টউঙ্গু တောင်ငူမြို့ | |
---|---|
শহর | |
মিয়ানমারে অবস্থান | |
স্থানাঙ্ক: ১৮°৫৬′ উত্তর ৯৬°২৬′ পূর্ব / ১৮.৯৩৩° উত্তর ৯৬.৪৩৩° পূর্ব | |
দেশ | মিয়ানমার |
বিভাগ | বাগো অঞ্চল |
জেলা | টাউঙ্গু জেলা |
প্রতিষ্ঠা | ১৭ এপ্রিল, ১২৭৯ |
সরকার | |
• ধরন | জেলা সরকার ও শহরাঞ্চল সরকার |
জনসংখ্যা (২০১৪)[১] | |
• পৌর এলাকা | ১,০৮,৫৬৯ |
• নৃগোষ্ঠী | বামার কারেন |
• Religions | Theravada Buddhism Christianity |
সময় অঞ্চল | মায়ানমার মান সময় (ইউটিসি+৬:৩০) |
টাউঙ্গু (বর্মী: တောင်ငူမြို့; স'গাও কারেন: တီ အူ; টউঙ্গু হিসেবেও লেখা হয়) ইয়াঙ্গুন থেকে ২২০ কিলোমিটার দূরে মিয়ানমারের বাগো অঞ্চলের একটি শহর। এর পূর্ব এবং পশ্চিমে পর্বতমালা আছে এবং এটি বাগো অঞ্চলের উত্তর-পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত। এই শহরের প্রধান শিল্প হলো বনজ পণ্য। পাহাড়ে সেগুনসহ অন্যান্য কাঠ পাওয়া যায়।
টউঙ্গু রাজবংশের জন্য শহরটি বর্মী ইতিহাসে বিখ্যাত। এই রাজবংশ ১৬শ থেকে ১৮শ শতাব্দী পর্যন্ত ২০০ বছরেরও বেশি সময় মিয়ানমার শাসন করে। টাউঙ্গু ১৫১০-১৫৩৯ এবং ১৫৫১-১৫৫২ সালে বার্মার রাজধানী ছিল।
টাউঙ্গু শহর হলো সামরিক বাহিনীর দক্ষিণ কমান্ড বিভাগ অঞ্চলের কেন্দ্রীয় কমান্ড। হানতাওয়াদি ইউনাইটেড ফুটবল ক্লাব টাউঙ্গুতে অবস্থিত।
টাউঙ্গুর পালি নাম হলো কেতুমাদি (ကေတုမဒီ)।[২]
দক্ষিণ দিকে সম্প্রসারণের অংশ হিসাবে পাগান সাম্রাজ্যের শেষের দিনগুলোতে ১২৭৯ সালে টাউঙ্গু প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ১২৮৭ সালে পাগান সাম্রাজ্যের পতনের পরে, টাউঙ্গু মিনসেইং রাজ্য এবং পরে পিন্যা রাজ্যের অধীনে আসে। ১৩৫৮ সালে টাউঙ্গু সাফল্যের সাথে বিদ্রোহ করেছিল এবং ১৩৬৭ সাল পর্যন্ত স্বাধীন থাকে। এরপর আভা রাজ্যের নামমাত্র অংশ হয়ে যায়। এর শাসকরা বৃহত্তর আভা ও হানতাওয়াদি রাজ্যের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি করে স্বায়ত্তশাসন বজায় রেখেছিল। ১৪৭০ সালে, আভা আরও একটি বিদ্রোহ বাতিল করে এবং বিদ্রোহকে পরাজিতকারী জেনারেল, সিথু কিয়াউতিনকে গভর্নর হিসেবে পদোন্নতি দেন। সিথু কিয়াউতিনের নাতি মিংগি নিয়ো ১৪৮৫ সালে টাউঙ্গুর গভর্নর হন। মিংগি নিয়োর নেতৃত্বে রাজত্বটি শক্তিশালী হয়ে ওঠে। ১৫১০ সালের অক্টোবরে মিংগি নিয়ো আনুষ্ঠানিকভাবে আভা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে টাউঙ্গু রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন।[৩]
মিংগি নিয়ের উত্তরসূরীরা তাবিনেশোয়েহতি এবং বায়িনাউং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ইতিহাসের বৃহত্তম সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছিল।[৪] তবে টাউঙ্গু বেশিদিন রাজধানী ছিল না। ১৫৯৯ সালে তাবিনেশোয়েহতি রাজ্যের রাজধানী পেগুতে (বাগো) স্থানান্তরিত করেন। ১৫৯৯ সালে টাউঙ্গুর দ্বিতীয় ভাইসরয় মিনিয়ে থিহাথু নিজেকে রাজা হিসেবে ঘোষণা করার পর শহরটি স্বল্প সময়ের জন্য আবারও একটি রাজধানী হয়। ১৫৯৯ সালের ডিসেম্বরে, পর্তুগিজ সৈন্যদের সহায়তায় আরাকানিজ সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় টাউঙ্গুর বাহিনী বাগোকে আক্রমণ করে। ১৬০৯ সালে নাটশিনাউং যখন টাউঙ্গুর সিংহাসনে আরোহণ করে, তখন বিদ্রোহী নগররাষ্ট্র আরও দশ বছর ধরে স্বাধীন ছিল। পরের বছর, রাজা আনউকপেটলুন টাউঙ্গুকে দখল করেছিলেন এবং শাসকদের বংশের অবসান ঘটিয়েছিলেন।[৫] কিছু দৃশ্যমান ঐতিহাসিক নিদর্শন এখনো আছে। দক্ষিণ প্রাচীরের অংশ ব্যতীত ইটের শহরের প্রাচীরের চারদিক এখনো রয়েছে। ৯.৬ মিটার প্রশস্ত দুর্পগরিখার শুধুমাত্র পূর্ব দিকের একটি অংশটি এখনও বজায় রয়েছে।
উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে, টাউঙ্গু কোনবাউং রাজদের দ্বারা নিযুক্ত স্থানীয় গভর্নর দ্বারা পরিচালিত ছিল। টাউঙ্গু জেলাতে আজকের প্যিনমানা (এবং নাইপ্যিডাও) অঞ্চল সহ ৫২টি ওয়ার্ড ছিল। দ্বিতীয় অ্যাংলো-বার্মিজ যুদ্ধের পরে জেলাটিকে দুইভাগে বিভক্ত করা হয়েছিল। ব্রিটিশরা টাউঙ্গু শহর সহ দক্ষিণের অর্ধেক অংশ দখল করেছিল এবং প্যিনমানা ও ইলা সহ উত্তর অংশটি বর্মীদের নিয়ন্ত্রণে ছিল।[৬]
১৯৪০ সালে, ব্রিটিশ রয়্যাল এয়ার ফোর্স শহরের উত্তরে একটি বিমানঘাঁটি তৈরি করেছিল। এই বিমানঘাঁটি ১৯৪১ সালের আগস্ট থেকে ফেব্রুয়ারি ১৯৪২ পর্যন্ত প্রথম আমেরিকান স্বেচ্ছাসেবক দলের জন্য প্রশিক্ষণ ও সহায়তা কেন্দ্র হিসাবে ব্যবহৃত হয়। আমেরিকান এই দল জনপ্রিয়ভাবে 'ফ্লায়িং টাইগার' বা 'উড়ন্ত বাঘ' হিসাবে পরিচিত ছিল।২০১০ সালের ১৬ অক্টোবর শহরের অনেকগুলো স্থান পুনর্গঠন ও সংস্কারের মধ্য দিয়ে টাউঙ্গুর ৫০০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করা হয়।[৩]
কোপেন জলবায়ু শ্রেণিবিন্যাস অনুযায়ী, টাউঙ্গুর ক্রান্তীয় সাভানা জলবায়ু রয়েছে। এর জলবায়ু ক্রান্তীয় মৌসুমি জলবায়ুর কাছাকাছি। সারা বছরের তাপমাত্রা উষ্ণ। বর্ষার কয়েক মাস আগে (মার্চ-মে) অনেক গরম থাকে এবং সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৫° সে (৯৫ ° ফাঃ) ছাড়িয়ে যায়। এখানে শীতকালীন শুকনো মরসুম (নভেম্বর-মার্চ) এবং গ্রীষ্মকালীন ভেজা মরসুম (এপ্রিল-অক্টোবর) থাকে।
টাউঙ্গু (১৯৮১–২০১০)-এর আবহাওয়া সংক্রান্ত তথ্য | |||||||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
মাস | জানু | ফেব্রু | মার্চ | এপ্রিল | মে | জুন | জুলাই | আগস্ট | সেপ্টে | অক্টো | নভে | ডিসে | বছর |
সর্বোচ্চ রেকর্ড °সে (°ফা) | ৩৫.৬ (৯৬.১) |
৪০.০ (১০৪.০) |
৪২.৮ (১০৯.০) |
৪২.৮ (১০৯.০) |
৪২.২ (১০৮.০) |
৩৮.৯ (১০২.০) |
৩৭.২ (৯৯.০) |
৩৬.১ (৯৭.০) |
৩৭.২ (৯৯.০) |
৩৭.২ (৯৯.০) |
৩৫.০ (৯৫.০) |
৩৮.৯ (১০২.০) |
৪২.৮ (১০৯.০) |
সর্বোচ্চ গড় °সে (°ফা) | ৩০.৯ (৮৭.৬) |
৩৩.৯ (৯৩.০) |
৩৬.৬ (৯৭.৯) |
৩৭.৯ (১০০.২) |
৩৫.১ (৯৫.২) |
৩১.১ (৮৮.০) |
৩০.২ (৮৬.৪) |
৩০.১ (৮৬.২) |
৩১.৬ (৮৮.৯) |
৩২.৭ (৯০.৯) |
৩১.৫ (৮৮.৭) |
৩০.২ (৮৬.৪) |
৩২.৭ (৯০.৯) |
সর্বনিম্ন গড় °সে (°ফা) | ১৫.০ (৫৯.০) |
১৬.৫ (৬১.৭) |
২০.৪ (৬৮.৭) |
২৪.৩ (৭৫.৭) |
২৪.৬ (৭৬.৩) |
২৩.৯ (৭৫.০) |
২৩.৭ (৭৪.৭) |
২৩.৮ (৭৪.৮) |
২৩.৮ (৭৪.৮) |
২৩.৩ (৭৩.৯) |
২০.৪ (৬৮.৭) |
১৬.৫ (৬১.৭) |
২১.৪ (৭০.৫) |
সর্বনিম্ন রেকর্ড °সে (°ফা) | ৮.৩ (৪৬.৯) |
৮.৩ (৪৬.৯) |
১২.২ (৫৪.০) |
১৬.১ (৬১.০) |
১৩.৯ (৫৭.০) |
১৮.৩ (৬৪.৯) |
২১.১ (৭০.০) |
২০.০ (৬৮.০) |
১৭.৮ (৬৪.০) |
১৭.৮ (৬৪.০) |
১২.২ (৫৪.০) |
৯.৪ (৪৮.৯) |
৮.৩ (৪৬.৯) |
বৃষ্টিপাতের গড় মিমি (ইঞ্চি) | ২.৬ (০.১০) |
৪.০ (০.১৬) |
৭.৩ (০.২৯) |
৩২.৬ (১.২৮) |
২০৪.৩ (৮.০৪) |
৩৫৫.৯ (১৪.০১) |
৪১৭.৭ (১৬.৪৪) |
৪৫১.৭ (১৭.৭৮) |
২৮২.৫ (১১.১২) |
১৪৯.৯ (৫.৯০) |
৪৮.০ (১.৮৯) |
২.৬ (০.১০) |
১,৯৫৯.১ (৭৭.১৩) |
উৎস ১: Norwegian Meteorological Institute[৭] | |||||||||||||
উৎস ২: Sistema de Clasificación Bioclimática Mundial (records)[৮] |
২০১৪ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী টাউঙ্গুর জনসংখ্যা ছিল ১,০৮,৫৬৯ জন। ১৯৮৩ সালে ছিল ৬৫,৮৫১ জন।[১]
টাউঙ্গুর সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠী হলো বামার (বার্মান)। শহরের পূর্ব দিকে কিছুসংখ্যক কায়িন (কারেন) গোষ্ঠীও রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে চীনা, ভারতীয়, শান এবং কায়াহ জনগোষ্ঠী।
বেশিরভাগ বাসিন্দাই থেরবাদ বৌদ্ধ। এরপরে আছে ব্যাপ্টিস্ট ও রোমান ক্যাথলিক খ্রিস্টান। টাউঙ্গুতে কারেন খ্রিস্টান অ্যাসোসিয়েশনের কয়েকটি সদরদপ্তর ও গির্জা রয়েছে।
টাউঙ্গু যাওয়ার প্রধান পরিবহন হলো রেলপথ ও মোটরযান।
টাঙ্গু রেলওয়ে স্টেশনটি মিয়ানমার রেলপথের প্রধান উত্তর লাইনে অবস্থিত এবং টাউঙ্গু হাইওয়ে বাস স্টেশনটি দেশীয় বাস লাইন দ্বারা পরিবেশন করা হয়।
ইন্ট্রা শহর পরিবহনটি মূলত একটি বৃত্তাকার রেল লাইনের মাধ্যম যা টাউঙ্গু জেলা এবং বাস লাইনের আশেপাশে সেবা দেয়।
দুটি প্রধান স্থলসেতু রয়েছে: সীততাং নদী ও কাফং নদীর ওপরে।
টাউঙ্গু বিমানবন্দর এই অঞ্চলের একমাত্র বিমানবন্দর এবং মিয়ানমার বিমান বাহিনীর সামরিক-একমাত্র বিমান ঘাঁটি। এমএএফ নং.৪৭ হেলিকপ্টার স্কোয়াড্রন এই বিমানবন্দরে অবস্থান করছে।
টাঙ্গুর এগারোটি উচ্চ বিদ্যালয় রয়েছে।