দত্তত্রেয়া রামচন্দ্র কাপরেকার | |
---|---|
জন্ম | |
মৃত্যু | ১৯৮৬ (বয়স ৮০–৮১) দেবলালি, মহারাষ্ট্র, ভারত |
জাতীয়তা | ভারতীয় |
মাতৃশিক্ষায়তন | মুম্বাই বিশ্ববিদ্যালয় |
পেশা | শিক্ষক |
পরিচিতির কারণ | হর্ষগণিত নিয়ে গবেষণা |
দত্তত্রেয়া রামচন্দ্র কাপরেকার (১৯০৫–১৯৮৬) একজন ভারতীয় শিক্ষক ও গণিতবিদ ছিলেন যিনি সংখ্যাতত্ত্বের কাপরেকার, হর্ষদ ও দেবলালি সংখ্যা নিয়ে গবেষণা করেছেন। তিনি কাপরেকার ধ্রুবক আবিষ্কার করেন ও তার নাম অনুসারে এর নাম কাপরেকার ধ্রুবক রাখা হয়। কোন আনুষ্ঠানিক স্নাতকোত্তর শিক্ষা না থাকলেও তিনি হর্ষগণিত জগতে পরিচিত হয়ে উঠেছিলেন।[১]
কাপরেকার মহারাষ্ট্রের থানের মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছিলেন। তিনি পুনের ফার্গুসন কলেজে পড়েছিলেন। ১৯২৭ সালে তিনি গণিতে অবদানের জন্য রাংলার আর. পি. পারাঞ্জপে গণিত পুরস্কার লাভ করেন।[২]
১৯২৯ সালে মুম্বাই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হন তিনি।[৩] তিনি ১৯৩০ সাল থেকে ১৯৬২ সাল পর্যন্ত মহারাষ্ট্রের নাশিকের বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন। তিনি পুনরাবৃত্তিক সংখ্যা, বর্গ ও পূর্ণসংখ্যা নিয়ে গবেষণা করেছেন। তিনি "গণিতানন্দ" নামেও পরিচিত ছিলেন।
কাপরেকার একা একা গবেষণা করে সংখ্যার অনেক রকম ধর্ম আবিষ্কার করেন।[৪] নিজের নামে থাকা "কাপরেকার ধ্রুবক" ও "কাপরেকার সংখ্যা"র বাইরে তিনি স্বয়ং সংখ্যা, হর্ষদ সংখ্যা হর্ষদ সংখ্যা ও ডেমলো সংখ্যা নিয়েও গবেষণা করেছিলেন। তিনি কোপার্নিকাসের মোহবর্গের সাথে সম্পর্কযুক্ত বিভিন্ন মোহবর্গ নিয়ে গবেষণা করেছিলেন।[৫] গোড়ার দিকে তার আবিষ্কার ভারতীয় গণিতবিদরা গুরুত্ব সহকারে নিতেন না। তার গবেষণা মূলত নিম্ন মানের বা ব্যক্তিগত উদ্যোগে প্রকাশিত সাময়িকীতে প্রকাশিত হত। ১৯৭৫ সালে মার্টিন গার্ডনার "সাইন্টিফিক আমেরিকান" এ ম্যাথমেটিকাল গেমস শিরোনামের এক প্রবন্ধে কাপরেকারকে নিয়ে লেখার পর তার খ্যাতি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ছড়িয়ে পড়ে ও অন্যান্য গণিতবিদরা তার গবেষণা সম্পর্কে জানতে আগ্রহ হন।[১]
১৯৪৯ সালে ৬১৭৪ এর এক অদ্ভুত বৈশিষ্ট্য আবিষ্কার করেন। তার নামানুসারে সংখ্যাটিকে "কাপরেকার ধ্রুবক" বলে ডাকা হয়।[৬][৭] তিনি দেখান সে, দুই বা ততোধিক অঙ্ক নিয়ে গঠিত চার অঙ্কবিশিষ্ট সংখ্যাকে একটি প্রক্রিয়ায় বারংবার বিয়োগ করলে ৬১৭৪ আসে। ১২৩৪ সংখ্যাটি নিলে দেখা যায়:
এই প্রক্রিয়ার আবার পুনরাবৃত্তি (৭৬৪১ – ১৪৬৭ = ৬১৭৪) করলেও একই সংখ্যা আসবে। ৬১৭৪ এ পৌঁছাতে সর্বোচ্চ সাত ধাপ লাগে।
৩ অঙ্কবিশিষ্ট সংখ্যার ক্ষেত্রে এরকম ধ্রুবক হল ৪৯৫।[৭][৮]
তিনি কাপরেকার সংখ্যা নিয়েও আলোচনা করেছেন।[৯] ধনাত্মক সংখ্যার বর্গসংখ্যার দুটি অংশের যোগফল যদি তার বর্গমূলের সমান হয়, তবে তা কাপরেকার সংখ্যা নামে পরিচিত হবে। (যেমন, ৪৫ কেননা, ৪৫২=২০২৫, এবং ২০+২৫=৪৫। অন্যান্য কাপরেকার সংখ্যা হল ৯, ৫৫, ৯৯ ইত্যাদি। ) এখানে উল্লেখ থাকে যে, সংখ্যাগুলোকে অবশ্যই ধনাত্মক সংখ্যা হতে হবে। এজন্য ১০০২=১০০০০ এবং ১০০+০০ = ১০০ হওয়া সত্ত্বেও তা কাপরেকার সংখ্যা নয়। কাপরেকার সংখ্যা বের করার পদ্ধতি কাপরেকার ক্রিয়া নামে পরিচিত।
অন্যান্য কাপরেকার সংখ্যাগুলো হল:
সংখ্যা | বর্গ | যোগফল |
---|---|---|
৭০৩ | ৭০৩২ = ৪৯৪২০৯ | ৪৯৪+২০৯ = ৭০৩ |
২৭২৮ | ২৭২৮২ = ৭৪৪১৯৮৪ | ৭৪৪+১৯৮৪ = ২৭২৮ |
৫২৯২ | ৫২৯২২ = ২৮০০৫২৬৪ | ২৮+০০৫২৬৪ = ৫২৯২ |
৮৫৭১৪৩ | ৮৫৭১৪৩২ = ৭৩৪৬৯৪১২২৪৪৯ | ৭৩৪৬৯৪+১২২৪৪৯ = ৮৫৭১৪৩ |
১৯৬৩ সালে কাপরেকার স্বয়ং সংখ্যার ধারণা প্রদান করেন।[১০] এটি হল এমন এক ধরনের সংখ্যা যা অন্য কোন সংখ্যার সাথে তার অঙ্কদ্বয় যোগ করার মাধ্যমে পাওয়া যায় না। উদাহরণস্বরূপ, ২১ স্বয়ং সংখ্যা নয় কেননা একে ১৫ (১৫+১+৫=২১) থেকে পাওয়া যায়। কিন্তু, ২০ স্বয়ং সংখ্যা কেননা একে পূর্বোক্ত প্রক্রিয়ায় প্রকাশ করা যায় না। একে কখনো কখনো দেবলালি সংখ্যা নামে ডাকা হয় কেননা, কাপরেকার দেবলালিতে বাস করতেন।[১০] কিন্তু, স্বয়ং সংখ্যা নামটিই অধিক পরিচিত। কখনো কখনো একে "কলম্বীয় সংখ্যা" মামেও ডাকা হয়।
কাপরেকার হর্ষদ সংখ্যা নিয়ে আলোচনা করেছেন। হর্ষদ শব্দটি এসেছে সংস্কৃত "হর্ষ" শব্দটি থেকে যার অর্থ হল জয়। এটি হল এমন ধরনের সংখ্যা যারা তাদের অঙ্কের সমষ্টি দ্বারা বিভাজ্য। যেমন, ১২ একটি হর্ষদ সংখ্যা যা তার অঙ্কদ্বয়ের সমষ্টি ১+২=৩ দ্বারা বিভাজ্য। ১৯৭৭ সালে কানাডীয় গণিতবিদ আইভান এম. নিভেন সংখ্যাটি নিয়ে জ্ঞানগর্ভ বক্তৃতা প্রদানের পর একে "নিভেন সংখ্যা" নামে ডাকা হয়। ১, ২, ৪ ও ৬ হল পূর্ণ হর্ষদ সংখ্যা কেননা, এগুলো সব ধরনের সংখ্যা পদ্ধতিতে হর্ষদ সংখ্যা হিসেবে পরিগণিত হয়।
কাপরেকার ডেমলো সংখ্যা নিয়েও গবেষণা করেছেন।[১১] বোম্বের গ্রেট ইন্ডিয়ান পেনিনসুলা রেলওয়ে স্টেশন থেকে ৩০ মাইল দূরে অবস্থিত ডেমলো রেলওয়ে স্টেশনে বসে তিনি এই ধরনের সংখ্যা নিয়ে গবেষণা করতেন বিধায় এদের ডেমলো সংখ্যা নামে ডাকা হয়।[১] ডেমলো সংখ্যার মাঝে ১, ১২১, ১২৩২১, ১২৩৪৩২১ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য যেগুলো ১, ১১, ১১১, ১১১১ এর বর্গসংখ্যা।[১২]