ব্যক্তিগত তথ্য | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
পূর্ণ নাম | জন বেরি হবস | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
জন্ম | কেমব্রিজ, ইংল্যান্ড | ১৬ ডিসেম্বর ১৮৮২|||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
মৃত্যু | ২১ ডিসেম্বর ১৯৬৩ হোভ, পূর্ব সাসেক্স, ইংল্যান্ড | (বয়স ৮১)|||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
ডাকনাম | দ্য মাস্টার | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
ব্যাটিংয়ের ধরন | ডানহাতি | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
বোলিংয়ের ধরন | ডানহাতি মিডিয়াম পেস | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
ভূমিকা | উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
আন্তর্জাতিক তথ্য | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
জাতীয় দল |
| |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
টেস্ট অভিষেক (ক্যাপ ১৫৭) | ১ জানুয়ারি ১৯০৮ বনাম অস্ট্রেলিয়া | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
শেষ টেস্ট | ১৬ আগস্ট ১৯৩০ বনাম অস্ট্রেলিয়া | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
ঘরোয়া দলের তথ্য | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
বছর | দল | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
১৯০৫-১৯৩৪ | সারে | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
| ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
উৎস: ইএসপিএনক্রিকইনফো.কম, ৩ জানুয়ারি ২০১৫ |
স্যার জন বেরি জ্যাক হবস (ইংরেজি: Jack Hobbs; জন্ম: ১৬ ডিসেম্বর, ১৮৮২ - মৃত্যু: ২১ ডিসেম্বর, ১৯৬৩) কেমব্রিজে জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ও পেশাদার ইংরেজ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট তারকা ছিলেন। ১৯০৮ থেকে ১৯৩০ সালের মধ্যে ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের পক্ষে ৬১ টেস্ট খেলায় প্রতিনিধিত্ব করেছেন তিনি। ক্রিকেটবোদ্ধাদের অভিমত, জ্যাক হবস ক্রিকেটের ইতিহাসে অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান হিসেবে পরিগণিত হয়ে আসছেন। তিনি ‘দ্য মাস্টার’ ডাকনামে পরিচিতি পেয়েছেন। ডানহাতি ব্যাটসম্যান ও মাঝে-মধ্যে ডানহাতি মিডিয়াম পেস বোলার ছিলেন তিনি। কাউন্টি ক্রিকেটে সারে দলের পক্ষে খেলেছেন।
এছাড়াও, কভার পয়েন্টে দক্ষ ফিল্ডার ছিলেন। ১৯১৯ সালে ‘দ্য টাইমস’ কভার অঞ্চলে ফিল্ডিংয়ে জ্যাক হবসের ক্ষিপ্রতায় দুইজন দীর্ঘদিনের দণ্ডায়মান ও জনপ্রিয় ক্রিকেটার গিলবার্ট জেসপ ও সিড গ্রিগরি’র সাথে তুলনামূলকভাবে স্বল্প পরিচিত ভার্নন রয়েলকে সমমান হিসেবে চিত্রিত করে।[১]
১৬ ডিসেম্বর, ১৮৮২ তারিখে কেমব্রিজে হবস জন্মগ্রহণ করেন। জনৈক কাঠুরে জন কুপার ও ফ্লোরা মাটিল্ডা বেরি দম্পতির ১২ সন্তানের মধ্যে জ্যেষ্ঠ তিনি।[২] দারিদ্রতার মধ্যে বড় হন ও শহরের নিম্নবিত্ত এলাকায় বসবাস করতে থাকেন।[৩] তার শৈশবকালের অধিকাংশ সময়ই প্রায়-দারিদ্রতার সঙ্গে অতিবাহিত হয়।
দরিদ্র পরিবারের সন্তান[৪] হবস শৈশবকাল থেকেই ক্রিকেটের সাথে জড়িত ছিলেন ও ক্রিকেট খেলাকে পেশা হিসেবে বেছে নেয়ার পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করেন। ক্রিকেটপ্রেমী সিনিয়র হবস তার কর্মজীবনে প্রভাববিস্তার করে তাকে পেশাদার ক্রিকেটার হিসেবে গড়ে তুলতে প্রভূতঃ সহায়তা করেন।[৫] ১৮৯৯ সালে জেসাস কলেজের মাঠকর্মী হিসেবে নিযুক্ত হন ও আম্পায়ারিত্ব করতে থাকেন।[৬]
প্রারম্ভিক পর্যায়ে তার ব্যাটিং তেমন আশাপ্রদ না হলেও ১৯০১ সালের দিকে আকস্মিক উন্নতি ঘটে।[৭] এরফলে স্থানীয় দলগুলোর দৃষ্টি তার দিকে নিবদ্ধ হয়। ইংরেজ ব্যাটসম্যান টম হেওয়ার্ডের সহযোগিতায় সারে দলে অংশগ্রহণের আবেদন মঞ্জুর হয় তার।[৮] পরবর্তীতে সারে দলের পক্ষে খেলার উপযোগী হন ও অভিষেক ঘটা প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে ৮৮ রান করেন। পরের খেলাতেই দূর্দান্ত সেঞ্চুরি করে বসেন। পরবর্তী মৌসুমগুলোয় নিজেকে সফলতম কাউন্টি খেলোয়াড় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন।
১৯০৮ সালে ব্যাটিং উপযোগী পরিবেশ থাকা স্বত্ত্বেও তুলনামূলকভাবে কম রান তুলেন।[৯] তাস্বত্ত্বেও জেন্টলম্যান ভার্সাস প্লেয়ার্সের মধ্যকার খেলায় তিনি ৮১ রান তুলেন। কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশীপে ৪০-এর অধিক গড়ে রান সংগ্রহ করেন এবং সারের পক্ষে ছয়টি সেঞ্চুরি করেছিলেন।[১০] সব মিলিয়ে ঐ মৌসুমের প্রথম-শ্রেণীর খেলাগুলোয় তিনি ৩৭.৩৩ গড়ে ১,৯০৪ রান করেন।[১১] এর স্বীকৃতিস্বরূপ উইজডেন কর্তৃক অন্যতম বর্ষসেরা ক্রিকেটার মনোনীত হন তিনি।[১২] এ প্রেক্ষিতে উইজডেন মন্তব্য করে যে, ‘বর্তমান সময়ে টম হেওয়ার্ড ও জনি টিল্ডসলে ছাড়া ইংল্যান্ডে তাঁর তুলনায় অন্য কোন ভালোমানের পেশাদার ব্যাটসম্যান নেই’।[১৩]
কাউন্টি ক্রিকেটে আক্রমণাত্মক ঢংয়ে খেলতে শুরু করেন যা ১৯১৪ সাল পর্যন্ত চলমান ছিল। কিন্তু প্রথম বিশ্বযুদ্ধে রয়্যাল ফ্লাইং কোরের সাথে সম্পৃক্ত হন। ১৯১৯ সালে ক্রিকেট খেলা শুরু হলে[১৪] কর্তৃপক্ষের অনুমতিক্রমে তিনি খেলায় অংশ নিতেন।[১৫] অ্যাপেনডিসাইটিসের কারণে তার কর্মজীবন হুমকির সম্মুখে পড়ে। ১৯২১ সালে ওয়ারউইক আর্মস্ট্রংয়ের নেতৃত্বাধীন অস্ট্রেলিয়া দল ইংল্যান্ড সফরে আসে। হেডিংলি টেস্ট শুরুর পূর্বে তিনি অ্যাপেন্ডিসাইটিসের কারণে নাম প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য হন। ফলশ্রুতিতে, ওয়ালি হার্ডিঞ্জ তার একমাত্র টেস্টে অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়েছিলেন।[১৬] ১৯২১ মৌসুমের অধিকাংশ সময়ই খেলা থেকে তাকে দূরে সরে থাকতে হয়।[১৭]
১৯২৩ সালের ভেজা মৌসুমে কম সফলতা পান। হবস বেশ কয়েকবার ব্যর্থ হন ও জেন্টলম্যান ভার্সাস প্লেয়ার্সের মধ্যকার উভয় খেলাতেই সফলকাম হতে পারেননি। তখনও তিনি তার অস্ত্রোপচার পরবর্তী প্রতিক্রিয়ার সাথে লড়াই চালাচ্ছিলেন। উইজডেন লক্ষ্য করে যে, তিনি আরও একবার একটি ইনিংসের শুরুর দিক থেকেই দ্রুতলয়ে রান সংগ্রহের দিক ধাবিত হচ্ছিলেন।[১৮] তাস্বত্ত্বেও, সমারসেটের বিপক্ষে তার শততম প্রথম-শ্রেণীর সেঞ্চুরি করেন। এরফলে ডব্লিউ. জি. গ্রেস ও টম হেওয়ার্ডের পর তৃতীয় ব্যক্তি হিসেবে এ মাইলফলকে পৌঁছেন।[১৯] ঐ মৌসুমে ৩৭.৯৫ গড়ে তিনি সর্বমোট ২,০৮৭ রান সংগ্রহ করেন।[১১]
১৯০৮ সালে ইংল্যান্ডের টেস্ট দলে তার ডাক আসে। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তিনি তার অভিষেক টেস্টের প্রথম ইনিংসে ৮৩ রান সংগ্রহ করেন। ইংল্যান্ডের পক্ষে মিশ্র সাফল্য[৯] আসলেও দক্ষিণ আফ্রিকার গুগলি বোলারদের বিপক্ষে সফলতা পান।[২০] ১৯১১-১২ মৌসুমে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে অনুষ্ঠিত টেস্ট সিরিজে তিনটি সেঞ্চুরি করে ফেলেন।[২১][২২] এরফলে তাকে বিশ্বের সেরা ব্যাটসম্যানের মর্যাদা এনে দেয়।
উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হবস অনেকগুলো উদ্বোধনী জুটি গড়েন। তন্মধ্যে সারে দলের পক্ষে টম হেওয়ার্ড ও অ্যান্ডি স্যান্ডহাম এবং ইংল্যান্ডের পক্ষে উইলফ্রেড রোডস ও হার্বার্ট সাটক্লিফ তার সহযোগী ছিলেন। টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে হার্বার্ট সাটক্লিফের সাথে উদ্বোধনী জুটি রান সংগ্রহের গড়ে শীর্ষস্থানে রয়েছে ও ২০১৪ সাল পর্যন্ত টিকে রয়েছে।[২৩]
অসুস্থতা থেকে খেলার জগতে ফিরে এসে তিনি আরও কার্যকরী ও রক্ষণাত্মক খেলার দিকে মনোযোগী হন। এরফলে টেস্ট ও ঘরোয়া - উভয় ধরনের ক্রিকেটেই তিনি সফলকাম হন যা অবসরগ্রহণের পূর্ব-পর্যন্ত বজায় ছিল। এসময়েই তার অধিকাংশ দর্শনীয় ইনিংস আসে।
ডোনাল্ড ব্র্যাডম্যান | ৯৯.৯৪
|
গ্রেইম পোলক | ৬০.৯৭
|
জর্জ হ্যাডলি | ৬০.৮৩
|
হার্বার্ট সাটক্লিফ | ৬০.৭৩
|
এডি পেন্টার | ৫৯.২৩
|
কেন ব্যারিংটন | ৫৮.৬৭
|
এভারটন উইকস | ৫৮.৬১
|
ওয়ালি হ্যামন্ড | ৫৮.৪৫
|
গারফিল্ড সোবার্স | ৫৭.৭৮
|
জ্যাক হবস | ৫৬.৯৪
|
ক্লাইড ওয়ালকট | ৫৬.৬৮
|
লেন হাটন | ৫৬.৬৭
|
উৎস: ক্রিকইনফো যোগ্যতা: পূর্ণাঙ্গ খেলোয়াড়ী জীবনে কমপক্ষে ২০ ইনিংস। |
দ্রুত পায়ের কাজের উপর ভিত্তি করে জ্যাক হবসের খেলোয়াড়ী জীবনের সফলতা গড়ে উঠে। তিনি অনেক ধরনের শট খেলায় পারদর্শীতা দেখান ও বলকে নির্দিষ্ট জায়গায় প্রেরণে সক্ষম ছিলেন। প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে গুগলি বোলারদেরকে সফল ও স্বার্থকভাবে মোকাবেলায় পারদর্শী ছিলেন। ক্রিকেট জীবনের শুরুতেই গড়ে উঠা নতুন ধরনের বোলিংকে তিনি সাদরে মোকাবেলা করতেন। কার্যকরী প্রতিরক্ষামূলক ব্যাটিংয়ের পাশে মিশ্র ধ্রুপদী শটের মিলন ঘটান তিনি। ব্যাটিং অনুপযোগী পীচে তিনি অধিক সফলকাম হন।[২৪]
১৯০৯ ও ১৯২৬ সালে উইজডেন কর্তৃক দুইবার বর্ষসেরা ক্রিকেটার মনোনীত হন। কেবলমাত্র তিনি ও পেলহাম ওয়ার্নার দুইবার এ সম্মাননায় অভিষিক্ত হতে পেরেছেন।[২৫] ১৯৬৩ সালে নেভিল কারদাস উইজডেনের শততম সংখ্যায় পূর্বেকার ১০০ বছরের সেরা ছয় খেলোয়াড়ের একজনরূপে তাকে অন্তর্ভুক্ত করেন।[২৬] সাম্প্রতিককালে ২০০০ সালে অভিজ্ঞ ক্রিকেট ব্যক্তিত্বের সমন্বয়ে গড়া জুড়ি বোর্ডে তাকে ২০শ শতাব্দীর সেরা পাঁচ উইজডেন ক্রিকেটারের একজনরূপে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।[২৭] ২০০৯ সালে ক্রিকেট ঐতিহাসিক ও লেখক কর্তৃক ইংল্যান্ডের সর্বকালের সেরা দলের অন্যতম সদস্যরূপে নির্বাচিত করে।[২৮] এছাড়াও, ক্রিকেটের ইতিহাসে বৈশ্বিকভাবে একই ধরনের সেরা খেলোয়াড়দের নিয়ে গড়া দলে তাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।[২৯] ২০১৭ সাল পর্যন্ত হবসের টেস্ট ব্যাটিং গড় ৫৬.৯৪ ও ৫,০০০ রান সংগ্রহকারী ব্যাটসম্যানদের তালিকায় ৬ষ্ঠ অবস্থানে রয়েছেন তিনি।[৩০] তন্মধ্যে, ৫,০০০ টেস্ট রান সংগ্রহকারী উদ্বোধনী ব্যাটসম্যানদের মধ্যে হার্বার্ট সাটক্লিফ ও লেন হাটনের পর তার ব্যাটিং গড় তৃতীয়। তার খেলোয়াড়ী জীবনে স্বাচ্ছন্দ্যে শীর্ষস্থানীয় টেস্ট রান সংগ্রাহক ছিলেন। অবসরগ্রহণকালীন তিনি সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারী ছিলেন। ১৯১০ থেকে ১৯২৯ সময়কালে তার টেস্ট ব্যাটিং গড় ছিল ৬৫.৫৫।[৩১]
বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে হবস তার ব্যাটিং রেটিংয়ের চূড়ায় আরোহণ করেন ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ৯৪২ পয়েন্ট নিয়ে যার মান ১০০০ রেটিং পয়েন্টের। এরফলে ১৯১২ থেকে ১৯২৮ সাল পর্যন্ত তিনি ব্যাটিং র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষস্থানে আরোহণ করেন। মাঝখানে সপ্তাহখানেকের জন্য হার্বি টেলর একমাত্র ব্যক্তি হিসেবে এ অবস্থানে ছিলেন।
অ্যাডা নাম্নী এক রমণীর সাথে ৫৬ বছরের বৈবাহিক জীবন অতিক্রম করেন। এ দম্পতি সারে থেকে সংগৃহীত অর্থ, বাণিজ্যিক চুক্তি ও ১৯২১ সালে প্রতিষ্ঠিত ক্রীড়া সরঞ্জাম বিক্রয় প্রতিষ্ঠানের সংগৃহীত অর্থ দিয়ে বাদ-বাকী জীবন অতিবাহিত করেন। ক্রিকেট থেকে অবসর নেয়ার পর সাংবাদিকতার দিকেও ঝুঁকে পড়েন তিনি। ১৯৫৩ সালে নাইট উপাধি লাভ করেন। প্রথম পেশাদার ক্রিকেটার হিসেবে তিনি এ সম্মাননা লাভ করেন। স্ত্রীর মৃত্যুর কয়েকমাস পর ২১ ডিসেম্বর, ১৯৬৩ তারিখে ৮১ বছর বয়সে তার দেহাবসান ঘটে।[৩২]