ঝু দে | |
---|---|
朱德 | |
চীনের জাতীয় কংগ্রেসর স্থায়ী কমিটির ২য় সভাপতি | |
কাজের মেয়াদ ২৮শে এপ্রিল, ১৯৫৯ – ৬ই জুলাই, ১৯৭৬ | |
রাষ্ট্রপতি | Abolished (since 1975) |
পূর্বসূরী | লিওউ শাও-চি |
উত্তরসূরী | সুং চিং-লিং (ভারপ্রাপ্ত) |
গণ-প্রজাতন্ত্রী চীনের রাষ্ট্র-প্রধান জাতীয় কংগ্রেসের স্থায়ী কমিটির সভাপতি পদে | |
কাজের মেয়াদ ১৭ই জানুয়ারী, ১৯৭৫ – ৬ই জুলাই, ১৯৭৬ | |
প্রিমিয়ার | চৌ এন-লাই হুয়া গুও-ফাং |
নেতা | মাও সেতুং |
পূর্বসূরী | দোং বিওউ (গণ-প্রজাতন্ত্রী চীনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি পদে) |
উত্তরসূরী | সুং চিং-লিং (ভারপ্রাপ্ত) |
1st গণ-প্রজাতন্ত্রী চীনের ভাইস-প্রেসিসেন্ট | |
কাজের মেয়াদ ২৭শে সেপ্টেম্বর, ১৯৫৪ – ২৭শে এপ্রিল, ১৯৫৯ | |
সভাপতি | মাও সেতুং |
উত্তরসূরী | সুং চিং-লিং and দোং বিওউ |
চীনের কমিউনিস্ট পার্টির সহ-সভাপতি | |
কাজের মেয়াদ ২৮শে সেপ্টেম্বর, ১৯৫৬ – ১লা আগস্ট, ১৯৬৬ | |
সভাপতি | [মাও সেতুং[]] |
সচিব of the শৃঙ্খলা-নিরিক্ষনে গঠিত কেন্দ্রীয় কমিশন | |
কাজের মেয়াদ নভেম্বর, ১৯৪৯ – মার্চ, ১৯৫৫ | |
পূর্বসূরী | লি ওয়েই-হান |
উত্তরসূরী | দোং বিওউ |
গণ-মুক্তি ফৌজের প্রধান সেনাপতি | |
কাজের মেয়াদ ২৮শে নভেম্বর, ১৯৪৬ – ২৭শে সেপ্টেম্বর, ১৯৫৪ | |
পূর্বসূরী | পদ রহিত |
উত্তরসূরী | পদ রহিত |
ব্যক্তিগত বিবরণ | |
জন্ম | ইলং কাউন্টি, সিছুয়ান | ১ ডিসেম্বর ১৮৮৬
মৃত্যু | ৬ জুলাই ১৯৭৬ বেইজিং | (বয়স ৮৯)
মৃত্যুর কারণ | ফ্লু |
রাজনৈতিক দল | চীনের কমিউনিস্ট পার্টি |
দাম্পত্য সঙ্গী | শিয়াও জুফাং (বি. ১৯১২; death ১৯১৬) চেন ইউঝেন (বি. ১৯১৬; death ১৯৩৫) উও রুও-লান (বি. ১৯২৮; death ১৯২৯) ক্যাং কে-ছিয়াং (বি. ১৯২৯) |
সন্তান | ঝু চি ঝু মিন |
পুরস্কার | Order of Victory of Resistance against Aggression (1945) Order of August the First (1st Class Medal) (1955) Order of Independence and Freedom (1st Class Medal) (1955) Order of Liberation (1st Class Medal) (1955) More... |
সামরিক পরিষেবা | |
আনুগত্য | চীনের কমিউনিস্ট পার্টি চীন |
শাখা | গণ-মুক্তি ফৌজ অষ্টম রুট সেনা চীনের কৃষক-শ্রমিক লাল ফৌজ জাতীয় বিপ্লবী সৈন্যদল ইয়ুন্নান চক্র |
কাজের মেয়াদ | 1927–1976 |
পদ | Marshal of the People's Republic of China General of the National Revolutionary Army, প্রজাতন্ত্রী চীন |
যুদ্ধ | উত্তর অভিযান |
ঝু দে | |||||||||||
চীনা | 朱德 | ||||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
| |||||||||||
Courtesy name: Yujie | |||||||||||
চীনা | 朱玉阶 | ||||||||||
|
ঝু দে (১ ডিসেম্বর ১৮৮৬ - ৬ জুলাই ১৯৭৬) ছিলেন চীনের একজন সর্বাধিনায়ক, সেনাপতি, রাজনীতিবিদ, বিপ্লবী এবং চীনের কমিউনিস্ট পার্টির অন্যতম অগ্রদূত। ১৮৮৬ সালে চীনের সিচুয়ান প্রদেশের এক দরিদ্র পরিবারে তার জন্ম হয়। নয় বছর বয়সে নিকট এক ধনী আত্মীয় তাকে দত্তক হিসেবে গ্রহণ করার পর থেকে তার জীবনে আমূল পরিবর্তন আসে। বাল্যকালের এই আশীর্বাদ তাকে উচ্চমানের প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ করে দেয়; যা পরবর্তীতে তাকে মিলিটারি একাডেমিতে ভর্তির পথ সুগম করে দেয়। মিলিটারি একাডেমির প্রশিক্ষণ শেষে, তিনি বিদ্রোহী সেনাদলে যোগদান করেন এবং শীঘ্রই তিনি সেনাপতির পদে উন্নীত হন। পরবর্তীতে তিনি কমিউনিস্ট নীতি গ্রহণ করে চীনের কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগদান করেন এবং জাতীয় নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত রেড আর্মির বিভিন্ন পদ মর্যাদায় দায়িত্ব পালন করে ধাপে ধাপে গুরুত্বপূর্ণ পদসমূহে উন্নীত হতে থাকেন। চীনের মহান নেতা মাও সেতুং এর শাসনামলে ঝু দে চিনের কমিউনিস্ট পার্টির উচ্চ পদস্থ একজন কর্মকর্তার দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। দ্বিতীয় চীন-জাপান যুদ্ধে তিনি অষ্টম রুট সেনাদলের সেনাপ্রধানের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৫৫ সালে তিনি চৈনিক সেনাবাহিনীর দশ জন প্রধান সেনাপতির একজন হিসেবে আসীন হন এবং একইসাথে তিনি এর প্রধান প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। ১৯৭৬ সালে তার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি চীনের বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ হিসেবে স্বঅবস্থানে বজায় ছিলেন। ১৯৭৫ থেকে ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত জাতীয় কংগ্রেসের স্থায়ী কমিটির প্রধান হিসেবে গণচীনের রাষ্ট্র-প্রধানের দায়িত্ব পালন করেন।
ঝু দে ১৮৮৬ সালের ১লা ডিসেম্বর সিছুয়ান প্রদেশের উত্তরাঞ্চলের বিচ্ছিন্ন এক পার্বত্য অংশের ইলং কাউন্টির ছোট এক শহরের দরিদ্র কৃষক পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন।[১] পরিবারে জন্ম নেয়া তার ১৫ জন ভাইবোনের মধ্যে শুধুমাত্র ৮ জন পরবর্তীতে জীবিত ছিলেন এবং বাকি ৭ জনের সকলেই অপরিণত বয়সে মৃত্যু বরণ করেন। হুনান প্রদেশ এবং কুয়াংতুং প্রদেশ থেকে সিছুয়ান প্রদেশে এসে বসতি স্থাপন করা অভিবাসন প্রত্যাশীদের মধ্যে তার পরিবার ছিল অন্যতম।[২][৩][৪] তার আদিসূত্র হিসেবে প্রায়ই হাক্কা জনগোষ্ঠীর কথা উল্লেখ করা হয়ে থাকে।[৫]
পরিবারের দারিদ্রতা সত্ত্বেও, ১৯৯২ সালে তার মা-বাবা তাকে একটি স্থানীয় প্রাইভেট স্কুলে ভর্তি করার জন্য বিভিন্ন উপায়ে অর্থ সংগ্রহ করেন। নয় বছর বয়সে নিকট এক ধনী আত্মীয় তাকে দত্তক হিসেবে গ্রহণ করেন, যার রাজনৈতিক প্রভাব-প্রতিপত্তি পরবর্তীতে তাকে ইউন্নান মিলিটারি একডেমিতে প্রবেশের পথ সহজ করে দেয়।[৬] তিনি ১৯০৭ সালে সিছুয়ান একটি উচ্চ শিক্ষা কেন্দ্রে ভর্তি হন এবং ১৯০৮ সালে উত্তীর্ণ হন। পরবর্তীকালে তিনি ইলং-এ ফিরে এসে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শরীরচর্চা কেন্দ্রের প্রশিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। বিদ্যালয়ের কড়া অনুশাসন না মেনে প্রদর্শিত নিয়মের বাইরে গিয়ে শ্রেণীকক্ষে সনাতনী শিক্ষা প্রদান না করে আধুনিক বিজ্ঞান এবং রাজনীতি সমন্ধে শিক্ষা প্রদান করায় তিনি বহিস্কৃত হন। অতঃপর তিনি কুনমিংয়ে অবস্থিত ইউন্নান মিলিটারি একাডেমিতে প্রবেশ করেন। সেখানে তিনি বেইয়াং সেনাদল এবং তংমংহুই নামক গুপ্ত রাজনৈতিক সংগঠনে যোগদান করেন।[৭]
ইউন্নান মিলিটারি একাডেমী ছিল সেই বিশেষ স্থান যেখানে তিনি কাই ই-এর সাথে সাক্ষাতের সুযোগ পান।[৮] ১৯১১ সালের জুলাই মাসে মিলিটারি একাডেমী থেকে সফলতার সাথে উত্তীর্ণ হবার পর তিনি একাডেমিতে শিক্ষাদানে নিয়োজিত হন।[৯]চীনা-বিপ্লবের পর তিনি বিপ্লবী সেনাদলের পক্ষে অবস্থান করে ১৯১১ সালে ব্রিগেডিয়ার কাই ই-এর সাথে অভিযাত্রী সেনাদলে যোগদান করেন যা পরবর্তীতে সিছুয়ানে চিং সেনাদল হিসেবে আবির্ভূত হয়। ১৯১৫-১৬ সালে ইউয়ান শিকাই-কে গদিচ্যুত করার আন্দোলনে তিনি রেজিমেন্টাল কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯১৬ সালের জুন মাসে ইউয়ান শিকাই-এর মৃত্যুর পর কাই ই যখন সিছুয়ান প্রদেশের গভর্নর হলেন তখন ঝু দে ব্রিগেড কমান্ডারের পদমর্যাদা লাভ করলেন।[১০]
১৯১৬ সালে একই সাথে কর্ম ও শিক্ষা জীবনের পথপ্রদর্শক কাই ই এবং প্রিয়তমা স্ত্রীর মৃত্যুর পর ঝু দে মারাত্মক রকমের আফিম নেশা গড়ে তোলেন; যা তাকে ১৯২২ সালে সাংহাইয়ে তার পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসার আগ পর্যন্ত মারাত্মকভাবে ভুগিয়েছিলো।[১১] তার সৈন্যদল বিরামহীনভাবে তাকে সমর্থন করতে থাকলো। এই সৌভাগ্যের সুব্যবহার করে সেনাপতি হওয়ার জন্য তিনি তার সৈন্যদল সুসংগঠিত করেন। ১৯২০ সালে তার সৈন্যদল সিছুয়ান থেকে তিব্বত সীমানায় পরিচালিত হওয়ার পর ইউন্নান প্রদেশে ফিরে এসে প্রাদেশিক সরকারের জননিরাপত্তা কমিশনার পদে যোগদান করেন। এই সময়কালে তিনি পড়ালেখার উদ্দেশ্যে চীন ছেড়ে ইউরোপ গমনের সিদ্ধান্ত নেন। প্রথমে তিনি সাংহাই গমন করেন। সাংহাইয়ে অবস্থানকালে তিনি তার দীর্ঘদিনের আফিম নেশা পরিত্যাগ করতে সক্ষম হন এবং কুমিনতাংয়ের ঐতিহাসিকদের মতানুযায়ী এখানেই তিনি সান-ইয়াত সেনের সাক্ষাৎ লাভ করেন। ১৯২২ সালের শুরুর দিকে চীনের কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগদানের চেষ্টা করেন ঝু, কিন্তু সেনাপতি হওয়ার দরুন তার আবেদন প্রত্যাক্ষিত হয়।[১২]
১৯২২ সালের শেষের দিকে ঝু তার সঙ্গিনী হে ঝিহুয়াকে সাথে নিয়ে বার্লিন গমন করেন। ১৯২৫ সালের আগ পর্যন্ত তিনি জার্মানিতেই বসবাস করেন। জার্মানিতে বসবাসের একপর্যায়ে তিনি গ্যটিঙেন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়ন করেছিলেন।[১৩] এখানে তিনি চৌ এন-লাই-এর সহচর্য লাভ করেন।[১১] ছাত্র আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত থাকার দায়ে জার্মানি থেকে তিনি বিতাড়িত হন। এমনই এক সময়ে তিনি চীনের কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগদান করেন, যেখানে চৌ এন-লাই তার অন্যতম স্পনসর ছিলেন। জার্মানি থেকে ১৯২৫ সালে বিতাড়িত হওয়ার পর তিনি মার্কসবাদ এবং সামরিক বিষয়ে জ্ঞান লাভের জন্য তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রাচ্যীয় পরিশ্রমীদের কমিউনিস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে গমন করেন। মস্কোতে অবস্থানকালে তার সঙ্গিনী হে ঝিহুয়া তাদের একমাত্র কন্যা সন্তানের জন্ম দেন। ১৯২৬ সালের জুলাই মাসে চিনে প্রত্যাবর্তন করে তিনি সিছুয়ান প্রদেশের সেনাপতিকে পটিয়ে উত্তর অভিযানে সহায়তা লাভে বার্থ হন।
১৯২৭ সালের প্রথম যুক্তফ্রন্টের ভাঙ্গনের পর কুওমিনতাং কর্তৃপক্ষ তাকে চৌ এন-লাইয়ের বিরুদ্ধে এবং লিওউ বোচ্যাং -এর নানচ্যাং অভ্যুত্থান দমনে প্রধান কর্তা হিসেবে নিযুক্ত করে। অভ্যুত্থান সুষ্ঠভাবে সংগঠিত করতে সহায়তা করার দায়ে ঝু এবং তার সৈন্যদলকে কুমিনতাং থেকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়। অভ্যুত্থানে সমর্থন লাভে বার্থ হন তিনি। ফলস্বরূপ তিনি তার সৈন্যদল সহ নানচ্যাং ত্যাগ করে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন। ওয়াং কাই ছদ্মনাম ব্যবহার করে তিনি সেনাপতি ফ্যান শীশেংয়ের সাথে যোগদান করে তার অবশিষ্ট সৈন্যদলের জন্য আশ্রয়ের ব্যবস্থা করতে সক্ষম হন। শীঘ্রই নানচ্যাংয়ে প্রথম যুক্তফ্রন্ট মিলিটারি ইনস্টিটিউটয়ের প্রধান কর্তা হিসেবে তার নাম ঘোষণা করা হয়।
১৯২৭ সালে যখন চেন ই এবং লিন বিয়াওয়ের ষড়যন্ত্রের কবলে পড়ে ফ্যান শীশেংয়ের নিরাপত্তা বলয় থেকে বেরিয়ে তার অনুগত ১০,০০০ সৈন্যের সৈন্যদল নিয়ে জিয়াংশি এবং জিংগ্যাং পর্বতাভিমুখে গমনকালে মাও-সেতুংয়ের সাথে ঝু দেয়ের ঘনিষ্ঠ সহচার্যের সূত্রপাত ঘটে। এখানে ১৯২৭ সালে মাও সেতুং একটি সোভিয়েত গঠন করেছিলেন এবং ঝু দে সোভিয়েত নিয়ন্ত্রিত এলাকার বিস্তার সাধনের লক্ষ্যে তার সৈন্যদলকে রেড আর্মিতে পরিণত করতে সুসংগঠিত করে গড়ে তোলেন।[১৪] ১৯২৮ সালের ২৮শে এপ্রিল লংজিয়াং সেতুর উপর সংগঠিত বৈঠকে মাও সেতুংয়ের ভাই মাও জেতানের অবদান বৈঠকটিকে সহজতর করেছিল; যিনি ঝু দেয়ের অধীনস্থ একজন কর্মকর্তা ছিলেন।[১৫] মাও জেতান পরবর্তীতে তার ভাই মাও সেতুং-এর নিকট ঝু-এর লেখা একটি পত্র বহন করে নিয়ে গিয়েছিলেন, যেখানে ঝু মাও-এর উদ্দেশ্যে বলেছিলেন "আমাদের এখন অবশ্যই সৈন্যবাহিনী একত্রীকরণ করার পাশাপাশি সুসংজ্ঞায়িত সামরিক এবং ভূরাজনৈতিক নীতি গ্রহণ করা উচিত"।[১৬] এই নীতির বদৌলতে সম্মিলিত সামরিক বাহিনী চতুর্থ লাল ফৌজ গঠনের মাধ্যমে তাদের রাজনৈতিক দল উন্নয়নের এক নতুন মোড় নেয়, যেখানে ঝু দে ছিলেন মিলিটারি কমান্ডার এবং মাও সেতুং ছিলেন দলের প্রধান কর্ণধার।[১৭]
নিজের নেতৃত্ব প্রদানের বিশেষ গুণাবলীর বদৌলতে ঝু অপরিমেয় মর্যাদার পাত্র হয়েছিলেন; এমনকি স্থানীয় জনগণ তাকে অতিপ্রাকৃতিক ক্ষমতাধর ব্যক্তি হিসেবে পরিগণিত করত।[১৮] এই সময়কালে মাওয়ের সাথে ঝু-এর সম্পর্ক এতটাই ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠে যে স্থানীয় গ্রামবাসীদের নিকট তারা সম্মিলিতভাবে "ঝু-মাও" হিসেবে পরিচিত ছিলেন। ১৯২৯ সালে চিয়াং কাই-শেকের সামরিক চাপের মুখে পরে ঝু দে এবং মাও সেতুং জিংগ্যাংশান ত্যাগ করে রুইজিনের উদ্দেশ্যে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন। এখানে তারা জিয়াংশি সোভিয়েত গঠন করেন, যা কিনা ঘটনাক্রমে ৩০,০০০ বর্গ কি. মি. আয়তনের বিশাল অঞ্চলে বিস্তৃত হতে পারতো যেখানে ত্রিশ লক্ষ মানুষের বসবাস ছিল।[১৯] ১৯৩১ সালে চীনের কমিউনিস্ট দলের নেতৃত্বাধীনে থেকে রুইজিনে লাল ফৌজের নেতা হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন।[১৯] চতুর্থ বিরোধী ঘেরাও কর্মসূচিতে নেতৃত্ব প্রদানের প্রাক্কালে তিনি সাফল্যের সাথে কুওমিনতাং এর বিরুদ্ধে গতানুগতিক সামরিক শক্তি পরিচালনা করেন;[১৯] কিন্তু পরবর্তীতে পঞ্চম বিরোধী ঘেরাও কর্মসূচির সময়কালে তিনি এই একই কাজ করতে ব্যর্থ হন এবং চীনের কমিউনিস্ট দল ত্যাগ করেন। ঝু দে ১৯৩৪ সালের মহা উত্থানে সহায়তা করেছিলেন যা পরবর্তীতে লং মার্চের সূচনা করেছিল।
লং মার্চের সময়কালে ঝু দে এবং চৌ এন-লাই পরপর একাধিকবার নির্দিষ্ট কিছু যুদ্ধ পরিচালনা করেন। বো গু এবং অটো ব্রাউন এর হাতে যখন সত্যিকারের ক্ষমতা ছিল তখন কিছু ইতিবাচক প্রভাব লক্ষ্য করা গিয়েছিলো। যুন-ই সম্মেলনে বো এবং ব্রাউন সম্পর্কে মাও সেতুংয়ের করা সমালোচনা সমর্থন করেন ঝু। সম্মেলন পরবর্তী সময়ে তিনি সামরিক বিষয়ে মাও সেতুং এবং চৌ এন-লাইকে সহযোগিতা করেছিলেন। ১৯৩৫ সালের জুলাই মাসে মাও সেতুং এবং চৌ এন-লাই যখন প্রথম লাল ফৌজে কর্মরত ছিলেন তখন ঝু এবং লিওউ বোচ্যাং কর্মরত ছিলেন চতুর্থ লাল ফৌজে। যখন দুই দলের মধ্যে বিভাজন সংঘগঠিত হলো তখন চতুর্থ লাল ফৌজের নেতা ঝ্যাং গুওতাও ঝু-কে দক্ষিণ অভিমুখে যেতে বাধ্য করেন। মত প্রত্যাহার করে সিচুয়ান প্রদেশের মধ্য দিয়ে ফিরে আসার সময় চতুর্থ লাল ফৌজ কোনো মোতে টিকে থাকতে সক্ষম হয়। ইয়ান-আন পৌঁছে, মাও সেতুংয়ের রাজনৈতিক পথনির্দেশনা অনুযায়ী ঝু দে লাল ফৌজ পুনর্গঠন কার্য পরিচালনা করেন।
দ্বিতীয় চীন-জাপান যুদ্ধ এবং চীনের গৃহযুদ্ধের সময়কালে ঝু লাল ফৌজের প্রধান সেনাপতির পদে বহাল ছিলেন। ১৯৪০ সালে পং দেহুয়াই এর সাথে মিলে ঝু শত সৈন্যদলের আক্রমণ কর্মসূচি সুপরিকল্পিতভাবে সংঘঠিত করেন। প্রাথমিকভাবে মাও নিজেও এই আক্রমণ কর্মসূচি সমর্থন করলেও আক্রমণ কর্মসূচি সফল হওয়ার পর মাও সেতুং এই কর্মসূচিকে জাপানিদের বিদ্ধংসী সার্বজনীন তিন নীতির মূল প্ররোচনা প্রদানকারী কর্মসূচি বলে আখ্যা দেন এবং পরবর্তীতে লুশান সম্মেলনে পং-এর সমালোচনায় এই বিষয়টি ব্যবহার করেন।
১৯৪৯ সালে গণ মুক্তি ফৌজের প্রধান সেনাপতি পদে ঝু দে-এর নাম ঘোষণা করা হলে পরবর্তীতে তার উত্তরসূরিরা গণ মুক্তি ফৌজের প্রধান প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে তাকে শ্রদ্ধা করে থাকেন। তিনি ১৯৫৬ -১৯৬৬ সাল পর্যন্ত গণচীনের কমিউনিস্ট পার্টির ভাইস-চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। নিজস্ব কর্তৃত্বে প্রধান সেনাপতির পদমর্যাদায় আসীন হয়ে কোরীয় যুদ্ধে তিনি গণ মুক্তি ফৌজের সার্বিক তত্ত্বাবধান করেন। ১৯৫৫ সালে তাকে সর্বাধিনায়কের পদমর্যাদা প্রদান করা হয়। লুশান সম্মেলনে তিনি পং দেহুয়াই-এর পূর্ণাঙ্গ সমালোচনা না করে মৃদু সমালোচনা করে দীর্ঘ দিনের পুরোনো এই কমরেডের স্বার্থ রক্ষা করার উদ্দেশ্যে খুব সংকীর্ণভাবে পং-এর উপর দোষারোপ করেন, যেখানে পং ছিলেন মাওয়ের সমালোচনার অন্যতম লক্ষ্যবস্তু। সম্মেলনে মাও ঝু-এর চাল-চলনে সন্তুষ্ট ছিলেন না। ফলস্বরূপ, সম্মেলনের পরে ঝু তার কেন্দ্রীয় সামরিক কমিশনের ভাইস-চেয়ারম্যান এর পদ থেকে বহিষ্কৃত হন; আর এর এক মাত্র কারণ হিসেবে কেবল পতিত পং-এর প্রতি তার আনুগত্য বিবেচিত ছিল না।
১৯৬৯ সালের এপ্রিল মাসে সাংস্কৃতিক বিপ্লবের সম্মেলন চলাকালে ঝু তার চীনের কমিউনিস্ট পার্টির স্থায়ী নির্বাহী কমিটির পদ থেকেও বহিষ্কৃত হন এবং একই সাথে জাতীয় কংগ্রেসে তার সকল কর্মকাণ্ড থেকে সাময়িকভাবে নিবৃত্তি পান। যাই হোক না কেন, তার প্রতি চৌ এন-লাই এর একান্ত সমর্থনের দরুন তার কোনো ক্ষতি করা হয় নি, এমনকি কারারুদ্ধ হওয়ার মতো বিপদ থেকে তিনি নিরাপদে ছিলেন। ১৯৬৯ সালের আগস্ট মাসে চীন ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যকার দ্বন্ধের দরুন লিন বিয়াও জাতীয় নিরাপত্তা জোরদার করার লক্ষ্যে ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তাদেরকে দূরবর্তী অঞ্চলে প্রেরণ ও সেসব স্থানে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ জারি করেন; আর তার ফলস্বরূপ ঝু-কে কুয়াংতুতে প্রেরণ করা হয়। ১৯৭৩ সালে ঝু-কে স্থায়ী কমিটির পদে পুনর্বহাল করা হয়।
১৯৭৬ সালের ৬ জুলাই মৃত্যুর আগে পর্যন্ত ঝু একজন বিশিষ্ট প্রবীণ কূটনীতিক হিসেবে বিরামহীনভাবে নিজ দায়িত্ব পালন করেন। তিনি চৌ এন-লাই এর মৃত্যুর ছয় মাস পর এবং মাও সেতুংয়ের মৃত্যুর দুই মাস আগে মৃত্যু বরণ করেন। মৃত্যুর তিন দিন পর ঝু-কে দাহ করা হয় এবং তার শেষকৃত্য মৃত্যুর বেশ কয়েকদিন পর অবধি চলতে থাকে।
অ্যাগনেস স্মেডলির লেখা জীবন চরিত্ অনুযায়ী ঝু তার সমগ্র জীবনে আইনানুযায়ী চার বার বিয়ে করেছিলেন; যদিও বা তার একমাত্র কন্যা সন্তানের মা হে ঝিহুয়া-এর সাথে তার বিবাহের কোনো প্রমাণ পাওয়া নি। সকলের জানা মতে তার যে সম্পর্কগুলো ছিল:
শিয়াও জুফাং: কুনমিং আদর্শ ইনস্টিটিউটে অধ্যায়নকালে শিয়াও ছিলেন ঝু-এর সহপাঠিনী। ১৯২২ সালে তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। ১৯১৬ সালে ঝু-এর একমাত্র পুত্র-সন্তান বাওঝুকে জন্ম দেওয়ার পর জ্বরে আক্রান্ত হয়ে শিয়াও মৃত্যু বরণ করেন।
চেন ইউঝেন: প্রথম স্ত্রী শিয়াও জুফাং-এর মৃত্যুর পর ঝু-কে তার পুত্রসন্তানের জন্য একজন মা খুঁজতে হলো। সৈন্যদলের বন্ধুদের মাধ্যমে তিনি চেন-এর সাথে সাক্ষাৎ লাভ করেন। চেন একই সাথে ১৯১১ এবং ১৯১৬ সালের বিপ্লবী আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছিলেন। চেন দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ছিলেন যে, তার হবু স্বামী তাকে ব্যক্তিগতভাবে বিবাহের প্রস্তাব না দেয়ার আগে পর্যন্ত তিনি বিয়ে করবেন না। অবশেষে ঝু বিবাহের প্রস্তাব দিলে তারা দুজন ১৯১৬ সালে বিয়ে করেন। চেন সংসার দেখাশোনা করতেন। এমনকি তিনি ঝু এবং ঝু-এর জ্ঞানী-গুণী বন্ধুদের দেখা সাক্ষাৎ সহজতর করার জন্য একটি পাঠকেন্দ্র নির্মাণ করেছিলেন; যা তিনি রুশ অক্টোবর বিপ্লবের পোস্টার, বই-পুস্তক এবং প্রচার পত্র দিয়ে সজ্জিত করেছিলেন। ১৯২২ সালের বসন্ততে ঝু গৃহ ত্যাগ করে সিছুয়ানের সেনাপতি ইয়াং সেনের সাথে সাক্ষাৎ করার জন্য গমন করেন। অ্যাগনেস স্মেডলির লেখা জীবন চরিত্ অনুযায়ী, চেন-কে ফেলে গৃহ ত্যাগ করার পর ঝু নিজে খুব নিঃসঙ্গ বোধ করতেন। ফলস্বরূপ তিনি আবার বিয়ে করার টান অনুভব করলেন; যদিও তিনি তখনও চেন-কে আনুষ্ঠানিকভাবে তালাক দেন নি। পরবর্তীতে ১৯৩৫ সালে কুওমিনতাং-এর সমর্থকদের হাতে চেন নিহত হন।
হে ঝিহুয়া: তিনি সাংহাইয়ে ঝু-এর সংস্পর্শে আসেন এবং পরবর্তীতে ঝু-এর সাথে জার্মানি গমন করেন। ১৯২৫ সালে ঝু জার্মানি থেকে বিতাড়িত হওয়ার সময় তিনি ইতোমধ্যে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন এবং পরে মস্কোর অদূরে একটি গ্রামে তাদের একমাত্র কন্যা-সন্তান প্রসব করেন। ঝু তার সন্তানের নাম রাখেন সি-শুন, কিন্তু পরবর্তীতে তাদের মধ্যে দাম্পত্য সম্পর্কের অবনতি হলে ঝু-এর পছন্দ অগ্রাহ্য করে হে ঝিহুয়া মেয়ের নাম রাখেন ফেই-ফেই। জন্মের কিছুদিন পরেই তিনি তাদের একমাত্র কন্যা-সন্তানকে তার বোনের সাথে বসবাস করার জন্য চেংদুতে প্রেরণ করেন। ঐ একই বছরে তিনি হয় হুয়ো জিয়া-শিন নামের অন্য একজনকে বিয়ে করেন। তিনি ১৯২৮ সালে সাংহাইয়ে ফিরে আসেন। লাল ফৌজের সৈন্যদের গুলিতে তার দ্বিতীয় স্বামীর নিহত হন। অতঃপর তিনি সিছুয়ানে ফিরে আসেন এবং এখানেই তিনি ১৯৪৯ এর আগে অসুস্থতার দরুন মৃত্যুবরণ করেন।
উও রুও-লান: উও ছিলেন হুনান প্রদেশের জিউইয়াংতাং-এর একজন বুদ্ধিজীবীর সন্তান। লেই-ইয়াং আক্রমণ কর্মসূচির পর কৃষক এবং কর্মী সেনাদের সহিত উও-ঝু এর সাক্ষাৎ হয়। ১৯২৮ সালে তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। ১৯২৯-এর জানুয়ারী মাসে একদা জিংগ্যাং পর্বতে একটি মন্দিরে উও এবং ঝু-কে কুওমিনতাং-এর সেনারা ঘেরাও করে ফেলে। ঝু পালিয়ে যেতে সক্ষম হলেও উও ধরা পড়ে যান। সেনারা শিরচ্ছেদের মাধ্যমে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে তার ছিন্ন-মস্তক চাংশায় প্রদর্শনের জন্য প্রেরণ করেন।
ক্যাং কে-ছিয়াং: ১৯২৯ সালে ৪৩ বছর বয়সে ক্যাং-কে বিয়ে করেন ঝু। তিনি লাল ফৌজের একজন সদস্য হওয়ার পাশাপাশি একজন কৃষক নেতাও ছিলেন। ক্যাং খুবই মনোযোগী হওয়ায় ঝু বিয়ের আগে তাকে পড়তে ও লেখতে শেখান। ক্যাং ঝু-এর চেয়ে বেশি দিন বেঁচেছিলেন। যেসব মহিলারা লং মার্চে অংশগ্রহণ করেছিলেন ক্যাং তাদের মধ্যে ব্যাতিক্রম ছিলেন, বাকি সবার মতো তিনি পর্দার আড়ালে কাজ করা প্রচারণা শাখার অংশ হন নি। নিজের স্বতন্ত্র বৈশিষ্টের সহিত একজন নারীসেনা, মার্ক্সবাদী এবং সৈন্য-নেত্রী হিসেবে তিনি তার স্বামীর পাশে থেকে লড়াই করে গেছেন।
ঝু বাও-ঝু (ম্যান্ডারিন:朱保柱) ১৯১৬ সালে জন্ম গ্রহণ করেন, যিনি পরবর্তীতে নিজের নাম পরিবর্তন করে ঝু চি রাখেন। তিনি ১৯৭৪ সালে অসুস্থতায় মৃত্যুবরণ করেন।
ঝু মিন (ম্যান্ডারিন:朱敏) ১৯২৬ সালে মস্কোয় হে ঝিহুয়ার গর্ভে জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি বেইজিং আদর্শ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষাদানের আগে মস্কো থেকে ১৯৪৯-১৮৫৩ সালে উচ্চ-শিক্ষা লাভ করেন। ২০০৯ সালে অসুস্থতার দরুন তিনি মৃত্যু বরণ করেন।
লাল তারকা পদক (১ম শ্রেণী) (১৯৩৩)
আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের বিজয় পদক (১ম শ্রেণী পদক) (১৯৫৫)
১লা আগস্ট পদক (১ম শ্রেণী পদক) (১৯৫৫)
স্বাধীনতা এবং মুক্তির পদক (১ম শ্রেণী পদক) (১৯৫৫)
আজাদী পদক (১ম শ্রেণী পদক) (১৯৫৫)
|শিরোনাম=
অনুপস্থিত বা খালি (সাহায্য)
|তারিখ=
(সাহায্য)