ব্যক্তিগত তথ্য | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
পূর্ণ নাম | জন রিচার্ড ম্যাসন | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
জন্ম | ব্ল্যাকহিদ, কেন্ট, ইংল্যান্ড | ২৬ মার্চ ১৮৭৪|||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
মৃত্যু | ১৫ অক্টোবর ১৯৫৮ কুডেন বীচ, সাসেক্স, ইংল্যান্ড | (বয়স ৮৪)|||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
ব্যাটিংয়ের ধরন | ডানহাতি | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
বোলিংয়ের ধরন | ডানহাতি ফাস্ট-মিডিয়াম | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
ভূমিকা | অল-রাউন্ডার | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
সম্পর্ক | জেমস ম্যাসন (ভ্রাতা) চার্লস ম্যাসন (ভ্রাতা) | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
আন্তর্জাতিক তথ্য | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
জাতীয় দল |
| |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
টেস্ট অভিষেক (ক্যাপ ১০৯) | ১৩ ডিসেম্বর ১৮৯৭ বনাম অস্ট্রেলিয়া | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
শেষ টেস্ট | ২ মার্চ ১৮৯৮ বনাম অস্ট্রেলিয়া | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
ঘরোয়া দলের তথ্য | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
বছর | দল | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
১৮৯৩ – ১৯১৪ | কেন্ট | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
| ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
উৎস: ইএসপিএনক্রিকইনফো.কম, ৬ মার্চ ২০১৯ |
জন রিচার্ড ম্যাসন (ইংরেজি: Jack Mason; জন্ম: ২৬ মার্চ, ১৮৭৪ - মৃত্যু: ১৫ অক্টোবর, ১৯৫৮) কেন্টের ব্ল্যাকহিদ এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ও শৌখিন ইংরেজ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট তারকা ছিলেন। ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। ১৮৯৭ থেকে ১৮৯৮ সময়কালে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্যে ইংল্যান্ড দলের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করেছেন।
ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে কেন্ট দলের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। দলে তিনি মূলতঃ অল-রাউন্ডার হিসেবে খেলতেন। ডানহাতে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি ডানহাতে কার্যকরী ফাস্ট-মিডিয়াম বোলিংয়ে দক্ষতা প্রদর্শন করেছেন জ্যাক ম্যাসন।
তৎকালীন কেন্টের অংশ হিসেবে লন্ডনের ব্ল্যাকহিদ এলাকায় জ্যাক ম্যাসনের জন্ম। সাত ভাই ও তিন বোনের অন্যতম ছিলেন তিনি।[১] জেমস ম্যাসন ও চার্লস ম্যাসন নামীয় তার দুই ভাই কয়েকটি প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট খেলায় অংশ নিয়েছিলেন। অন্য তিন ভাইও ক্রিকেটপ্রেমী ছিলেন। তারা সকলেই বেকেনহাম ক্রিকেট ক্লাবের পক্ষে খেলেছেন।[২]
তার পিতা রিচার্ড প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে মর্যাদা লাভের পূর্বে ওরচেস্টারশায়ারের প্রতিনিধিত্ব করেছেন ও আইনজীবী হিসেবে কাজ করতেন।[১][৩] তার মাতা অ্যান জন ঈগলটনের কন্যা ছিলেন।[৪]
জ্যাক ম্যাসন বেকেনহামের অ্যাবি স্কুলে অধ্যয়ন করেন। এরপর উইনচেস্টার কলেজে ভর্তি হন। সেখানে তিনি নিয়মিত ব্যাটসম্যানের মর্যাদা পান। শেষ দুই বছরে যথাক্রমে ৪৮ ও ৫৫ গড়ে রান তুলেছিলেন তিনি।[২][৩][৫] তন্মধ্যে, ১৮৯২ সালে এটন কলেজের বিপক্ষে অনুষ্ঠিত খেলায় ১৪৭ ও ৭১ রানসহ আট উইকেট পেয়েছিলেন। এর স্বীকৃতিস্বরূপ উইজডেনে তার উচ্ছসিত প্রশংসা করা হয়। ১৮৯৮ সালে উইজডেন কর্তৃক অন্যতম বর্ষসেরা ক্রিকেটারের সম্মাননায় ভূষিত হন। এতে বলা হয় যে, সন্দেহাতীতভাবে এ সময়কালে উইনচেস্টার কলেজের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান তিনি।[২]
১৮৯৩ থেকে ১৯১৪ সাল পর্যন্ত সুদীর্ঘ ২১ বছর কেন্টের পক্ষে খেলেছেন। তন্মধ্যে, ১৮৯৮ থেকে ১৯০২ সাল পর্যন্ত ক্লাব দলটির অধিনায়কের দায়িত্বে ছিলেন তিনি।
১৮৯৩ সালে বিদ্যালয় জীবন ত্যাগ করার পর শৌখিন খেলোয়াড় হিসেবে কেন্টের পক্ষে খেলতে নামেন। জুলাই, ১৮৯৩ সালে বেকেনহামের ফক্সগ্রোভ রোডে সাসেক্সের বিপক্ষে কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশীপের খেলায় অভিষেক ঘটে তার।[২][৬] দ্বিতীয় মৌসুমে দ্যুতিহীন খেলা উপহার দিলেও পরবর্তীকালে কাউন্টি দলটির পক্ষে সাহসী ভূমিকায় অবতীর্ণ হন ও জমকালো অল-রাউন্ড খেলায় অংশ নিতেন।[৭] ১৮৯৪ থেকে ১৯০২ সময়কালে কেন্টের পক্ষে নিয়মিতভাবে খেলায় অংশ নিতেন। ১৮৯৫ সাল থেকে প্রত্যেক মৌসুমেই সহস্রাধিক রান সংগ্রহ করতে সচেষ্ট হন।[৮]
১৮৯৮ সালে ফ্রাঙ্ক মার্চেন্টের পরিবর্তে কেন্টের অধিনায়কের দায়িত্বভার লাভ করেন। পরবর্তী পাঁচ বছর এ দায়িত্বে থাকেন। তবে, ওকালতি পেশাকে প্রাধান্য দেয়ার ফলে অধিনায়কের দায়িত্ব ছেড়ে দিতে বাধ্য হন।[৭][৯] তাসত্ত্বেও, ১৯০৯ সালে কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশীপের শিরোপা জয়ের শেষ মাসটিতে দলকে নিয়ে মাঠে নেমেছিলেন জ্যাক ম্যাসন।[১০]
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পূর্ব-পর্যন্ত চারবার কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশীপের শিরোপা বিজয়ী দলের অন্যতম খেলোয়াড়ে হিসেবে ব্যাপক ভূমিকা রাখেন। ১৯১৪ সালে কাউন্টি দলের পক্ষে সর্বশেষবারের মতো খেলায় অংশ নেন।[৬] যুদ্ধের পর একটিমাত্র প্রথম-শ্রেণীর খেলায় অংশ নিয়েছিলেন তিনি। ১৯১৯ সালে নরফোকের ওল্ড বাকেনহাম হিলে এলজি রবিনসন একাদশের সদস্যরূপে সফরকারী অস্ট্রেলিয়া ইম্পেরিয়াল ফোর্স ট্যুরিং একাদশের বিপক্ষে খেলেন। কেন্টের পক্ষে সর্বমোট ৩০০ খেলায় অংশ নিয়ে পনেরো হাজারের অধিক রান সংগ্রহের পাশাপাশি ৭৬৯ উইকেট দখল করেন।[১১][১২]
ব্ল্যাকহিদে সমারসেটের বিপক্ষে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ১৮৩ রান তুলেন। অন্যদিকে, ১৮৯৯ সালে নটিংহ্যামশায়ারের বিপক্ষে অপরাজিত ১৮১ রান তুলেছিলেন। এ পর্যায়ে অ্যালেক হার্নের সাথে নিরবিচ্ছিন্নভাবে ৩২১ রানের জুটি গড়েছিলেন।[৭] কাউন্টির ইতিহাসে এ জুটির সংগ্রহটি ১৯৩৪ সাল পর্যন্ত টিকেছিল। এছাড়াও, ২০০৫ সাল পর্যন্ত তৃতীয় উইকেট জুটিতে কেন্টের রেকর্ডরূপে টিকেছিল।[১৩][১৪] ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সাল পর্যন্ত কেন্টের ইতিহাসে যে-কোন জুটিতে ষষ্ঠ সর্বোচ্চ রানের ঘটনা এটি। ১৯০৪ সালে ইয়র্কশায়ার, সমারসেট ও এসেক্সের বিপক্ষে উপর্যুপরি তিনটি সেঞ্চুরি করেন। এছাড়াও, এগারোবার জেন্টলম্যানের সদস্যরূপে প্লেয়ার্সের বিপক্ষে খেলেন।
১৯০২ সালের পর ম্যাসনের পিতা স্পষ্ট জানিয়ে দেন যে সন্তানের ক্রিকেট খেলার ব্যয়ভার আর তিনি বহন করতে পারবেন না। ঐ সময়েই তিনি পারিবারিক প্রতিষ্ঠানে যোগদান করতে বাধ্য হন।[১৫] এরপর থেকেই ক্রিকেট খেলার জগৎ থেকে অনিয়মিত হয়ে পড়েন। তাসত্ত্বেও, ১৯০৫-০৬ মৌসুমে দক্ষিণ আফ্রিকা গমনে ইংরেজ দলকে নেতৃত্ব দানের প্রস্তাবনা পেলেও তিনি তা বিনয়ের সাথে প্রত্যাখ্যান করেন। এরফলে, পেলহাম ওয়ার্নার ইংল্যান্ডের অধিনায়কত্ব করেছিলেন।[১৬]
সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে ইংল্যান্ডের পক্ষে পাঁচটিমাত্র টেস্টে অংশগ্রহণের সৌভাগ্য হয় তার। ১৮৯৭-৯৮ মৌসুমে এ. ই. স্টডার্টের নেতৃত্বাধীন ইংরেজ দলের সদস্যরূপে অস্ট্রেলিয়া গমন করেন ও ঐ পাঁচ টেস্ট খেলেছিলেন। অনুষ্ঠিত সিরিজের পাঁচ টেস্টের প্রত্যেকটিতেই জ্যাক ম্যাসনের সপ্রতিভ অংশগ্রহণ ছিল। সফরের শুরুতে বেশ সুন্দর ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শন করলেও এরপর দীর্ঘসময় ম্লান অবস্থায় ছিলেন ও দূর্ভাগ্যের কবলে নিপতিত হন।[১৭] টেস্ট খেলাগুলোয় ব্যাট হাতে ১২.৯০ গড়ে রান তোলাসহ দুই উইকেট পেয়েছিলেন তিনি। তবে, মেলবোর্নে ভিক্টোরিয়ার বিপক্ষে অনুষ্ঠিত খেলায় মনোরম সেঞ্চুরি করেন তিনি। ঐ সফরে প্রথম-শ্রেণীর খেলাগুলো থেকে ৩৯.৩৩ গড়ে রান তুলেছিলেন।[২][১১][১২]
এ সফরে ম্যাসনের লিখিত চিঠিপত্রকে ঘিরে পরবর্তীকালে তার নাতি জন ল্যাজেনবি ‘টেস্ট অব টাইম’ শিরোনামীয় গ্রন্থ প্রকাশ করেছিলেন।[১৮][১৯]
দীর্ঘ ছয় ফুটেরও অধিক উচ্চতার অধিকারী জ্যাক ম্যাসন ডানহাতি ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতেন।[৭] সচরাচর আগ্রাসী ব্যাটিং, পরিচ্ছন্ন ড্রাইভিং ও জোরালো মারের অধিকারী ছিলেন তিনি।[২] তার স্মরণে উইজডেনে উল্লেখ করা হয় যে, সুন্দর ব্যাটিংশৈলীর কারণে তা বেশ দর্শনীয় ছিল।[৭] পাশাপাশি ডানহাতে ফাস্ট-মিডিয়াম পেস বোলিং করে প্রকৃত অল-রাউন্ডার হিসেবে নিজেকে মেলে ধরেছিলেন। ধীরগতিসম্পন্ন এবড়োথেবড়ো উইকেটে তিনি সমান দক্ষতা প্রদর্শন করেছেন। প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে ৩৩.২৭ গড়ে উইকেট শিকার করেছেন।[৭] এছাড়াও, পরিশীলিত ফাস্ট মিডিয়াম পেস বোলিংয়ের পাশাপাশি স্লিপ অঞ্চলে ফিল্ডিং করেও যথেষ্ট সুনাম কুড়িয়েছেন।[২][৭]
উইজডেন ক্রিকেটার্স অ্যালমেনাকে তাকে কেন্টের পক্ষে খেলা অন্যতম সেরা শৌখিন অল-রাউন্ডার হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে।[৭] ঘরোয়া ক্রিকেটে সুন্দর ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৮৯৮ সালে উইজডেন কর্তৃক অন্যতম বর্ষসেরা ক্রিকেটারের সম্মাননায় ভূষিত করা হয়।
নির্ধারিত বয়সসীমা অতিক্রান্ত হলেও প্রথম বিশ্বযুদ্ধের শুরুতে বাধ্যতামূলকভাবে সামরিক বাহিনীতে যোগদান করেন জ্যাক ম্যাসন। ১৯১৭ সালে রয়্যাল ন্যাভাল ভলান্টিয়ার রিজার্ভে (আরএনভিআর) স্বেচ্ছাসেবী ছিলেন তিনি।[২০] হাইড্রোফোন বিভাগে সাব-লেফট্যানেন্ট হিসেবে কমিশন্ডপ্রাপ্ত হন। প্রথমে ঐ বিভাগের প্রধান গবেষণাগার এইচএমএস টারলেইর ও পরবর্তীকালে ফিফের আবেরদোরের প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত হন।[২০][২১] এরপর উইট আইলের ফ্রেশওয়াটার এলাকায় অবস্থিত অন্যতম হাইড্রোফোন উপকূলীয় কেন্দ্রে স্থানান্তরিত হন। ১৯১৮ সালে লেফটেন্যান্ট পদে উন্নীত হন। এপ্রিল, ১৯১৮ সালে রয়্যাল এয়ার ফোর্সে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করেন। তবে, জার্মান ইউ-বোট আক্রমণ মোকাবেলায় নিযুক্ত হাইড্রোফোন বিভাগে থেকে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনকেই বেছে নেন তিনি।[২০] জানুয়ারি, ১৯১৯ সালে তাকে অব্যাহতি দেয়া হয়।[২০]
ব্যক্তিগত জীবনে জ্যাক ম্যাসন ওকালতি পেশায় নিযুক্ত ছিলেন। লন্ডনের হাই হলবোর্নের ম্যাসন এন্ড কোম্পানিতে কাজ করেন তিনি।[২২] ঐ সময়ের অন্যান্য শৌখিন ক্রিকেটারের ন্যায় তিনিও পেশাগত কার্যাবলী সম্পন্ন করে স্বল্পসময় খেলায় অংশ নিতেন। তাসত্ত্বেও, ১৯৩৯ সালে কাউন্টি থেকে স্থানান্তরিত হবার পূর্ব-পর্যন্ত কেন্টের ক্রিকেটে সংযুক্ত ছিলেন।[১][২০] ১৯১৯ সাল থেকে কাউন্টির সাধারণ পরিষদের সদস্যরূপে কাজ করেন। ১৯৩৮ সালে ক্লাবের সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন। কেন্ট কাউন্টি দলের অঙ্গসংগঠন ব্যান্ড অব ব্রাদার্স ক্লাবের পক্ষে খেলায় অংশগ্রহণসহ যুক্ত ছিলেন।[২০]
১৫ অক্টোবর, ১৯৫৮ তারিখে ৮৪ বছর বয়সে সাসেক্সের কুডেন বিচ এলাকায় নিজ গৃহে জ্যাক ম্যাসনের দেহাবসান ঘটে।[৫]
ক্রীড়া অবস্থান | ||
---|---|---|
পূর্বসূরী ফ্রাঙ্ক মার্চেন্ট |
কেন্ট ক্রিকেট অধিনায়কদের তালিকা ১৮৯৭–১৯০২ |
উত্তরসূরী কাথবার্ট বার্নাপ |