ব্যক্তিগত তথ্য | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
পূর্ণ নাম | রিচার্ড পোলার্ড | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
জন্ম | ওয়েস্টহটন, ল্যাঙ্কাশায়ার, ইংল্যান্ড | ১৯ জুন ১৯১২|||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
মৃত্যু | ১৬ ডিসেম্বর ১৯৮৫ ওয়েস্টহটন, গ্রেটার ম্যানচেস্টার, ইংল্যান্ড | (বয়স ৭৩)|||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
ব্যাটিংয়ের ধরন | ডানহাতি | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
বোলিংয়ের ধরন | ডানহাতি ফাস্ট-মিডিয়াম | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
ভূমিকা | বোলার | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
আন্তর্জাতিক তথ্য | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
জাতীয় দল |
| |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
টেস্ট অভিষেক (ক্যাপ ৩১৪) | ২০ জুলাই ১৯৪৬ বনাম ভারত | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
শেষ টেস্ট | ২৭ জুলাই ১৯৪৮ বনাম অস্ট্রেলিয়া | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
ঘরোয়া দলের তথ্য | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
বছর | দল | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
১৯৩৩ - ১৯৫০ | ল্যাঙ্কাশায়ার | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
১৯৪৬/৪৭ - ১৯৪৮ | মেরিলেবোন ক্রিকেট ক্লাব (এমসিসি) | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
| ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
উৎস: ইএসপিএনক্রিকইনফো.কম, ৮ মার্চ ২০২০ |
রিচার্ড পোলার্ড (ইংরেজি: Dick Pollard; জন্ম: ১৯ জুন, ১৯১২ - মৃত্যু: ১৬ ডিসেম্বর, ১৯৮৫) ল্যাঙ্কাশায়ারের ওয়েস্টহটন এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ইংরেজ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার ছিলেন। ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। ১৯৪৬ থেকে ১৯৪৮ সময়কালে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্যে ইংল্যান্ডের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করেছেন।
ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে ল্যাঙ্কাশায়ার দলের প্রতিনিধিত্ব করেন। দলে তিনি মূলতঃ ডানহাতি ফাস্ট-মিডিয়াম বোলিং করতেন। এছাড়াও, নিচেরসারিতে ডানহাতে ব্যাটিং করতেন ডিক পোলার্ড।
১৯৩৩ সাল থেকে ১৯৫২ সাল পর্যন্ত ডিক পোলার্ডের প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান ছিল। আগস্ট, ১৯৩৩ সালে ল্যাঙ্কাশায়ারের সদস্যরূপে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে ডিক পোলার্ডের অভিষেক ঘটে। নটিংহ্যামশায়ারের বিপক্ষে অনুষ্ঠিত ঐ খেলায় তিনি এগারো নম্বরে ব্যাটিংয়ে নামেন। অপরাজিত ১৬ রান তোলার পাশাপাশি প্রতিপক্ষীয় অধিনায়ক আর্থার কারের উইকেট লাভ করেছিলেন তিনি।[১] ১৯৩৪ সালের কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশীপের শিরোপা বিজয়ী ল্যাঙ্কাশায়ার দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন। মিডিয়াম পেস বোলার হিসেবে সম্মুখসারিতে বোলিং করতেন। তবে, আঘাতের কারণে ফ্রাঙ্ক সিবলসের অনুপস্থিতিতে মৌসুমের শেষ দুই মাসে ১১ খেলায় অংশ নিতে পেরেছিলেন। ১৯.৩১ গড়ে ৩৮ উইকেট দখল করেন।[২] গ্লুচেস্টারশায়ারের বিপক্ষে খেলার দ্বিতীয় ইনিংসে দূর্দান্ত খেলেন। ৬/২১ লাভ করেন তিনি। উইজডেনে উল্লেখ করা হয় যে, তিনি বলকে নিখুঁত নিশানা বরাবর ফেলেন ও বলকে বিরাট বাঁক খাইয়ে এ সফলতা পেয়েছিলেন।[৩] ঐ পর্যায়ে এটিই তার সেরা বোলিং পরিসংখ্যান ছিল। এর পূর্বেকার তার সেরা বোলিং ছিল ২/৩১।[৪] চ্যাম্পিয়নশীপের খেলায় তিনি মোটে ১৪ রান তুলেন। কিন্তু, মৌসুম শেষে ওভালে চ্যাম্পিয়ন কাউন্টি বনাম বাদ-বাকী একাদশের খেলায় প্রথম ইনিংসে অপরাজিত ২৭ ও দ্বিতীয় ইনিংসে ২৮ রান তুলেন।[৫] বাদ-বাকী একাদশের খেলোয়াড়দেরকে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন দল বাদে বাকী কাউন্টি দলগুলো থেকে নিয়ে গঠন করা হয়েছিল।
সিবলস ও ফ্রাঙ্ক বুথের আঘাতপ্রাপ্তির কারণে ডিক পোলার্ডের খেলার সুযোগ আসে। ১৯৩৫ সালে ২৩ খেলায় অংশ নেন ও কাউন্টি ক্যাপ লাভ করেন।[৬] উইজডেনে মন্তব্য করা হয় যে, জ্যেষ্ঠ বোলারদের ছন্দহীনতাকে বেশ ভালোভাবে পুষিয়ে দিয়েছেন তিনি। বলের নিশানা, সহজাত পেস বোলিংয়ে যথেষ্ট সফল হন। শতাধিক উইকেট লাভ করতেন যদি টনসিলের কারণে সমারসেটের খেলায় মাঠের বাইরে অবস্থান না করতেন।[৭] তাসত্ত্বেও, নতুন কাউন্টি চ্যাম্পিয়ন ইয়র্কশায়ারের বিপক্ষে বাদ-বাকী দলের সদস্যরূপে খেলায় তিন উইকেট নিয়ে ঐ মৌসুমে ঠিক ১০০ উইকেট লাভের মাইলফলক স্পর্শ করেন তিনি।[৮][৯] মৌসুমের শুরুতে ডোভারে কেন্টের বিপক্ষে খেলায় নিজস্ব বোলিং পরিসংখ্যানের উত্তরণ ঘটান। সেরা বোলিং ৭/৮৭ পান ও খেলায় প্রথমবারের মতো দশ উইকেটের সন্ধান পান। খেলায় তিনি ১৭৬ রান খরচায় ১১ উইকেট পেয়েছিলেন।[১০]
১৯৩৬ সালে বয়সের ভারে ন্যূহ ও আঘাতের কারণে বেশ কয়েকজন ল্যাঙ্কাশায়ারীয় ক্রিকেটার খেলার জগৎ থেকে দূরে সড়েছিলেন। ফলশ্রুতিতে, কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশীপের পয়েন্ট তালিকায় দলের অবস্থান একাদশ হয়। ঐ সময়ে এটি দলটির সর্বনিম্ন অবস্থানের সমানে পৌঁছে।[১১][১২] উইজডেনে পোলার্ডের গুণকীর্তনে মুখরিত হয়। এতে তিনি নিজের খেলার খুব কমই ব্যাঘাত ঘটাতে পেরেছেন বলে উল্লেখ করা হয়।[১১] সবগুলো খেলায় অংশ নিয়ে ২০.১৩ গড়ে ১০৮ উইকেট পেয়েছিলেন তিনি।[৯]
গ্ল্যামারগনের বিপক্ষে দুইটি ভিন্ন খেলায় ব্যক্তিগত সেরা বোলিং পরিসংখ্যান দাঁড় করান। কার্ডিফ আর্মস পার্কে আয়োজক দলের বিপক্ষে ৭/৫৭ ও ওল্ড ট্রাফোর্ডের ফিরতি খেলায় ৮/৪২ পান।[১৩][১৪] এছাড়াও ব্যাটিংয়ে উত্তরণ ঘটিয়েছেন তিনি। ওল্ড ট্রাফোর্ডে সারের বিপক্ষে অপরাজিত ৫৮ রান ও এরপর ওভালে ফিরতি খেলায় ৫৫ রান তুলেন তিনি।[১৫][১৬] ১৯৩৬ সালে কেবলমাত্র একবারই পঞ্চাশ রানের কোটা অতিক্রম করেছিলেন।[১৭]
বিশ্বযুদ্ধ শুরু হবার পূর্বেকার তিন মৌসুমে বেশ ভালো খেলেন। ১৯৩৭ থেকে ১৯৩৯ সালে বেশ বিশ্বস্ততার পরিচয় দেন। ঐ তিন মৌসুমে ১১২, ১৪৯ ও ১১১ উইকেট পান। তন্মধ্যে, ১৯৩৮ সালে সর্বাপেক্ষা সেরা খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করেছিলেন তিনি।[৯] এ তিন বছরের অধিকাংশ সময়ই নতুন বলের সহযোগী হিসেবে এডি ফিলিপসন তাকে কার্যকর সহযোগিতা করেন। বোলিংয়ের ধরন ও পেস অনেকাংশেই তার সমমানের ছিল। তারা গতির তুলনায় নিখুঁততার দিকেই অধিক মনোনিবেশ ঘটিয়েছিলেন। বলে সিম ব্যবহার করেন ও কিছুক্ষেত্রে সুইংয়ের দিকেও ধাবিত হন। ১৯৩৮ সালে কিছুটা সময় ফিলিপসন আহত হলে ডিক পোলার্ডকে অতিরিক্ত পরিশ্রম করতে হয় ও অধিক উইকেট সংগ্রহে সহায়তা করে।[১৮] ঐ মৌসুমে পোলার্ডকে টেস্ট প্রস্তুতিমূলক খেলা হিসেবে ইংল্যান্ড ও বাদ-বাকী একাদশের খেলায় নেয়া হয়। বাদ-বাকী দলের সদস্যরূপে খেলে ৫/৫৭ পান। ইংল্যান্ড দল ৩৭৭ রান করে। তা সত্ত্বেও তাকে টেস্ট দলে নেয়া হয়নি।[১৯] তবে, লর্ডসে জেন্টলম্যান বনাম প্লেয়ার্সের খেলায় জেন্টলম্যানের সদস্যরূপে তাকে খেলানো হয়।[২০]
সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে চারটিমাত্র টেস্টে অংশগ্রহণ করেছেন ডিক পোলার্ড। ২০ জুলাই, ১৯৪৬ তারিখে ম্যানচেস্টারে সফরকারী ভারত দলের বিপক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে তার। ২২ জুলাই, ১৯৪৮ তারিখে লিডসে সফরকারী অস্ট্রেলিয়া দলের বিপক্ষে সর্বশেষ টেস্টে অংশ নেন তিনি।
সমসাময়িক অনেকের ন্যায় তারও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে ক্রিকেট জীবনের স্বর্ণালী সময় নষ্ট হয়ে যায়। তবে, স্বল্পকয়েকজন ক্রিকেটারের ন্যায় যুদ্ধ শেষ হবার পর পুনরায় স্বাভাবিক প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট খেলোয়াড়ী জীবনে ফিরে আসেন। ১৯৪৫ সালের গ্রীষ্মকালে ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ান সার্ভিসেস দলের মধ্যকার পাঁচটি ভিক্টরি টেস্টের চারটিতে খেলেন তিনি। উইজডেনে তাকে সার্জেন্ট আর. পোলার্ড নামে উল্লেখ করে মন্তব্য করা হয় যে, উভয় দলের মধ্যে তিনি ২৫ উইকেট নিয়ে শীর্ষ উইকেট সংগ্রাহক ছিলেন।[২১] সিরিজের দ্বিতীয় খেলায় প্রথম অংশ নেন। প্রথম খেলায় অস্ট্রেলীয়রা জয় পায়। প্রথম ইনিংসে সতীর্থ উদ্বোধনী বোলার জর্জ পোপ ৫/৫৮ নিয়ে তাকে ম্লান করে দেন। তবে, উইজডেনে মন্তব্য করা হয় যে, পোলার্ডের সুন্দর বলে লিন্ডসে হ্যাসেটের মাঝখানের স্ট্যাম্প ভেঙ্গে দিয়ে ইনিংসে সর্বাপেক্ষা ক্ষতিসাধন করেন তিনি।[২২] দ্বিতীয় ইনিংসে তিনি ৫/৭৬ ও পোপ ৩/৬৯ লাভ করেন। পরের খেলায় তার ক্রীড়াশৈলী আরও উন্নততর হতে থাকে। অস্ট্রেলিয়ার প্রথম ইনিংসে ৬/৭৫ পান।[২৩] সিরিজের চতুর্থ ও পঞ্চম খেলার উভয় ইনিংসেই চারটি করে উইকেট পেয়েছিলেন।
১৯৪৫ সালে বেশ কয়েকটি খেলায় অংশ নিলেও ডিক পোলার্ডকে সামরিকবাহিনী থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়নি। ফলশ্রুতিতে, ১৯৪৬ সালের প্রথমবারের মতো পূর্ণাঙ্গ মৌসুমে খুব কম খেলেন। ল্যাঙ্কাশায়ারের পক্ষে কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশীপের খেলায় মাত্র ১২ উইকেট পেলেও সবগুলো খেলা থেকে ৫৫ উইকেট দখল করেছিলেন।[২৪] অবশেষে প্রথমবারের মতো টেস্ট খেলায় অংশগ্রহণ করার সুযোগ পান। ১৯৪৬ সালে সফরকারী ভারত দলের বিপক্ষে তিন টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজের দ্বিতীয়টিতে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে ডিক পোলার্ডের। টেস্টে অংশগ্রহণের পূর্বেকার সপ্তাহে বার্ষিকাকারে জেন্টলম্যান বনাম প্লেয়ার্সের মধ্যকার খেলায় অংশ নেন। ঐ খেলায় মাত্র ৫৩ রান খরচায় নয় উইকেট লাভ করেন।[২৫] এ খেলা চলাকালে ওল্ড ট্রাফোর্ড টেস্টে তার অংশগ্রহণের বিষয়ে সেনাপ্রধানের সাথে মাঠের বাইরে আলোচনা করতে হয়।[২৬] ঐ টেস্টে তিনি দূর্দান্তভাবে সূচনা করেন। খেলার দ্বিতীয় দিনে ভারতের সংগ্রহকারী ১২৪/০ থাকা অবস্থায় একটি স্পেলে পাঁচ ওভার বোলিং করে সাত রানে চার উইকেট পান। ঐ ইনিংসে ভারতের সংগ্রহ ১৭০ রানে গুটিয়ে যায়। তিনি ২৭ ওভারে ৫/২৪ পান। তন্মধ্যে, ১৬ ওভার মেইডেন ছিল।[২৭] দ্বিতীয় ইনিংসে তিনি আরও দুই উইকেট তুলে নেন ৬৩ রানের বিনিময়ে।[২৮]
এ ফলাফলের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৪৬-৪৭ মৌসুমের অ্যাশেজ সফরের জন্যে তাকে মনোনীত করা হয়। বিল ভোসসহ তাকে এ সফরে যাবার জন্যে সেনাবাহিনী থেকে বিশেষ ছুটি দেয়া হয়।[২৯] তবে, উইজডেনে উল্লেখ করা হয় যে, স্পষ্টতই অস্ট্রেলীয় পরিবেশে পেস বোলিংয়ে দক্ষতা দেখাতে পারেননি ও ভয়ের কারণ হিসেবে নিজেকে চিত্রিত করতে পারেননি। এ সফরে ২৮ উইকেট লাভে তাকে ৩৬ রানের অধিক গড়ে রান দিতে হয়। অস্ট্রেলিয়ায় তাকে কোন টেস্টে রাখা না হলেও নিউজিল্যান্ডে বৃষ্টিবিঘ্নিত একমাত্র টেস্টে দ্বিতীয়বারের মতো খেলেন। ৭৩ রান খরচায় তিন উইকেট পান তিনি।[৩০] অস্ট্রেলিয়ায় পর্যাপ্ত দুধপান ও মধু খেয়ে পোলার্ডের ওজন দুই স্টোন বৃদ্ধি পায়।[৩১]
১৯৪৭ সালের গ্রীষ্মে টেস্ট দলে তাকে রাখা হয়নি। তবে, কাউন্টি খেলায় অন্যতম সেরা সময় অতিবাহিত করেন। এ মৌসুমে ল্যাঙ্কাশায়ার দল চ্যাম্পিয়নশীপের শিরোপা জয় করে। ১৩১ উইকেট পান তিনি। তার নিকটতম বোলার ৭৪ উইকেট পেয়েছিলেন। সবগুলো খেলায় অংশ নিয়ে উইকেট পিছু ২০ রানের কম খরচায় ১৪৪ উইকেট লাভ করেন। এ সংগ্রহটি তার খেলোয়াড়ী জীবনের দ্বিতীয় সেরা।[৯] একই মৌসুমে নিজস্ব সেরা বোলিং পরিসংখ্যান ও সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত প্রথম-শ্রেণীর রান সংগ্রহ করেছিলেন। এ দুটি সাফল্য ওল্ড ট্রাফোর্ডে উপর্যুপরী দুই খেলা থেকে আসে। প্রথমটিতে ডার্বিশায়ারের বিপক্ষে ৬৩ রান তুলেন। এ সংগ্রহটিই তার সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে একবারই ষাট রান স্পর্শ করে। অ্যালেন হোয়ারটনের সাথে সপ্তম উইকেট জুটিতে ১৪৮ রান যুক্ত করেন।[৩২] পরের খেলায় নর্দাম্পটনশায়ারের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে ফিলিপসনের সাথে বোলিং অপরিবর্তিত রেখে ৮/৩৩ পান।[৩৩]
১৯৪৮ সালে ক্রিকেট কিংবদন্তি ডোনাল্ড ব্র্যাডম্যানের অধিনায়কত্বে অস্ট্রেলিয়া দল ইংল্যান্ড গমন করে। পরবর্তীকালে দলটি অপারেজয় দল নামে পরিচিতি লাভ করে। ঐ সময়ে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে ইংরেজ ক্রিকেট অঙ্গন দূর্বল অবস্থানে পরিণত হয়েছিল। প্রথম দুই টেস্টে শোচনীয়ভাবে পরাজয়বরণের পর ৩৬ বছর বয়সী ডিক পোলার্ডকে পুনরায় দলে খেলার জন্যে আমন্ত্রণ জানানো হয়। ওল্ড ট্রাফোর্ডে সিরিজের তৃতীয় টেস্টে অংশ নেন তিনি। এ পরিবর্তনে দলে সফল হয়। শীর্ষসারির ব্যাটসম্যানদের দৃঢ়তা ও বৃষ্টিবিঘ্নিত হবার ফলে খেলাটি ড্রয়ে পরিণত হয়েছিল। ব্যাটসম্যান হিসেবে তিনি পুল শটকে দারুণভাবে পছন্দ করতেন। ইয়ান জনসনের অফ স্পিন বোলিংয়ে অস্ট্রেলিয়ার উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান সিড বার্নস ক্যাচ তালুবন্দী করেন। শর্ট লেগ অঞ্চলে বার্নস আঘাতপ্রাপ্ত হলে তাকে স্ট্রেচারে করে মাঠের বাইরে নিয়ে যাওয়া হয়। তিনি পরবর্তীতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নামেন ও রিটায়ার হার্ট হন। এ খেলা শেষে তাকে ১০ দিন হাসপাতালে অবস্থান করতে হয় ও পরের টেস্টে অংশ নেয়া থেকে বিরত থাকেন।[৩৪]
অস্ট্রেলীয়রা অ্যালেক বেডসার ও ডিক পোলার্ডের সুনিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে অস্বাচ্ছন্দ্যবোধ কর। পোলার্ড তিন উইকেট পান। তন্মধ্যে, ডন ব্র্যাডম্যানকে সাত রানে এলবিডব্লিউ ফাঁদে ফেলে বিদেয় করেন।[৩৫] ওল্ড ট্রাফোর্ড টেস্ট ড্র হলে দল নির্বাচকমণ্ডলী লিডসের হেডিংলি স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত সিরিজের চতুর্থ টেস্টে একই ফাস্ট-মিডিয়াম বোলিং জুটি রাখেন। তবে, ব্যাটিংয়ের উপযোগী বড় অঙ্কের রানের খেলায় স্পিন বোলারদের উপযোগী হিসেবে চিত্রিত হয়। পোলার্ড যথাসম্ভব নিজেকে মেলে ধরতে সচেষ্ট হন। প্রথম ইনিংসে তিন বলের ব্যবধানে লিন্ডসে হ্যাসেট ও ডন ব্র্যাডম্যানের উইকেট পান। ব্র্যাডম্যান ৩৩ রান তুলেছিলেন। কিন্তু, এ সাফল্যের পর খেলা দূরে সড়ে যায়। খেলায় অস্ট্রেলিয়া দল ৪০৪/৩ তুলে জয়ী হয়। ঐ সময়ে কোন টেস্টে এটিই সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয়ের ঘটনা ছিল।[৩৬] ওভালে সিরিজের চূড়ান্ত টেস্ট অনুষ্ঠিত হয়। দ্রুতগতির বোলিংয়ের তুলনায় স্পিন উপযোগী পিচ তৈরি করা হয়। দলে অতিরিক্ত স্পিন বোলারের অন্তর্ভূক্তিতে ডিক পোলার্ডকে বাদ দেয়া হয়। এরপর আর তাকে টেস্ট ক্রিকেট আঙ্গিনায় খেলতে দেখা যায়নি। তবে, ৫৪ বছর পর ক্ষাণিকটা উত্তপ্ত ছড়ান। ২০০২ সালে পোলার্ডের ব্যবহৃত বলটি নিলামে £১,৭০০ পাউন্ড-স্টার্লিংয়ে বিক্রয় হয়। ঐ বলটি ১৯৪৮ সালে অনুষ্ঠিত সিরিজের চতুর্থ টেস্টে ডোনাল্ড ব্র্যাডম্যানকে ৩৩ রানে আউট করতে ব্যবহার করা হয়েছিল।[৩৭][৩৮]
১৯৪৮ সাল থেকে ল্যাঙ্কাশায়ার কর্তৃপক্ষের কাছে ডিক পোলার্ডের উপযোগিতা কমে যেতে থাকে। কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশীপে ৯৫ উইকেট পান। স্লো বামহাতি বোলার উইলিয়াম রবার্টসের চেয়ে তিনি মাত্র আট উইকেট বেশি পেয়েছিলেন।[৩৯] সবগুলো খেলায় ২৩ গড়ে ১১৬ উইকেট পান। অন্য যে-কোন প্রথম-শ্রেণীর মৌসুমের চেয়ে সর্বাধিক প্রায় ১,৩০০ ওভার বোলিং করেছিলেন।[৯] পরের মৌসুমে ৪০০ ওভার কম করেছিলেন। সব মিলিয়ে ৭৩ উইকেট পান। এছাড়াও তুলনামূলকভাবে উইকেট প্রতি বেশি ২৮ রান দেন।[৯] ল্যাঙ্কাশায়ার দলে নিয়মিতভাবে নতুন, তরুণ বোলারদেরকে খেলায় অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়। রয় ট্যাটারসলের সুইং বল, ম্যালকম হিল্টন ও বব বেরি’র স্পিন বলকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছিল।[৪০] পোলার্ড বোলিং উদ্বোধনের ধারাবাহিকতা বজায় রাখেন। আগের চেয়েও নিখুঁততার স্বাক্ষর রাখেন। তবে, অন্য মৌসুমের চেয়ে কম সফল ছিলেন। আগস্ট, ১৯৪৯ সালে ল্যাঙ্কাশায়ার কর্তৃপক্ষ তাকে আর্থিক সুবিধা গ্রহণের খেলার জন্যে মনোনীত করে। ডার্বিশায়ারের বিপক্ষে অনুষ্ঠিত ঐ খেলায় £৮,০৩৫ পাউন্ড-স্টার্লিং লাভ করেন। অর্থ সংগ্রহের পরিমাণের দিক দিয়ে ঐ সময়ে এ সংখ্যাটি তৃতীয় সর্বোচ্চ ছিল।[৪১]
১৯৫০ সালে কয়েকটি খেলায় বোলিং করে সফল হলেও পোলার্ডকে দল থেকে বাদ দেয়া হয়। তিনজন স্লো বামহাতি বোলারদের মধ্যে হিল্টনকে তার স্থলাভিষিক্ত করা হয়। ম্যালকম হিল্টনকে কয়েকটি খেলায় বোলিং উদ্বোধন করার সুযোগ প্রদান করা হয়েছিল।[৪২] মৌসুম শেষে ল্যাঙ্কাশায়ার দল সারের সাথে যৌথভাবে কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশীপের শিরোপা লাভ করে। প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট থেকে বিদেয় নিয়ে ল্যাঙ্কাশায়ার লীগে ক্রিকেট খেলতে থাকেন। ১৯৫২ সালেও প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে তার অংশগ্রহণ ছিল। ১৯৫২ সালে সফররত ভারতীয় দলের বিপক্ষে কমনওয়েলথ একাদশের সদস্যরূপে এটি খেলায় অংশ নিয়েছিলেন। খেলায় তিনি তিনটি উইকেট, দুই ক্যাচ ও ১৭ রান সংগ্রহ করেছিলেন।[৪৩]
দলের প্রয়োজনে নিচেরসারির ব্যাটসম্যান হিসেবে কার্যকরী ব্যাটিংশৈলী উপহার দিয়েছেন। ১৯৩৩ থেকে ১৯৫০ সালের মধ্যে ল্যাঙ্কাশায়ারের পক্ষে খেলেছেন। এ পর্যায়ে ২৯৮টি প্রথম-শ্রেণীর খেলায় অংশ নিয়ে ১১২২ উইকেট পান। এ সংগ্রহটি ল্যাঙ্কাশায়ার দলের পক্ষে ১০ম সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রহকারী হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে।[৪৪]
লম্বাটে ও বিশাল দেহের অধিকারী ডিক পোলার্ড অত্যন্ত পরিশ্রমী খেলোয়াড় হিসেবে পরিচিত ছিলেন। ১৯৮৬ সালে উইজডেনে তার স্মরণে মন্তব্য করা হয় যে, ল্যাঙ্কাশায়ারীয় জনগণের কাছে তিনি স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।[৪১] মৌসুমের পর মৌসুম উইজডেনে তার বোলিংয়ে নিখুঁততা ও বিশ্বস্ততার পাশাপাশি দীর্ঘক্ষণ বোলিং ক্লান্তিহীনতায় করে গেছেন।
১৬ ডিসেম্বর, ১৯৮৫ তারিখে ৭৩ বছর বয়সে গ্রেটার ম্যানচেস্টারের ওয়েস্টহটন এলাকায় ডিক পোলার্ডের দেহাবসান ঘটে।