা বা তার সাহায্য পেলে বিশেষ ক্ষমতা অর্জন করা যায়। তবে এই ধরনের বিশ্বাসের ভিত্তি সাধারণত অলৌকিক বা অতিপ্রাকৃত কাহিনীতে নিহিত, যার বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই।
মানুষের বসবাসের স্থানে সাধারণত জ্বীন থাকে না। তারা মানুষের পরিত্যক্ত স্থানে থাকতে পছন্দ করে। তাদের অধিকাংশই মানুষের কাছ থেকে দুরে নির্জন এলাকায় বসবাস করে। তবে কিছু প্রজাতির জ্বীন মানুষের সাথে লোকালয়ে থাকে, যেমনঃ ক্বারীন জ্বীন। এক হাদিস থেকে জানা যায়, জ্বীনেরা নোংরা ও গন্ধময় জায়গায় থাকতে পছন্দ করে, যেখানে মানুষরা ময়লা এবং খাবারের উচ্ছিষ্ট অংশ ফেলে রাখে। পায়খানা এবং প্রস্রাব করার জায়গাগুলোতে জ্বীনদের অবাধ বিচরণ। জায়েদ বিন আরকাম বর্ণিত হাদীস থেকে জানা যায়, রাসুল(সঃ) বলেছেন-
“এই জায়গাগুলোতে (পায়খানা এবং প্রস্রাব করার জায়গা) জ্বীন এবং শয়তানরা অবাধে বিচরণ করে। তোমাদের মধ্যে যেই এই স্থানগুলোতে যাবে, সে যেন বলে- ‘আমি আল্লাহর কাছে পুরুষ এবং মহিলা শয়তানের থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি’।” (আহমেদ ইবনে হাম্বল, ‘পবিত্রতা’ খন্ড, ৪/৩৬৯)
জ্বীনের খাবার সম্পর্কে বলা হয়েছে, তারা মানুষের ফেলে দেওয়া খাবার খায়। এছাড়া হাড়, গোবর ইত্যাদি খায়। হাদীসে বলা হয়েছে, আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত আছে, রাসুল(সঃ) বলেছেন-
“হাড় এবং গোবর জ্বীনদের খাবার। নসীবাঈন শহরের জ্বীনদের একটি দল আমার সাথে দেখা করতে আসে। কত বিনয়ী ছিল তাঁরা। তাঁরা আমার কাছে মানুষের খাবারের উচ্ছিষ্ট সম্পর্কে জানতে চায়। আমি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি যে তাঁরা এমন কোন হাড় কিংবা গোবর অতিক্রম করবে না যা তাঁদের জন্য খাবার না হয়ে যাবে।” (বুখারী, ৩৫৭১)
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ থেকে বর্ণিত আছে, রাসুল(সঃ) বলেছেন-
“জ্বীনদের একজন আমাকে একদিন ডাকলে আমি তাঁর সাথে যাই। সেখানে আরো জ্বীন ছিল এবং আমি তাদের জন্য পবিত্র কুরআন পাঠ করি। তারা তাদের খাবারের বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে আমি বলি- আল্লাহর নাম পড়ে খাওয়া হয়েছে এমন যে কোন হাড় তোমাদের সামনে এলে তা মাংসে পরিনত হয়ে যাবে। একইভাবে গোবর তোমাদের পশুদের খাবার হয়ে যাবে। তাই, ভারমুক্ত (টয়লেট করার পরে) হওয়ার পরে তোমাদের কেউ যাতে এই বস্তুগুলোকে (শুকনো হাড়, গোবর) দিয়ে নিজেকে পরিষ্কার না করে। কারণ তা হলো তোমাদের ভাইদের খাবার। (মুসলিম, ৪৫০)
জ্বীনরা মানুষের মত মুসলিম ও অমুসলিম (যেমন:- ইহুদি, খ্রিস্টান,নাসারা, হিন্দু, বৌদ্ধ ইত্যাদি)জাতিতে বিভক্ত।
মানুষ ছাড়াও অন্যান্য কিছু প্রাণী জ্বীনের উপস্থিতি সম্পর্কে জানতে পারে। হাদীসে বলা হয়েছে, আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত আছে, রাসুল(সঃ) বলেছেন-
“যখন তোমরা গাধার চিৎকার শুনতে পাও, তখন আল্লাহর কাছে শয়তানের থেকে আশ্রয় প্রার্থনা কর. কারণ শয়তানকে দেখতে পাবার কারণেই তারা চিৎকার করে।” (বুখারী, ৬/৩৫০. মুসলিম ১৭/৪৭)
জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ থেকে বর্ণিত আছে, রাসুল(সঃ) বলেছেন-
“যখন রাত নামে (সন্ধ্যার শুরুতে) তোমাদের সন্তানদের ঘরের বাইরে যেতে বারণ কর। কারণ শয়তান এই সময়ে বের হয়। এক ঘণ্টা পার হলে সন্তানদের যেতে দিও এবং আল্লাহর নাম নিয়ে ঘরের দরজাগুলো বন্ধ কর। কারণ শয়তান বন্ধ দরজা খুলতে পারে না। তারপর আল্লাহর নাম নিয়ে পানির পাত্রের মুখ বন্ধ কর। এরপরে আল্লাহর নাম নিয়ে খাবারের পাত্রগুলো ঢেকে রাখো। যদি ঢেকে রাখার কিছু না পাওয়া যায়, তবে অন্তত অন্য কিছু উপরে দিয়ে রাখো (কাঠ/বই ইত্যাদি)। এবং রাতে শোবার সময়ে কুপি বাতি নিভিয়ে শুতে যেও।” (বুখারী, ১০/৮৮. মুসলিম ১৩/১৮৫)
ইসলাম ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী জ্বীনেরা মানুষের আকার ধারণ করতে পারে এবং মানুষের মত কথা বলতে পারে। মানুষ ছাড়াও অন্যান্য প্রাণীর আকারও ধারণ করতে পারে বলে হাদীসে বলা হয়েছে।
আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত দীর্ঘ একটি হাদীসে এক দুষ্ট লোকের কথা উল্লেখ করা হয়েছে যে প্রতি রাতে যাকাতের মাল চুরি করতে আসতো। আবু হুরায়রা প্রতি রাতেই তাকে ধরে ফেলতেন। কিন্তু লোকটি বিভিন্ন অনুরোধ করে মাফ নিয়ে চলে যেত এবং পরের রাতে আবার চুরি করতে আসতো। পরপর তিন রাতে সেই মানুষটিকে ধরার পরে রাসুল(সঃ) কে ঘটনা অবহিত করলে তিনি আবু হুরায়রা কে জিজ্ঞেস করেন, “ওহে আবু হুরায়রা, তুমি কি জানো তুমি এই তিন রাতে কার সাথে কথা বলেছ? ওটা শয়তান ছিল।” (বুখারী, ৩২৭৫)
বদরের যুদ্ধের সময় ইবলিশ শয়তান মক্কার কুরাইশদের কাছে বানু কিনানাহর গোত্রসর্দার সূরাক্বা ইবনে যুশাম এর আকার ধরে গিয়ে তাদেরকে রাসুল(সঃ) এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার প্ররোচনা দিয়েছিল। (ইবনে কাসীর, আল বিদায়া ওয়াল নিহায়া, ৫/৬২)
আবু সাইদ খুদরী থেকে বর্ণিত, রাসুল(সঃ) বলেছেন-
“মদিনার কিছু সংখ্যক জ্বীন মুসলমান হয়েছে। এদেরকে (প্রাণী হিসেবে) যদি কেউ দেখো, তাহলে তিনবার সাবধান করবে। তারপরেও আবার এলে সেই প্রাণীকে হত্যা করবে।” (মুসলিম, ২২৩৬)
মানুষের ওপর জ্বীন ভর করাকে সাহর বলা হয়। এটি এমন একটি অবস্থা যখন মানুষের নিজের ওপর কোন নিয়ন্ত্রণ থাকে না। মানসিক ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায় এবং সাময়িক স্মৃতি বিভ্রম ঘটে। একে আসর করাও বলে। কুরআনে বলা হয়েছে,
“যারা সুদ খায়, তারা কিয়ামতে দন্ডায়মান হবে, যেভাবে দন্ডায়মান হয় ঐ ব্যক্তি, যাকে শয়তান আসর করে মোহাবিষ্ট করে দেয়।” (সূরা বাক্বারা, ২৭৫)
হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে- রাসুল(সঃ) বলেছেন,
“শয়তান আদম সন্তানের শরীরে প্রবাহিত হয়, যেমন রক্ত শরীরে প্রবাহিত।” (বুখারী, ৩৩/২৫১। মুসলিম, ২১৭৫)। ইমাম আহমদের ছেলে আব্দুল্লাহ থেকে বর্ণিত, “আমি আমার বাবা (ইমাম আহমাদ) কে বললাম- কিছু মানুষ মানুষের শরীরে জ্বীনের ভর করাকে বিশ্বাস করে না। তিনি বলেন- ও আমার সন্তান, তারা মিথ্যা বলছে। আসর করা অবস্থায় অসুস্থ লোকের মুখ দিয়ে জ্বীন কথাও বলতে পারে।” (মাজমু ফতোয়া- ইবনে তাইমিয়াহ ১৯/১২)
অন্য হাদিসে উল্লেখ করা হয়েছে, রাসুল(সঃ) একবার একটি অসুস্থ বালকের সাক্ষাত পেয়েছিলেন যার ওপর জ্বীনের ভর ছিল। রাসুল ছেলেটির দিকে ফিরে জোরে বলেন- “ও আল্লাহর শত্রু, বের হয়ে আসো। ও আল্লাহর শত্রু, বের হয়ে আসো। ছেলেটি দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠে।” (ইবনে মাজাহ, ৩৫৪৮। আহমদ ৪/১৭১, ১৭২)।
পুরাতন নিয়ম এ যে হিব্রু শব্দকে ইংরেজিতে সাধারণত “ফ্যামিলিয়ার স্পিরিট” ( Strong's Concordance|স্ট্রং]] #0178) বলা তা ভ্যান ডিকের আরবি অনুবাদে সমষ্টিবাচক বহুবচন হিসেবে কয়েক জায়গায় (الجان আল-জান) হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।[২৬]
|শিরোনাম=
at position 422 (সাহায্য)