টেম্পলটন পুরস্কার একটি স্যার জন টেম্পলটনের নামে প্রদত্ত একটি বার্ষিক পুরস্কার। স্যার জন টেম্পলটনের মানবহিতৈষী দর্শনকে ("মহাবিশ্বের গভীরতম রহস্য ও মানবজাতির অবস্থান অনুসন্ধানের জন্য বিজ্ঞানের শক্তিকে কাজে লাগানো এবং এতে উদ্দেশ্য নিহিত করা") সামনে রেখে কাজ করে দৃষ্টান্তমূলক সাফল্য লাভ করা জীবিত ব্যক্তিদের এই পুরস্কারের জন্য যোগ্য বিবেচনা করা হয়। জন টেম্পলটন ১৯৭২ সালে পুরস্কার চালু করেন এবং তিনিই পুরস্কারের অর্থের জোগান দিতেন ও নিয়ন্ত্রণ করতেন। বর্তমানে টেম্পলটনের অনুসারীরা পুরস্কারের অর্থের জোগান দিলেও মূলত জন টেম্পলটন ফাউন্ডেশন পুরস্কার প্রদান নিয়ন্ত্রণ করে।[১]
প্রথম দিকে শুধুমাত্র ধর্মের জন্য কাজ করা মানুষেরাই পুরস্কার পেতেন। ১৯৭৩ সালে মাদার তেরেসা প্রথম টেম্পলটন পুরস্কার লাভ করেন। কিন্তু ১৯৮০ এর দশক থেকে ধর্মের সাথে সাথে বিজ্ঞান নিয়ে কাজ করা মানুষদেরও পুরস্কারপ্রাপ্তির পথ প্রশস্ত হয়।[২] ২০০১ সাল পর্যন্ত এই পুরস্কারের নাম ছিল "টেম্পলটন প্রাইজ ফর প্রোগ্রেস ইন রিলিজিওন" ("ধর্মের অগ্রগতির জন্য টেম্পলটন পুরস্কার")। ২০০২ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত একে বলা হতো "টেম্পলটন প্রাইজ ফর প্রোগ্রেস টুওয়ার্ড রিসার্চ অর ডিসকভারিজ অ্যাবাউট স্পিরিচুয়াল রিয়েলিটিজ" ("আধ্যাত্মিক বাস্তবতার অগ্রগতির লক্ষ্যে গবেষণা বা উদ্ভাবনের জন্য টেম্পলটন পুরস্কার")।[৩][৪]হিন্দু, খ্রিস্টান, ইহুদি, বৌদ্ধ ও ইসলাম ধর্মাবলম্বীরাও এই পুরস্কার পেয়েছেন এবং এই পুরস্কারের বিচারক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।[৫]
টেম্পলটন পুরস্কারের অর্থমূল্য এমনভাবে নির্ধারণ করা হয়, যেন তা নোবেল পুরস্কারের অর্থমূল্যের চেয়ে বেশি হয়। দ্য ইকোনমিস্ট-এর মতে, টেম্পলটনের ধারণা ছিল যে নোবেল পুরস্কারে আধ্যাত্মিকতা উপেক্ষিত।[৬] ২০১৯ সালে টেম্পলটন পুরস্কারের অর্থমূল্য ছিল ১.১ মিলিয়ন পাউন্ড (£)।[৭] সাধারণত বাকিংহাম প্রাসাদে বিশেষ অনুষ্ঠান আয়োজনের মাধ্যমে প্রিন্স ফিলিপ পুরস্কার হস্তান্তর করেন।[৮]
টেম্পলটন পুরস্কারকে অত্যন্ত সম্মানজনক[৯] ও আকাঙ্ক্ষিত[১০] বিবেচনা করা হয়। দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট একে ধর্মের ক্ষেত্রে সবচেয়ে সম্মানজনক পুরস্কার বলে উল্লেখ করে।[১১] তবে নাস্তিক বিজ্ঞানীদের মধ্যে রিচার্ড ডকিন্স,[১২]হ্যারি ক্রোটো[১৩] এবং জেরি কোয়েন পুরস্কারটিকে "বিজ্ঞানের সাথে ধর্মের সুস্পষ্ট সীমারেখার লঙ্ঘনকারী" এবং "শুধুমাত্র ধার্মিক বিজ্ঞানী কিংবা ধর্মের নামে ভালো কথা বলা বিজ্ঞানীদেরই এই পুরস্কার প্রদান করা হয়" বলে সমালোচনা করেন।[১৪] ২০১১ সালে পুরস্কারবিজয়ী মার্টিন রিজ নিজের এবং অন্য কয়েকজন বিজেতার নাস্তিকতার প্রতি ইঙ্গিত করে এই সমালোচনা প্রত্যাখ্যান করে বলেন, "মনোবিজ্ঞান, বিবর্তনমূলক জীববিজ্ঞান এবং অর্থনীতিতে পুরস্কারপ্রাপ্তিকে কোনোভাবেই ধর্মে উৎসাহদান বলে বিবেচনা করা যায় না"।[১৪]
↑ওয়ালড্রপ, এন মিশেল (১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১১)। "Religion: Faith in Science" [ধর্ম: বিজ্ঞানে বিশ্বাস]। নেচার (ইংরেজি ভাষায়)। ৪৭০ (৭৩৩৪): ৩২৩–৩২৫। ডিওআই:10.1038/470323a। পিএমআইডি21331019।
↑এনম্যান, চার্লস (৮ জুলাই ২০০৮)। "Templeton Dies" [মারা গেলেন টেম্পলটন]। কানাডা.কম (ইংরেজি ভাষায়)। অটোয়া সিটিজেন। ৯ মে ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৯ জুলাই ২০০৯।
↑"Judges" [বিচারকমণ্ডলী]। টেম্পলটন পুরস্কার (ইংরেজি ভাষায়)। ওয়েস্ট কনশোহোকেন, পেনসিলভানিয়া: টেম্পলটন ফাউন্ডেশন। সংগ্রহের তারিখ ২ জুলাই ২০০৯।
↑"Obituary – John Templeton" [শোকসংবাদ - জন টেম্পলটন]। দ্য ইকোনমিস্ট (ইংরেজি ভাষায়)। লন্ডন। ১৭ জুলাই ২০০৮। সংগ্রহের তারিখ ২ জুলাই ২০০৯।
↑"Sir John Templeton, 1912–2008"। টেম্পলটন প্রাইজ। ওয়েস্ট কনশোহোকেন, পেনসিলভানিয়া: টেম্পলটন ফাউন্ডেশন। সংগ্রহের তারিখ ১৮ নভেম্বর ২০১৯।
↑শ্নাইডার, নাথান (৩ জুন ২০১০)। "God, Science and Philanthropy"। দ্য নেশন। নিউ ইয়র্ক। ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩ জুলাই ২০২০।
↑"Current Winner"। টেম্পলটন প্রাইজ। ওয়েস্ট কনশোহোকেন, পেনসিলভানিয়া: জন টেম্পলটন ফাউন্ডেশন। ১৯ মার্চ ২০১৯। ১৯ মার্চ ২০০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৯ মার্চ ২০১৯।
↑ কখ"Previous Winners"। টেম্পলটন প্রাইজ। ওয়েস্ট কনশোহোকেন, পেনসিলভানিয়া: টেম্পলটন ফাউন্ডেশন। ১১ এপ্রিল ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩ জুলাই ২০০৭।
"Previous Winners"। Templeton Prize। West Conshohocken, Pennsylvania: Templeton Foundation। ১১ এপ্রিল ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩ জুলাই ২০০৭।