ডায়াচৌম্বক পদার্থ (তিরশ্চৌম্বক) চৌম্বক ক্ষেত্র দ্বারা বিকর্ষীত হয়; কোন প্রযুক্ত চুম্বক ক্ষেত্র এদের মাঝে বিপরীত দিকে একটি প্রণোদিত চুম্বক ক্ষেত্র উৎপন্ন করে যা এই বিকর্ষনের কারণ। অন্যদিকে ফেরোচৌম্বক পদার্থ (অয়শ্চৌম্বক) এবং প্যারাচৌম্বক পদার্থ (পরাশ্চৌম্বক) একটি চুম্বক ক্ষেত্র দ্বারা আকর্ষিত হয়। ডায়াচৌম্বকত্ব হলো একটি কোয়ান্টাম বলবৈজ্ঞানিক ক্রিয়া যা সকল উপাদানেই সংঘটিত হয়; যখন শুধুমাত্র ডায়াচুম্বকত্বের কথা বলা হয় তখন এদের ডায়াচুম্বক পদার্থ বলে। ফেরোচৌম্বক পদার্থ ও প্যারাচৌম্বক পদার্থগুলির ক্ষেত্রে এদের দুর্বল বিকর্ষণ বল তাদের আকর্ষক চৌম্বকীয় দ্বিমেরু বলের প্রভাবে প্রতিহত হয়ে যায়। বেশিরভাগ পদার্থে ডায়াচুম্বকত্ব অত্যন্ত দুর্বল যা শুধুমাত্র গবেষণাগারের অত্যন্ত সংবেদনশীল যন্ত্র দ্বারাই শনাক্ত করা যায়। যদিও অতিপরিবাহীর ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম দেখা যায়, কারণ এরা একটি চৌম্বক ক্ষেত্রতে এর অভ্যন্তর থেকেই বিকর্ষণ করে।
ডায়াচুম্বকত্ব প্রথম আবিষ্কৃত হয় ১৭৭৮ সালে যখন অ্যান্টন ব্রুগম্যানস চৌম্বক ক্ষেত্রে বিসমাথের বিকর্ষণ লক্ষ করেন।[১] ১৮৮৫ সালে মাইকেল ফ্যারাডে দেখান যে এটি পদার্থের একটি বৈশিষ্ট্য এবং পর্যবসিত করেন যে প্রত্যেক পদার্থই প্রয়োগ কৃত চুম্বক ক্ষেত্রের প্রতি সারা দেয় (হয় পরাশ্চৌম্বকীয় অথবা তিরশ্চৌম্বকীয় ভাবে)। উইলিয়াম হিউয়েলের পরামর্শে ফ্যারাডে এই ক্রিয়াকে ডায়াচুম্বকীয় (উপসর্গ 'ডায়া'র অর্থ: দিয়ে) এবং পরবর্তীতে ডায়াচুম্বকত্ব নামটি দেন ।[২][৩]
রসায়নে কোনো ডায়াচৌম্বক কণা (পরমাণু, আয়ন বা অণু) শনাক্তকরণে একটি সাধারণ চলতি পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়:[৪] যদি কণাটির সকল ইলেকট্রন জোড় থাকে তবে তা তিরশ্চৌম্বকীয় এবং অন্যথায় তা পরাশ্চৌম্বকীয়।
মূলত সকল পদার্থই ডায়াচৌম্বকীয় হলেও কিছু পদার্থের ফেরোচৌম্বকত্ব বা প্যারাচৌম্বকত্ব এত প্রকট থাকে যে এদের প্রভাবে ডায়াচুম্বকত্বের প্রভাব অতি নগন্য মনে হয়। তাই, যেসব পদার্থের ডায়াচুম্বকত্ব প্রকট থাকে তাদের ডায়াচুম্বক পদার্থ বলে। পানি, কাঠ ইত্যাদি পদার্থকে সাধারনত মানুষ অচুম্বকীয় মনে করলেও এরা আসলে ডায়াচুম্বক পদার্থ।
পদার্থ | χm [× 10−5 (এস.আই. একক)] |
---|---|
অতিপরিবাহী | −১০৫ |
হাইড্রাজাইন | −২০১ |
বিসমাথ(III) আয়ডাইট | −২০০.৫ |
জেনন | −৪৩.৯ |
পাইরোলাইটিক কার্বন | −৪০.৯ |
ক্রিপটন | −২৮.৮ |
আর্গন | −১৯.৬ |
বিসমাথ | −১৬.৬ |
নিয়ন | −৬.৭৪ |
পারদ | −২.৯ |
রূপা | −২.৬ |
কার্বন (হীরা) | −২.১ |
হিলিয়াম | −১.৮৮ |
সীসা | −১.৮ |
কার্বন (গ্রাফাইট) | −১.৬ |
তামা | −১.০ |
পানি | −০.৯১ |