ট্রাইগ্লিসেরাইড এক ধরনের এস্টার জাতীয় জৈব যৌগ যা গ্লিসারল এবং তিনটি স্নেহজ অম্ল (ফ্যাটি অ্যাসিড) অণু নিয়ে গঠিত।[১] ট্রাইগ্লিসেরাইড মানুষ ও অন্যান্য মেরুদণ্ডী প্রাণীর দেহে প্রাপ্ত চর্বি বা মেদের প্রধান উপাদান। এছাড়া এটি উদ্ভিজ্জ স্নেহ পদার্থ বা তেলেরও প্রধান উপাদান।[২] মানবদেহের রক্তেও ট্রাইগ্লিসেরাইড থাকে। খাদ্যগ্রহণের পরে শর্করা বা মেদ পদার্থ থেকে প্রাপ্ত অতিরিক্ত শক্তি বা ক্যালরি মানুষের যকৃতে ট্রাইগ্লিসেরাইডে রূপান্তরিত হয় এবং এগুলি মেদকলার উপাদান হিসেবে জমা থাকে। মাত্রাতিরিক্ত ট্রাইগ্লিসারাইড উৎপাদিত হলে রক্তেও এর পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে। এছাড়া মানবচর্মের ঘর্মমেদগ্রন্থি থেকে নিঃসৃত তৈলাক্ত পদার্থ বা সিবামেও ট্রাইগ্লিসেরাইড থাকে।[৩]
ট্রাইগ্লিসেরাইডগুলিতে সাধারণত সম্পৃক্ত ও অসম্পৃক্ত - এই দুই শ্রেণীতে ভাগ করা হয়। সম্পৃক্ত ট্রাইগ্লিসেরাইডের অণুতে C=C কার্যকরী দলটি অনুপস্থিত থাকে। অন্যদিকে অসম্পৃক্ত ট্রাইগ্লিসেরাইডের অণুতে এক বা একাধিক C=C কার্যকরী দল থাকে। অসম্পৃক্ত মেদগুলি সাধারণত কক্ষ তাপমাত্রায় তরল থাকে কারণ এগুলির গলনাঙ্ক নিম্ন।
রক্তে মাত্রাতিরিক্ত ট্রাইগ্লিসেরাইড থাকলে হৃদরোগ, সন্ন্যাসরোগ (স্ট্রোক), ধমনীপ্রাচীর কঠিনীভবন (আর্থেরোস্ক্লেরোসিস), ইত্যাদি হতে পারে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় কোলেস্টেরল শিক্ষা কর্মসূচি রক্তে ট্রাইগ্লিসেরাইডের মাত্রা সম্পর্কে নিম্নলিখিত নির্দেশনাগুলি প্রদান করেছে:[৪][৫]
মাত্রা | ব্যাখ্যা | |
---|---|---|
(মিগ্রা/ডেলি) | (মিলিমোল/লি) | |
< ১৫০ | < ১.৭০ | স্বাভাবিক সীমা – নিম্ন ঝুঁকি |
১৫০–১৯৯ | ১.৭০–২.২৫ | স্বাভাবিক সীমার চেয়ে সামান্য বেশি |
২০০–৪৯৯ | ২.২৬–৫.৬৫ | কিছু ঝুঁকি |
৫০০ বা তার বেশি | > ৫.৬৫ | অতি উচ্চ – উচ্চ ঝুঁকি |
৮ থেকে ১২ ঘণ্টা উপবাসের পরে রক্তে ট্রাইগ্লিসেরাইডের মাত্রা পরীক্ষা করা হয়। আহারের পরে রক্তে ট্রাইগ্লিসেরাইডের মাত্রা সাময়িকভাবে বেশি থাকে।
মার্কিন হৃৎপিণ্ড সংস্থা (American Heart Association) হৃৎপিণ্ডের সুস্বাস্থ্য রক্ষার্থে রক্তে ট্রাইগ্লিসেরাইডের মাত্রা ১০০ মিগ্রা/ডেসিলিটার (১.১ মিলিমোল/লিটার) বা তার কম রাখতে সুপারিশ করেছে।[৬]