টোলম্যান-অপেনহাইমার-ভোলকফ সীমা (Tolman-Oppenheimer-Volkoff limit বা সংক্ষেপে TOV limit) বলতে কোনও শীতল, অ-ঘূর্ণায়মান নিউট্রন তারার ভরের সর্বোচ্চ সীমাকে বোঝায়, যা শ্বেত বামন নক্ষত্রের চন্দ্রশেখর সীমার সথে তুলনীয়। নিউট্রন তারার সংশ্লেষের কারণে প্রথম মহাকর্ষীয় তরঙ্গ উৎপন্নের ঘটনা (GW 170817) পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে (যা সংশ্লেষিত হওয়ার পরে কয়েক সেকেন্ডের মধ্য কৃষ্ণ গহ্বরে পরিণত হয় বলে মনে করা হয়) ধারণা করা হয় যে সীমাটি সৌর ভর (M) -এর ২.২৭ গুণের কাছাকাছি। যুগ্ম নক্ষত্রের একটি নিউট্রন তারাকে (PSR J2215+5135) পরিমাপ করে জানা যায় যে এর ভর এই সীমাটির কাছাকাছি বা কিছুটা বেশি, অর্থাৎ, সৌর ভর M-এর ২.২৭+০.১৭
−০.১৫ গুণ।
একটি আরও নিশ্চিত পরিমাপের মাধ্যমে একটি শ্বেত বামন দ্বারা গ্রাসকৃত একটি পালসার নক্ষত্র PSR J0740+6620-এর পরিমাপকৃত ভর দাঁড়ায় ২.১৪+০.১০
−০.০৯ M (সৌর ভরের ২.১৪+০.১০
−০.০৯ গুণ)।
পূর্ববর্তী তাত্ত্বিক গবেষণাকর্মের মাধ্যমে প্রাপ্ত সীমাটি ছিল সৌর ভরের প্রায় ১.৫ থেকে ৩.০ গুণ (1.5 থেকে 3.0 M)-এর মধ্যে, যেখানে প্রকৃত নক্ষত্রের ভর ১৫ থেকে ২০ M ধরা হয় । অতি দ্রুত ঘূর্ণয়মান নিউট্রন তারার ক্ষেত্রে সীমাটি ১৮-২০% অবধি বৃদ্ধি পায় বলে মনে করা হয়।
শীতল (তাপীয় চাপ দ্বারা সমর্থিত নয়) নিজ-ভারের দ্বারা চালিত বস্তুর একটি পরম সর্বোচ্চ ভর রয়েছে এমন ধারণার পক্ষে ল্যেভ লান্দাউ ১৯৩২ সালে কাজ শুরু করেন। তিনি পাউলির অপবর্জন নীতির ভিত্তিতে যুক্তি দিয়েছিলেন। পাউলির অপবর্জন নীতি অনুযায়ী পর্যাপ্ত পরিমাণ সংকুচিত পদার্থের ফার্মিয়োনিক কণাগুলি শক্তির এতো উচ্চতর দশা দখলে বাধ্য হবে যে আপেক্ষিক গতিশীল অবদানের (RKC) সাথে তুলনা করলে তাদের স্থির ভরের অবদান অতি নগণ্য মনে হবে। RKC কোয়ান্টাম তরঙ্গদৈর্ঘ্য λ দ্বারা নিরূপিত হয়, গড় আন্ত-আণবিক বিভাজনের ক্রমানুসারে। প্ল্যাঙ্ক ইউনিটগুলির ক্ষেত্রে, হ্রাসপ্রাপ্ত প্ল্যাঙ্কের ধ্রুবক ħ, আলোর গতিবেগ c এবং মহাকর্ষ ধ্রুবক G সবাই একত্রিত হয়ে একটিতে পরিণত হয়, যেখানে প্রদত্ত চাপের একটি পাল্টা চাপ, মোটামুটি,
থাকবে। এই চাপটিকে মাধ্যাকর্ষণ প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় চাপের মাধ্যমে ভারসাম্যপূর্ণ হতে হয়। M ভরের বস্তুর জন্য মাধ্যাকর্ষণ প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় চাপ মোটামুটিভাবে ভিরিয়াল উপপাদ্য অনুসারে,
হবে, যেখানে ρ ঘনত্ব। এখানে ঘনত্ব, ρ = +m/λ৩, এর মাধ্যমে ρ এর মান পাওয়া যায়, এখানে, m প্রতিটি কণা সংশ্লিষ্ট ভর। এটি প্রতীয়মান হয় যে এক্ষেত্রে তরঙ্গদৈর্ঘ্য বাতিল হয়ে যায় যাতে এটি আনুমানিক ভর সীমার একটি খুব সাধারণ গঠনের সূত্র,
সমর্থন করে। এখানে m কে প্রোটনের ভর হিসেবে ধরা যেতে পারে। এটি শ্বেত বামন নক্ষত্রের ক্ষেত্রেও (চন্দ্রশেখর সীমা) প্রযোজ্য যেখানে চাপ সরবরাহকারী ফার্মিয়োনিক কণাগুলি হলো ইলেকট্রন। এর কারণ নিউক্লিয়াসই ভর ঘনত্ব সরবরাহ করে যেখানে নিউট্রন এবং প্রোটন গুলি প্রায় সমান সংখ্যক থাকে। একইভাবে প্রোটন গুলিকেও, চার্জ নিরপেক্ষতার জন্য, অবশ্যই বাইরের ইলেক্ট্রনের সমান সংখ্যক হতে হবে।
নিউট্রন তারার ক্ষেত্রে রিচার্ড টোলম্যানের কাজের ওপর ভিত্তি করে রবার্ট অপেনহাইমার এবং জর্জ ভোলকফ ১৯৩৯ সালে প্রথমবারের মতো এই সীমাটি কার্যকর করেন। অপেনহাইমার ও ভোলকফ অনুমান করেন যে নিউট্রন তারার নিউট্রনগুলি অবক্ষিপ্ত পদার্থ শীতল ফার্মি গ্যাস গঠন করে। এর ফলে তাঁরা প্রায় ০.৭ M-এর একটি সীমা নির্ধারণ করেছিলেন যা ছিল শ্বেত বামনের চন্দ্রশেখর সীমার চেয়েও কম। নিউট্রনগুলির মধ্যে শক্তিশালী নিউক্লীয় বিকর্ষণ বল থেকে কৃত আধুনিক হিসাব অনুযায়ী এর মান পূর্বের থাকে অনেক বেশি, প্রায় ১.৫ থেকে ৩.০ M এর মধ্যে। মানটির অনিশ্চয়তা এই সত্যটি প্রতিফলিত করে যে অত্যন্ত ঘন পদার্থের দশার সমীকরণ এখনো খুব ভালোভাবে জ্ঞাত নয়। PSR J0348+0432 নামক পালসারটির ভর ২.০১ ± ০.০৪ সৌর ভর, যা TOV তে গবেষণামূলক সর্বনিম্ন সীমা।